বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)
শ্রম সংস্কার কমিশন- এর বরাবরে প্রস্তুতকৃত
সুপারিশসমূহ
২ মার্চ ২০২৫
_____________________________________________________________________________________________
ভূমিকা:
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক ১৮ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন এর জন্য ব্লাস্ট এই সুপারিশগুলো প্রস্তুত করেছে, যার উদ্দেশ্য হল “শ্রম বাজার সংস্কার, শ্রমিকদের অধিকার এবং সামাজিক সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করা”।[i]
ব্লাস্ট-এর সুপারিশগুলো কমিশনের চিহ্নিত আটটি বিষয়ভিত্তিক ক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত: ১) শ্রম অসন্তোষ, বিরোধ নিষ্পত্তি এবং ন্যায় বিচার, ২) নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যসম্মত কর্ম পরিবেশ, ৩) সামাজিক নিরাপত্তা এবং কল্যাণ,৪) নারী অধিকার, সমতা, বৈষম্যহীনতা এবং বিশেষ জনগোষ্ঠী, ৫) মজুরি এবং ন্যায্য হিস্যা, ৬) কাজের অধিকার, সুযোগ, নিশ্চয়তা এবং অন্তর্ভুক্তি, ৭) সংগঠনের অধিকার, অংশগ্রহণ, প্রতিনিধিত্ব ও যৌথ দর-কষাকষি এবং ৮) শিশু শ্রম, কিশোর শ্রম এবং জবরদস্তিমূলক শ্রম।
ব্লাস্ট-এর সুপারিশগুলি বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮), বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ (সংশোধিত ২০২২) এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক আইন ও নীতিমালার সংস্কার এবং কার্যকর বাস্তবায়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। পাশাপাশি, শ্রমিকদের, বিশেষত নারী শ্রমিকদের, আইনি অধিকারের সুরক্ষা এবং বিচার ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকারের জন্য বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের উপরেও আলোকপাত করে। এ সুপারিশগুলি মূলত আনুষ্ঠানিক খাত (বিশেষত পোশাক, চামড়া এবং নির্মাণ শিল্প) এবং অনানুষ্ঠানিক খাত (বিশেষত গৃহকর্ম) উভয় ক্ষেত্রের জন্য প্রযোজ্য।
এই সুপারিশগুলি ব্লাস্টের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন নথি ও প্রতিবেদন পর্যালোচনা, উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত এবং শ্রম আদালতে নিযুক্ত প্যানেল আইনজীবী, শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি, সাধারণ শ্রমিক এবং আত্ননির্ভরশীল দলের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে এবং গত ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ তারিখে ব্লাস্টের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভার মাধ্যমে ব্লাস্টের প্রস্তাবিত সুপারিশসমূহ শ্রম সংস্কার কমিশনের নিকট প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত সকলের আলোচনার প্রেক্ষিতে উপস্থাপিত সুপারিশগুলোর সাথে আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ সংযোজনপূর্বক কমিশনের বিবেচনার জন্য তৈরি করা হয়েছে।
ব্লাস্ট সম্পর্কে:
১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ব্লাস্ট ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সমাজের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য বিনামূল্যে আইনি সহায়তা প্রদান করে আসছে। এটি দেশের সর্ববৃহৎ নিবেদিত বেসরকারি আইন সহায়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, যা সরাসরি আইন সহায়তা প্রদান, পরামর্শ, রেফারেল, সালিস এবং মামলা পরিচালনাসহ গবেষণা, অ্যাডভোকেসী, প্রচার, জনস্বার্থ মামলা এবং বিচারব্যবস্থায় সংশ্লিষ্টদের সক্ষমতা বৃদ্ধির কাজ করে আসছে। ব্লাস্ট সরকার, বিচার বিভাগ এবং নাগরিক সমাজের অংশীদারদের সাথে সমন্বয় করে শ্রমিকদের অধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে, বিশেষত শ্রম আদালত, শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, শ্রম অধিদপ্তর, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা, এবং শ্রমিক আইন সহায়তা সেল, শ্রমিক, শ্রমিক ইউনিয়ন, কারখানার ব্যবস্থাপনা এবং নিয়োগকারী সংগঠন, (যেমন বিজিএমইএ) -এর সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করে আসছে।
শ্রম সংস্কার কমিশনের বরাবরে প্রস্তুতকৃত সুপারিশসমূহ:
১. শ্রম অসন্তোষ, বিরোধ নিষ্পত্তি এবং ন্যায় বিচার:
বাংলাদেশ একটি দ্রুত উন্নয়নমুখী শিল্প ও বাণিজ্যিক খাত সম্পন্ন দেশ, যেখানে ৭.৫ কোটিরও বেশি শ্রমিক কর্মরত।[ii] সারাদেশে মোট ১৩টি শ্রম আদালত এবং একটি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল রয়েছে, যা বর্তমানে প্রায় ২০,০০০ মামলার চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।[iii] ছয়টি আদালতে মোট মামলার সংখ্যা প্রায় ৬০০ এবং আটটি আদালতে ১৯,০০০-এর বেশি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে শুধুমাত্র গাজীপুরের একটি আদালতেই ৬,০০০-এর বেশি মামলা বিচারাধীন।[iv] বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ অনুযায়ী, শ্রম সংক্রান্ত মামলাগুলো নিষ্পত্তির সময়সীমা ৬০ দিন নির্ধারিত, এবং নিষ্পত্তির সর্বোচ্চ সময়সীমা ১৫০ দিন হলেও বাস্তবে এসব মামলা বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকে।[v]
শ্রমিকরা, বিশেষ করে নারী শ্রমিকরা, তাদের আইনি অধিকার ও প্রতিকার সম্পর্কে সবসময় সচেতন নন, বিশেষত বৈষম্য ও হয়রানির বিষয়ে। প্রতিকার প্রাপ্তিতে আদালতের দীর্ঘ পথ তাদেরকে বিচার প্রার্থনায় অনুৎসাহিত করে। মামলার জট, জটিল প্রক্রিয়া, দীর্ঘসূত্রিতা এবং শ্রম আদালতের সংখ্যা সীমিত হওয়ায় অনেক শ্রমিকই প্রতিকার পাওয়ার আশায় মামলা করেও শেষ পর্যন্ত ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন।[vi]
১.১ মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ার প্রয়োগ, শ্রম আইনের ধারা- ২১৪(১০)
পারিবারিক আদালত আইন, ২০২৩ সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আইনে উল্লেখিত “বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি” ব্যবস্থার ন্যায় শ্রম সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬- এ বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা সংযোজন করতে হবে। এরূপ সংযোজন আদালতে মামলার জট কমাতে, স্বল্প সময়ের মধ্যে এবং ন্যূনতম ব্যয়ে পক্ষগুলোর মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। (স্বল্পমেয়াদী)
১.২ শ্রম আদালতসমূহে “আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০” কার্যকরীকরণ:
১.২.১. আদালতে ভার্চুয়াল শুনানী: শ্রম আদালতে বিচারাধীন বেশিরভাগ মামলার বাদী এবং সাক্ষী তৈরি পোশাক শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। দীর্ঘদিন মামলা বিচারাধীন থাকার ফলে অনেক সময় শ্রমিকরা আদালতে আসতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে। এছাড়াও, কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে যা শ্রমিকদের আদালতে যাওয়া নিরুৎসাহিত করে, যেমন: চাকরি হারানোর আশঙ্কা, গ্রামে চলে যাওয়া, নতুন নিয়োগকর্তার কাছ থেকে ছুটি না পাওয়া, আদালতে উপস্থিতির জন্য কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা, দৈনিক মজুরি হারানোর ঝুঁকি এবং আদালতে যাওয়ার যাতায়াত ব্যয়। এমন পরিস্থিতিতে, যেখানে শ্রমিকরা শারীরিকভাবে আদালতে উপস্থিত হতে সক্ষম নন, সেখানে শ্রম আদালতে ভার্চুয়াল শুনানির জন্য তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার চালু করা অত্যাবশ্যক। (স্বল্পমেয়াদী)
সম্প্রতি, ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কর্তৃক জারি করা সার্কুলার নং ১১৪৮-এর মাধ্যমে কোম্পানি সংক্রান্ত বিষয়ে এখতিয়ারসম্পন্ন সুপ্রিম কোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চের ক্ষেত্রে অনলাইনে মামলার সংশ্লিষ্ট নথি দাখিলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।[vii] অনুরূপভাবে, শ্রম আদালতে মামলার সংশ্লিষ্ট নথি অনলাইনে দাখিলের অনুমতি দেওয়ার জন্য একটি নির্দেশনা জারি করা আবশ্যক। (স্বল্পমেয়াদী)
২০২২ সাল থেকে কিছু আদালতের কার্যপ্রণালির ডিজিটালাইজেশন ইতিমধ্যে চালু রয়েছে, যেমন সুপ্রিম কোর্ট মোবাইল অ্যাপ, আপিল বিভাগের অনুলিপি ব্যবস্থাপনা, অনলাইনে অধস্তন আদালতের রায় ও আদেশ প্রকাশ, মনিটরিং কমিটির অনলাইন রিপোর্টিং টুল, আপিল বিভাগে প্রবেশাধিকার এবং শিশু আদালত ব্রিফিং প্ল্যাটফর্ম।[viii] একই ধরনের ডিজিটাল টুল ও সহায়তা শ্রম আদালতগুলোর জন্যও প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে ব্লাস্টের শ্রমিক জিÁvসা অ্যাপ[ix] এর অনুসরন করা যেতে পারে। (মধ্য মেয়াদী)
১.২.২. অনলাইনে মামলার কাগজ দাখিল ও সাক্ষ্য প্রদান: আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০ এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশিকা অনুযায়ী, সাক্ষ্য গ্রহণ ও শুনানিসহ মামলার যে কোনো ধাপ, অডিও, ভিডিও বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পরিচালিত হতে পারে।[x] সে অনুযায়ী, শ্রম আদালত সমূহ সাক্ষ্য গ্রহণ এবং পক্ষগণের উপস্থিতি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল শুনানি পরিচালনা করতে পারেন। (স্বল্প-মেয়াদী)
১.২.৩. আমার আদালত অ্যাপ: ’আমার আদালত’ অ্যাপটি[xi] নিয়মিতভাবে হালনাগাদ করা প্রয়োজন যেখানে সকল শ্রম আদালতের তথ্য ও মামলার তালিকা অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই অ্যাপটি আদালত কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন সেবা সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করে, যার মাধ্যমে শ্রমিকরা সহজেই অনলাইন কজলিস্ট, বিচারিক তদারকি ড্যাশবোর্ড এবং মামলার আপডেট দেখতে পারেন। (স্বল্প-মেয়াদী)
১.২.৪. প্রচার ও সচেতনতা: ভার্চুয়াল আদালত কার্যক্রম সম্পর্কে শ্রমিকদের সচেতন ও উৎসাহিত করতে বিচার বিভাগ, জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা, এনজিও ও ট্রেড ইউনিয়নসমূহের উদ্যোগে প্রচার ও সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। (স্বল্প/দীর্ঘ-মেয়াদী)
১.২.৫. প্রশিক্ষণ ও পর্যাপ্ত প্রযুক্তিগত সরঞ্জামাদি: শ্রম আদালতগুলোর জন্য উপযুক্ত অবকাঠামো ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, যার মধ্যে আইটি সহায়তা, ইন্টারনেট সংযোগ, প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম ও সফটওয়্যার অন্তর্ভুক্ত থাকবে। একইসঙ্গে শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান ও সদস্য, আইনজীবী ও আদালত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা জরুরি। (স্বল্প-মেয়াদী)
১.৩. শ্রমিকদের অধিকার সংক্রান্ত দীর্ঘদিন ধরে বিচারাধীন মামলাগুলোর দ্রুত শুনানির ব্যবস্থা করা :
