বিচার ব্যবস্থার সংস্কার বিষয়ে
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এর
প্রস্তাবনা
ভুমিকাঃ
ব্লাস্ট, একটি জাতীয় বেসরকারী বিনামূল্যে আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা, ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আর্থিক বা সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে আইনি সহায়তা থেকে বঞ্চিত জনগোষ্ঠী, বিশেষত নারী, শিশু, শ্রমিক এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর, ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করে আসছে। ব্লাস্টের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে:
- পারিবারিক, দেওয়ানী, শ্রম অধিকার, ফৌজদারি মামলা এবং মৌলিক অধিকার সুরক্ষায় আর্থিক সামর্থ্য ও যোগ্যতার পরীক্ষার ভিত্তিতে বিচার ব্যবস্থার মাঠ পর্যায় থেকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত বিনামূল্যে আইনগত সেবা প্রদান করা (তথ্য ও পরামর্শ প্রদান, রেফারেল, মধ্যস্থতা/সালিশ বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি এবং মামলা মোকদ্দমার মাধ্যমে)।
- জনস্বার্থ মামলা দায়েরের পাশাপাশি আইন, নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের জন্য গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং বিচারক, আদালতের কর্মকর্তা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, আইনজীবী ও প্যারালিগালদের মতো বিচার ব্যবস্থার অংশীজনদের জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা ও সক্ষমতা উন্নয়ন কর্মসূচি পরিচালনা করা।
- বিচার ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, আইন কমিশন, আইনজীবী, আইনজীবী সমিতি, পাবলিক প্রসেকিউটর, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার এবং ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার-এর মতো প্রাসঙ্গিক সরকারি ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থার সাথে কাজ করা।
এ প্রেক্ষাপটে এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে, ব্লাস্ট বিচার বিভাগীয় সংস্কার এবং সাধারণ মানুষের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য, নিম্নলিখিত সুপারিশগুলো প্রস্তুত করেছে। বিশেষত দরিদ্র মানুষ এবং নারী, শিশু, শ্রমিক ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় (যারা লিঙ্গ, জাত, ধর্ম, নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, প্রতিবন্ধকতা বা জন্মস্থানের কারণে বৈষম্য বা বঞ্চনার শিকার) এ সুপারিশমালা বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। এ সুপারিশমালা ২৫ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বিচার সংস্কার কমিশনের প্রাপ্ত বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোতে মতামত জমা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে:
১. বিচারপ্রাপ্তি সহজীকরণ
২. মানবাধিকার সুরক্ষায় বিচার বিভাগের ভূমিকা
৩. বিচারঙ্গনকে নারী ও শিশুবান্ধব করা
৪. সুবিধাবঞ্চিত ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য বিচার বিভাগকে সুগম্য করা
৫. বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি কার্যকর করা
৬. আইনগত সহায়তা কার্যক্রমকে কার্যকর করা
৭. বিচারঙ্গনে বিচারপ্রার্থীদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা
৮. অন্যান্য সুপারিশসমূহ
১। বিচারপ্রাপ্তি সহজীকরণ
১.১ আইনের বাস্তবায়নঃ
১.১.১. ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩), শিশু আইন ২০১৩, মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০, পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩, যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮, নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২, শ্রম আইন ২০০৬ এবং অন্যান্য বিশেষ আইনসমূহে উল্লেখিত সময়সীমার মধ্যে তদন্ত ও বিচার বিচারিক কার্যক্রম বাধ্যতামূলক ভাবে নিষ্পত্তি করা।[i]
১.১.২. অপরাধের গুরুত্বকে বিবেচনায় নিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলার শুনানি সম্পন্ন ও নিষ্পত্তি করা।
১.১.৩. আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০ এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মাধ্যমে আদালতে অনলাইন বা ভার্চুয়াল শুনানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এ প্রক্রিয়া প্রান্তিক পর্যায়ের বিচারপ্রার্থী বিশেষতঃ নারী ও প্রতিবন্ধী বিচার প্রার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবে এবং দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিতে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। আদালতগুলোতে ইন্টারনেট সহ আনুষাঙ্গিক সুবিধা নিশ্চিত করা, পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদে ইন্টারনেট ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা।
১.২. প্রশাসনিক ব্যবস্থার উন্নয়নঃ
১.২.১. বর্তমানে, নিম্ন ও উচ্চ আদালত উভয় ক্ষেত্রেই বাৎসরিক ছুটির সময়কাল দীর্ঘ, যা পরোক্ষভাবে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিকে ব্যাহত করে। এ বিষয়ে উভয় আদালতের ছুটির সময়কাল যৌক্তিকভাবে কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করা ।
১.২.২. জেলা সমূহে শ্রম সম্পর্কিত মামলার সংখ্যা বিবেচনায় শ্রম আদালতের সংখ্যা নির্ধারণ করা এবং শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত বেঞ্চ গঠন করা।
১.২.৩. অনলাইন মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান অপরাধের সংখ্যাকে বিবেচনায় নিয়ে যৌক্তিকভাবে জেলাসমূহে সাইবার ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বৃদ্ধি করা।
১.২.৪. বর্তমানে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালগুলোতে (আটটি জেলা ব্যতীত অন্য সব জেলায়) মানবপাচার মামলাগুলোর বিচার কার্যক্রমও পরিচালনা করা হয়ে থাকে, যা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালগুলোর উপর বাড়তি চাপ তৈরি করে। একইসাথে, তা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের মামলা এবং মানবপাচার মামলা উভয় ক্ষেত্রেই দ্রুত নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি করে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে মানবপাচার সংক্রান্ত মামলার জন্য প্রতিটি জেলায় পৃথক ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা।
১.২.৫. নারী, শিশু, শ্রমিক এবং প্রান্তিক পর্যায়ের বিচারপ্রার্থীদের সুবিধার্থে সকল আদালতে সম্পূর্ণ বিচারিক প্রক্রিয়াতে (যথাঃ মামলা দায়ের, নথিপত্র জমা দেওয়া, সমন জারি, শুনানি এবং শুনানির সময়সূচি প্রদর্শন) তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনা করা।
১.২.৬. মামলা সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য প্রাপ্তির লক্ষ্যে বিনামূল্যে (টোল ফ্রি) হটলাইন সেবা চালু করা। ।
১.২.৭. প্রচলিত আইন অনুযায়ী আদালতের বিচার কার্যক্রমে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় সামগ্রী (ডিজিটাল ডিভাইসসমূহ) এবং বিচার বিভাগের উন্নয়ন সংক্রান্ত বাৎসরিক বাজেট যৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি করা।
১.২.৮. আদালত কর্মকর্তাদের সম্মানী ও সুবিধাদি যৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি করা।
২। মানবাধিকার সুরক্ষায় বিচার বিভাগের ভূমিকা
২.১. ন্যায়বিচার
২.১.১. বিচার প্রার্থীর সুরক্ষা নিশ্চিতঃ ভয়ভীতি, হুমকি বা প্রতিশোধ হতে ভুক্তভোগী এবং সাক্ষীদের সুরক্ষার লক্ষ্যে খসড়া ভুক্তভোগী এবং সাক্ষী সুরক্ষা আইনের আলোকে এ বিষয়ক কার্যকরী একটি আইন দ্রুত প্রণয়ন করা ।
২.১.২. আইনানুযায়ী যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে গ্রেফতার ও আটক
২.১.২.১. ম্যাজিস্ট্রেটদের অবশ্যই গ্রেফতারী পরোয়ানা ছাড়া আটক এবং রিমান্ড প্রদানের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনাবলী[ii] কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। এ নির্দেশনাবলী মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশের[iii] আওতায় বর্ণিত অপরাধে গ্রেফতারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। এ নির্দেশনার অবমাননাকারী ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবমাননার আদেশ প্রদানসহ কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
