বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনে পেশকৃত সুপারিশ
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ভূমিকা
ব্লাস্ট দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম ন্যায়বিচার, অধিকার সুরক্ষা এবং আইনের শাসনের ভিত্তি। গণমাধ্যম কেবল অন্যায় ও অবিচারের চিত্র তুলে ধরেই ক্ষান্ত থাকে না, বরং জনগণকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন ও শিক্ষিত করে তোলে। তাই, অধিকার ও ন্যায়বিচার বিষয়ক প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের দক্ষতা ও যোগ্যতা, এবং তাদের নিরাপত্তা ও সুরাক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। গণমাধ্যমকে একটি অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে, যাতে গুরুত্বপূর্ণ আইনগত ও বিচারিক বিষয়গুলো জনসাধারণের দৃষ্টি ও মনোযোগ থেকে হারিয়ে না যায়। সেই কারণে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করে এমন আইন সংশোধন, কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ এবং প্রয়োজনীয় সম্পদ ও সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে এর স্বাধীনতাকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
এই প্রেক্ষাপটে, নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির আলোকে, ব্লাস্ট গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক ১৮ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে গঠিত “গণমাধ্যমকে স্বাধীন, শক্তিশালী ও বস্তুনিষ্ঠ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাবনা” প্রদানের জন্য গঠিত গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের নিকট নিম্নলিখিত সুপারিশমালা পেশ করছে।
এই সুপারিশমালা মূলত আইনি, নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের উপর আলোকপাত করে, যা অভিব্যক্তির স্বাধীনতার মৌলিক অধিকার এবং অন্যান্য অধিকার, বিশেষত সাম্য ও বৈষম্যহীনতা, সুষ্ঠু বিচার ও গোপনীয়তার অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য অত্যাবশ্যক। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর ভূমিকা এবং গণমাধ্যম স্ব-নিয়ন্ত্রণের সুযোগ ও পরিধি বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে।
ব্লাস্ট তার নিজস্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এই সুপারিশমালা প্রণয়ন করেছে। এই অভিজ্ঞতার মধ্যে রয়েছে হয়রানির শিকার সাংবাদিকদের আইনি সহায়তা প্রদান, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, অক্ষমতা, জাতীয়তা বা জন্মস্থানের ভিত্তিতে বৈষম্যের শিকার নারী, শ্রমিক ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সদস্যদের আইনি সেবা দেওয়া, এবং আইন, আদালতের রায়, নিজস্ব মামলা ও প্রতিবেদন পর্যালোচনা। এছাড়া, চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলার আইনজীবী, স্থানীয় সমাজভিত্তিক সংগঠন, মানবাধিকার কর্মী এবং ঢাকাস্থ আইন সাংবাদিকদের সাথে পরামর্শ করা হয়েছে। ব্লাস্ট ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে কমিশন আয়োজিত নাগরিক সংগঠনের সাথে এক পরামর্শ সভায়ও অংশগ্রহণ করে।
ব্লাস্ট সম্পর্কে
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (BLAST), একটি জাতীয় বেসরকারি আইন সেবা সংস্থা, ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আর্থিক বা সামাজিক অসুবিধার কারণে আইনি আশ্রয় থেকে বঞ্চিতদের, বিশেষ করে নারী, শিশু, শ্রমিক এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সদস্যদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে আসছে। এর কার্যক্রমগুলির মধ্যে রয়েছে:
- আর্থিক সংগতি ও গুণাগুণের পরীক্ষার ভিত্তিতে ব্যক্তিবিশেষকে বিচার ব্যবস্থার প্রথম স্তর থেকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত বিনামূল্যে আইনগত সেবা (তথ্য, পরামর্শ, রেফারেল, মধ্যস্থতা, মামলা পরিচালনা) প্রদান করা, বিশেষ করে পারিবারিক, দেওয়ানি, শ্রম এবং ফৌজদারি মামলা এবং মৌলিক অধিকারের আইনগত সুরক্ষায় বিশেষ মনোযোগ দেওয়া।
- আইনগত, নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের জন্য গবেষণা ওকালতির পাশাপাশি জনস্বার্থ মামলা পরিচালনা করা এবং বিচার ব্যবস্থার সাথে জড়িত বিভিন্ন পক্ষ, যেমন বিচারক, আদালতের কর্মকর্তা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, আইনজীবী এবং আইন সহায়কদের জন্য কারিগরি সহায়তা ও সক্ষমতা উন্নয়ন কর্মসূচি পরিচালনা করা।
- ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় আইন সহায়তা সংস্থা (NLASO), জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (NHRC), ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার (VSC) এবং ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (OCC) এর মতো প্রাসঙ্গিক সরকারি ও বিধিবদ্ধ সংস্থাগুলির সাথে কাজ করা।
সুপারিশমালা
১. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংক্রান্ত সাংবিধানিক ও আইনি কাঠামোর পর্যালোচনা:
বাকস্বাধীনতার সাংবিধানিক কাঠামো ব্যাপক বিধিনিষেধের অধীন। এর সাথে ঔপনিবেশিক আমলের বহু আইন সাংবাদিকদের কর্মকাণ্ড সীমিত করে ফেলে, তাঁদের রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় বিভিন্ন পক্ষের দ্বারা ভয়ভীতি, মিথ্যা মামলা এবং আত্ম-সেন্সরশিপের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলে। কাজেই, এই সাংবিধানিক ও আইনগত কাঠামোর সংশোধনের মাধ্যমে সংস্কার শুরু করা উচিত, এবং এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সংগতি রেখে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
১.১ নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদ (“ICCPR” বা, সনদ) (স্বল্পমেয়াদী)
সম্প্রতি বলপূর্বক গুম বিষয়ক কনভেনশন অনুমোদনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায়, সরকারের উচিত ICCPR এর ঐচ্ছিক প্রোটোকল অনুমোদন করা। এটি যে কোনও ব্যক্তিকে, এই সনদের অধীনে সুরক্ষিত যে কোনও অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিটিতে সরাসরি অভিযোগ জমা দেওয়ার সুযোগ দেবে।
১.২ সংবিধানের ৩৯ নং অনুচ্ছেদের সংস্কার (দীর্ঘমেয়াদী)
বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ নং অনুচ্ছেদ, যা বাক স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়, তা আইসিসিপিআর-এর ১৪, ১৯ এবং ২০ নং অনুচ্ছেদের সাথে সঙ্গতি রেখে সংশোধন করা উচিত। এই সংশোধনের মাধ্যমে যে কোনও বিধিনিষেধ কেবল “যুক্তিসঙ্গত” নয় বরং “প্রয়োজনীয়” হতে হবে এবং বিধিনিষেধের অনুমোদিত কারণ থেকে “বিদেশী রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক”, “শালীনতা”, “মানহানি” এবং “আদালত অবমাননা” অপসারণ করা উচিত। এছাড়াও, অনুমোদিত কারণ হিসেবে “অন্যের অধিকার বা সুনামের প্রতি সম্মান” এবং “ন্যায়বিচারের অধিকার এবং নির্দোষতার স্বীকৃতি” অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
১.৩ মানহানি আইনের সংস্কার (স্বল্পমেয়াদী)
১.৩.১ ফৌজদারি মানহানি আইন সুনাম রক্ষার জন্য একটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবস্থা এবং এটি প্রায়শই সাংবাদিকদের হয়রানি করার জন্য অপব্যবহার করা হয়, যার ফলে দীর্ঘ মেয়াদে বিচার-পূর্ব কারাবাসের[1] মাধ্যমে তাদের স্বাধীনতা হরণ করা হয়। কিছু কুখ্যাত মামলায়, একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন আদালতে একাধিক মানহানির মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং অন্য কিছু ক্ষেত্রে, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বা রাজনৈতিক নেতাদের পক্ষে তৃতীয় পক্ষ এই ধরনের মামলা দায়ের করেছে। এটি অভিব্যক্তি এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে ব্যাপকভাবে সীমিত করেছে, যার ফলে গণমাধ্যমে আত্ম-সেন্সরশিপের সংস্কৃতি বৃদ্ধি পেয়েছে।[2] অতএব, ফৌজদারি মানহানির সব আইন, যেমন ১৮৬০ সালের বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪৯৯, ৫০০, ৫০১ এবং ৫০২ ধারা এবং ২০২৩ সালের সাইবার নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারা বাতিল করা উচিত।
১.৩.২ আদালতের উচিত ফৌজদারি ১৯৮ ধারা কঠোরভাবে অনুসরণ করা। এই ধারা অনুসারে, কেবলমাত্র ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদেরই (শিশু, “বোকা”, “পাগল”অথবা অসুস্থতা বা দুর্বলতার কারণে অভিযোগ করতে অক্ষম ব্যক্তিদের ব্যতীত) মানহানির মামলা দায়ের করার অনুমতি রয়েছে। এই ধরনের মামলা দায়ের, তদন্ত বা বিচারের সাথে জড়িত যে কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৮ ধারায় “ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি” কে স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি, যার ফলে আইনের অপব্যবহার ঘটছে। যেসব ব্যক্তি মানহানিকর বিষয়বস্তুতে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হননি,[3] তারাও ক্ষতিগ্রস্ত বলে দাবি করে মামলা দায়ের করছেন। আদালত এ বিষয়ে বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিচ্ছে এবং তৃতীয় পক্ষকেও ক্ষতিগ্রস্ত বলে বিবেচনা করছে। অতএব, বর্তমান আইন বাতিলের পর, মানহানির ক্ষেত্রে নতুন আইনে স্পষ্টভাবে বলা উচিত যে কেবল যেসব ব্যক্তি বা সংস্থা মানহানিকর বিবৃতিতে সনাক্ত করা যায় তারাই মামলা করতে পারবেন। শিশুদের ক্ষেত্রে পারিবারিক সদস্যরা তাদের পক্ষে মামলা করতে পারবেন।
১.৪ আদালত অবমাননা আইনের পর্যালোচনা (মধ্যমেয়াদী)
১.৪.১ “আদালতকে কলঙ্কিত করা”র অভিযোগে আদালত অবমাননার আদেশের ঘন ঘন ব্যবহার অথবা এর হুমকি, আদালতের কার্যক্রম সম্পর্কে প্রতিবেদন এবং রায় ও আদেশের[4] বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের উপর ভীতির ছায়া ফেলেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন (ICCPR) এর ১৪ অনুচ্ছেদের অধীনে ন্যায়বিচারের অধিকার এবং নির্দোষতার স্বীকৃতি[5] রক্ষা করার জন্য ১৯২৬ সালের আদালত অবমাননা আইন পুনর্বিবেচনা করা উচিত। বিচারাধীন বিষয়, ন্যায়বিচারে হস্তক্ষেপ, অথবা নির্দোষতার স্বীকৃতি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন সীমাবদ্ধ করার জন্য এই আইনে স্পষ্ট বিধান রাখতে হবে।