বাংলাদেশে শ্রমিকদের অধিকার সম্পর্কিত জনস্বার্থ মামলাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা এখনও নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এসব মামলার মধ্যে রয়েছে রানা প্লাজা মামলা[xii], কেটিএস মামলা[xiii], স্পেকট্রাম মামলা[xiv], তাজরীন ফ্যাশনস মামলা[xv] এবং সেজান ফুড মামলা[xvi], যা দেশের অন্যতম ভয়াবহ শিল্প দুর্ঘটনা এবং শ্রমিক নিহত ও আহতের সাথে সম্পর্কিত। শ্রমিক ও তাঁদের পরিবার এখনও ন্যায়বিচার ও যথাযথ ক্ষতিপূরণের অপেক্ষায় রয়েছে। কাজেই বিচার বিভাগ, শ্রম আদালত, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর–এর পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে বিচারাধীন এসব মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদি)
১.৪. আদালতের অবকাঠামো, তথ্য ডেস্ক এবং প্রাসঙ্গিক কার্যক্রম:
১.৪.১. অবকাঠামোগত ভাবে সকল শ্রম আদালতকে নারী-বান্ধব করতে হবে, যেখানে লিঙ্গ-সংবেদনশীলতা নিশ্চিত হবে। সকল শ্রম আদালতে নারীদের জন্য উপযুক্ত বসার ব্যবস্থা, পৃথক শৌচাগার সুবিধা এবং নিরাপদ মাতৃদুগ্ধ পান করানোর জায়গা থাকতে হবে। যৌন হয়রানির অভিযোগ দাখিলের জন্য দৃশ্যমান স্থানে একটি “অভিযোগ বাক্স” স্থাপন করতে হবে, এবং এসব অভিযোগ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত সাপেক্ষে করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, এবং অভিযোগকারীকে প্রতিটি পর্যায়ে অভিযোগের ব্যপারে তথ্য প্রদান করতে হবে। (মধ্য-মেয়াদী)
১.৪.২. আদালতকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি-বান্ধব করা আবশ্যক। শ্রম আদালত বা শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের ভবনগুলোতে র্যাম্প ও লিফট স্থাপনের মাধ্যমে সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য প্রবেশযোগ্য করতে হবে। ন্যায়বিচারের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে আদালতে শারীরিক, শ্রবণ, বাক ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং কর্মক্ষেত্রে আহত শ্রমিকদের জন্য অডিও/ভিজ্যুয়াল সুবিধা, ব্রেইল ব্যবস্থা এবং ইশারা ভাষা ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে হবে। যেহেতু আদালত কার্যক্রমে ইশারা ভাষার বিশেষজ্ঞরা সচরাচর থাকেন না, তাই শ্রম আদালতের কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় সময়ে ইশারা ভাষায় দক্ষ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে বাক্ বা শ্রবণপ্রতিবন্ধী বিচারপ্রার্থীরা যথাযথ সহায়তা পান। সেইসাথে বিচারপ্রার্থীদের এই ধরনের সেবার প্রাপ্যতা সম্পর্কে অবগত করা দরকার, প্রয়োজনে যেন তারা গ্রহণ করতে পারেন। (মধ্য-মেয়াদী)
১.৪.৩. শ্রম আদালতে তথ্য কেন্দ্র বা সহায়তা ডেস্ক না থাকার কারণে শ্রমিকরা প্রায়ই সুনির্দিষ্ট আদালত, আদালতের বিভিন্ন শাখা খুঁজে পেতে জটিলতার সম্মুখীন হন। প্রতিটি শ্রম আদালতে একটি সেবা কেন্দ্র/ ফ্রন্ট ডেস্ক (তথ্য ডেস্ক) স্থাপন করতে হবে, যেখানে বিভিন্ন আদালত ও বিভাগের অবস্থান, মামলার অগ্রগতি সংক্রান্ত তথ্য এবং শ্রমিকদের/বিচারপ্রার্থীদের জন্য আইনজীবীদের সাথে যোগাযোগের সুবিধা থাকবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন এনজিও বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সহযোগিতায় একজন প্যারালিগাল[xvii] নিয়োগ করা যেতে পারে, যিনি শ্রমিকদের/বিচারপ্রার্থীদের এসব তথ্য প্রদানে সহায়তা করবেন। (স্বল্পমেয়াদী)
১.৪.৪. শিল্পঘন এলাকায় শ্রম আদালতের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে এবং শিল্প অঞ্চলে মামলার সংখ্যা বিবেচনায় শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত বেঞ্চ স্থাপন করা প্রয়োজন। (মধ্য-মেয়াদী)
১.৪.৫. জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা কর্তৃক শ্রম আইনগত সহায়তা সেলের জন্য পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ করতে হবে, যাতে উক্ত সেল শ্রমিকদের শ্রম বিরোধ সংক্রান্ত মামলায় আদালতে উপস্থিত থাকার জন্য তাদের যাতায়াত খরচ বহন করতে পারে। (স্বল্প-মেয়াদী)
১.৪.৬. শ্রম আদালতের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করার জন্য, আদালতের সদস্য হিসেবে শ্রমিক (বিশেষকরে নারী শ্রমিক) ও নিয়োগকর্তার সক্রিয় প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)
১.৪.৭ সকল শ্রম আদালত নির্ধারিত সময় অনুযায়ী চলমান রাখতে হবে; প্রতিদিন যথাসময়ে বিচার কার্যক্রম শুরু করতে হবে এবং এ বিষয়ে আইনজীবীগণকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করতে হবে। (স্বল্প মেয়াদী)
১.৪.৮. মামলা দায়ের ও ব্যবস্থাপনা ও ব্যবস্থাপনা, মামলার কজ লিস্ট হালনাগাদ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) ও ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনা, এবং জেন্ডার ও প্রতিবন্ধি বিষয়ে সংবেদনশীলতার উপর শ্রম আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ধারাবাহিক দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)
১.৪.৯. যে সকল জেলা জজ বা অতিরিক্ত জেলা জজগণের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রম আইন ও নীতিমালা সম্পর্কে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাদেরকে জেন্ডার সমতার ভিত্তিতে শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দিতে হবে। শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো বিচারক দায়িত্ব গ্রহণের আগে, তাকে বিচার বিভাগীয় প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রম আইন ও নীতিমালার উপর প্রাথমিক ওরিয়েন্টেশন গ্রহণ করতে হবে এবং পরবর্তীতে এ সকল বিষয়ে অতিরিক্ত প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে শ্রম আদালত Ôচেয়ারম্যান’ পদটির পরিবর্তে Ôচেয়ারপারসন’ শব্দটি যুক্ত করা প্রয়োজন। (মধ্যমেয়াদী)
১.৫. বাংলাদেশে প্রচলিত শ্রম আইনের অধীনে অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান করা:
১.৫.১. প্রচলিত শ্রম আইনের উনবিংশ অধ্যায় (ধারা ২৮৩ – ৩১৬) শ্রম আইন লঙ্ঘন সম্পর্কিত অপরাধের জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় শাস্তি ও জরিমানার পরিমাণ একেবারেই যৎসামান্য। যার ফলে অপরাধের পুনরাবৃত্তি হয়। শ্রম আইনের যথাযথ প্রতিপালনে আগ্রহী করতে অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় শাস্তি (ক্ষেত্র বিশেষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি) ও জরিমানার পরিমান নির্ধারণ এবং এর যথাযথ বাস্তবায়নে শ্রম আইনের ধারা ২৮৩ – ৩১৬ সংশোধন করতে হবে । (স্বল্পমেয়াদী)
১.৬ দেশের সকল শ্রম আদালতে কার্যকর শ্রমিক আইন সহায়তা সেল স্থাপন:
১.৬.১. বর্তমানে ১৩টি শ্রম আদালতের মধ্যে শুধুমাত্র ঢাকা ও চট্টগ্রাম শ্রম আদালতে শ্রমিক আইন সহায়তা সেল রয়েছে, বিধান থাকা সত্ত্বেও অন্যান্য শ্রম আদালত সমূহে শ্রমিক আইন সহায়তা সেল অদ্যাবধি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। দেশের সকল শ্রম আদালতে শ্রমিক আইন সহায়তা সেল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। (মধ্যমেয়াদী)
১.৬.২. জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা (শ্রম আদালতের বিশেষ কমিটি গঠন, দায়িত্ব, কার্যাবলী, ইত্যাদি) প্রবিধানমালা ২০১৬-এর বিধি ৩ অনুযায়ী যে সকল জেলায় শ্রম আদালত রয়েছে সে সকল জেলায় জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার বিশেষ কমিটির ব্যবস্থা রয়েছে। জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার উচিত শ্রম আইনি সহায়তা সেলগুলির জন্য সরাসরি বাজেট বরাদ্দ করা। (মধ্যমেয়াদী)
১.৬.৩. কমিউনিটি প্যারালিগাল[xviii] এবং কোর্ট প্যারালিগালদের[xix] ভূমিকার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ও আইনগত সহায়তা কাঠামোতে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান করা উচিত। সেইসাথে আইনগত সহায়তা প্রদানকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে তাদের ভূমিকাকে কার্যকর করা উচিত। এক্ষেত্রে, শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত শ্রমিক আইনগত সহায়তা সেলের সাথে প্যারালিগালদের কার্যক্রমগুলো সমন্বয় করা প্রয়োজন, যাতে শ্রমিকরা ধারাবাহিকভাবে আইনগত সহায়তা ও প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারেন। এরূপ কার্যক্রমের মাধ্যমে মামলার শুনানির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ, মামলার পরবর্তী তারিখ সম্পর্কে জানা এবং দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত সহজ হবে। (মধ্য-মেয়াদী)
১.৭. কার্যকরী অনুযোগ ব্যবস্থাপনা গঠনে পদক্ষেপ গ্রহণ:
১.৭.১.শিল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে জুডিশিয়াল প্রক্রিয়ার তুলনায় নন–জুডিশিয়াল অনুযোগ ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া অধিক ফলপ্রসূ। এটি শ্রমিকদের জন্য প্রতিকার প্রাপ্তির সহজ উপায়, এবং উভয়পক্ষের জন্য সময় ও ব্যয় সাশ্রয় করে। শিল্পে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা ও অব্যাহত রাখতে এবং উন্নত শিল্প সম্পর্ক গড়ে তুলতে অসন্তোষ ও বিরোধ সমূহের দ্রুত মিমাংসা করা জরুরী। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক একটি অনুযোগ ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া গড়ে তুলতে পারলে শ্রমিক-মালিক উভপক্ষই উপকৃত হবে। অনুযোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি-
- প্রতিটি অসন্তোষ বা অনুযোগ গুরুত্ব সহকারে শুনবে
- তদন্তের পরে, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য সমাধান প্রদান করবে
- অসন্তোষের সঠিক কারণ চিহ্নিত এবং এগুলোকে সক্রিয়ভাবে সমাধান করবে। (মধ্যমেয়াদী)
১.৭.২. অন্যান্য কমিটির পাশাপাশি সকল প্রতিষ্ঠানে একটি মান সম্পন্ন ও দক্ষ অনুযোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের বিধান থাকা জরুরী। এ অনুযোগ কমিটির সদস্যদের অনুযোগ ব্যবস্থাপনা এবং ব্যবসা ও মানবাধিকর বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। অনুযোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রত্যেকটি অসন্তোষ বা অনুযোগ গুরুত্বসহকারে শুনবেন, তদন্ত করবেন এবং পক্ষপাতহীনভাবে গ্রহণযোগ্য সমাধান দিবেন। প্রতিষ্ঠানে একটি অনুযোগ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা/ পদ্ধতি প্রতিষ্ঠিত হবে এবং তা সকলে অবহিত থাকবে। কমিটি স্বপ্রণোদিতভাবেও অসন্তোষ চিহ্নিত করে তা নিষ্পত্তি করতে পারবেন।
এভাবে অনুযোগ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি কার্যকর হলে প্রতিষ্ঠানের ভিতর শ্রম অসন্তোষ ও বিরোধ সহজে নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে এবং অসন্তোষ ও বিরোধ হ্রাস পাবে। শিল্পের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির সাথে উৎপাদন ও সুনাম বৃদ্ধি পাবে।