২.১.২.২. বিচারকদের জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা (Practice Direction) জারি করতে হবে যাতে তারা শিশু আইন, ২০১৩ এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে আইনের সাথে সংঘাতে জড়িত বা আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুদের জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ নিশ্চিত করেন।
২.১.২.৩. প্রতিটি জেলার বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ তাঁর জেলার কারাগার প্রতিমাসে একবার পরিদর্শন করার বিধান আছে। জেল কোডের সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে বিজ্ঞ জেলা জজগণ যেন প্রতিমাসে একবার কারাগার পরিদর্শন করেন তা নিশ্চিত করা। বিশেষ করে হিজড়া কারাবন্দীদের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
২.১.২.৪. একটি ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে, যেখানে বিচারকরা বাধ্যতামূলকভাবে আদালত চলাকালীন একটি চেকলিস্ট পর্যালোচনা করবেন, যা অভিযুক্তকে আদালতে হাজির করার সময় সব ধরনের যথাযথ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে। এর মধ্যে রয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার গ্রেপ্তার প্রোটোকল মেনে চলার বিষয়টি যাচাই করা (যেমন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকাগুলো)[iv], শিশুদের ক্ষেত্রে শিশু আইন, ২০১৩ এর যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, নির্যাতনের অভিযোগ নথিভুক্ত করা, প্রয়োজনে অভিযুক্তকে চিকিৎসা পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করা ইত্যাদি। এই ব্যবস্থাটি আদালতের প্রতিবেদকদের মাধ্যমে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রদান করে পর্যবেক্ষণ করতে পারবে।
২.১.৩. দ্রুত বিচার নিশ্চিতকরণ
২.১.৩.১. সুস্পষ্ট নির্দেশনা (Practice Direction) জারি করা উচিত যাতে সাইবার ট্রাইব্যুনালগুলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ বা সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩-এর অধীনে নির্ধারিত সময়সীমার বাইরে তদন্তের সময় বাড়ানোর অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে লিখিতভাবে কারণ উল্লেখ করে এবং সেই কারণগুলো উচ্চ আদালতকে অবহিত করে। ট্রাইব্যুনালের জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা প্রদান করা উচিত, যেখানে সময় বৃদ্ধির অনুমোদনের উপযুক্ত ভিত্তি উল্লেখ থাকবে। যদি উত্থাপিত কারণগুলো জব্দকৃত কোনো বস্তু ধরে রাখার যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়, তবে উচ্চ আদালত সেই বস্তুগুলো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করবে।
২.১.৩.২. সুস্পষ্ট নির্দেশনা (Practice Direction) জারি করা উচিত, যাতে আমলী আদালতগুলো তদন্তের সময় বাড়ানোর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ভিত্তি উল্লেখপূর্বক লিখিত নথি প্রণয়ন এবং উচ্চ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বাধ্য থাকে। এই সুস্পষ্ট নির্দেশনা কেবল তখনই প্রযোজ্য হবে, যখন প্রাসঙ্গিক আইনে এ বিষয়ে কোনো স্পষ্ট বিধান থাকবে না। আরও সুস্পষ্ট নির্দেশনা (Practice Direction) জারি করা উচিত, যাতে উচ্চ আদালত আমলী আদালত কর্তৃক তদন্তের সময় বৃদ্ধির ভিত্তির বৈধতা যাচাই করতে পারে।
২.১.৩.৩. আদালতে কোনো মামলার রায় ঘোষণার পর বাধ্যতামূলক ভাবে একটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা লিখিত আকারে পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশ করা।
২.২. মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং তথ্যের অধিকার
২.২.১. ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ধারা ১৯৮ অনুযায়ী,[v] তৃতীয় পক্ষ কর্তৃক দায়ের করা মানহানির মামলা আমলে নেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশ্যে সুস্পষ্ট নির্দেশনা (Practice Direction) জারি করা। এই নির্দেশনা অমান্য করে কেউ এ ধরণের মামলা আমলে নিলে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া যাবে।
২.২.২. ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ধারা ১৯৬ এর বিধান অনুযায়ী,[vi] সরকারের অনুমোদন বা তাদের নির্ধারিত কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ধারা ১২৪-এর অধীনে রাষ্ট্রদ্রোহ বা অধ্যায় VI-এর সংশ্লিষ্ট অপরাধে দায়েরকৃত মামলা আমলে না নেওয়ার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশ্যে সুস্পষ্ট নির্দেশনা (Practice Direction) জারি করা।
২.২.৩. পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২-এর অধীনে দায়েরকৃত মামলাগুলোর ক্ষেত্রে, যদি বিষয়বস্তু সরাসরি অভিযোগকারীর জন্য হুমকি সৃষ্টি না করে, তবে পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন ব্যতীত মামলা আমলে না নেওয়ার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট ও ট্রাইব্যুনালকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা (Practice Direction) জারি করা।
২.২.৪. আদালতের কার্যক্রম নিয়ে ন্যায়সঙ্গত প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে আদালতকে অবমাননাকর বলে দায়ের করা মামলাগুলো আমলে না নেওয়ার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশ্যে সুস্পষ্ট নির্দেশনা (Practice Direction) জারি করা। ন্যায়বিচারের বিষয়ে জনসাধারণের আস্থা বজায় রাখা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও তথ্য অধিকার নিশ্চিত করার জন্য এই ধরণের ব্যবস্থা অপরিহার্য।
২.৩. গোপনীয়তা: গোপনীয়তা নিশ্চিত করার জন্য পারিবারিক মামলায় সংশ্লিষ্ট পক্ষদের শুধু পারিবারিক আদালতেই নয় সুপ্রিম কোর্টেও রুদ্ধদ্বার কক্ষে শুনানির সুযোগ দেওয়া। এ সুযোগ যেকোনো পক্ষের অনুরোধে প্রযোজ্য হওয়া উচিত।
৩। বিচারাঙ্গনকে নারী ও শিশুবান্ধব করা
৩.১. বিচারাঙ্গনকে নারী বান্ধব করা
৩.১.১. পারিবারিক মামলায় ডিক্রি জারির জন্যে পৃথক মামলা দায়েরের প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা পরিলক্ষিত হয়, এ ক্ষেত্রে ডিক্রি জারি পৃথক মামলা দায়ের পরিহার করে পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩ এর ১৬ (২) ধারা অনুযায়ী ডিক্রি জারির আদেশ বাস্তবায়ন করা আবশ্যক।[vii]
৩.১.২. ভরণপোষণের মামলায় আপীল করার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে ভরণপোষণের ডিক্রিকৃত অর্থের ৫০% অর্থ জমা দিয়ে আপীল করার উত্তম চর্চাকে (Best Practice) কার্যকরীভাবে সকল পারিবারিক আদালতে বাস্তবায়নের জন্য একটি নির্দেশনা জারি (Practice Direction) করা।
৩.১.৩. পারিবারিক আদালত সমূহে পারিবারিক বিরোধ মামলায় নারী বিচার প্রার্থীদের প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা, জরুরি আশ্রয় সেবা প্রদান, মনোসামাজিক সহায়তা প্রদান, মধ্যস্থতা/সালিশি সেবা প্রদান এবং সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার মধ্য দিয়ে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে পারিবারিক আদালতের অধীনে এ আদালতের বিচারকদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পারিবারিক সহায়তা সেল (Family Support Cells) প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। এ সেলগুলো আইনগত সহায়তা প্রদানকারী অন্যান্য সংস্থা বিশেষ করে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা, সমাজসেবা অধিদপ্তর, এবং বেসরকারি আইন সহায়তা সংস্থাসমূহের সাথে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে কাজ করবে।
৩.১.৪. আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০ এর ৩(১) ও ৩(২) ধারাসমূহ এবং সাক্ষ্য (সংশোধিত) আইন ২০২২ এর ৬৫(ক) ও ৬৫(খ) ধারা সমূহের সুষ্ঠু প্রয়োগের মাধ্যমে যৌন ও লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা এবং মানবপাচার অপরাধে ভুক্তভোগী নারীদের সাক্ষ্য অনলাইনে গ্রহণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।[viii]
৩.১.৫. আদালত কক্ষ এবং প্রাঙ্গণে নারীদের জন্য পর্যাপ্ত বসার ব্যবস্থা, আদালতের প্রতিটি ভবনে পৃথক স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ শৌচাগার এবং নিরাপদ মাতৃদুগ্ধ পানকেন্দ্র থাকা আবশ্যক।