১.৪.২ ২০১৩ সালের আদালত অবমাননা আইন (যা ১৯২৬ সালের আদালত অবমাননা আইন বাতিল করেছিল এবং “আদালতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা” অপরাধ পুনরায় প্রবর্তন করেছিল) বাতিল সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে বিচারাধীন থাকা ২০২৩ সালের ১২৩৪ নং দেওয়ানি আপিলের দ্রুত শুনানির জন্য সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
১.৫ বিদ্বেষমূলক বক্তব্য সংক্রান্ত আইনের পর্যালোচনা (স্বল্পমেয়াদী)
“ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত” সংক্রান্ত বিদ্যমান আইন সাংবাদিক এবং অন্যান্যদের, বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের বিরুদ্ধে, অপব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি যেসব ক্ষেত্রে কোনও ব্যক্তির প্রত্যক্ষ ক্ষতি হয়নি, সেখানেও এই আইন প্রয়োগ করে স্বাধীনতার অধিকার খর্ব করা হয়েছে।[6] দণ্ডবিধির ২৯৫ক এবং ২৯৮ ধারা এবং সাইবার নিরাপত্তা আইনের ২৮ ধারা বাতিল করা উচিত।
১.৬ ১৯২৩ সালের সরকারি গোপনীয়তা আইনের পর্যালোচনা (স্বল্পমেয়াদী সুপারিশমালা)
১৯২৩ সালের সরকারি গোপনীয়তা আইনের ৩, ৩ক এবং ৫ ধারা সংশোধন করে কেবল জাতীয় নিরাপত্তার উপর জোর দেওয়া উচিত এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য জনস্বার্থে আইনি সুরক্ষার ব্যবস্থা সংযোজন করা উচিত।
১.৭ ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির পর্যালোচনা (স্বল্পমেয়াদী সুপারিশমালা)
ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ৯৯ক এবং ৯৯খ ধারা পুনর্বিবেচনা এবং বাতিল করা উচিত। যদিও গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে খুব কমই ব্যবহৃত হয়[7], এই বিধানগুলি সরকারকে এমন কারণে সংবাদপত্র বাজেয়াপ্ত করার অনুমতি দেয় যা আইসিসিপিআর-এর ১৪, ১৯ এবং ২০ অনুচ্ছেদের অধীনে অভিব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উপর যুক্তিসঙ্গত বিধিনিষেধের বাইরে পড়ে।
১.৮ আধেয় বন্ধ করা (মধ্যমেয়াদী)
বিটিআরসি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এনটিএমসি, অজ্ঞাতনামা সরকারি সংস্থা এবং নিয়ন্ত্রকের বিস্তৃত ক্ষমতা রয়েছে বাংলাদেশী সার্ভারে থাকা আধেয় ব্লক বা অপসারণ করার এবং এর মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার। বিটিআরএ-র ৬৬ক ধারা এবং ৯৭ক ধারা (যা অজ্ঞাতনামা নিরাপত্তা সংস্থা এবং বিটিআরসি-কে নির্দেশ করে), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৪৬ ধারা এবং সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৮ ধারা সংশোধন করা উচিত যাতে আধেয় অপসারণের সিদ্ধান্ত একটি স্বাধীন সংস্থার তত্ত্বাবধানে নেওয়া হয় এবং এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা সম্পন্ন যেকোনো কর্তৃপক্ষের ভূমিকা এবং কার্যকরী ভিত্তি স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
১.৯ জাতীয় সম্প্রচার নীতি ২০১৪ এর পর্যালোচনা (মধ্যমেয়াদী)
এই নীতিমালা বর্তমানে রেডিও, টেলিভিশন এবং অনলাইন মাধ্যমে সম্প্রচারের উপর ব্যাপক বিধিনিষেধ আরোপ করে। এই বিধিনিষেধের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে “দেশবিরোধী” কর্মকাণ্ড, “অশ্লীল আচরণ”, “অশ্লীল, হিংসাত্মক, বা আপত্তিকর দৃশ্য” প্রদর্শন, “ধর্মীয় বা রাজনৈতিক অনুভূতিতে আঘাত” করে এমন বিজ্ঞাপন, “বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মর্যাদাকে বিকৃত” করে এমন বিষয়বস্তু, এবং “আইন, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়” এমন অনুষ্ঠান বা বিজ্ঞাপন (অনুচ্ছেদ ৩.২.১, ৩.৬.৫, ৩.৬.৭, ৪.১.১, এবং ৫)। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন (ICCPR) অনুযায়ী কেবল অনুমোদিত কারণেই সম্প্রচার সীমাবদ্ধ করা যাবে তা নিশ্চিত করার জন্য এই বিধিনিষেধগুলো পুনর্বিবেচনা করা উচিত। এই অনুমোদিত বিধিনিষেধের সীমা স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা প্রয়োজন।
১.১০ অনলাইন গণমাধ্যম নীতি ২০১৭ এর পর্যালোচনা (মধ্যমেয়াদী)
১.১০.১ এই নীতি অনলাইন গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে আইন প্রণয়নের অভাবে সরকারকে নিয়ন্ত্রণ প্রণয়নের বিস্তৃত ক্ষমতা প্রদান করে (অনুচ্ছেদ ২.১.৪)। তাই, অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনার জন্য একটি সুস্পষ্ট আইন প্রণয়ন করা উচিত, যা সেন্সরশিপ প্রতিরোধ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য স্বাধীন তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করবে।