১.৮ শ্রম আইন, ২০০৬ (সর্বশেষ সংশোধনী ২০১৮) ধারা ৩৩ (অভিযোগ পদ্ধতি) এর প্রয়োগকালে আপোষ প্রক্রিয়ায় ব্যয়িত সময় বাদ দেয়া:
আপোষ-মীমাংসার মাধ্যমে চাকুরী সংক্রান্ত বা মজুরীসহ আইনানুগ পাওনাদি আদায়ে শ্রম আইন, ২০০৬- এর ধারা ১২৪ক (আপোষ মীমাংসার মাধ্যমে মজুরীসহ অন্যান্য পাওনাদি পরিশোধ) অনুযায়ী কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ব্যর্থ হলে ও পরবর্তীতে অধিক সময় অতিবাহিত হওয়ার ফলে তামাদির কারণে শ্রম আইনের ৩৩ ধারার অধীনে মামলা দায়ের করা যায় না। সেক্ষেত্রে উক্ত আপোষ (সালিশ বা মধ্যস্থতা) প্রক্রিয়া চলাকালীন ব্যয়িত সময় বাদ দিয়ে তামাদির সময় গণনা করার লক্ষ্যে আইনের সংশোধনী প্রয়োজন। (স্বল্পমেয়াদী)
১.৯ শ্রম আইন, ২০০৬ (সর্বশেষ সংশোধনী ২০১৮) এর ধারা ৩১৪ (অপরাধ আমল সংক্রান্ত তামাদি) রহিতকরণ
১.৯.১ শ্রম আইন ২০০৬ (সর্বশেষ সংশোধনী ২০১৮) এর ধারা ৩১৪ (অপরাধ আমল সংক্রান্ত তামাদি)[xx] রহিতকরণ করা প্রয়োজন। যেহেতু ফৌজদারী অপরাধসমূহের ক্ষেত্রে ঘটনা ঘটার পরে যত দ্রুত সম্ভব মামলা করতে হয়, অনথ্যায় বিলম্বের কারন উল্লেখ করে পরবর্তীতে যে কোন সময়ই ফৌজদারী মামলা দায়ের করা যায়, সেহেতু শ্রম আইনের অধীনের ফৌজদারী অপরাধসমূহের ক্ষেত্রেও একই বিধান থাকা প্রয়োজন শ্রম আইনের ধারা ৩১৪ রহিতকরণ করা প্রয়োজন। (স্বল্পমেয়াদী)
২. নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ
২.১. ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত আইন ও বিধিমালা সংশোধন:
বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে দূর্ঘটনা বিভিন্ন কারণে ঘটতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে অনিরাপদ কর্ম পরিবেশ, ত্রুটিপূর্ণ সরঞ্জামের ব্যবহার এবং সহিংসতা। কর্মক্ষেত্রে মৃত্যু, স্থায়ী অক্ষমতা এবং অস্থায়ী অক্ষমতার জন্য বিদ্যমান শ্রম আইনের অধীনে ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত বিধান রয়েছে। ক্ষতিপূরণের বিধানগুলি সংশোধন এবং বাস্তবায়ন করা হলে, নিরাপদ কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব।
২.১.১. বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬- এ ক্ষতিপূরণের ধারা ১৫০ এর শিরোনামে উল্লেখিত “ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য মালিকের দায়িত্ব” শব্দগুলির পরিবর্তে “ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য দায়িত্ব” শব্দগুলি প্রতিস্থাপিত হওয়া প্রয়োজন। ক্ষতিপূরণ পরিশোধের জন্য ঠিকাদার এবং দেশি ও বৈদেশিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান/ব্র্যান্ডের দায়ও অন্তর্ভূক্ত করা জরুরী। এছাড়াও;
- আদালত থেকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের রায় দেয়া হলে তা অনতিবিলম্বে বাস্তবায়ন করা;
- আদালতের আদেশ অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে বিলম্ব করলে প্রতিদিনের জন্য জরিমানা আরোপ করা;
- ক্ষতিপূরণ প্রদানের রায়ের বিরুদ্ধে বিবাদীপক্ষ কর্তৃক আপীল দায়ের করার ক্ষেত্রে রায়কৃত অর্থের অর্ধেক অর্থ জমা প্রদান করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)
২.১.২. ক্ষতিপূরণের ন্যূনতম একটি মানদন্ড থাকবে এবং তা কোনভাবেই মৃত্যুর ক্ষেত্রে ২০ (বিশ) লক্ষ টাকা ও স্থায়ী অক্ষমতার ক্ষেত্রে ২৫ (পঁচিশ) লক্ষ টাকার কম হবে না এবং যার পরিমাণ মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধির আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পাবে। সেই হিসেবে বিদ্যমান শ্রম আইনের তফসিল- ৫ সংশোধন করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)
২.১.৩ আইএলও কনভেনশন ১০২ এবং ১২১ অনুস্বাক্ষর করা।[xxi] আইএলও কনভেনশন ১২১, মারাত্মক দুর্ঘটনা আইন, ১৮৫৫ এবং উচ্চ আদালতের নজীর বা ইতোপূর্বে গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণের পরিমান চূড়ান্ত করতে হবে।[xxii] (স্বল্পমেয়াদী)
ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলি বিবেচনায় নিতে হবে:
২.১.৩.১ দূর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষেত্রে-
ক) আর্থিক ক্ষতি:
- তার কর্ম সক্ষমতা বা অবসর গ্রহণ করা পর্যন্ত তার সম্ভাব্য আয়ের পরিমাণ;
- অবসর গ্রহণকালে প্রাপ্য গ্রাচ্যুইটি বা আইনানুগ পাওনাদি;
- তার পোষ্য বা পোষ্যদের জীবন-জীবিকার জন্য অনুমিত খরচ;
- পোষ্যদের মধ্যে কমপক্ষে একজনকে যোগ্যতা অনুযায়ী উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।
- এরূপ ক্ষতিপূরণের পরিমান মূল্য স্ফীতি ও জীবন যাপনের ব্যয় বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে পরিবর্তনযোগ্য। (স্বল্পমেয়াদী)
খ) অন্যান্য ক্ষতি:
- দূর্ঘটনাজনিত ব্যাথা ও কষ্টের জন্য বাবদ এককালীন অর্থ বরাদ্দ।(স্বল্পমেয়াদী)
২.১.৩.২ দুর্ঘটনায় স্থায়ী সম্পূর্ণ অক্ষম শ্রমিকদের ক্ষেত্রে-
ক) আর্থিক ক্ষতি:
- তার কর্ম সক্ষমতা বা অবসর গ্রহণ করা পর্যন্তু তার সম্ভাব্য আয়ের পরিমাণ;
- অবসর গ্রহণকালে প্রাপ্য গ্রাচ্যুইটি বা আইনানুগ পাওনাদি;
- তার চিকিৎসা বাবদ অনুমিত খরচ;
- তার ও তার পোষ্য বা পোষ্যদের জীবন-জীবিকার জন্য অনুমিত খরচ’;
- পোষ্যদের মধ্যে কমপক্ষে একজনকে যোগ্যতা অনুযায়ী উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা;
- এরূপ ক্ষতিপূরণের পরিমান মূল্যস্ফীতি ও জীবন যাপনের ব্যয় বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে পরিবর্তনযোগ্য। (স্বল্পমেয়াদী)
খ) অন্যান্য ক্ষতি:
- জীবন উপভোগের ক্ষতি।(স্বল্পমেয়াদী)
২.১.৩.৩ দূর্ঘটনায় অস্থায়ী অক্ষম শ্রমিকদের ক্ষেত্রে-
- তার চিকিৎসা বাবদ সম্পূর্ণ খরচ;
- অক্ষমতার মেয়াদকাল পর্যন্ত মাসিক মজুরী ও আনুসঙ্গিক সুবিধাদির ব্যবস্থা করা। (স্বল্পমেয়াদী)
২.১.৪ যতদিন ক্ষতিপূরণ প্রদান না করা হবে ততদিন পর্যন্ত শ্রমিককে সর্বশেষ প্রাপ্ত মজুরি হারে মজুরি ও ভাতা প্রদান করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)
২.১.৫ পেশাগত ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণের উপর অন্যান্য সুপারিশ
২.১.৫.১ আইনি সংস্কার
- আইএলও কনভেনশন- ১০২ ও ১২১ অনুসমর্থন করতে হবে, শ্রমিক সংখ্যা নির্বিশেষে গ্রুপ বীমা ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং অবহেলাজনিত দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধানসহ ক্ষতিপূরণের পরিমান দ্বিগুন করতে হবে।
- বিদ্যমান শ্রম আইনের পঞ্চম তফসিল সংশোধন করতে হবে।
- শ্রম আদালতকে ক্ষতিপূরণের মামলার বিচার করার সময় টর্ট আইনে ক্ষতির মূল্যায়নের মৌলিক নীতিগুলি (যেমন, শ্রমিকের বয়স এবং উপার্জনের ক্ষতি, নির্ভরশীলদের সংখ্যা) অনুসরণ করতে বাধ্য করে এরূপ একটি বিধান বিদ্যমান শ্রম আইনের দ্বাদশ অধ্যায়ে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
২.১.৫.২ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার
- সকল শ্রম আদালতের জন্য এরূপ একটি পরিপত্র জারি করা দরকার যা বিশেষভাবে নিম্নোক্ত বিষয়কে স্বীকৃতি দিবে-
- কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনার শিকার শ্রমিক ও অন্যান্য ব্যক্তিদের পক্ষে ক্ষতিপূরণ দাবি করার জন্য শ্রম অধিকার সংস্থাগুলির অবস্থানকে স্বীকৃতি দেয়,
- মালিক কর্তৃক সময়মত ক্ষতিপূরণ প্রদানকে উৎসাহিত করতে ক্ষতিপূরণের বিলম্বিত অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে শ্রম আদালতকে নির্ধারিত হারে লাভ সংগ্রহের আদেশ দিতে হবে।
- শ্রম আদালতে বিচারাধীন ক্ষতিপূরণ মামলাগুলির সময়মতো নিষ্পত্তি নিশ্চিত করার জন্য একটি মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এরূপ মামলা নিষ্পত্তি না হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা থাকতে হবে।
- কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনা, আহত ও নিহতের জন্য নিয়োগকর্তার দায়বদ্ধতাকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া এবং তদানুযায়ী জবাবদিহিতার বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে।
২.২. সকল শ্রমিকদের জন্য এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম কার্যকরীকরণ:
২.২.১. এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম বর্তমানে শুধুমাত্র রপ্তানীযোগ্য পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য পাইলট আকারে বাস্তবায়িত হচ্ছে।[xxiii] সকল শ্রমিকদের জন্য এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম চালু করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন।[xxiv] (স্বল্পমেয়াদী)
২.২.২. এ স্কীম চালু করার শর্তে কোন প্রতিষ্ঠানকে দায়মুক্তি দেয়া যাবে না। ভুক্তভোগী ব্যক্তি স্কীম থেকে ক্ষতিপূরণ পেতে অসমর্থ হলে বা প্রাপ্ত অর্থের বিষয়ে কোন প্রকার আপত্তি থাকলে বা তিনি সংক্ষুব্ধ হলে তার আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)
২.৩ পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে করনীয়:
২.৩.১. পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয় কর্তৃক জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এর ক্ষমতায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। (দীর্ঘমেয়াদী)
২.৩.২. জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি নীতিমালা, ২০১৩[xxv] এর প্রয়োগের ক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। (মধ্যমেয়াদী)।
২.৪. ব্যবসা ও মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইন ও নীতিমালা সমূহ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন:
২.৪.১. তৈরী পোশাক খাতে কমপ্লায়েন্সের ও শ্রম অনুশীলনে ভালো চর্চার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য আরও কার্যকর উদ্যেগ গ্রহণ করা প্রয়োজন, যা অন্যান্য খাত এবং সম্পূর্ণ সাপ্লাই চেইনেও সম্প্রসারিত হবে। হিউম্যান রাইটস ডিউ ডিলিজেন্স আইন (যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্পোরেট সাসটেইনেবিলিটি ডিউ ডিলিজেন্স[xxvi]) এর উত্থানকে সামনে রেখে, সরকারকে ব্যবসায়ীদের শ্রম আইন এবং মানবাধিকার মানদণ্ড মেনে চলা নিশ্চিত করতে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে, উৎপাদন এবং সাপ্লাই চেইনের সকল স্তরে শ্রম অনুশীলন গুলির নিয়মিত পরিদর্শন এবং পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী। এটির অন্যতম লক্ষ্য হলো বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক ও টেকসই উন্নয়ন বজায় রেখে শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষিত করা এবং নৈতিক ব্যবসায়িক অনুশীলনের সঙ্গে সঙ্গতি রাখা। বাস্তবায়নের দিক থেকে ব্যবসায়ীদের শ্রম আইন মেনে চলার জন্য আরও কার্যকর তদারকি, প্রশিক্ষণ এবং জবাবদিহিতার উন্নয়ন করাসহ, টেকসই উৎপাদন নিশ্চিতে ভোক্তাদের অধিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরী। (দীর্ঘ-মেয়াদী)