৩.১.৬. নিম্ন আদালতসমূহে যৌন হয়রানি নিরসনে উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে যৌন হয়রানি অভিযোগ কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। একইসাথে, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সহকর্মীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচার-প্রচারনা করা।
৩.১.৭. নারীদের সম্মানহানিকর কোন বক্তব্য আদালতে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রধান বিচারপতির সুস্পষ্ট নির্দেশনা (Practice Direction) জারি করা আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে চারিত্রিক সাক্ষ্য বিষয়ে সাক্ষ্য (সংশোধিত) আইন, ২০২২ বিশেষতঃ ধারা ১৫১ (Indecent and scandalous questions) ও ১৪৬ (৩) (Questions lawful in cross-examination) সমূহের সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
৩.১.৮. সংবেদনশীল মামলা বিশেষত নারী ও শিশু সংশ্লিষ্ট সকল মামলায় ব্যাক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার উদ্দেশ্যে বিশেষ করে সকল অনলাইন অফলাইন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ল’ রিপোর্টে ছদ্মনাম ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা থাকা আবশ্যক এবং এ বিষয়ে ২০২২ সালের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার উপর ভিত্তি করে সুস্পষ্ট নির্দেশনা (Practice Direction) জারি করা।[ix]
৩.১.৯. যৌন ও লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতায় ভুক্তভোগী নারী অভিযোগকারীর উপর দুই আঙ্গুলি পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ বিষয়ক নির্দেশনা সম্বলিত রায়ের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন পরিলক্ষিত হচ্ছে না; এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা আবশ্যক।
৩.২. বিচারাঙ্গনকে শিশুবান্ধব করা:
৩.২.১. শিশুদের সংবেদনশীলতাকে বিবেচনায় নিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল থেকে আলাদা করে পূর্বের ন্যায় পৃথক শিশু আদালত প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৩.২.২. প্রবেশন ব্যবস্থা নিয়ে অনেক আইনজীবী, প্রসিকিউটর ও আদালত পর্যাপ্তভাবে সংবেদনশীল নন যার ফলে প্রবেশন ব্যবস্থার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন এখনো সম্ভব হয়নি। তাই এ বিষয়ে আইনজীবী ও আদালতের সচেতনতা ও সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে এবং এ বিষয়ে বিচারকদের ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলার জন্য বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, বার কাউন্সিল এবং আইনজীবী সমিতিগুলো উদ্যোগ নিয়ে প্রবেশন বিষয়ক আলোচনা সভা বা সেমিনার আয়োজন করা।
৩.২.৩. প্রবেশন মঞ্জুরকারী আদালতের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রবেশন কর্মকর্তার কার্যক্রমের সমন্বয়হীনতা দূরীকরণে প্রবেশন কর্মকর্তাদের কার্যালয়সমূহ সমাজসেবা অধিদপ্তর বা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে আদালত ভবনে স্থানান্তর করা প্রয়োজন। এ স্থানান্তর আদালতের সঙ্গে প্রবেশনের আদেশ জারি ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আরও কার্যকর সমন্বয় সাধন নিশ্চিত করবে।
৩.২.৪. উচ্চ আদালতের বিভিন্ন বেঞ্চ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত উত্তম চর্চার অনুসরণে, হেফাজত ও অভিভাবকত্বের মামলাসহ সকল মামলায় বিচারকদের খাস কামরা/কক্ষ (Judges’ chambers) বা রুদ্ধদার কক্ষে শুনানির (Camera hearing) মাধ্যমে শিশুদের মতামত প্রকাশের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।।
৩.২.৫. শিশু সংশ্লিষ্ট মামলায় গণমাধ্যম প্রতিবেদন বা ব্রিফিং সংবেদনশীলতার সঙ্গে পরিচালনা করা উচিত এবং শিশুদের চিহ্নিত করা যায় এমন কোন তথ্যসূত্র উল্লেখ করা যাবে না।
৩.২.৬. বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিতের স্বার্থে, আদালতের প্রতিবেদককে (Court Reporter) অভিভাবকত্ব, হেফাজত এবং শিশু-সম্পর্কিত যেকোন মামলায় বিচারক ও শিশুর মধ্যকার আলোচনা/কথোপকথন সংরক্ষণ (record) করতে হবে এবং প্রতিবেদন আকারে উপস্থাপন করা।
৩.২.৭. শিশু আদালতে শিশু সংক্রান্ত মামলায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচারকদের জন্য একটি চেকলিস্ট প্রস্তুত করা প্রয়োজন, যা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সঠিকভাবে বিবেচনায় নেওয়া নিশ্চিত করবে (যেমন শিশুদের হাতকড়া পরানোর নিষেধাজ্ঞা অনুসরণ করা)।
৩.২.৮. আদালত কক্ষ এবং প্রাঙ্গণে শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত বসার ব্যবস্থা এবং শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা এবং একইসাথে ন্যায়কুঞ্জের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।
৪। সুবিধাবঞ্চিত ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য বিচার বিভাগকে সুগম্য করা
৪.১. প্রতিবন্ধী ব্যক্তিঃ সকল আদালত প্রাঙ্গনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রবেশগম্যতা (লিফট/ র্যাম্প) এবং ইশারা ভাষা (Sign Language) সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। যদি কোনো শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির আদালতে উপস্থিত থাকার প্রয়োজন হয় এবং নির্ধারিত আদালত কক্ষটি তাদের জন্য প্রবেশযোগ্য না হয়, তবে তাদের আবেদনের ভিত্তিতে শুনানিটি একটি প্রবেশযোগ্য কক্ষে স্থানান্তর করা যেতে পারে। সকল আদালতসমূহে শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পাশাপাশি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্যও যুক্তিসঙ্গত সুবিধার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তিতে বাধাদানকারী আইন/নিয়মসমূহ[x] বাতিল করা প্রয়োজন এবং একইসাথে, বিচার বিভাগে তাদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৪.২. আদিবাসী জনগোষ্ঠীঃ পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে অনতিবিলম্বে পারিবারিক আদালত (Family Courts) প্রতিষ্ঠা করা উচিত এবং স্ব স্ব জনগোষ্ঠীর জন্য যে আইন প্রযোজ্য তা প্রয়োগ করা উচিত। একইসাথে, অনুবাদের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে আদিবাসীদের প্রথাগত আইন বিশেষজ্ঞদের তালিকা তৈরী করা এবং আদালতের কাজে তাদেরকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন।
৪.৩. অনুবাদকঃ সমস্ত আদালত এবং আইনগত সহায়তা প্রদান কার্যালয়ের জন্য একটি অনুবাদক/দোভাষীর তালিকা প্রস্তুত করা।
৪.৪. হিজড়া জনগোষ্ঠীঃ কোর্ট গারদে এবং কারাগারে হিজড়া জনগোষ্ঠীর সদস্যদের রাখার জন্যে পৃথক ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
৪.৫. যাতায়াত খরচঃ বিচারপ্রার্থী, বিশেষত সুবিধাবঞ্চিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং সাক্ষীদের আদালতে উপস্থিতির জন্য যাতায়াত খরচ প্রদান নিশ্চিত করা আবশ্যক।
৪.৬. আইনগত সহায়তা সংস্থায় প্রতিনিধিত্ব: প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সদস্যদের (প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, নৃগোষ্ঠী/আদিবাসী জনগোষ্ঠী/ দলিত/ হিজড়া) জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা (NLASO), সুপ্রিম কোর্ট আইনগত সহায়তা কমিটি এবং জেলা আইনগত সহায়তা কমিটিগুলিতে, পাশাপাশি বেসরকারি আইনগত সহায়তা সংগঠনগুলোতে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।
৪.৭. গবেষণা: বিচার বিভাগ এবং আদালতের কর্মকর্তাদের মধ্যে লিঙ্গ, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকল জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে কিনা তা নির্ধারণের জন্য গবেষণা পরিচালনা করা উচিত এবং স্বচ্ছতার জন্য এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা প্রয়োজন।
৪.৮ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীঃ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ন্যায়বিচার দ্রুত নিশ্চিত করতে এবং নিয়মিত আদালতের ওপর চাপ কমাতে উখিয়া ও টেকনাফ এলাকায় বিশেষ আদালত (চৌকি আদালত) স্থাপন করা প্রয়োজন। এছাড়াও, স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের মধ্যে বিরোধ মীমাংসার ক্ষেত্রে জেলা লিগ্যাল এইড অফিস সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে। ক্যাম্প এলাকায় দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার জন্য মোবাইল কোর্ট স্থাপন অথবা প্রতি ২-৩টি ক্যাম্পের জন্য একজন ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত করা যেতে পারে।