১.১০.২ এই নীতি অনলাইন গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে “ইতিহাস” এবং “সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুভূতি”র (অনুচ্ছেদ ৪.১) মতো বিস্তৃত বিষয়গুলোতে সম্প্রচার নীতিমালা প্রয়োগের কথা বলে, যা অভিব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করার জন্য সংশোধন করা উচিত।
১.১০.৩ এই নীতিমালায় একটি সম্প্রচার কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে যার কার্যাবলী হলো কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ (অনুচ্ছেদ ৩.১.১), সরকারের কাছে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা এবং সম্প্রচারের অনুপযুক্ত তথ্য প্রকাশের জন্য জরিমানা আরোপ করা (অনুচ্ছেদ ৩.১.৪)। গণমাধ্যমের স্বায়ত্তশাসন রক্ষা করার জন্য, এই নীতিমালা পুনর্বিবেচনা করা উচিত। এর মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে যে কমিশনটি কার্যকর হওয়ার পর সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সাথে কাজ করবে এবং এর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য একটি স্পষ্ট ব্যবস্থা থাকবে।
১.১১ প্রস্তাবিত ওটিটি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম নীতি ও নিয়ন্ত্রণের পর্যালোচনা (মধ্যমেয়াদী)
“ওভার দ্য টপ কন্টেন্ট তৈরি, বিজ্ঞাপন, প্রদর্শন এবং পরিচালনা নীতি” এবং “সোশ্যাল মিডিয়া ও ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বিষয়ক বিটিআরসি রেগুলেশন”-এর খসড়া বর্তমানে হাইকোর্টের বিবেচনাধীন (২০২০ সালের রিট পিটিশন নং ৪৫৩৪ দেখুন)। কন্টেন্ট নিষেধাজ্ঞায় অস্পষ্টতা এবং অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে যথাযথ প্রক্রিয়াগত সুরক্ষার অভাব ও কন্টেন্ট বন্ধ করার জন্য সরকারি সংস্থা ও বিটিআরসিকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়ার কারণে এগুলো নাগরিক সমাজ কর্তৃক সমালোচিত হয়েছে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকিস্বরূপ। সরকারের উচিত এই খসড়াগুলো প্রত্যাহার করা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও কন্টেন্ট সংযোজন সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলার নিশ্চয়তা প্রদানকারী নীতি তৈরি করা। এই ক্ষেত্রে, “নিষিদ্ধ কন্টেন্ট”-র পরিধি স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা উচিত, যথাযথ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য পদ্ধতিগত সুরক্ষা প্রতিষ্ঠা করা উচিত। যেকোনো সংস্কারই কন্টেন্ট নির্মাতা, সাংবাদিক এবং প্রযুক্তি ও আইন বিশেষজ্ঞদের সহ অংশীজনদের সাথে অন্তর্ভুক্তিমূলক পরামর্শের ভিত্তিতে করা উচিত।
২. গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রক সংস্থা / প্রেস কাউন্সিলের সংস্কার (মধ্যমেয়াদী)
মুদ্রণ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের মূল দায়িত্বে থাকা প্রেস কাউন্সিলের সম্পদ, কার্যকরী স্বাধীনতা এবং এখতিয়ারে ব্যাপক সীমাবদ্ধতা বিদ্যমান। ফলে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা রক্ষা করা বা তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এটি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না। যেকোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা যাতে স্বাধীনভাবে, কার্যকরীভাবে এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তভাবে কাজ করতে পারে তা নিশ্চিত করতে এবং সকলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে নিম্নলিখিত সুপারিশগুলো দেওয়া হলো:
২.১ প্রেস কাউন্সিল আইন, ১৯৭৪ এর গঠন, অর্থায়ন ও ক্ষমতা সংশোধন করা উচিত এবং যেকোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান যদি নৈতিক আচরণবিধি লঙ্ঘন করে, তাহলে তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এই কাউন্সিলের ভূমিকা আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
২.২ প্রেস কাউন্সিল বা যেকোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত নিয়মিতভাবে জেলা পর্যায়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সর্বত্র সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পর্যবেক্ষণ করা এবং একটি বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি করা। এই প্রতিবেদনে সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগসহ তাদের এখতিয়ারের সাথে প্রাসঙ্গিক প্রতিটি জেলার পরিস্থিতি ও অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা হবে।
৩. গণমাধ্যমের জবাবদিহিতা (মধ্যমেয়াদী)
নীতি-বহির্ভূত গণমাধ্যম প্রতিবেদনের শিকার ব্যক্তিদের (যেমন, গোপনীয়তা লঙ্ঘন বা মিথ্যা প্রতিবেদন) আইনি আশ্রয় নেওয়া ছাড়া কার্যত কোনো কার্যকর প্রতিকার নেই। প্রেস কাউন্সিলের দেওয়ানি আদালতের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও, এ ধরনের ঘটনায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে তারা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেনি।