২.৫. শিল্প খাত অনুযায়ী স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও কল্যাণ সম্পর্কিত শ্রম আইনের সংস্করন:
২.৫.১. শ্রম আইনের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও কল্যাণ সম্পর্কিত অধ্যায়গুলো (অধ্যায় ৫ – ৮) মূলত বাতিলকৃত ‘কারখানা আইন, ১৯৬৫[xxvii]’ অনুযায়ী প্রস্তুত করা হয়েছে। ফলে, এ বিধানগুলো কারখানার জন্য উপযোগী হলেও, কারখানার বাইরে কাজ করা শ্রমিকদের বিশেষ করে নির্মাণ শ্রমিকদের স্বাস্থ্য, সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও কল্যাণের জন্য অনুপযোগী। সুতরাং শ্রম আইনের অধ্যায় ৫ – ৮ এ উল্লেখিত ধারা সমূহ সকল শিল্প খাতের শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও কল্যাণের উপযোগী করে সংশোধন প্রয়োজন।[xxviii] (স্বল্পমেয়াদী)
২.৫.২. সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ১৯৯৬- এর যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য একটি স্থায়ী প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক। ২০০৮ সালে ব্লাস্ট, OSHEE এবং এসআরএস নির্মাণ শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ১৯৯৬- এর যথাযথ বাস্তবায়ন করতে উচ্চ আদালতে রীট পিটিশন নং- ৭১৮/২০১০ দায়ের করে। পরবর্তীতে বিগত ১৩/১০/২০১০ইং তারিখে এ বিষয়ে উচ্চ আদালত একটি নির্দেশনা প্রদান করেন[xxix], যার মধ্যে রয়েছে এক বছরের মধ্যে বিধিমালা প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ গঠন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে সরকারি উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না, যার ফলে, ২০১৩ সালে আদালত অবমাননার জন্য পৃথক একটি পিটিশন দায়ের করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত শ্রম মন্ত্রনালয়, আবাসন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে অবমাননার রুল জারি করে। এই রুলের পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলি কর্তৃপক্ষ গঠন না হওয়া পর্যন্ত স্থানীয় সরকার বিভাগ, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মতো সংস্থাগুলোকে অস্থায়ীভাবে বিধি প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেয়। কিন্তু এরূপ অস্থায়ী ব্যবস্থাপনার ফলে শ্রমিক নিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য বাধা থেকেই যায়। অস্থায়ী বিধি প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো, যেমন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), অতিরিক্ত দায়িত্ব এবং জনবলের অভাবে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। সুতরাং ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ১৯৯৬- এর যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য স্থায়ী প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)
২.৬ সহনীয় তাপমাত্রার মানদন্ড নিধারন:
বিদ্যমান শ্রম আইনের ধারা ৫২ (বায়ু চলাচল ও তাপমাত্রা) ও শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ এর বিধি ৪৫ (বায়ু চলাচল ও তাপমাত্রা) অনুযায়ী তাপমাত্রার সহনীয় পর্যায়ে রাখার বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও তাপমাত্রার মানদন্ড নির্ধারন করা নেই। ওয়েট বাল্ব গ্লোব তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশী হলে অ্যাপারেল সেক্টরের শ্রমিকগনদের জন্য স্বাচ্ছন্দপূর্ন নয় এবং সেটি ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশী হলে হিট স্ট্রোক এমনকি মৃত্যূ পর্যন্ত হতে পারে।[xxx] সুতরাং শ্রম আইন ও শ্রম বিধিমালায় সহনীয় তাপমাত্রার মানদন্ড নির্ধারন করে সংশোধন করা প্রয়োজন। উচ্চ তাপমাত্রার দিনে কর্মঘণ্টার সাথে স্বাস্থ্য বিরতির সময় অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে এবং কর্মক্ষেত্রে যথাযথ শীতলীকরণ সুবিধা প্রদান করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)
৩. সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যান:
৩.১. দুর্যোগকালীন শ্রমিকদের আইনগত অধিকার নিশ্চিতকরণ
বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬- এর ২৮ক ধারার সাথে একটি নতুন উপধারা সংযোজন করা উচিত, যা দুর্যোগকালীন সময়ে শ্রমিকদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। যেসব শ্রমিকদের মহামারি বা দুর্যোগকালীন সময়ে তাদের কর্মস্থলে যেতে বাধ্য হতে হয়, তাদের জন্য যাতায়াতের সুবিধা নিশ্চিত করা, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদান, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ন্যায্য মূল্যে সরবরাহ করা এবং প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দেওয়া আবশ্যক। বিদ্যমান শ্রম আইনে এ সংক্রান্ত সুস্পষ্ট বিধান সংযোজন করতে হবে। (স্বল্প মেয়াদী)
৩.২. সামাজিক নিরাপত্তা
গ্রামীণ কৃষি শ্রমিকদের জন্য দক্ষতা উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ এবং আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন, যারা গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থানের সংকটের কারণে শহর এলাকায় আশ্রয় নিচ্ছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, যেমন বন্যা, খরা, তাপপ্রবাহ, শীতপ্রবাহ, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, ঋতু পরিবর্তনের ধরন, মাটির আর্দ্রতা হ্রাস এবং লবণাক্ততার কারণে গ্রামীণ সম্পদের উপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এসব প্রক্রিয়া কৃষি শ্রমিকদের শহরমুখী হতে বাধ্য করছে, ফলে শহরগুলোতে জনসংখ্যার চাপ ও চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা বাড়ছে এবং মজুরি হ্রাস পাচ্ছে।
৩.২.১ জলবাযু পরিবর্তনের ফলে শহরমুখী এরূপ শ্রমিকদের ক্ষতি যথাযথ বিবেচনাপূর্বক ক্ষতিপূরণ প্রদানের আওতায় আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক, যাতে তারা জলবায়ুজনিত দুর্যোগের কারণে কৃষি খাত থেকে বিচ্যুত হলেও সংকটকালীন ভাতা পেতে পারেন। পাশাপাশি, ক্ষতিপূরণমূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাদের জন্য পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি চালু করা এবং চাকরি ও স্বনির্ভর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরি। শহরগুলো যাতে এরূপ শ্রমিকদের জন্য পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যকর ও স্যানিটারি পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারে, সে বিষয়েও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। (মধ্য মেয়াদী)
৩.২.২ নিরাপদ কর্মপরিবেশে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শ্রমিকদের শিশু সন্তানদের লেখাপড়ার সুযোগ নিশ্চিতকল্পে কারখানা ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ থাকা জরুরী। অনেক সময় দেখা যায়, শ্রমিকদের শিশু সন্তানরা লেখাপড়ার জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের পথে অপহরণের শিকার হয়, আবার কখনও হারিয়ে যায়। এরূপ সংবাদ প্রাপ্তির পরে শ্রমিকরা কাজে মনোযোগী হতে পারেন না, ফলে কারাখানার উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনসহ শিল্প পুলিশের বিশেষ ভূমিকা থাকা প্রয়োজন। এছাড়া কারাখানা কর্তৃপক্ষের নিজস্ব পৃষ্ঠপোষকতায় শ্রমিকদের সন্তানদের যথাযথ ও নিরাপদে লেখাপড়ার সুযোগ সৃষ্টির জন্য কারখানার অভ্যন্তরে কিংবা নিকট পাশ্ববর্তী স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। (মধ্য মেয়াদী)
৩.২.৩ বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে সন্ধ্যার পরে শ্রমিকরা কারখানায় যাতায়াতের পথে অপ্রত্যাশিতভাবে ছিনতাইসহ বিভিন্ন হয়রানীর শিকার হয়ে থাকে। বিশেষ করে নারী শ্রমিকরা ছিনতাইসহ অপহরণ, যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের শিকারও হচ্ছেন। শ্রমিকদের যাতায়াতের পথ নিরাপদ নিশ্চিতকল্পে স্থানীয় প্রশাসনসহ শিল্প পুলিশের বিশেষ ভূমিকা থাকতে হবে। (স্বল্প মেয়াদী)
৩.৩. রানা প্লাজা দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের স্মরণ করা
৩.৩.১. রানা প্লাজাসহ সকল কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনার শিকার শ্রমিকদের এবং বাংলাদেশের সকল শ্রমিকের অবদান স্মরণ করতে, রানা প্লাজার সামনে এবং জুরাইন কবরস্থানে পৃথক পৃথক স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা উচিত। প্রস্তাবিত স্মৃতিস্তম্ভদ্বয়ের নির্মাণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন, স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংরক্ষণের জন্য যথাক্রমে দায়িত্ব সাভার পৌরসভা এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে অবশ্যই দায়িত্ব নিতে হবে। (স্বল্প মেয়াদী)
৩.৪ শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের চিকিৎসা, কর্মসংস্থান এবং পুনর্বাসন ব্যবস্থা :
কর্মস্থল দুর্ঘটনা সব সময়ই দুর্ঘটনা নয়, আমাদের দেশে যে সকল ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেবার অপচেষ্টা করা হয় সেগুলোকে কোনভাবেই দুর্ঘটনা বলা যায় না। ২০১২ সালের তাজরিণের ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ও ২০১৩ সালের রানা প্লাজা ভবন ধস কিংবা পরবর্তীতে হাশেম ফুড অগ্নিকান্ডকে কোনভাবেই দুর্ঘটনা হিসেবে গণ্য করা যায় না বরং এগুলো নির্মম হত্যাকান্ড বলেই স্বীকৃত। অথচ কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের যথাযথ চিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ ও পূনর্বাসনের জন্য নেই কার্যকর কোন উদ্যোগ। ফলে এ সকল শ্রমিকরা দিনের পর দিন অমানবিক জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছেন আর এর মারাত্নক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পরিবারের শিশু সন্তানসহ সকলের উপর। অথচ এ সকল শ্রমিক ও তাদের পরিবারের জন্য আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার আইনগত সুযোগ থাকলেও তার যথার্থ বাস্তবায়নে সেরকম কোন উদ্যোগ দেখা যায় না।
প্রাতিষ্ঠানিক ও অ-প্রাতিষ্ঠানিক সকল ধরনের শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন, ২০০৬- এর অধীনে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল গঠন করা হয়েছে। গঠিত এ তহবিলের অর্থ দুর্ঘটনার শিকার শ্রমিকদের চিকিৎসা সেবা, মৃত শ্রমিকের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য প্রদান, শ্রমিক পরিবারের মেধাবী সদস্যদের শিক্ষা বৃত্তি প্রদান সংক্রান্ত কাজে ব্যবহার করা হবে মর্মে এ আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। এমতাবস্থায়,