৪.৯ ভ্রাম্যমাণ আদালতঃ প্রত্যন্ত অঞ্চল যেমন, দুর্গম চর এলাকা, কক্সবাজার ও ভাসানচরের রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে ভ্রাম্যমাণ বা সার্কিট আদালত স্থাপন করা।
৫। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি কার্যকর করা
৫.১. মামলা জট কমাতে এবং দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে সালিশ/মীমাংসা যোগ্য সকল দেওয়ানী/পারিবারিক/ফৌজদারি/শ্রম মামলায় বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (ADR) পদ্ধতির ব্যবহার/প্রয়োগ বাধ্যতামূলক করা।
৫.২. আদালতে বিচারাধীন মীমাংসা যোগ্য মামলাসমূহ বাধ্যতামূলক ভাবে ADR এর মাধ্যমে মীমাংসা করার জন্যে গ্রাম আদালত, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা এবং বেসরকারি আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থায় প্রেরণ করা যেতে পারে এবং এ মামলাসমূহের দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য নিয়মিত তদারকি করা।
৫.৩. সালিশ/মীমাংসা যোগ্য মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ার প্রয়োগ উদ্বুদ্ধকরণ এবং সালিশ/মীমাংসা অযোগ্য মামলায় যেন আইন বহির্ভূতভাবে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ার প্রয়োগ না হয় সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা (Practice Direction) দেয়া।
৫.৪. দেওয়ানী কার্যবিধি ১৯০৮-এর ৮৯(ক)(১০) ধারা যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য প্রতিটি জেলার বার সমিতিকে নির্ধারিত ও স্বচ্ছ মানদণ্ডের ভিত্তিতে সালিশ পরিচালনাকারীদের প্যানেল তৈরি করা এবং সংশ্লিষ্ট সকল দেওয়ানী আদালতকে প্যানেল বিষয়ে অবগত করা।
৫.৫. জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পরিষেবা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
৫.৬. বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষাক্রম ও পেশাগত পাঠ্যক্রমে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি সম্পর্কিত বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা।
৬। আইনগত সহায়তা কার্যক্রমকে কার্যকর করা
৬.১. জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান কার্যক্রমে পর্যাপ্ত জনবল নিযুক্ত করা এবং একজন নির্ধারিত (Designated) লিগ্যাল এইড অফিসার নিয়োগ করা যিনি আইন সহায়তা কার্যক্রমের জন্যেই নিয়োজিত থাকবেন।
৬.২. জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান কার্যক্রমের অধীনে সালিশ পরিচালনার জন্যে প্রশিক্ষিত সালিশ কর্মকর্তাদের প্যানেল থাকা প্রয়োজন।
৬.৩. জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান কার্যক্রমকে কার্যকর করার জন্য বেসরকারি সংস্থার সাথে অংশীদারিত্ব গঠন করা।
৬.৪. বিচার ব্যবস্থায় সকল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।
৬.৫. ইতোপূর্বে আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সহায়তায়) Justice Audit কে হালনাগাদ করে সকলের জ্ঞাতার্থে অনলাইনে প্রকাশের ব্যবস্থা করা।
৬.৬. একটি কার্যকরী অনলাইন কেইস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রণয়নের মধ্য দিয়ে বিচারপ্রার্থীদের বিচারাধীন মামলা গুলোর হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করতে হবে, যেখানে মামলার প্রকৃতি অনুযায়ী/বিচারপ্রার্থীর পরিচয় অনুযায়ী/প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন শ্রেণি অনুযায়ী তথ্যের সুস্পষ্ট বিভাজন থাকবে এবং মোট বিচারাধীন ও নিষ্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যার উল্লেখ থাকবে। এর ফলে বিচারপ্রার্থীগণ তাদের মামলার অগ্রগতি বিষয়ে জানতে পারবে।
৬.৭. আদালতে চলমান মামলা সমূহের তথ্য অনলাইন ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্তিকরণের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে জনবল নিয়োজিত করা আবশ্যক।
৬.৮. কমিউনিটি প্যারালিগ্যাল ও কোর্ট প্যারালিগ্যাল[xi] দীর্ঘ দিন ধরে ভুক্তভোগী ব্যক্তি এবং আইনজীবীদের মাঝে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে আসছেন। তাঁরা মূলত ভুক্তভোগী ব্যক্তি কি ধরণের আইনি প্রতিকার চাইছেন তা আইনজীবীদের সামনে তুলে ধরেন এবং একইসাথে, আইনজীবীদের পক্ষ হতে কি ধরনের আইনি সহায়তা প্রদান করা সম্ভব তা বিচার প্রার্থীকে অবগত করেন। প্যারালিগ্যাল কার্যক্রমকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদানের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের আইনগত সহায়তা কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া প্রয়োজন। এর ফলে আদালত, থানা, কারাগার এবং শরণার্থী শিবিরের মতো সংবেদনশীল স্থান সমূহে বিচারপ্রার্থীদের প্রবেশগম্যতা কে সহজীকরণ করবে এবং বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।
৬.৯. আদালতের বিচারিক কার্যক্রমের সহায়তা করার জন্যে বিশেষ করে মামলা সংক্রান্ত আইনি গবেষণার ক্ষেত্রে, রেকর্ডের/মামলার নথির সারাংশ প্রস্তুত, জেলা আইনগত সহায়তা কার্যক্রম কে সহায়তা এবং হেল্প ডেস্কে বিচার প্রার্থীদের সহায়তা প্রভৃতি ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবী বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
৭। বিচারাঙ্গনে বিচারপ্রার্থীদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা
৭.১. বিচার প্রার্থীদের তাৎক্ষণিক এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিতের লক্ষ্যে নিম্ন ও উচ্চ প্রতিটি আদালত প্রাঙ্গণে প্যারালিগ্যাল/প্রশিক্ষিত স্বেছাসেবক/বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সহায়তাসহ একটি ফ্রন্ট ডেস্ক স্থাপন করা।
৭.২. আদালতের সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তির বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের অভিযোগ জানানোর লক্ষ্যে আদালত প্রাঙ্গণে একটি দৃশ্যমান স্থানে “অভিযোগ বক্স” স্থাপন করা। এ অভিযোগগুলোর তদন্ত কার্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পাদন, তদন্তের ফলাফলের প্রেক্ষিতে গৃহীত পদক্ষেপ বিষয়ে অভিযোগকারীকে জানানোর সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকতে হবে।
৭.৩. আদালতের কার্যক্রমের সার্বিক পর্যবেক্ষণ এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিতে একটি ই-ড্যাশবোর্ড স্থাপন করা।
৭.৪. অনলাইনে মামলা দায়ের, শুনানির জন্যে মামলা লিস্টে আনা (fixing/mentioning) মুলতবি (adjournment), স্থগিতাদেশ বর্ধিতকরণ (stay extension) এর ব্যবস্থা থাকা।
৭.৫. মামলার পক্ষ (Client) সমূহের সাথে মামলা বিষয়ক আলোচনা এবং একইসাথে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া পরিচালনা করার জন্যে আদালত প্রাঙ্গনে এবং বার অ্যাসোসিয়েশন ভবনে আইনজীবীদের জন্য পৃথক স্থান/ পরামর্শ কক্ষ থাকা।
৭.৬. মামলার পক্ষ সমূহের সার্বিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করে আদালতে বিচারিক প্রক্রিয়ায় কারাবন্দীদের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য কারাগারের অভ্যন্তরে একটি নিরাপদ নির্ধারিত কক্ষের ব্যবস্থা করা। তবে এসব কক্ষে আদালতের সাথে কারাবন্দীদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রভাবমুক্ত পরিবেশ (কারারক্ষী বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা দ্বারা) নিশ্চিত করা।
৭.৭. বিচার ব্যবস্থা, পুলিশ এবং প্রসিকিউটরদের সমন্বয়ে প্যারালিগ্যালদের সহায়তায় আদালতে সাক্ষীদের সময়মতো উপস্থিতি নিশ্চিত করা যেতে পারে।
৮। অন্যান্য সুপারিশসমূহ
৮.১. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ
৮.১.১. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ
৮.১.১.১. বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ও আইন কর্মকর্তাদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইন, বিচার এবং সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক ভাবে আইন ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা।