৩.১ প্রেস কাউন্সিল বা প্রস্তাবিত যে কোনও নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত একটি “সাংবাদিকদের আচরণবিধি” প্রণয়ন করা, যেখানে জনগণের গোপনীয়তা সুরক্ষার জন্য নৈতিক মান এবং অনুশীলন এর বিষয় বর্ণিত থাকবে।
৩.২ গণমাধ্যম সংস্থাগুলোর উচিত নিজস্ব নীতিমালা তৈরি করা, যা নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত নির্দেশনার আলোকে ব্যক্তিগত তথ্যাদি, বিশেষ করে নারী, শিশু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সদস্যদের তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। এই নীতিমালায় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে:
৩.২.১ জনসাধারণের, বিশেষ করে অপ্রাপ্তবয়স্ক অথবা সংবেদনশীল বা সম্ভাব্য মানসিক আঘাতের শিকার ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি ও নীতিমালা তৈরি এবং অনুসরণ করতে হবে। এই নীতিমালা তৈরিতে ইউনিসেফের[8] সাংবাদিকদের জন্য প্রণীত নির্দেশিকা সহ অন্যান্য প্রাসঙ্গিক উৎস থেকে সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। সাক্ষাৎকারের সময় নিরাপত্তা, সম্মতি এবং চাপ ও জোরজবরদস্তি মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে। এই নীতিমালায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে যে সাক্ষাৎকার প্রদানকারীদের পরিচয়, তাদের পরিবারের পরিচয় এবং তাদের অবস্থান প্রকাশ না করে, প্রয়োজনে নাম বা ছবি পরিবর্তন করে তাদের সম্মান ও নিরাপত্তা রক্ষা করতে হবে এবং সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে তাদের রক্ষা করতে হবে। কোনো ঝুঁকি আছে বলে মনে হলে, নির্দিষ্ট কোনো শিশুর বিষয়ে প্রতিবেদন না করে বরং বিষয়টি সম্পর্কে সাধারণভাবে প্রতিবেদন করা যেতে পারে।
৩.৩ নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত এমন একটি সহজ অভিযোগ প্রক্রিয়া তৈরি করা, যাতে যে কেউ ক্ষতিকারক বা ভুল সংবাদ সম্পর্কে জানাতে পারে।
৩.৪ সাংবাদিকতার নীতি লঙ্ঘনের দায়ে যেকোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স/নিবন্ধণ বাতিলসহ বিভিন্ন ধরনের জরিমানা করার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রক সংস্থার থাকা উচিত।
৪. প্রশিক্ষণ (মধ্যমেয়াদী)
সাংবাদিকদের উত্তম অনুশীলন, প্রযোজ্য আইন-কানুন এবং তাদের অধিকার ও কাজের শর্তাবলী সম্পর্কে প্রশিক্ষণের সুযোগ খুবই কম।
৪.১ প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)-এর উচিত সাংবাদিকদের জন্য আরও বেশি বৈচিত্র্যময় প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজন করা। এই কর্মসূচিগুলোতে মানবাধিকার, বিশেষ করে সমতা ও বৈষম্যহীনতা, জনস্বার্থে মামলা সহ আদালতের রিপোর্টিং, সাংবাদিকতার নীতিশাস্ত্র ও সাংবাদিকদের অধিকার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ থাকা উচিত। এই প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে নাগরিক সমাজ ও স্থানীয় সংগঠনগুলোকে জড়িত করতে হবে।
৪.২ পিআইবি-এর উচিত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কাজ করে নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, যাতে তারা সাংবাদিকদের অধিকার এবং জেলায় কাজ করার সময় সাংবাদিকদের ঝুঁকি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারে।
৫. সাংবাদিকদের অধিকার, কল্যাণ, আর্থিক সহায়তা এবং আইনি সুরক্ষা (স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদী)
অনেক সাংবাদিক চাকরির সুরক্ষার অভাবে ভুগছেন এবং তাদের কম মজুরিসহ নানা কঠিন পরিস্থিতিতে কাজ করতে হচ্ছে। এছাড়াও, মামলার সম্মুখীন হলেও তারা কার্যকর আইনি সুরক্ষা বা জরুরি আর্থিক সাহায্য পাচ্ছেন না।
৫.১ বাকস্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকার
সাংবাদিকদের বাকস্বাধীনতা চর্চার মতো সুরক্ষিত অধিকারের জন্য তাদের হয়রানি করতে আইন ব্যবহার করা উচিত নয়। বছরের পর বছর ধরে, সাংবাদিকরা তাদের অনলাইন ও অফলাইন রিপোর্টিংয়ের জন্য বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেপ্তার ও আটকের শিকার হয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দণ্ডবিধি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সাইবার নিরাপত্তা আইন এবং আদালত অবমাননা আইনসহ প্রযোজ্য বিভিন্ন আইনের অধীনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলি চিহ্নিত ও পর্যালোচনা করতে হবে। পর্যালোচনার পর প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে, সংশ্লিষ্ট সরকারি কৌঁসুলি কর্তৃক মামলা প্রত্যাহারের অথবা পুলিশ কর্তৃক চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। মিথ্যা মামলার প্রমাণ পাওয়া গেলে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৫.২ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলির পর্যালোচনা (মধ্যমেয়াদী)
গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রক সংস্থা/প্রেস কাউন্সিল বা জাতীয় মানবাধিকার কমিশন দ্বারা সাংবাদিকদের বিচারিক হয়রানির ব্যাপারে গবেষণা করা উচিত, যেখানে পুলিশ বেআইনি গ্রেপ্তার, তল্লাশি এবং আটক করেছে এবং যেখানে বিচারকরা অনুপযুক্ত রিমান্ড আদেশ জারি করেছেন অথবা দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন।
৫.৩ ন্যায্য মজুরি (মধ্যমেয়াদী)
৫.৩.১ সাংবাদিকদের জন্য ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য, সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনা করে নিয়মিত মজুরি পর্যালোচনা করতে হবে, বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ১৪৩ ধারা অনুযায়ী গঠিত সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডকে সুপারিশ জানাতে হবে এবং বোর্ডের সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
৫.৪ সাংবাদিকদের প্রয়োজনে আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা (স্বল্পমেয়াদী)
৫.৪.১ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০১৪ এর ৭ ধারা সংশোধন করা, যাতে সাংবাদিকদের সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তার জন্য আবেদন করার এবং তা পাওয়ার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
৫.৪.২ এই ধরনের আবেদন গ্রহণ ও বিবেচনার জন্য জেলা কমিটিগুলোকে সক্রিয় করা (সাংবাদিক কল্যাণ বিধিমালা, ২০১৬ এর বিধি ৮ অনুযায়ী গঠিত)।
৫.৪.৩ প্রতিটি প্রেস ক্লাবে প্রাসঙ্গিক তথ্য প্রদানের মাধ্যমে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট তহবিল থেকে কিভাবে সাংবাদিকরা এই ধরনের সহায়তা পেতে পারেন সে সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচারাভিযান চালানো।
৫.৫ আইনি সহায়তা (স্বল্পমেয়াদী)
জাতীয় আইনি সহায়তা সেবা সংস্থার উচিত হুমকি, হয়রানি বা ভয় দেখানোর শিকার সাংবাদিকদের সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া। এই সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের আর্থিক অবস্থা এবং উপযুক্ততা মূল্যায়ন করা হবে।
৫.৬ ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকদের সুরক্ষা
ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকদের বর্তমানে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষার অভাব রয়েছে, যার ফলে তারা হয়রানির শিকার হতে পারে। তাদের অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
৬. গণমাধ্যম সংস্থাগুলিতে সমতা এবং বৈষম্যহীনতা নীতি নিশ্চিত করা (মধ্যমেয়াদী)
বাংলাদেশে ঐতিহ্যগতভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নারী ও সদস্যরা প্রায়শই লক্ষ্য করেন যে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে তাদের উদ্বেগগুলো সঠিকভাবে তুলে ধরা হয় না। বিশেষত যেখানে তথ্যপ্রাপ্তি ও যোগাযোগের সুযোগ সীমিত, সেখানে এই সমস্যা আরও প্রকট। এছাড়াও, গণমাধ্যম সংস্থাগুলিতে তাদের প্রতিনিধিত্বও অপ্রতুল। তাছাড়া গণমাধ্যম সংস্থাগুলির লিঙ্গ, ধর্ম, জাতিগততা বা অক্ষমতার ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যের অভাব রয়েছে।
৬.১ লাইসেন্সপ্রাপ্ত গণমাধ্যম সংস্থাগুলির উচিত সমতা এবং বৈষম্যহীনতা নীতি প্রতিষ্ঠা করা, যাতে নারী এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়ের সদস্যদের প্রতিনিধিত্ব কর্মক্ষেত্রে নিশ্চিত করা যায়, এবং এ সম্পর্কিত তথ্য বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রকাশ করা উচিত।
৬.২ পিআইবি এবং বিভিন্ন গণমাধ্যম সংস্থা নারী সাংবাদিক, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাংবাদিক এবং সংখ্যালঘু ভাষার সংবাদ মাধ্যমের জন্য প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির অনুদানের পাশাপাশি রিপোর্টিং ফেলোশিপ প্রদান করতে পারে।
৬.৩ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উচিত বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের স্বরূপ ও ঘটনা সম্পর্কে গবেষণা পরিচালনা করা, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে “বিদ্বেষমূলক বক্তব্য”-এর একটি কার্যকর সংজ্ঞা তৈরি করা এবং নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উপর আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে এর প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা।
৭. বিচারিক কার্যক্রমের প্রতিবেদন (স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদী)
৭.১ আদালত এবং আদালতের নথিপত্রে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে, যাতে স্বচ্ছ, সঠিক এবং সময়োপযোগী প্রতিবেদন নিশ্চিত হয়। এক্ষেত্রে স্পষ্ট নির্দেশিকা প্রণয়ন করতে হবে, যেখানে বিচারাধীন বিষয়গুলোর প্রতিবেদন সংক্রান্ত বিধিনিষেধ সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে।
৭.২ সকল আদালত কক্ষে সাংবাদিকদের জন্য বসার জায়গা থাকা উচিত।