৩.৪.১ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইনের কার্যকর প্রয়োগ তথা শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলের সঠিক ও যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে দুর্ঘটনার শিকার শ্রমিকদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান সহ পূর্ণবাসন ব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)
৩.৪.২. বর্ণিত তহবিল থেকে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গনঅভুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের চিকিৎসা ব্যয়, অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)
৪. নারী অধিকার, সমতা, বৈষম্যহীনতা ও বিশেষ জনগোষ্ঠী:
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কর্মক্ষেত্র থেকে নারী শ্রমিকের ঝরে যাওয়া বৃদ্ধি পেয়েছে।[xxxi]এর অন্যতম কারণগুলো হলো- মাতৃত্বকালীন ছুটি পর্যাপ্ত না, প্রতিষ্ঠান থেকে অনুকুল সমর্থন না পাওয়া এবং আর্থিক সুরক্ষা থেকেও বঞ্চিত হওয়া[xxxii]। স্বাস্থ্যগত কারণে বা নবাগত শিশুর প্রয়োজনে একজন নারী শ্রমিকের অতিরিক্ত মাতৃত্বকালীন ছুটির প্রয়োজন হতে পারে। তাছাড়া নবাগত শিশুকে তার সুস্থভাবে বেড়ে উঠার জন্য অন্ততঃ ৬ মাস শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো আবশ্যক। সরকারি কর্মচারীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস নির্ধারিত থাকলেও নারী শ্রমিকদের জন্য এরূপ ছুটির পরিমান ১৬ সপ্তাহ, যার মাধ্যমে বৈষম্য সুস্পষ্টভাবেই প্রকাশ পায়। নারী শ্রমিকদের কর্মস্থলে ধরে রাখতে হলে নিম্নোক্ত বিষয়সমূহে নজর দেয়া প্রয়োজন।
৪.১. মাতৃত্বকালীন ছুটি ও ‘প্রসূতিকালীন অধিকার’ সংক্রান্ত:
৪.১.১. বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ৪৬ ধারায় (প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা প্রাপ্তির অধিকার এবং প্রদানের দায়িত্ব)উল্লেখিত প্রসূতি কল্যাণ অধিকার প্রদানের এর সময়সীমার পরিমান ১৬ সপ্তাহ থেকে বৃদ্ধি করে সর্বমোট চব্বিশ সপ্তাহ অথবা ছয় মাসের প্রসূতিকালীন অধিকার নির্ধারন করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)
৪.১.২. শ্রম আইনের ধারা ২(৩৪)-এ “প্রসূতি কল্যাণ” সংজ্ঞায় “প্রসূতি কল্যাণ” শব্দটি পরিবর্তন করে “প্রসূতি অধিকার” করতে হবে এবং এতে অন্যান্য সকল অধিকার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- সন্তান প্রসবের ছয় মাস পূর্বে এবং প্রসবের পর বারো সপ্তাহ পর্যন্ত চাকরিচ্যুতি নিষিদ্ধকরণ, শ্রমের কষ্টকর প্রকৃতি, দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে কাজ করা, বা যে কোনো কাজ যা মাতৃত্বকালীন সময়ে একজন নারী শ্রমিকের স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। (স্বল্পমেয়াদি)
৪.১.৩. শ্রম আইনের ধারা ৫০ (কতিপয় ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকের চাকুরীর অবসানে বাধা), অনুযায়ী যে ক্ষেত্রে যথাযথ কারণ ছাড়া একজন মালিক কোন নারী শ্রমিকের সন্তান জন্মের ছয় মাস আগে অথবা আট সপ্তাহ পরে তার চাকরিচ্যুত, বরখাস্ত, অপসারণ বা চাকরির অবসানের নোটিশ বা আদেশ দেন, সেক্ষেত্রে সেই নারী শ্রমিককে তার ন্যায্য প্রসূতিকালীন অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না । ধারা ৫০-এ উল্লেখিত কতিপয় ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকের চাকুরীর অবসানে বাধা পরবর্তী “আট সপ্তাহ” বর্ধিত করে “বারো সপ্তাহ” করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)
৪.১.৪. শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ (সংশোধনী ২০২২) এর বিধি ৩৯(ক) অনুযায়ী প্রসূতিকালীন ভাতা গণনা করার সময় শ্রমিকের প্রাপ্ত শেষ মোট মজুরি ২৬ কর্মদিন দ্বারা ভাগ করে একদিনের গড় মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে; অপরদিকে শ্রম আইনের ধারা ৪৮ অনুযায়ী গড় মজুরি গণনা করার জন্য, বিগত তিন মাসে উপার্জিত মজুরিকে প্রকৃত কর্মদিবস দ্বারা ভাগ করার বিধান রয়েছে। শ্রম আইনের ধারা ৪৮ এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ রেখে বিধি- ৩৯ (ক) সংশোধন করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)
৪.১.৫ বিদ্যমান শ্রম আইনের ধারা ৪৭/৩-(খ) অনুযায়ী একজন প্রসূতিকালীন নারী শ্রমিককে তার কর্মকর্তা ”কাজে অনুপস্থিত থাকিবার জন্য অনুমতি দিবেন” শব্দগুলির পরিবর্তে- ”মাতৃত্বকালীন ছুটি ও প্রসূতি কল্যাণ অধিকার প্রদান করিবেন” শব্দগুলি প্রতিস্থাপিত করা প্রয়োজন, যাতে নারী শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে পারেন। (স্বল্পমেয়াদী)
৪.২. কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও নিরসন:
৪.২.১. সরকারী এবং বেসরকারী কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও নিরসনকল্পে মহামান্য উচ্চ আদালত কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনা[xxxiii] অনুসারে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও নিরসনে “অভিযোগ কমিটি” গঠন ও অভিযোগ কমিটির কাজ সম্পর্কিত নীতিমালা থাকতে হবে এবং বিদ্যমান শ্রম আইনে এ সংক্রান্ত বিধান অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
উল্লেখ্য যে, যৌন হয়রানী/ নির্যাতনের কোন ব্যাখ্যা প্রচলিত শ্রম আইনে না থাকলেও শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ (সংশোধনী ২০২২) অনুযায়ী বিধি -৩৬১ (ক) তে অশ্লীল বা অভদ্রজনোচিত আচরন এবং যৌন হয়রানি এর ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে ও কমিটি গঠনের বিষয়ে বিধান সংযুক্ত হয়েছে, তবে কমিটির গঠনের বিধান মহামান্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী করা হয়নি।
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি সংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য অভিযোগ কমিটি গঠনের পাশাপাশি উচ্চ আদালত কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে এরূপ কমিটির কার্যাবলির রূপরেখা বিদ্যমান শ্রম আইন এবং শ্রম বিধিমালাতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)
৪.২.২. আইএলও কনভেনশন, ১৯০ (সহিংসতা এবং হয়রানি কনভেনশন, ২০১৯) অনুসমর্থন[xxxiv] করা সহ, লিঙ্গ, সমতা এবং কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট নিয়ম ও প্রবিধান সংযোজনে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ সংশোধন করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)
৪.৩ নারী শ্রমিকের রাত্রিকালীন ডিউটি:
৪.৩.১. নারী শ্রমিককে দিয়ে রাত্রিকালীন ডিউটি করাতে হলে শ্রম আইনের ধারা ১০৯ ও শ্রম বিধিমালার বিধি-১০৩ এর যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিতের ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে (যেমন- তাদের আসা-যাওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠান থেকে যানবাহন সুবিধা প্রদান) এবং এ বিষয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের তদারকি জোরদার করতে হবে।(স্বল্পমেয়াদী)
৪.৪ শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের ব্যবস্থা কার্যকরিকরণ:
৪.৪.১. বিদ্যমান শ্রম আইনের ধারা ৯৪ অনুযায়ী শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের বিধান থাকলেও বেশিরভাগ কর্মপ্রতিষ্ঠানে তা কার্যকর থাকে না। নারী শ্রমিকদের কর্মস্থলে মানসিক উদ্বেগ কমাতে হলে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র যথাযথভাবে কার্যকর করা আবশ্যক। (মধ্যমেয়াদী)।
৪.৪.২. কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের চেকলিস্ট অনুযায়ী শ্রম আইনের ধারা ৯৪ ও শ্রম বিধিমালার বিধি ৯৪ ও ৯৫ এর কার্যকর প্রয়োগের জন্য সঠিকভাবে পরিদর্শন এবং পর্যবেক্ষণ করা অত্যাবশ্যক। (দীর্ঘমেয়াদী)
৪.৪.৩ প্রত্যেক কর্মস্থলের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে শিশুকক্ষের তাপমাত্রা শিশুদের জন্য আরামদায়ক কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কক্ষের তাপমাত্রা সকাল ৮টা থেকে ১০টা, এবং দুপুর ১টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে পরীক্ষা করা উচিত। আদর্শগতভাবে, দিনের বেলায় কক্ষের তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে এবং রাতের বেলায় ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখা উচিত। এছাড়া, শিশুদের জন্য উপযুক্ত খেলনা ও উপকরণও নিশ্চিত করা আবশ্যক। (স্বল্পমেয়াদী)
৪.৪.৪. শ্রম আইনের ধারা ৯৪ প্রতিপালনে অক্ষমতা, ঘাটতি বা অবহেলার কারণে উপযুক্ত শাস্তির বিধান অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)
৪.৫. কমিউনিটি পর্যায়ে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন:
SDG লক্ষ্য ৫ (জেন্ডার সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন) বাস্তবায়নে, নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করা কেবল কর্মসংস্থানের অধিকার প্রদান করলেই হবে না; বরং নারীরা যাতে তাদের কর্মস্থলে দুশ্চিন্তামুক্তভাবে ও মনোযোগ সহকারে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের দেশের বেশীরভাগ শ্রমজীবী নারীরা তাদের শিশু সন্তানদের নিরাপত্তা এবং তাদের সূস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করতে অধিকাংশ সময়েই বিভিন্ন রকম প্রতিবন্ধকতার শিকার হন, যা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্থ করে। সেহেতু-
৪.৫.১ শ্রমবাজারে নারীর কার্যকর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে অধিক মনোযোগী করতে তাদের শিশু সন্তানদের নিরাপদে স্বাভাবিক জীবন ক্রমবিকাশের জন্য কর্মস্থলের পাশাপাশি কমিউনিটি পর্যায়ে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে মান সম্মত পূর্ণকালীন শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। (মধ্যমেয়াদী)
৪.৫.২ কমিউনিটি পর্যায়ে স্থাপিত শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রসমূহে প্রাতিষ্ঠানিক/ আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম সংযুক্ত করা প্রয়োজন যাতে করে একজন কর্মজীবী মা তার শিশু সন্তানের শিক্ষা এবং সুরক্ষা সম্পর্কে নিশ্চিন্ত থাকেন। (মধ্যমেয়াদী)
৪.৬ নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা জোরদারকরণ ও জনসচেতনতা তৈরি:
৪.৬.১. পোশাক শিল্প খাতের অধিকাংশ নারী শ্রমিক তাদের কর্মস্থলকে অনিরাপদ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, সেইসাথে তাদের বসবাস ও যাতায়াতের পথও অনিরাপদ মনে করেন।[xxxv] স্থানীয় প্রশাসনকে অবশ্যই নারী কর্মীদের নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে এবং নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা প্রদানে স্থানীয় মানুষদের অন্তর্ভুক্ত করার পদক্ষেপ নিতে হবে এবং আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে বিশেষ করে শিল্প পুলিশকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।[xxxvi] (দীর্ঘমেয়াদী)