৮.১.১.২. একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে সংবিধানের আলোকে সুপ্রিম কোর্টের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে দলীয় সরকারের প্রভাবমুক্ত, ন্যায় ভিত্তিক ও দুর্নীতিমুক্ত স্বাধীন বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা।
৮.১.১.৩. সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ক্ষমতা সম্পর্কিত সুষ্পষ্ট নির্দেশিকা তৈরি এবং তা সকলের জ্ঞাতার্থে প্রকাশ করা।
৮.১.২. বিচারক নিয়োগে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত
৮.১.২.১. সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের অধীনে একটি বিচারক নিয়োগ কমিটি গঠন করা উচিত, যা উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের জন্য অভিজ্ঞতা এবং যোগ্যতার প্রয়োজনীয় মানদণ্ড নির্ধারণ করবে।
৮.১.২.২. এই বিচারিক নিয়োগ কমিটি নিম্ন ও উচ্চ উভয় আদালতের বিচারকদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে এবং তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে।
৮.১.২.৩. সহকারী বিচারক পদে নিয়োগের জন্য বিচার বিভাগীয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্যতার মানদণ্ড হিসেবে নিম্ন আদালতে একজন আইনজীবী হিসেবে কমপক্ষে দুই বছর মামলা পরিচালনা (Practice) করার অভিজ্ঞতা থাকা আবশ্যক।
৮.১.৩. বিচারিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিতকরণ
৮.১.৩.১. বিচারকদের বিচারিক কার্যক্রম প্রত্যাশিত মানদন্ড পূরণ করছে কিনা তা নিশ্চিত করতে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদারকি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।
৮.১.৩.২. আদালতের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে শিশু, পারিবারিক বিষয়, ধর্ষণ বা অন্যান্য সংবেদনশীল বিষয়ে মামলা ব্যতীত অন্য সব মামলায় পক্ষ সমূহের সম্মতি, গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনা সাপেক্ষে আদালতে পরীক্ষামূলকভাবে মামলার শুনানি কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করা যেতে পারে। পরীক্ষামূলক কর্মসূচির পর্যালোচনার ভিত্তিতে পরবর্তীতে এর পরিসর বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
৮.১.৩.৩. সুপ্রিম কোর্টে কর্মরত বেঞ্চ অফিসার এবং সেকশন অফিসারদের পেশাগত মান বজায় রাখা নিশ্চিত করতে একটি কার্যকর তদারকি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।
৮.১.৩.৪. আদালতের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের যে কোন অভিযোগ অনলাইন মাধ্যমে দায়েরের ব্যবস্থা এবং ডিজিটাল ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করতে হবে। এ ট্র্যাকিং সিস্টেম দায়ের করা মোট অভিযোগের সংখ্যা এবং এ অভিযোগগুলোর অগ্রগতির অবস্থা প্রকাশ করবে।
৮.১.৩.৫. বিচারিক প্রক্রিয়ায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী সকল আদালতে তথ্য কর্মকর্তা নিয়োগ করা।
৮.১.৩.৬. আদালত প্রাঙ্গণে মামলা সংক্রান্ত আর্থিক অনৈতিক লেনদেন বন্ধে সমগ্র আদালত প্রাঙ্গন বিশেষত সেরেস্তা এবং সেকশন গুলো সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা যেতে পারে।
৮.১.৩.৭. প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে আদালতের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোন অসদাচরণ (যেমন, শুনানির জন্যে তালিকাভুক্ত মামলার ফাইল শুনানির সময় আদালতে উপস্থাপন না করা) বা আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে দায়ী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৮.১.৩.৮. আইনজীবীদের বিরুদ্ধে যে কোনো অসদাচরণ, বিশেষ করে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে বার কাউন্সিলকে অনতিবিলম্বে সে বিষয়টি সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৮.১.৩.৯. বিচারিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং মামলার সঠিক তথ্য প্রচার নিশ্চিতে, সব আদালত কক্ষে সাংবাদিকদের উপস্থিতির অনুমতি দেয়া ।
৮.১.৩.১০. অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের কর্মকর্তা এবং সরকারি কৌসুলি (Public Prosecutor) দের উপযুক্ত পারিশ্রমিক নিশ্চিত করে তাদের ব্যক্তিগতভাবে মামলা পরিচালনা (Private Practice) বন্ধ করা।
৮.১.৩.১১. দুর্নীতি মুক্ত বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দুর্নীতি বিষয়ে আদালত কর্তৃক গৃহীত যেকোনো পদক্ষেপ সর্বসাধারণের কাছে প্রকাশ করা।
৮.১.৩.১২. বিচারকদের বা বিচারকার্যে নিয়োজিত সকল কর্মকর্তার হালনাগাদকৃত সম্পদের বিবরণ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা।
৮.১.৩.১৩. বিচারকরা তাঁদের নির্ধারিত কর্মঘণ্টা কঠোরভাবে মেনে চলবেন এবং এ বিষয়ে জেলা পর্যায়ে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত বিচারকগণ নিয়মিত তদারকি করবেন এবং তা রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর মাসিক প্রতিবেদন হিসেবে দাখিল করবেন।
৮.১.৩.১৪. বিচারিক ব্যবস্থায় প্রক্রিয়াগত ভুল বা অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা (Zero Tolerance) নীতি গ্রহণ করতে হবে, যাতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।
৮.১.৩.১৫. বিচারক, প্রসিকিউটর, আদালত কর্মকর্তা বা অন্যান্যদের বিরুদ্ধে মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্ব এবং নির্ধারিত সময়সীমা অনুসরণ না করার জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ বিষয়ে ত্রৈমাসিক মামলার প্রতিবেদন রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর দাখিল করবেন যেখানে মামলার বিলম্বের কারণ উল্লেখ থাকতে হবে।
৮.২. বিচারিক সক্ষমতার উন্নয়ন
৮.২.১. নিম্ন ও উচ্চ আদালতের বিচারকদের জন্যে নিয়মিত নতুন প্রণীত আইন, যুগান্তকারী রায়, নৈতিকতা, প্রযুক্তির ব্যবহার, আন্তর্জাতিক আইন এবং বিশ্বের বিভিন্ন বিষয়ে আইনশাস্ত্রের উন্নয়ন বিষয়ে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের পক্ষ হতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, সেমিনার ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করা।
৮.২.২. বিচারিক প্রক্রিয়ায় নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে যে ধরণের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়, তা প্রতিহতকরণ এবং এ জনগোষ্ঠীর প্রতি সংবেদনশীলতা নিশ্চিতকরণে সংশ্লিষ্ট বিচারক, আইনজীবী এবং আদালতের কর্মকর্তাদের এ সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বিশেষ করে যৌন ও লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা এবং পারিবারিক সহিংসতার মামলাগুলোর শুনানির সাথে সংশ্লিষ্ট বিচারক, আদালতের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং আইনজীবীদের ভুক্তভোগী ও সাক্ষী সুরক্ষা, এবং লিঙ্গ ভিত্তিক এবং শিশুর প্রতি সংবেদনশীলতা (Gender and Child sensitisation) বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া।
৮.২.৩. লিখিত রায় প্রদানের জন্য একটি নির্ধারিত সময়সীমা নির্ধারণ করা উচিত এবং তা কঠোরভাবে অনুসরণ করা। এ সময়সীমা অনুসরণ করা না হলে, তা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্যকরা।
৮.২.৪. বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিলকে যথাক্রমে বিচারক, আইনজীবী, সালিশ/মধ্যস্ততাকারীগণের জন্য বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি সম্পর্কিত বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৮.২.৫. পারিবারিক আদালত, শ্রম আদালত ও শ্রম আপীলের ট্রাইব্যুনালের মত বিশেষ আদালতের বিচারক বা চেয়ারম্যান বা সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের পূর্বে নিয়োগপ্রাপ্ত সকল বিচারককেসংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা পরিচালনা বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করা।
—————
তথ্যসুত্রের তালিকাঃ
ক) ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮, ধারা ৩৩৯(গ)
খ) ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮, ধারা ১৯৬
গ) ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮, ধারা ১৯৮
ঘ) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০, ধারা ২০(৩)
চ) সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩, ধারা ৫১(১)
