২৬ জুন ২০২৫

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

নির্যাতন বন্ধে আইনগত সংস্কার ও বিচারপ্রার্থী ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের বিচারাধীন মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিতকরণের দাবি জানাচ্ছে ব্লাস্ট

INTERNATIONAL DAY IN SUPPORT OF VICTIMS OF TORTURE

BLAST CALLS FOR LEGAL REFORMS TO END TORTURE AND SWIFT RESOLUTION OF PENDING CASES FOR VICTIMS SEEKING JUSTICE

আজ, ২৬ জুন ২০২৫, ব্লাস্ট নির্যাতন বন্ধে সরকার এর কাছে জরুরি আইনগত সংস্কারের আহ্বান জানাচ্ছে। ব্লাস্ট বিশেষভাবে জাতিসংঘ নির্যাতন বিরোধী সনদের ঐচ্ছিক প্রটোকল (Optional Protocol to the UN Convention against Torture – OPCAT) অনুসমর্থনের দাবি জানাচ্ছে। একইসাথে, ২০১৩ সালের নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ১৮৯৮ সালের ফৌজদারী কার্যবিধি (Code of Criminal Procedure) এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইন সংস্কারের জরুরী দাবি জানাচ্ছে, যাতে ভুক্তভোগীরা ন্যায় বিচার এবং যথার্থ ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন।

পাশাপাশি, ব্লাস্ট এ সংক্রান্ত দৃষ্টান্তমূলক মামলাসমূহের দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের জোরালো দাবি জানাচ্ছে। এ মামলা সমূহে নির্যাতনে ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা বা তাদের স্বজনরা ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার জন্য দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছেন, এমনকি এক যুগের বেশি সময় ধরে। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য লিমন হোসেন এর বিচারের যাত্রা– তিনি ২০১১ সালে র‍্যাব এর গুলিতে আহত হওয়ার পরে তার মায়ের করা মামলা এখনো তদন্তাধীন। তার সাথে মোঃ ইমতিয়াজ হোসেন রকির বিচারের প্রচেষ্টাও স্মরণ করা যায়- ২০১৪ সালে পুলিশ হেফাজতে তার ভাই জনির মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ‘নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩’-এর অধীনে রায় ঘোষণা হয়। তবে এখনো উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন রয়েছে, যা ন্যায়বিচারের দীর্ঘসূত্রীতা ও প্রতিকার প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা তুলে ধরে।

একইসাথে ব্লাস্ট যে কোন অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার এবং রিমান্ডে নেয়ার বিষয়ে সুপ্রীম কোর্টের সুস্পষ্ট নির্দেশনাবলির সুষ্ঠু বাস্তবায়নে দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে। এবং এই নিরদেশনাবলি যারা লঙ্ঘন করবেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যাবস্থা নেয়ার সুপারিশ করছে।


প্রেক্ষাপট

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে এ ধরনের নির্যাতন বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭ (আইনের দৃষ্টিতে সমতা), ৩১ (আইনের আশ্রয়-লাভের অধিকার), ৩২ ( জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতার অধিকার-রক্ষণ), ৩৩ (গ্রেপ্তার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ) এবং ৩৫ (বিচার ও দন্ড সম্পর্কে রক্ষণ) সমূহের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। একইসাথে, হেফাজতে সংঘটিত এ ধরণের নির্যাতন প্রতিরোধে ২০১৩ সালে প্রণীত হয় ‘নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন’। এছাড়াও, বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার ও অভিযুক্তকে রিমান্ডে নেয়ার বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং ম্যাজিষ্ট্রেট ও বিচারকদের জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা সম্বলিত সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের যুগান্তকারী রায়ের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। কিন্তু বাস্তবে এ আইনের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন এবং সুপ্রিম কোর্টের এ নির্দেশনা সমূহের যথাযথ প্রতিপালন নিশ্চিত করা সম্ভব হয় নাই।

এ ঘাটতি প্রমাণ করে যে নির্যাতন প্রতিরোধে শুধুমাত্র জাতীয় আইন ও বিচারব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। অভ্যন্তরীণ প্রতিকার ব্যবস্থা দুর্বল বা অকার্যকর হয়ে পড়লে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ ও জবাবদিহিতা কাঠামো অপরিহার্য হয়ে ওঠে। বাংলাদেশ ১৯৯৮ সালে নির্যাতনের এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক, শাস্তির অবমাননাকর আচরণ বিরুদ্ধে সনদ (UNCAT) এ অনুস্বাক্ষর করলেও অনুচ্ছেদ ২১ (রাষ্ট্র-সমূহের মধ্যে অভিযোগ প্রক্রিয়া) ও ২২ (ব্যক্তিগত অভিযোগের অধিকার) ও ২২ এর জন্য আলাদাভাবে সম্মতিমূলক ঘোষণা দেয়নি এবং অনুচ্ছেদ ২০ (নির্যাতনের বিষয়ে কমিটির গোপন তদন্ত) পালনে এখনও রাজি হয়নি। একইসাথে, নির্যাতন বিরোধী সনদের ক্ষেত্রে ঐচ্ছিক প্রোটোকল (OPCAT) এখনো অনুমোদন না করায় বাংলাদেশে কোনো স্বাধীন জাতীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা (National Preventive Mechanism) গঠিত হয়নি, যার মাধ্যমে আটকস্থলসমূহে নিয়মিত পরিদর্শন ও নিরীক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত হতো। OPCAT অনুমোদন করলে একটি কার্যকর ও প্রতিরোধমূলক আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যবেক্ষণ কাঠামো গড়ে উঠত, যা হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর মতো ঘটনাগুলো প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারত। UNCAT-এর উল্লেখ্য অনুচ্ছেদ সমূহে আলাদাভাবে সম্মতিমূলক ঘোষণা ও OPCAT অনুমোদন করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কাঠামোর সাথে সাদৃশ্যমূলক অঙ্গীকারকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে, এবং জনগণের জন্য ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে পারে।
পরিশেষে, ব্লাস্ট আন্তর্জাতিক নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের প্রতি সমর্থন দিবসে অদ্যবধি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে সংঘটিত সকল নির্যাতনের সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্ত এবং ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও ন্যায় বিচার নিশ্চিতের জোরালো দাবি জানাচ্ছে। একইসাথে, এ ধরণের নির্যাতন প্রতিরোধে বিদ্যমান আইন এবং বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারসহ নির্যাতন, অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক শাস্তি ও অবমাননাকর আচরণ প্রতিরোধে বিদ্যমান আন্তর্জাতিক সনদ সমূহ অনুস্বাক্ষর ও অনুমোদনের মাধ্যমে এর বিরুদ্ধে একটি সুপ্রতিষ্ঠিত কাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব, যা দেশের জনগণকে এরূপ নির্যাতন হতে সুরক্ষা প্রদান এবং ইতোপূর্বে সংঘটিত নির্যাতন ও এর ফলে মৃত্যুর যথাযথ জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে।

প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন:

কমিউনিকেশন বিভাগ, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)

ই-মেইল: communication@blast.org.bd