৪.৬.২. নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে নারী নির্যাতনবিরোধী বহুমুখী কর্মসূচি এবং সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থাগুলোকে স্থানীয় জনগণের জন্য সচেতনতা কর্মসূচি আয়োজনের উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে নারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধ করা যায়। (দীর্ঘমেয়াদী)
৪.৭. নারী শ্রমিকদের জন্য ডরমিটরি স্থাপন:
বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক নারীশ্রমিক প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে শহরাঞ্চলে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে আসেন এবং শহরে এসে প্রথমেই তাদেরকে আবাসন সংকট মোকাবেলা করতে হয়; কেউ বা ২/১ দিনের জন্য গ্রামের প্রতিবেশীর বাসায় আবার কেউ বা পরিচিত অন্য কারোর বাসায় রাত কাটানোর সুযোগ পান। আবার অনেকেই অনাকাংখিত পরিস্থিতির শিকার হন। পরিশেষে তাদের বেশিরভাগই প্রাইভেট হোস্টেল, মেস করে বা বস্তিতে বসবাস করতে শুরু করেন। একদিকে একজন নতুন শ্রমিকের জন্য এরূপ আবাসন ব্যয় বহন করা কষ্টসাধ্য অন্যদিকে কর্মস্থল থেকে দূরে অবস্থিত এ সকল আবাসস্থল নারীশ্রমিকদের জন্য অনিরাপদ যাতায়াত সমস্যার সৃষ্টি করে। এছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এরূপ আবাসস্থল অনিরাপদ থাকে। তাই নতুন যোগদানকৃত নারী শ্রমিকদের জন্য তাদের কর্মস্থলের কাছাকাছি কারখানার মালিকের উদ্যোগে এবং ক্ষেত্র বিশেষে সরকারি উদ্যোগে ডরমিটরি বা আবাসন নির্মাণ করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)
৫. মজুরী ও নায্য হিস্যা:
৫.১ মজুরী নির্ধারণের সময়ে সদস্য নিযুক্তি:
মালিক ও শ্রমিক, উভয়পক্ষের প্রতিনিধিদের পরামর্শ নিয়ে মজুরী নির্ধারণ নিশ্চিত করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)
৫.২ মজুরী নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়সমূহঃ
মজুরী নির্ধারনের সময় বিদ্যমান শ্রম আইনের ধারা ১৪১ (সুপারিশ প্রনয়ণে বিবেচ্য বিষয়) অনুযায়ী মজুরী নির্ধারনের সময় জীবন যাপন ব্যয়, জীবনযাপনের মান, উৎপাদনশীলতা, উৎপাদিত দ্রব্যের মূল্য, মুদ্রস্ফীতি, কাজের ধরন, ঝুকি ও মান, ব্যবসায়িক সামর্থ্য, দেশের এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার আর্থ- সামাজিক অবস্থা এবং অন্যান্য প্রসাঙ্গিক বিষয় বিবেচনা করার সুস্পষ্ট বিধান থাকলেও প্রতিপালনের ক্ষেত্রে অনেক ঘাটতি দেখা যায়। এ বিধান বাস্তবায়নে নিরপেক্ষ প্রতিনিধি মনোনয়নের ক্ষেত্রে অধিক সতর্কতা ও গুরুত্ব দিতে হবে। (স্বল্প মেয়াদী)
৫.৩. শ্রমিকদের উৎসবভাতা প্রদানের সময়কাল:
৫.৩.১. শ্রম বিধিমালাতে বিধি ১১১, উপবিধি- (৫) এ উল্লেখিত যাহারা নিরবিচ্ছিন্নভাবে ১ (এক) বৎসর চাকরি পূর্ণ করিয়াছেন- এই বাক্যে ”১ (এক) বৎসর” এর স্থলে – ”৬ (ছয়) মাস” প্রতিস্থাপিত হইবে। চাকরি স্থায়ীকরণের সর্বোচ্চ সময় ৬ মাস। তাই চাকরির ৬ মাস পরই শ্রমিক যাতে উৎসব ভাতা প্রাপ্য হন উক্ত বিধান যুক্ত করতে হবে। (স্বল্প মেয়াদী)
৫.৪ জাতীয় নূন্যতম মজুরী নির্ধারন:
সকল সেক্টরের শ্রমিকদের জন্য একটি জাতীয় নূন্যতম মজুরী নির্ধারণ করা প্রয়োজন এবং প্রতিটি সেক্টরের জন্য আলাদা মজুরী কাঠামো থাকতে হবে। ৪২টি শিল্প খাতের জন্য খাতভিত্তিক ন্যূনতম মজুরি বোর্ড এবং রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের জন্য জাতীয় মজুরি কমিশন মোট শ্রমশক্তির মাত্র ১৫.১ শতাংশকে অন্তর্ভুক্ত করে।[xxxvii] তবে এ সকল মজুরী কাঠামো কোনভাবেই জাতীয় নূন্যতম মজুরী কাঠামোর চেয়ে কম হবে না। নূন্যতম মজুরী প্রতি তিন বছর অন্তর পর্যালোচনা করা প্রয়োজন এবং মূল্যস্ফীতির কারণে সময়ে সময়ে মহার্ঘ্য ভাতা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। প্রচলিত শ্রম আইনে এ সংক্রান্ত বিধান যুক্ত করে প্রয়োজনীয় সংশোধনী করতে হবে। (মধ্য মেয়াদী)
৫.৫ শ্রমিক কর্তৃক চাকুরীর অবসান সংক্রান্ত ক্ষেত্রে পাওনাদি সংক্রান্ত:
৫.৫.১. বিদ্যমান শ্রম আইনের ধারা ২৭ (১)অনুযায়ী একজন স্থায়ী শ্রমিক লিখিতভাবে ৬০ দিনের নোটিশ দিয়ে তার চাকরি থেকে পদত্যাগ করতে পারেন। অন্যদিকে একই আইনের ২০(২)(ক) ধারা অনুযায়ী, মালিক একজন শ্রমিককে ৩০ দিনের লিখিত নোটিশ দিয়ে তাকে ছাঁটাই করতে পারেন। উল্লেখিত বিধান দুটি বৈষম্যমূলক। সেহেতু শ্রমিক কর্তৃক চাকুরী থেকে ইস্তফা প্রদানের ক্ষেত্রে শ্রমিকদের জন্য ৩০ দিনের লিখিত নোটিশ প্রদানের বিধান রেখে বিদ্যমান শ্রম আইন সংশোধন করা আবশ্যক এবং চাকুরীর মেয়াদ যাই হোক না কেন শ্রমিকের চাকুরী অবসানজনিত সকল প্রকার আইনানুগ পাওনাদি পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। (স্বল্প মেয়াদী)
৫.৫.২. বিদ্যমান শ্রম আইনের ধারা ২৭ (৩ক) অনুযায়ী কোন শ্রমিক চাকুরী থেকে ইস্তফা দিয়েছেন মর্মে গণ্য হলে তাঁর চাকুরীর মেয়াদ যাই হোক না কেন তাঁর চাকুরী অবসানজনিত সকল প্রকার আইনানুগ পাওনাদি পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)
৬. কাজের অধিকার, সুযোগ, নিশ্চয়তা ও অন্তর্ভূক্তি:
৬.১. শ্রমিকের সংজ্ঞা : বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ধারা ২(৬৫)-এর আওতায় “শ্রমিক” এর সংজ্ঞার পরিধি সম্প্রসারিত করে তদারকি কর্মকর্তাদের (Supervisory Officers) অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তদারকি কর্মকর্তারা সাধারণ শ্রমিকদের কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করলেও তাদের কাজের প্রকৃতি সাধারণ শ্রমিকদের সাথে মিল রয়েছে। এছাড়া, তাদের দায়িত্ব ও ক্ষমতার পরিধি এমন নয় যে তারা নিয়োগকর্তার প্রতিনিধিত্ব করে। তদারকি কর্মকর্তাদের শ্রমিক নিয়োগ বা বরখাস্ত করার কোনো ক্ষমতা নেই। সুতরাং, তাদের “শ্রমিক” এর সংজ্ঞা থেকে বাদ দেওয়া কোনভাবেই যৌক্তিক নয়। (স্বল্পমেয়াদি)
৬.২. শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বই প্রদানের প্রক্রিয়া তদারকিকরণ:
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর কর্তৃক বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬– এর ধারা ৫ – ৯ কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োগ করা প্রয়োজন যাতে সকল শ্রমিক নিয়োগপত্র, পরিচয় পত্র এবং সার্ভিস বুকসহ কর্মসংস্থান চুক্তি পান। এতে শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ এবং চাকুরী অবসানের সময় আইনানুগ পাওনাদি পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত হবে। (দীর্ঘমেয়াদী)
৬.৩. স্থায়ী প্রকৃতির কাজের জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগ করা যাবে না :
বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা-এর বিধি ১৬(৫) অনুযায়ী, কোনো নিয়োগকর্তা কোনো স্থায়ী পদে শ্রমিক নিয়োগের জন্য ঠিকাদারি সংস্থার মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগ করতে পারবেন না। অন্যদিকে বাংলাদেশ শ্রম আইন-এর ধারা ৩ক এ বিষয়ে কোন সুস্পষ্ট বিধান নাই। কাজেই বর্ণিত ধারা ৩ক সংশোধনপূর্বক স্থায়ী পদে শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে ঠিকাদারি সংস্থার মাধ্যমে নিয়োগ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদি)
৬.৪. শ্রমিকদের কথিত কালোতালিকা সংক্রান্ত অভিযোগ তদন্ত করা
২০২১ সালে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিজিএমইএ জানিয়েছিল, পোশাক শিল্প শ্রমিকদের জন্য বায়োমেট্রিক আইডেনটিটি অ্যান্ড ওয়ার্কাস ইনফরমেশন সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে। এই তথ্যভাণ্ডারে শ্রমিকদের আঙুলের ছাপসহ তাদের পরিচয়, রক্তের গ্রুপ, কর্মসংস্থান ইত্যাদি তথ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।[xxxviii] সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে যে,[xxxix] বিজিএমইএ- এর সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো এই ডাটাবেসে থাকা তথ্যের ভিত্তিতে তাদের কারখানা থেকে বরখাস্তকৃত শ্রমিকদের ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করছে। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মাধ্যমে এ ধরনের কার্যক্রম যথাযথ তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদি)
৬.৫. শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়ন:
আমাদের দেশে অটোমেশন বা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে উৎপাদশীলতা বৃদ্ধি পেলেও কারখানা পর্যায়ে প্রায় ৩১ শতাংশ শ্রমিক চাকুরী হারিয়েছেন।[xl] শ্রমিকদের চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শিল্প খাতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বিষয়ে শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রমে সরকার, শ্রমিক সংগঠন ও মালিক সংগঠনের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরী। (স্বল্পমেয়াদি)
৬.৬ জাস্ট ট্রানজিশন[xli]:
৬.৬.১. UNFCCC[xlii]– এর অধীনে বাংলাদেশের কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের প্রতিশ্রুতির সাথে সঙ্গতি রেখে শিল্পাঞ্চল ও অনান্য এলাকায় জাস্ট ট্রানজিশন সম্পর্কিত একটি সমন্বিত পরিকল্পনা তৈরি করা প্রয়োজন। এটা আমাদের মনে রাখা দরকার যে, কার্বন কম নিঃসরণের সাথে সাথে উন্নত ও জলবায়ু সহনশীল কাজের পরিবেশ, জলবায়ু-বান্ধব প্রযুক্তির গ্রহণ ও প্রভাবিত শ্রমিকদের জন্য ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থাগুলি নিশ্চিত করা যায়। (দীর্ঘমেয়াদী)
৬.৬.২. শ্রমিকদের কর্ম ও কর্মক্ষেত্র সংক্রান্ত বিভিন্ন উদ্বেগ নিরসন ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতকল্পে শিল্প ভিত্তিক জাস্ট ট্রানজিশন পরিকল্পনাগুলিকে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা এবং জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। (মধ্যমেয়াদী)
৬.৬.৩. শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের সাথে সমন্বয় করে জাস্ট ট্রানজিশন বাস্তবায়ন করতে হবে। (দীর্ঘমেয়াদী)
৬.৭. আত্মনির্ভর দলের সদস্যদের স্বীকৃতি
আত্মনির্ভর দলের সদস্যরা[xliii] সমাজ এবং কর্মক্ষেত্রে (স্বেচ্ছাসেবক এবং অনানুষ্ঠানিক দলের সদস্য হিসেবে) সাধারণ শ্রমিকদের জন্য সহায়তাকারী হিসেবে কাজ করে। তারা শ্রমিকদের আইনি প্রতিকার এবং অন্যান্য সেবাসমূহ সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে। তারা ভুক্তভোগী শ্রমিকদের থানায় সাধারণ ডায়েরি, অভিযোগ দায়ের এবং অন্যান্য সেবা প্রদানকারী সংস্থার কাছ থেকে প্রাসঙ্গিক সেবা গ্রহণে সহায়তা প্রদান করে। তাদের কাজের স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন, যাতে করে শ্রমিকদের সেবা গ্রহণ ও প্রদান সহজসাধ্য হয় এবং শ্রমিক ও সেবা প্রদানকারী সংস্থাসমূহের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারে। (স্বল্পমেয়াদী)