ছ) যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮, ধারা ৮
জ) মানব পাচার (প্রতিরোধ ও দমন) আইন ২০১২, ধারা ২৪(১)
ঝ) পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০, ধারা ২০(১)
ঞ) নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩, ধারা ১৪ (২)
ট) পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২, ধারা ১১
ঠ) বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬, ধারা ২১৬(১২)
ড) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬, ধারা ৭৭, ৭৮ ও ৭৯
ঢ) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স ১৯৭৮, ধারা ৭৯, ৮০ ও ৮১
ণ) রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ আইন ১৯৯২, ধারা ৮০ ও ৮২
ত) Bangladesh and others v. BLAST and others [2017] 69 DLR (AD) 63
থ) পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, ধারা ১৬(২)
দ) আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার আইন ২০২০, ধারা ৩
ধ) সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২, ধারা ৬৫(ক) এবং ৬৫ (খ)
ন) Judgement in Writ Petition No. 4171 of 2022
প) বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের প্রবেশ পদে নিয়োগ বিষয়ক আদেশ, ২০০৭, অনুচ্ছেদ ১০ (২) ও ১০ (৩)
[i] ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৩৩৯(গ) অনুযায়ী ক্ষেত্রবিশেষে ১৮০ দিন এবং ৩৬০ দিনেরর মধ্যে বিচারকার্য সম্পন্ন করতে হবে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ধারা ২০(৩) অনুযায়ী ১৮০ দিনের মধ্যে বিচারকার্য সম্পন্ন করতে হবে, শিশু আইন, ২০১৩ এর ধারা ৩২ (১) অনুযায়ী ৩৬০ দিনের মধ্যে বিচারকার্য সম্পন্ন করতে হবে, সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ এর ধারা ৫১ (১) অনুযায়ী ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচারকার্য সম্পন্ন করতে হবে, যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ এর ধারা ৮ অনুযায়ী আইনের অধীনে বিচার ফৌজদারি কার্যবিধিতে বর্ণীত সময়ের মধ্যে পদ্ধতি অনুযায়ী সম্পন্ন হবে, মানব পাচার (প্রতিরোধ ও দমন) আইন, ২০১২ এর ধারা ২৪ (১) অনুযায়ী ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল বিচারকার্য সম্পন্ন করিবে, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ এর ধারা ২০(১) অনুযায়ী প্রতিটি আবেদন, ক্ষতিপূরণ আদেশের আবেদন ব্যতীত, নোটিশ জারীর তারিখ হইতে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচারকার্য সম্পন্ন করতে হবে, নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর ধারা ১৪ (২) অনুযায়ী মামলা দায়েরের ১৮০ দিনের মধ্যে বিচারকার্য নিষ্পন্ন করতে হবে, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২ এর ধারা ১১ অনুযায়ী ফৌজদারী কার্যবিধিতে বর্ণিত সময়ের মধ্যে পদ্ধতি অনুযায়ী হবে, এবং বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ধারা ২১৬ (১২) অনুসারে, শ্রম আদালতের বিচারকার্য মামলা দায়ের করার সর্বোচ্চ ১৫০ দিন র মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
[ii] Bangladesh and others v. BLAST and others [2017] 69 DLR (AD) 63 অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট, বিচারক, ও সংশ্লিষ্ট ট্রাইবুনালের জন্য নির্দেশনাঃ (১) গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭(২) ধারার বিধানানুযায়ী কেইস ডায়রি ছাড়া আদালতে উপস্থাপন করে তাকে পুলিশি হেফাজতে (রিমান্ড) নেয়ার বা বিচারিক হেফাজত বা কারাগারে প্রেরণের আবেদন করা হলে সংশ্লিস্ট ম্যাজিস্ট্রেট বা বিচারক/ট্রাইবুনাল উক্ত আবেদন নাকচ করে কার্যবিধির ধারা ১৬৯ অনুযায়ী গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির কাছ থেকে একটি বন্ড নিয়ে তাকে মুক্তি দেবেন। (২) কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার হয়ে পুলিশ-হেফাজতে আটক রয়েছেন এমন কোনো ব্যক্তিকে কোন সুনির্দিষ্ট মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর অনুমতি চাওয়া হলে, সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট বা আদালত/ট্রাইবুনাল উক্ত আবেদন মঞ্জুর করবেন না যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা সংশ্লিস্ট মামলাসংক্রান্ত কেইস ডায়রির তথ্য বা বিবরণীর একটি অনুলিপি আদালতে উপস্থাপন না করেন। (৩) উপরি-উক্ত শর্তাবলী পূরণ সাপেক্ষে, কার্যবিধির ১৬৭(২) ধারার বিধান অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে আটকের ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করা না গেলে এবং সংশ্লিষ্ট মামলাটি নিরঙ্কুশভাবে দায়রা আদালত বা কোনো ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক বিচার্য হলে, ম্যাজিস্ট্রেট অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কার্যবিধির ৩৪৪ ধারা অনুযায়ী একাধারে আনধিক ১৫ দিনের জন্য পুলিশের কাছে রিমান্ডে পাঠাতে পারবেন। (৪) পুলিশ প্রতিবেদনে (ফরওয়ার্ডিং) বর্ণিত কারণ বিবেচনায় নিয়ে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ বা তথ্যের সুদৃঢ় ভিত্তি রয়েছে এই মর্মে ম্যাজিস্ট্রেট সন্তুষ্ট হলে এবং কেইস ডায়রিতে ঐ ব্যক্তিকে আটক রাখার পক্ষে যথেষ্ট কারণ থাকলে, তিনি ঐ ব্যক্তিকে তাঁর স্ব-বিবেচনায় উপযুক্ত কোন হেফাজতে অধিকতর আটক রাখার আদেশ দিতে পারবেন। (৫) পুলিশের ফরওয়ার্ডিং প্রতিবেদন হতে কোন ব্যক্তিকে মূলতঃ নিবর্তনমূলক আটকের উদ্দেশ্যেই ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হলে ম্যাজিস্ট্রেট গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে বিচারিক হেফাজত তথা কারাগারে আটক রাখার আদেশ দিবেন না। (৬) আদালতে হাজির করা কোনো আসামি বা অভিযুক্ত ব্যক্তির বিষয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারার অধীন রিমান্ডের আদেশদানের পূর্বে, উপরি-উক্ত শর্তগুলো পূরণ করা হয়েছে কি না তা দেখা সংশ্লিস্ট ম্যাজিস্ট্রেট বা বিচারক/ট্রাইবুনালের দায়িত্ব। (৭) কাউকে গ্রেপ্তার বা আটকের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্য বা গ্রেপ্তারের ক্ষমতাসম্পন্ন কোনো কর্মকর্তা আইন লঙ্ঘন করেছেন বলে বিশ্বাস করার কারণ থাকলে, ম্যাজিস্ট্রেট ঐ কর্মকর্তা/সদস্যের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২২০ ধারা অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নিবেন। (৮) মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদনে নির্যাতনের কারণে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতীয়মান হলে, ম্যাজিস্ট্রেট উক্ত ব্যক্তিকে হেফাজতে নেওয়া কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অথবা যে কর্মকর্তার হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে তাঁর নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের ১৫ ধারার অপরাধ আমলে নেবেন। (৯) নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ এর ধারা ২ এ বর্ণিত সংজ্ঞানুযায়ী কোনো ব্যক্তি পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন বা মৃত্যুর শিকার হয়েছেন মর্মে তথ্য কিংবা এই সংক্রান্ত কাগজপত্র পাওয়া গেলে, আঘাত বা মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিকে নিকটস্থ চিকিৎসকের কাছে পাঠাবেন। আর মৃত্যুর ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তির মরদেহ পরীক্ষার জন্য মেডিকেল বোর্ডে পাঠাবেন।
[iii] ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৬ এর ৭৭, ৭৮ ও ৭৯ নং ধারা,
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৮ এর ৭৯, ৮০ ও ৮১ নং ধারা,
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ আইন, ১৯৯২ এর ৮০ ও ৮২ নং ধারা