৭.৩ বিচার বিভাগ/সরকারের উচিত কিছু বিচারিক কার্যক্রম টেলিভিশনে সম্প্রচারের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা।
৭.৪ সাংবাদিকরা যেন আদালতের কার্যক্রম এবং বিচার প্রশাসনের অগ্রগতি সম্পর্কে সময়োপযোগী ও সঠিক তথ্য সংগ্রহ করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য বিচার বিভাগ এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের উচিত প্রেস অফিসার নিয়োগ করা।[9]
৭.৫ আদালতের প্রতিবেদন প্রকাশে বিধিনিষেধ (স্বল্পমেয়াদী)
বিচারাধীন ও বিচার-পরবর্তী বিষয়গুলোর ওপর গণমাধ্যমের প্রতিবেদন প্রকাশের বিধিনিষেধের একটি অভিন্ন মান বিচার বিভাগের তৈরি করা উচিৎ, যার মধ্যে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে:
৭.৫.১ অনুরোধ ছাড়াই প্রতিবেদন প্রকাশে বিধিনিষেধ:
বিচার বিভাগ সাংবাদিকদের জন্য ব্যবহারিক নির্দেশনা জারি করবে, যেখানে অপ্রাপ্তবয়স্ক, যৌন বা লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার শিকার/উত্তরজীবী এবং দুর্বল সাক্ষী বা আসামিদের জড়িত মামলাগুলোর পরিচয় প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। এই নিষেধাজ্ঞা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর অধীনে বিদ্যমান সুরক্ষার অতিরিক্ত সুরক্ষা প্রদান করবে এবং এতে দাম্পত্য বিরোধও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কাছ থেকে স্পষ্টভাবে সম্মতি গ্রহণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সম্মতি পাওয়ার সুযোগ না থাকলে, প্রতিবেদন প্রকাশের নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।[10] অপ্রাপ্তবয়স্কদের জড়িত মামলায়, তাদের পূর্ণ গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কোনো শনাক্তযোগ্য তথ্য প্রকাশ করা যাবে না।
৭.৫.২ অনুরোধের ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রকাশে বিধিনিষেধ: বিচার বিভাগ ব্যবহারিক নির্দেশনা জারি করবে, যা আদালতকে কোনো পক্ষ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য এবং কোনো পক্ষ/সাক্ষীর গোপনীয়তা রক্ষার জন্য অনুরোধ করলে, নির্দিষ্ট মামলায় প্রতিবেদন প্রকাশে বিধিনিষেধ আরোপ করার অনুমতি দেবে, যদি না জনস্বার্থে এই তথ্য প্রকাশ করা অত্যাবশ্যকীয় হয়।[11]
৭.৫.৩ উন্মুক্ত বিচার নীতির মূলকথা: নিশ্চিত করতে হবে যে প্রতিবেদন প্রকাশের বিধিনিষেধ শুধুমাত্র শেষ উপায় হিসেবে আরোপ করা হয়, কেবলমাত্র যখন এটি, “সুষ্ঠু বিচার ও উন্মুক্ত বিচারের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে ন্যায়বিচার প্রশাসনে গুরুতর ঝুঁকি প্রতিরোধ করার” জন্য (ICCPR-এর ১৪ অনুচ্ছেদ) অপরিহার্য হবে।[12] যেকোনো বিধিনিষেধের পরিধি ও সময়সীমা উল্লেখ করে লিখিত ব্যাখ্যা দেয়া উচিৎ হবে।
৮. তথ্যে প্রবেশাধিকার (স্বল্পমেয়াদী)
সাংবাদিকরা প্রায়শই সরকারি সংস্থা, সরকারি কর্তৃপক্ষ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তথ্য পেতে অসুবিধার সম্মুখীন হন। সেই জন্য, তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ (“আরটিআইএ”)-এর নিম্নলিখিত সংস্কারগুলো সুপারিশ করা হলো:
৮.১ তথ্য অধিকার আইনের ৭ নং ধারা সংশোধন করে আন্তর্জাতিক মানের সাথে সঙ্গতি রেখে ICCPR-এর ১৪, ১৯ এবং ২০ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত বিধান অনুযায়ী করা উচিৎ, যাতে তথ্যাদি প্রকাশনার ফলে বিচারকার্য, জাতীয় নিরাপত্তা বা কোনো ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকার ক্ষুন্ন না হয়। এছাড়াও, জনস্বার্থে তথ্য প্রকাশ করা অত্যাবশ্যক হলে, এই বাধাগুলো অতিক্রম করার জন্য একটি “অতিক্রমন” এর বিধান থাকা উচিৎ হবে।
৮.২ তথ্য অধিকার আইন সংশোধন করে এমন একটি বিধানের সংযোজন করতে হবে যাতে, যখন জনস্বার্থে তথ্য প্রকাশ আবশ্যক হয়, বেসরকারি কোম্পানি এবং অ-সরকারি সংস্থাগুলোর কাছেও তথ্য অধিকারের আবেদন করা যায়।
৮.৩ তথ্য অধিকার আইনের ৬ নং ধারা সংশোধন করে একটি নতুন বিধান যোগ করতে হবে। এই বিধান অনুযায়ী, তথ্য কমিশন প্রতিটি সরকারি কর্তৃপক্ষের তথ্য প্রকাশনার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবে এবং প্রতিটি কর্তৃপক্ষ তাদের তথ্য প্রকাশনায় কতটা সফল হয়েছে, সে বিষয়ে লিখিত মতামত দেবে। এছাড়াও, তথ্য কমিশন তথ্য অধিকার আইনের অধীনে করা আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রকাশিত সকল তথ্যের একটি উন্মুক্ত তথ্য ভাণ্ডার তৈরি করবে, যাতে ভবিষ্যতে জনগণ আলাদাভাবে আবেদন না করেই এই তথ্য পেতে পারে।
৯. সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করায় গণমাধ্যমের ভূমিকা (মধ্যমেয়াদী)