৬.৮. অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য করনীয়:
৬.৮.১. বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশী নাগরিক অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন এবং তাদের একটি বড় অংশ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে কর্মরত আছেন। জনশক্তি কর্মসংস্থান এবং প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, বর্তমানে প্রায় ১ কোটি বাংলাদেশী নাগরিক মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। প্রযুক্তিগত পদ্ধতি ব্যবহার করে অভিবাসন শ্রমিক তালিকা তৈরি করা প্রয়োজন যাতে সঠিক তথ্যের মাধ্যমে অভিবাসন কার্যক্রম শক্তিশালী করা যায়। অভিবাসন সংক্রান্ত তালিকার সাথে BMET কার্ড সংযুক্ত করা প্রয়োজন যার মাধ্যমে জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতার মাধ্যমে পদক্ষেপ গ্রহন করা সম্ভব। (স্বল্পমেয়াদী)
৬.৮.২. বিশ্বব্যাপী শ্রমবাজারের চাহিদার সাথে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণকে অন্তর্ভুক্ত করে দক্ষতা বৃদ্ধি করার উপর কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া উচিত। দক্ষতা-ভিত্তিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অভিবাসী শ্রমিকদের উন্নত মজুরীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব। অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প তৈরিতে ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইনের কার্যক্রম অনুসরণ করা যেতে পারে। (দীর্ঘমেয়াদী)
৬.৮.৩. ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদত্ত অভিবাসী শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিলের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় অধিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকতে হবে এবং দুর্নীতি নিরসনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। (স্বল্প মেয়াদী)
৬.৮.৪. অভিবাসন প্রক্রিয়ার সমস্ত পদক্ষেপ জেন্ডার বান্ধব হতে হবে। নারী অভিবাসী শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। (স্বল্প মেয়াদী)
৬.৮.৫. দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও অভিবাসী কর্মীদের প্রবাসজীবন মোটেই আরামদায়ক নয়। তাদের বিদেশযাত্রা থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে রয়েছে নানা সমস্যা ও বঞ্চনার গল্প। দু:খজনক এই পরিস্থিতির অবসানে অভিবাসন কূটনীতি জোরদার করতে হবে। যে সকল দেশে বাংলাদেশী অভিবাসী শ্রমিক রয়েছে সেসব দেশের বাংলাদেশী দূতাবাসকে অধিক সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। বাংলাদেশ মিশনগুলিতে বর্তমান শ্রম কল্যাণ উইং গুলিকে দক্ষ ও পর্যাপ্ত জনবল দ্বারা শক্তিশালী করতে হবে এবং শ্রম কল্যাণ উইং এর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)
৬.৯. বর্জ্য সংগ্রহকারী এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অধিকার:
৬.৯.১. পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং বর্জ্য সংগ্রহকারীরা শহরের আবর্জনা পরিষ্কার এবং শহরকে স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করলেও এ শ্রমিকরা নিজেরাই চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। কোন প্রকার সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম ছাড়াই, দিনের পর দিন পুরাতন পদ্ধতিতে তারা এ কাজ করে যাচ্ছেন, রাস্তা থেকে আবর্জনা তোলা থেকে শুরু করে ঘরবাড়ি ও টয়লেট পরিষ্কার করা, গভীর কূপ ও সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করা এবং পয়ঃনিষ্কাশন লাইন ও ম্যানহোল পরিষ্কার করার কাজও তারা করছেন। যার ফলে, এ শ্রমিকরাই মূলত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ঝুঁকিতে রয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা তাদের পরিবার ও সন্তানসহ অসহায় পরিস্থিতিতেও বসবাস করছেন। সিটি কর্পোরেশন এবং পৌরসভাগুলিকে এ শ্রমিকদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম সরবরাহ করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)
৬.৯.২ তাদের জন্য স্থায়ী আবাসন ব্যবস্থা করতে হবে এবং তাদের আবাসস্থলের কাছে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। (মধ্যমেয়াদী)
৬.৯.৩ আউটসোর্সিং বন্ধ করে তাদেরকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ প্রদান করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)
৭. সংগঠনের অধিকার, অংশগ্রহন, প্রতিনিধিত্ব ও যৌথ দরকষাকষি:
৭.১. সকল শ্রমিকদের জন্য সংগঠনের অধিকার:
৭.১.১. বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রতিটি নাগরিকের সংগঠন করার অধিকার রয়েছে, তবে প্রচলিত শ্রম আইন আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাতের সকল শ্রমিকের জন্য, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের শ্রমিকদের জন্য সংগঠনের স্বাধীনতা বা ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করে না। শ্রমিকদের সংখ্যা নির্বিশেষে, সকল শ্রমিকের সংগঠিত হওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের, বিশেষ করে গৃহ শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক, অটোরিকশা চালক এবং চুক্তিভিত্তিক শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার অধিকার স্বীকৃতি দিতে শ্রম আইন ও শ্রম বিধিমালা সংশোধন করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)
৭.১.২. কোন কর্তৃপক্ষ কিংবা কোন সরকারী কর্মকর্তার সন্তুষ্টি নয় বরং আইনগত শর্ত পূরণ সাপেক্ষে শ্রমিক সংগঠনের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)
৭.১.৩. বিদ্যমান শ্রম আইন এবং শ্রম বিধিমালার অধীনে কর্মীদের জন্য প্রযোজ্য সুরক্ষা কক্সবাজার শরণার্থী ক্যাম্পে কর্মরত রোহিঙ্গা শ্রমিকদের জন্যও সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন। রোহিঙ্গা শ্রমিকদের মজুরি এবং সুবিধাগুলি বিদ্যমান শ্রম আইন ও বিধিমালার সাথে সঙ্গতি রেখে নির্ধারণ করতে হবে এবং তাদের কর্ম সংক্রান্ত পরিচয়পত্র বা আইডি কার্ড প্রদাণ করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)
৭.১.৪. বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ পর্যায়ক্রমে কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে, সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষ কক্সবাজার শরণার্থী ক্যাম্পের কাছাকাছি শিল্প বা উৎপাদন কারখানা স্থাপনের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে, যাতে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক কারণে সীমিত কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত করা যায়। (মধ্যমেয়াদী)
৭.২. মিথ্যা মামলায় শ্রমিকদের বেআইনী আটক বন্ধ :
সংগঠন করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। এ অধিকার চর্চার ক্ষেত্রে একদিকে যেমন শ্রমিকদের প্রতিনিয়তি শিকার হতে হয় বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধকতার; হয়রানি করার হীন উদ্দেশ্যে তাদেরকে জড়িত করা হয় মিথ্যা মামলা-মোকদ্দমায়। অন্যদিকে সংগঠনের নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্নের ক্ষেত্রেও হয়রানির শিকার হতে হয় সরকারী দপ্তরে। এহেন পরিস্থিতিতে শ্রমিক তথা সকল নাগরিকের সংগঠন করার সাংবিধানিক অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে-
৭.২.১. শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ও নির্ভয়ে শ্রমিকদের সংগঠন করা এবং সংগঠনের কার্যক্রম স্বাধীনভাবে পরিচালনা করার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)
৭.২.২. শুধুমাত্র সংগঠন করার কারণে এবং কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কোন শ্রমিককে কোন মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় জড়িত করা যাবে না। ট্রেড ইউনিয়নের সাথে জড়িত কোন শ্রমিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের বন্ধ করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)
৭.২.৩. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৯, ২৭ এবং ৩১ অনুচ্ছেদ অনুসারে, সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে আইনের সুরক্ষার অধিকার রয়েছে। তাই শ্রমিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ফৌজদারি মামলাসমূহে আইনি সহায়তা প্রদানের জন্য শ্রমিক আইন সহায়তা সেল এর মাধ্যমে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। (স্বল্প মেয়াদী)
৮. শিশু শ্রম, কিশোর শ্রমিক ও জবরদস্তিমূলক শ্রম:
৮.১. সকল ধরনের শিশু শ্রম নিষিদ্ধকরণ:
৮.১.১. শিশু আইন, ২০১৩ অনুযায়ী ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সকল ব্যক্তি শিশুর সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হলেও, বিদ্যমান শ্রম আইনে ১৪ বছর বা তার নিচের সকল ব্যক্তিকে শিশু হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এছাড়াও, শ্রম আইন শিশু শ্রমকে নিরুৎসাহিত করলেও, “গৃহ পরিচারক” শব্দটি শ্রমিকের সংজ্ঞার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়, ফলে অনেক শিশুকে গৃহকর্মে নিয়মিত নিযুক্ত করা হচ্ছে। গৃহকর্মে শিশু শ্রম নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬– এর ৩৪ নং ধারায় “গৃহকর্মে” নিয়োজিত শিশুকেও সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)
৮.১.২. শিশু শ্রম নিরসনের জাতীয় কর্মপরিকল্পনা (২০২১ – ২০২৫) বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মধ্যে পারস্পারিক সমন্বয় অপরিহার্য। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং শ্রম মন্ত্রণালয়কে একত্রে সমন্বিতভাবে শিশু শ্রম নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। (দীর্ঘমেয়াদী)
৮.১.৩. কারখানা বা অন্যান্য কর্মক্ষেত্র থেকে ছাটাই হওয়া শিশুদের জন্যও শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। (দীর্ঘমেয়াদী)
৮.১.৪. কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর যেন তাদের চেকলিস্ট অনুযায়ী যথাযথ পরিদর্শন পরিচালনা করে শিশু শ্রম নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তা নিশ্চিত করতে হবে। (দীর্ঘমেয়াদী)
৮.১.৫ শিশুরা শ্রমের হাতিয়ার নয় বরং জাতির ভবিষ্যৎ হলেও কৃষিখাত, হাঁস-মুরগি পালন, মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ, পোশাক ও চামড়া শিল্প এবং জুতা তৈরিতে শিশুশ্রম রয়েছে। শিশুরা পাট প্রক্রিয়াজাতকরণ, মোমবাতি, সাবান এবং আসবাবপত্র তৈরিতেও জড়িত। তারা লবণ শিল্প, পিচ, টাইলস এবং জাহাজ ভাঙার ক্ষেত্রেও কাজ করে। শিশুশ্রম নির্মূলের জন্য নিয়োগকর্তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের শ্রম আইনের তৃতীয় অধ্যায়ের ধারা সমূহ অনুসরণ করতে হবে এবং বয়স-যাচাইকরণে প্রাসঙ্গিক নথি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা এবং রেকর্ড সংরক্ষণ করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)