[iv] Bangladesh and others v. BLAST and others [2017] 69 DLR (AD) 63 অনুযায়ী সমাজ ও নাগরিকের প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ i) সমাজের সেবা করা এবং অপরাধ ও বেআইনি কর্মকান্ড থেকে জনগণকে রক্ষা করার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বদা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে। তাদের প্রতিটা পদক্ষেপ উচ্চ-মানের পেশাগত দায়িত্বশীলতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। ii) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে মানুষের মর্যাদার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে এবং প্রত্যেক ব্যক্তির মানবাধিকার রক্ষা ও সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট থাকবে। iii) দায়িত্ব পালনের জন্য অনিবার্যভাবে প্রয়োজন হলেই কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শক্তি প্রয়োগ করতে পারবে, তবে কখনই প্রয়োজনের অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করা যাবেনা। iv) আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্যাতন বা অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক বা মর্যাদাহানিকর আচরণ বা শাস্তি প্রয়োগ বা প্রশ্রয়দান কিংবা তা প্ররোচিত করবে না, এবং এরূপ কোন কাজকে বৈধতা বা সমর্থন দানের জন্য উর্দ্ধতন কর্মকর্তার আদেশ বা রাষ্ট্রের কোন জরুরি অবস্থা যেমন, যুদ্ধ, যুদ্ধের হুমকি বা জাতীয় নিরাপত্তাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করবে না। v) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোর পাশাপশি তা রক্ষা করার চেষ্টা করবে। vi) মানবজীবন হলো সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ, তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মানুষের জীবন ও মর্যাদা রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করবে। vii) যেহেতু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধান লক্ষ্য হলো সমাজ থেকে অপরাধ দূর করা, সেহেতু অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর তাদের শক্তি ও সম্পদ খরচ করার চেয়ে অপরাধ প্রতিরোধ করাই ঢের শ্রেয়।; পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য নির্দেশনাঃ (১) কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে/সদস্যকে তাৎক্ষণিকভাবে একটি স্মারক বা মেমো তৈরি করতে হবে, যাতে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির স্বাক্ষরসহ গ্রেপ্তারের সময় ও তারিখের উল্লেখ থাকবে। (২) কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অবশ্যই ঐ ব্যক্তির নিকটাত্মীয়কে এবং নিকটাত্মীয়ের অবর্তমানে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর কোন বন্ধুকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি যত দ্রুত সম্ভব কিন্তু অনধিক ১২ ঘন্টার মধ্যে জানাতে হবে। তাছাড়া, গ্রেপ্তারের স্থান, সময়, এবং গ্রেপ্তারকৃতকে কোথায় আটক বা কার হেফাজতে রাখা হয়েছে তা-ও জানাতে হবে। (৩) গ্রেপ্তারের কারণ, যিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ বা তাকে গ্রেপ্তারে সহায়ক তথ্য দিয়েছেন তাঁর নাম ও ঠিকানা, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির যে আত্মীয় বা বন্ধুকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে তাঁর নাম ও পরিচয়, এবং গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার যে কর্মকর্তার হেফাজতে রয়েছেন তাঁর পরিচয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কেইস ডায়রিতে অন্তর্ভুক্ত করবেন। (৪) ধারা ১৬৭(২) অনুযায়ী আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তার হেফাজত অথবা বিচারিক হেফাজতে আটক ব্যক্তির আটকাদেশ চাওয়ার জন্য আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা নিবন্ধন করা একটি অপরিহার্য শর্ত। (৫) ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩ ধারার অধীন আটকাদেশ দেয়ার উদ্দেশ্যে কাউকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা যাবেনা। (৬) কাউকে গ্রেপ্তার করার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে তার নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে হবে। যাঁকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তিনি অথবা গ্রেপ্তারের স্থানে যাঁরা উপস্থিত রয়েছেন তাঁরা দেখতে চাইলে, গ্রেপ্তারকারী কর্মকর্তাকে অবশ্যই তাঁর পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে হবে। (৭) গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির শরীরে কোনো রকম আঘাতের চিহ্ন দেখা গেলে, গ্রেপ্তারকারী কর্মকর্তা এধরনের আঘাতের কারণ ও বিবরণ লিপিবদ্ধ করতঃ তাঁকে নিকটতম হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করবেন এবং দায়িত্বরত চিকিৎসকের সনদ সংগ্রহ করবেন। (৮) কোনো ব্যক্তিকে তাঁর বাসা বা ব্যবসায়িক স্থান ভিন্ন অন্যকোনো স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হলে, তাঁকে থানায় নিয়ে আসার ১২ ঘন্টার মধ্যে তাঁর স্বজনদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো গ্রেপ্তারকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব। (৯) গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি ইচ্ছা পোষণ করলে তাঁকে তাঁর পছন্দের আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করার কিংবা স্বজন বা নিকটজনের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ দিতে হবে। (১০) ফৌজদারি কার্যবিধির ৬১ ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে নিকটতম ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা কার্যবিধির ধারা ১৬৭(১) এর অধীন প্রদত্ত তাঁর প্রতিবেদনে কেন ২৪ ঘন্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট অভিযোগের তদন্ত শেষ করা সম্ভব হয়নি তা ব্যাখ্যা করবেন। উক্ত প্রতিবেদনে ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগ বা তথ্যকে তিনি কেন সুনির্দিষ্ট বা নির্ভরযোগ্য বলে মনে করেন তা-ও উল্লেখ করতে হবে। অধিকন্তু, ফৌজদারি কার্যবিধির ৬১ ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা কেইস ডায়রির সংশ্লিষ্ট তথ্য বা বিবরণীর একটি অনুলিপি (বি.পি. ফরম ৩৮ দ্রষ্টব্য) ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রদান করবেন।
[v] ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ধারা ১৯৮: No Court shall take cognizance of an offence falling under Chapter XIX or Chapter XXI of the Penal Code or under sections 493 to 496 (both inclusive) of the same Code, except upon a complaint made by some person aggrieved by such offence:
Provided that, where the person so aggrieved is a woman who, according to the customs and manners of the country, ought not to be compelled to appear in public, or where such person is under the age of eighteen years or is an idiot or lunatic, or is from sickness or infirmity unable to make a complaint, some other person may, with the leave of the Court, make a complaint on his or her behalf:
Provided further that where the husband aggrieved by an offence under section 494 of the said code is serving in any of the armed forces of Bangladesh under conditions which are certified by the Commanding Officer as precluding him from obtaining leave of absence to enable him to make a complaint in person, some other persons authorized by the husband in accordance with the provisions of sub-section (1) of section 199B may, with the leave of the Court, make a complaint on his behalf.
[vi] ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ধারা ১৯৬ঃ No Court shall take cognizance of any offence punishable under Chapter VI or IXA of the Penal Code (except section 127), or punishable under section 108A, or section 153A, or section 294A, or section 295A or section 505 of the same Code, unless upon complaint made by order of, or under authority from, the 1[Government, or some officer empowered in this behalf by the Government].
[vii] পারিবারিক আদালত আইন, ২০২৩ (২০২৩ সনের ২৬ নং আইন) ধারা ১৬ (২) আপিলযোগ্য সকল রায় বা আদেশে নিষ্পত্তির বিষয়, তৎসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত এবং উক্ত সিদ্ধান্তের কারণসমূহের উল্লেখ থাকিবে।
[viii] আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০ (The Use of Information Technology by Courts Act, 2020), s3(1)(2)m; The Evidence Act, 1872, ss 65(A) and 65(B).