সম্প্রতি গণমাধ্যম প্রসঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে।[13] বেশ কয়েক দশক ধরে, সম্পাদক ও সাংবাদিকরা এই সংস্থাগুলো থেকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতির শিকার হয়েছেন বলে জানা যায়।[14] তদুপরি, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রায়শই কিছু ব্যক্তি বা সংস্থা সম্পর্কে তথ্য প্রকাশের জন্য সরবরাহ করে, যার মধ্যে চলমান ফৌজদারি তদন্ত সম্পর্কিত তথ্যও অন্তর্ভুক্ত থাকে, যা গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকরা সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ ছাড়াই প্রচার করে, কখনও কখনও চাপের মুখে।
৯.১ প্রস্তাবিত গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্ব হবে এই ধরনের জবরদস্তি ও হুমকির অভিযোগের তদন্ত করা এবং যারা গণমাধ্যমকে গোপনে বা প্রকাশ্যে ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করে, সেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
৯.২ গোয়েন্দা সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই না করেই যেন প্রকাশ না হয়, সেজন্য গণমাধ্যম সংস্থাগুলোর উচিত সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।
৯.৩ আনুষ্ঠানিক আইনি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পূর্বেই কেউ যেন মিডিয়া ট্রায়ালের সম্মুখীন না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য গণমাধ্যম সংস্থাগুলির উচিত শক্তিশালী কার্যবিধি তৈরী করা।
৯.৪ নির্দোষতার নীতি লঙ্ঘন করে, সন্দেহভাজন বা গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে এমন তথ্য ও উপকরণ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি যদি প্রকাশ করে, গণমাধ্যম সংস্থাগুলির উচিৎ সেগুলোর প্রচারণা থেকে বিরত থাকা।
*****
[1] Staff Reporter, ‘Bangladesh Editor Faces 79 Court Cases After an Unusual Confession’ The Independent (Dhaka, 6 December 2018) < https://www.theindependentbd.com/home/printnews/177499>.
[2] The Daily Star, ‘Use and misuse of defamation law and its impact on journalism’, 26 November 2019 <https://www.thedailystar.net/round-tables/news/use-and-misuse-defamation-law-and-its-impact-journalism-1832056>.
[3] Maher Sattar ‘Only aggrieved person can file defamation case: HC’ The New York Times (New York, 27 March 2016) <https://www.nytimes.com/2016/03/28/world/asia/bangladesh-editor-faces-79-court-cases-after-saying-he-regrets-articles.html>
[4] See the Appellate Division’s judgment in Ekramul Haque Bulbul and Ors. v Muhammad Faiz and Ors 35 BLD (AD) (2015) 87 emphasising the public’s right to information, including about the justice system, and recognising that the media serves the public’s demand for information.
[5] Mozammel H. Khan, ‘Freedom of press and contempt of court’, The Daily Star, 26 August 2010, <https://www.thedailystar.net/news-detail-152250>. Staff Correspondent, ‘Lawyer, journalist sued over talk-show’, The New Age, 27 June 2024, <https://www.newagebd.net/post/country/238597/lawyer-journalist-sued-over-talk-show>. Sumit Galhotra, ‘In Bangladesh, journalist summoned for criticism of court’, Committee to Protect Journalists, 23 April 2014, < https://cpj.org/2014/04/in-bangladesh-journalist-faces-litigation-for-crit/>.
[6] Star Online Report, ‘Prothom Alo editor gets bail in Jhalakathi case’, The Daily Star, 27 January 2015, https://www.thedailystar.net/prothom-alo-editor-gets-bail-in-jhalakathi-case-61908
[7] Junaid K. Doja, Marketing Director, International Book Agency Limited, Dhaka v The State 2001 21 BLD 573.
[8] https://www.unicef.org/eca/media/ethical-guidelines#:~:text=Respect%20the%20dignity%20and%20rights,protected%20from%20harm%20and%20retribution.
[9] https://www.judiciary.uk/about-the-judiciary/training-support/judicial-office/press-and-communications/press-office/
[10] Refer to best practices, including those from South Africa and the United Kingdom: Reporting the Courts; A Guide for South African Journalists, SANEF, page 84. See, https://courtreporting.sanef.org.za/wp-content/uploads/SANEF-Court-Reporting-Manual-webversion-Feb-2022.pdf
[11] The High Court has previously made such directions in such a case concerning gender-based violence against a young woman: case on file with BLAST।
[12] Reporting Restrictions in Criminal Courts, Judicial College, UK, July 2023, page 34. See, https://www.judiciary.uk/wp-content/uploads/2023/07/Reporting-Restrictions-in-the-Criminal-Courts-July-2023.pdf
[13] দেখুন, https://www.kalerkantho.com/print-edition/news/2025/01/18/1469952
[14] দেখুন, https://www.aljazeera.com/features/2015/10/7/bangladeshi-spies-accused-of-blocking-media-adverts