[ix] Judgement dated 17.04.2022 in Writ Petition No. 4171 of 2022
[x] The framework of the Bangladesh Judicial Service (Formation, Recruitment, and Removal) Rules 2007, Rule 5(4); বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের প্রবেশ পদে নিয়োগ বিষয়ক আদেশ, ২০০৭, অনুচ্ছেদ ১০ (২) ও ১০ (৩)
[xi] প্যারালিগ্যাল হচ্ছেন মূলত সেই ব্যক্তি যিনি প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান ও দক্ষতার ভিত্তিতে স্ব-উদ্যোগে বা কোনো প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিয়োজিত হয়ে অধিকার বঞ্চিত সেবাগ্রহণকারী/প্রত্যাশীর জন্য আইনগত সেবা ও তথ্য সহায়তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সংযোগ সাধন ও উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
Official website of Judicial Reform Commission
https://www.jrc.gov.bd/
বিচার বিভাগীয় সংস্কারে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের সুপারিশ

কার্যকর এডিআর ব্যবস্থার মাধ্যমে মামলার দীর্ঘসূত্রীতা ও মামলা জট কমানো সম্ভব। ব্লাস্ট আয়োজিত ‘‘বিচার বিভাগীয় ও পুলিশ সংস্কার সংক্রান্ত প্রস্তাবিত সুপারিশমালা” শীর্ষক আলোচনায় সম্মানিত অতিথি আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী এ মন্তব্য করেন। আজ ২৬শে নভেম্বর ২০২৪ তারিখে বিকাল ৩ টায় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি উল্লেখ করেন আদালতের বিভিন্ন কার্যক্রম ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে পরিচালনা করে কিভাবে সময় ও সম্পদ বাচানো যায় সে ব্যবস্থাও করতে হবে। আসামীদের নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় ব্যয় হ্রাস করার জন্য হাজিরার জন্য আলাদা করে আদালত কক্ষ তৈরী করা যেতে পারে। মামলার দীর্ঘসূত্রিতা হ্রাস করার জন্য বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির উপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। সেই সাথে বিশেষ আদালত তৈরী করা যেতে পারে। আইনজীবীদের নিয়মিত নতুন আইন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করা প্রয়োজন যাতে আইনগুলো সচল হয় এবং আইনজীবীদের মাধ্যমেও বিচারকেরা নতুন আইন সম্পর্কে জানতে পারে। এছাড়াও তিনি বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ ও যোগ্যতা নির্ভর নিয়োগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থাকে কিভাবে কার্যকরী করা যায় সে দিকেও নজর দিতে হবে। বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি স্বাধীন স্বত্তা থাকা জরুরী, যারা আবেদনকারীর যোগ্যতার ভিত্তিতে বিচারক নিয়োগ দিবেন। সেই সাথে বিচারকদের নিয়মিত কর্মদক্ষতা মূল্যায়ন করাও প্রয়োজন যাতে করে তা মামলা দায়েরকারীদের কোনভাবে প্রভাবিত করতে না পারে। পাশাপাশি বিচারকের কর্মদক্ষতা হ্রাসে পেলে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের বিচারককে বরখাস্ত করারও অধিকার থাকতে হবে।
মাননীয় বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী আরও বলেন, পুলিশ বাহিনীকে যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে যাতে তারা কোন ক্ষমতাশালী দ্বারা প্রভাবান্বিত না হয়ে তার দায়িত্ব পালন করতে পারে। পুলিশ যাতে স্বাধীনভাবে তাদের কাজ করতে পারে সে জন্য আমাদের পুরো ব্যবস্থার পরিবর্তন করা জরুরী। স্বাধীন এবং স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে তিনি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, একজন আসামী হিসেবে শাস্তি ভোগ করে জেল থেকে বের হওয়ার পরে তার পুনর্বাসনের কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না এবং তার চারিত্রিক পরির্তন যে হয়েছে সে সম্পর্কে কোন ধরনের সনদ প্রদান করা হয় না।
আলোচ্য বিষয়ে সারসংক্ষেপ উপস্থাপনা করেন, ব্লাস্টের জেন্ডার জাস্টিস এন্ড উইম্যান এমপাওয়ামেন্ট এর আইন বিশেষজ্ঞ এডভোকেট আয়েশা আক্তার এবং ব্লাস্টের গবেষণা কর্মকর্তা ফাহাদ বিন সিদ্দিকি। বিচার বিভাগীয় সংস্কার নিয়ে আলোচনায় বিচারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব, বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা, ভুক্তভোগী ও সাক্ষী, আইনজীবী ও বিচারকদের সুরক্ষার অভাব, শিশু আদালতে মামলা প্রেরণে অনিয়ম, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং বিচার ব্যবস্থায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি বিদ্যমান বৈষম্যের প্রতিবন্ধকার উপর আলোকপাত করা হয়। এছাড়া আদালতের কার্যক্রম সম্প্রচার, আদালতের কার্যক্রমে প্রযুক্তির ব্যবহার: ডিজিটালাইজেশন: নোটিশ ও সমন ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রেরণ, ভার্চুয়াল শুনানি: ২০২০-এর আইটি আইন পুরোপুরি বাস্তবায়নের কথা বলা হয়। ভুক্তভোগীদের সুবিধা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ওয়ান স্টপ জুডিশিয়াল সার্ভিস”: এক স্থানে মামলা দায়ের, সেবা গ্রহণ, ও আইনি প্রতিকার এবং প্রাথমিক পর্যায়ে বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতার উদ্যোগসহ নানান ধরনের সংস্কার সুপারিশের কথা উঠে আসে।
পুলিশ সংস্কারের জন্য জাতিসংঘ নির্যাতন বিরোধী সনদ ও এর ঐচ্ছিক প্রোটোকল এবং ইস্তাম্বুল প্রটোকলসহ গুরুত্বপূর্ণ সনদের অনুমোদন ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত, হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী ৫৪ ও ১৬৭ ধারাসহ ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন, পুলিশ প্রশিক্ষণের শিক্ষাক্রমে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের (আদিবাসী, দলিত, লিঙ্গ বৈচিত্র্যপূর্ণ জনগোষ্ঠী) প্রথা এবং সাংস্কৃতিক নিয়মাবলী সম্পর্কে সচেতনতামূলক পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা, কোন শিশুকে হেফাজতে নেয়ার সময় বা তাকে নিয়ে পরিবহন করার সময় আলাদা স্থানে রাখার ব্যবস্থা করা এবং লিঙ্গভিত্তিক ও পারিবারিক সহিংসতার ক্ষেত্রে, অভিযোগকারী যাতে অনলাইনে অভিযোগ দায়ের করতে পারে তার জন্য একটি নির্ধারিত ওয়েব পোর্টাল চালু করা সহ আরো বেশ কয়েকটি সুপরিশ উপস্থাপনা করেন।
আলোচনা সভায় উপস্থিত জুলাই আন্দোলনের ভুক্তভোগী সাদিক শাহরিয়ার জারিফ বলেন, ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলা করার ক্ষেত্রে পুলিশ তাদের বয়স বাড়িয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক দেখিয়ে মামলা করছে যা তাদের ভোগান্তি বাড়ায় তাই মামলা করার সময় বয়স নিরুপনের বিষয় থাকা উচিত।
এছাড়াও আলোচনা সভায় উপস্থিত আলোচকগণের বক্তব্যে উঠে আসে, পুলিশের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে, অনেক ক্ষেত্রে থানায় গিয়ে জিডি করা যায় না, থানায় মামলা নিতে চায় না, বিষয়গুলো সহজীকরণ করা জরুরী। স্থানীয় থানায় জনগন কীভাবে মানবিক মর্যাদা পাবে সে বিষয় নিশ্চিত করা জরুরী। পুলিশের কাছে সাধারণ ডায়েরী করতে বললে শ্রমিকেরা পুলিশের কাছে যেতে চায় না এক্ষেত্রে সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি জরুরী। ইতোমধ্যে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে, অতীতে ১৯৯০ এবং ১/১১ এর সময়েও বেশ কিছু অধ্যদেশ তৈরী করা হয়েছিল, কিন্ত সরকার গঠনের পরে রাজনৈতিক দলগুলো আর তার কার্যকারীতার জন্য কাজ করে নাই তাই ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে নির্বাচিত সরকার কীভাবে এ সংস্কারগুলোকে নিয়ে কাজ করবে তা প্রতিষ্ঠা করতেও আমাদের আলোচনা করা দরকার যাতে আমাদের সংস্কার আমাদের অর্জনগুলো হারিয়ে না যায়। Legal Practitoner Fees Act, 1926 কার্যকর করা যেতে পারে যার মাধ্যমে আইনজীবীদের মর্যাদা নিশ্চিত করা যেতে পারে। নিম্ন আদালতে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে দুই বছরের আইনজীবী হিসেবে কাজ করার কর্ম অভিজ্ঞতা থাকাটা শর্ত হিসেবে যুক্ত করা উচিত।
এডভোকেট তাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় উক্ত সভায় আলোচনা করেন এডভোকেট খন্দকার শাহরিয়ার শাকির, এডভোকেট আমিনুল হক তুহীন, এডভোকেট শিহাব আহমেদ সিরাজী, এডভোকেট রবিউল ইসলাম রবি, বৈষম্য বিরোধী আইনজীবী ফোরাম এর এডভোকেট নাফিউল আলম সুপ্ত, এডভোকেট আবিদ হোসেন আনসারী।ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা এস.এম রেজাউল করিম, ব্লাস্টের পরিচালক (আইন) এডভোকেট মোঃ বরকত আলী, ব্লাস্টের ঢাকা ইউনিটের সমন্বয়কারী এডভোকেট মোঃ মশিউর রহমান, এডভোকেসি ও কমিউনিকেশন পরিচালক মাহবুবা আক্তার, ব্লাস্টের প্যানেল আইনজীবী এডভোকেট নমিতা রাণী বিশ্বাস।