৮.২. চা বাগান শ্রমিকদের উপর জবরদস্তিমূলক বা বাধ্যতামূলক শ্রমের নিষেধাজ্ঞা
৮.২.১. চা বাগান শ্রমিকরা, যাদের অধিকাংশই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য, ঔপনিবেশিক যুগ থেকে মজুরি বঞ্চনা ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তিহীনতার শিকার হয়ে আসছেন, যার ফলে তারা সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত।[xliv] চা শ্রমিকদের মধ্যে ২৬.৯% দাবি করেছেন যে, তারা ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন।[xlv] চা বাগান শ্রমিকদের গ্র্যাচুইটি সুবিধা নিশ্চিত করতে শ্রম আইন, ২০০৬- এর ধারা ২৮ সংশোধন করা জরুরী। এছাড়া, তাদের জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে শ্রম আইন, ২০০৬- এর ধারা ৩২ সংশোধন করা প্রয়োজন। চা বাগান শ্রমিকদের মৌলিক চাহিদা, বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা, নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। (স্বল্প মেয়াদী)
৮.২.২. চা শ্রমিকেরা সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হচ্ছে ভূমির অধিকার থেকে। চা শ্রমিকেরা চা বাগান কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত এক চালা আধা কাঁচা ঘরে বসবাস করতে হয়। বসবাস অযোগ্য এসব ঘরে গবাদি পশুসহ রান্নার কাজও তাদের চালিয়ে নিতে হয়। প্রতিকূল আবহাওয়াতে অবস্থা আরও খারাপ হয়। আর পয়নিস্কাশন এবং স্যানিটেশন পরিস্থিতি অনেক খারাপ অবস্থা থাকে। প্রায় ২০০ বছর ধরে বসবাস করা চা শ্রমিকদের ভূমির অধিকার এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
৮.২.৩. চা শ্রমিকদের ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে এবং এ সংক্রান্তে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন।(মধ্যমেয়াদী)
৮.২.৩. চা বাগানের কাছাকাছি মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা প্রয়োজন।(মধ্যমেয়াদী)
তথ্যসূত্রঃ
আন্তর্জাতিক দলিলসমূহ
- আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, সহিংসতা এবং হয়রানি কনভেনশন, ২০১৯ (সংখ্যা ১৯০) [International Labour Organization, Violence and Harassment Convention, 2019 (No. 190)] (২১ জুন ২০১৯ অনুমোদিত, ২৫ জুন ২০২১ কার্যকর)
- ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এবং কাউন্সিলের ১৩ জুন ২০২৪ তারিখের নির্দেশিকা (ইইউ) ২০২৪/১৭৬০, কর্পোরেট স্থায়িত্ব সম্পর্কিত সঠিক তদন্ত এবং নির্দেশিকা (ইইউ) ২০১৯/১৯৩৭ এবং বিধি (ইইউ) ২০২৩/২৮৫৯ সংশোধন বিষয়ে (Directive (EU) 2024/1760 of the European Parliament and of the Council of 13 June 2024 on corporate sustainability due diligence and amending Directive (EU) 2019/1937 and Regulation (EU) 2023/2859)
- আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, সামাজিক নিরাপত্তা (ন্যূনতম মান) কনভেনশন, ১৯৫২ (সংখ্যা ১০২) (International Labour Organization, Social Security (Minimum Standards) Convention, 1952 (No. 102)) (২৮ জুন ১৯৫২ অনুমোদিত, ২৭ এপ্রিল ১৯৫৫ কার্যকর)
- আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, কর্মসংস্থান আঘাত সুবিধা কনভেনশন, ১৯৬৪ [তফসিল I ১৯৮০ সালে সংশোধিত] (সংখ্যা ১২১) (International Labour Organisation, Employment Injury Benefits Convention, 1964 [Schedule I amended in 1980] (No. 121)) (০৮ জুলাই ১৯৬৪ অনুমোদিত, ২৮ জুলাই ১৯৬৭ কার্যকর)
আইন/নিয়মসমূহ
- বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬(আইন নম্বর XLII, ২০০৬)
- বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫(এসআরও নম্বর ২৯১-আইন/২০১৫)
- কারখানা আইন, ১৯৬৫ (আইন নম্বর IV, ১৯৬৫)
বিচারিক সিদ্ধান্তসমূহ
- বাংলাদেশ বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বনাম রোশন আখতার ও অন্যান্য (২০১০) ৬২ ডিএলআর (এইচসিডি) ৪৮৩; (২০১৭) ৬৯ ডিএলআর (এডি) ১৯৬
- বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট এবং অন্যান্য বনাম বাংলাদেশ এবং অন্যান্য, রিট পিটিশন নং ৭১৮/২০০৮ এর রায়
- বাংলাদেশ ন্যাশনাল উইমেন লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন বনাম বাংলাদেশ এবং অন্যান্য (২০০৯) ১৪ বিএলসি (এইচসিডি) ৬৯৪
বিজ্ঞপ্তি ও নির্দেশিকা
- মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন (১৮ নভেম্বর ২০২৪)
- কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) [ Department of Inspection for Factories and Establishments (DIFE)], [পেশাগত স্বাস্থ্য এবং সেইফটি নীতিমালা] [Occupational Health and Safety Guidelines]
- সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার (Registrar of the Supreme Court), ভার্চুয়াল শুনানির ওপর প্র্যাকটিস ডিরেকশন [Practice Direction on Virtual Hearings]
পলিসি ব্রিফসমুহ
- সজাগ কোয়ালিশন, Policy Brief: Strengthening Compensation Mechanisms for Injured Garment Workers in Bangladesh (ক্রিশ্চিয়ান এইড, অক্টোবর ২০২৪)
- সজাগ কোয়ালিশন, Promoting Gender Equality in Bangladesh’s Ready-Made Garment Sector: Gender Assessments of Factory Policies & Practices (ক্রিশ্চিয়ান এইড, ডিসেম্বর ২০২৪)
- সজাগ কোয়ালিশন, Making Public Spaces Safe for Female Garment Workers (ক্রিশ্চিয়ান এইড, অক্টোবর ২০২৪)
- জ্যসন জুড, ব্রায়ান ওয়াকামো, কলিন পি. ইভান্স এবং সারস কুরুভিয়া, ‘Hot Air: How will fashion adapt to accelerating climate change?‘ (গ্লোবাল লেবার ইনস্টিটিউট, ডিসেম্বর ২০২৪)
- তাকবির হুদা, ‘Tire Them Out’: Challenges of Litigating Compensation Claims under the Bangladesh Labour Act 2006 (ব্লাস্ট ২০২০)
সংবাদ প্রতিবেদন
- ‘দেশে শ্রমশক্তি ৭ কোটি ৩৪ লাখ’ (জাগোনিউজ২৪, ২৯ মার্চ ২০২৩)
- ‘শ্রম আদালতে শ্রমিকেরা বঞ্চিত, নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ২০ হাজার মামলা’ (প্রথম আলো, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪)
- ‘হাইকোর্টের এক বেঞ্চে শুরু হচ্ছে কাগজমুক্ত বিচার কার্যক্রম’ (প্রথম আলো, ০৩ জানুয়ারি ২০২৫)
- ‘ই-জুডিশিয়ারি বিচারব্যবস্থায় নতুন মাত্রা’ (মানবজমিন, ২৭ জুন ২০২০)
- বাংলাদেশের নির্মাণ শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণঃ আইনগত কাঠামো ও প্রতিবন্ধকতা’ (ব্লাস্ট, ৫ জুন ২০২৪)
- পোশাক খাতে নারী শ্রমিকের হার ৫৫ শতাংশের নিচে নেমে গেছে’ (বণিক বার্তা, ২৯ অক্টোবর, ২০২৪)
- বিজিএমইএ’র ‘তথ্যভাণ্ডার’ শ্রমিকদের গলার কাঁটা (রাইজিংবিডি, ২৮ আগস্ট, ২০২৪)
- EWM Group hits back at BGMEA’s blacklist threat, terms it ‘unproductive’ (ডেইলি স্টার, ২৫ মে ২০২০)
- অটোমেশনে ৩১% পোশাক শ্রমিক কাজ হারিয়েছে (সমকাল, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪)
অন্যান্য প্রতিবেদনসমূহ
- ‘BGMEA wins Digital Bangladesh Award’ (বিজিএমইএ) অ্যাক্সেস করা হয়েছে ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সুপারিশসমূহ প্রস্তুতিতে অংশগ্রহণকারীদের তালিকা:
এই সুপারিশসমূহ প্রস্তুতিতে অবদান রাখার জন্য নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি (বর্ণানুক্রমিক ক্রমে):
- আফরিদা সামিহা নাবিলাহ্, সহযোগী গবেষক, ব্লাস্ট
- আহমেদ ইব্রাহিম, উপদেষ্টা, জেন্ডার ও ডাইভার্সিটি, ব্লাস্ট
- আমিনা আক্তার দাওয়ান, প্যানেল আইনজীবী, ব্লাস্ট
- আসাদুজ্জামান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক, নিট ডাইং গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন
- খায়রুল মামুন মিন্টু, আইন বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র
- খন্দকার আমিনা রহমান, ইউনিট সমন্বয়কারী, টাঙ্গাইল ইউনিট, ব্লাস্ট
- ড. উত্তম কুমার দাস, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
- ড. শামসুল বারী, সহ-সভাপতি, ব্লাস্ট
- তাহমিনা রহমান, সদস্য, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ, ব্লাস্ট
- তায়েবুর রহমান, সহকারী পরিচালক, ইকোনমিক জাস্টিস, ব্লাস্ট
- তাপশী রাবেয়া, উপ-পরিচালক, সালিশ ও ক্লায়েন্ট সাপোর্ট, ব্লাস্ট
- তাকবীর হুদা, এলএলএম প্রার্থী, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়
- নেসার আহমেদ, প্যানেল আইনজীবী, ব্লাস্ট
- পিনাক রাণী রায়, স্টাফ আইনজীবী, দিনাজপুর ইউনিট, ব্লাস্ট
- ফাহাদ বিন সিদ্দিক, জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা, ব্লাস্ট
- হাবিবা আক্তার, সহযোগী আউটরিচ কর্মকর্তা, অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার, ব্লাস্ট
- মাহবুবা আখতার, পরিচালক, অ্যাডভোকেসি ও যোগাযোগ, ব্লাস্ট
- মো. আবু বকর সিদ্দিক, ইউনিট সমন্বয়কারী, পটুয়াখালী ইউনিট, ব্লাস্ট
- মো. আবুল কাশেম মুসা, ইউনিট সমন্বয়কারী, ময়মনসিংহ ইউনিট, ব্লাস্ট
- মো. আমানুল্লাহ আমান, জ্যেষ্ঠ আউটরিচ কর্মকর্তা, ইকোনমিক জাস্টিস, ব্লাস্ট
- মো. বরকত আলী, পরিচালক, আইন, ব্লাস্ট
- মো. লিয়াকত আলী খান, ইউনিট সমন্বয়কারী, নোয়াখালী ইউনিট, ব্লাস্ট
- মো. মহসিন মজুমদার, প্যানেল আইনজীবী, ব্লাস্ট
- মো. মশিউর রহমান, ইউনিট সমন্বয়কারী, ঢাকা ইউনিট, ব্লাস্ট
- মো. নুরুল আলম, সদস্য, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ, ব্লাস্ট
- মো. রফিক, সভাপতি, বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন
- মো. রেজাই রাব্বী, প্যানেল আইনজীবী, ব্লাস্ট
- মো. রাশেদুল ইসলাম, উপ-পরিচালক, মামলা পরিচালনা, ব্লাস্ট
- মো. সেলিম আহসান খান, প্যানেল আইনজীবী, ব্লাস্ট
- মোস্তফা হুমায়ুন কবির, ইউনিট সমন্বয়কারী, যশোর ইউনিট, ব্লাস্ট
- মনিষা বিশ্বাস, জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা, ব্লাস্ট
- সালওয়া জাহান নাবিলা, পরামর্শক, ব্লাস্ট
- সানজিদা আক্তার, প্যানেল আইনজীবী, ব্লাস্ট
- সারা হোসেন, অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক, ব্লাস্ট
- সারাফ ওয়ামিয়া আহমেদ, ইন্টার্ন, গবেষণা, ব্লাস্ট
- সিফাত-ই-নূর খানম, সহযোগী আইন বিশেষজ্ঞ, ইকোনমিক জাস্টিস, ব্লাস্ট
- সুবর্ণা দাস, সক্ষমতা উন্নয়ন সমন্বয়কারী, ইকোনমিক জাস্টিস, ব্লাস্ট
- সৈয়দা সেজুতি মাহবুব, ইন্টার্ন, গবেষণা, ব্লাস্ট
- শংকর মজুমদার, ইউনিট সমন্বয়কারী, কুষ্টিয়া ইউনিট, ব্লাস্ট
- শামীমা আখতার জাহান, ইউনিট সমন্বয়কারী, কুমিল্লা ইউনিট, ব্লাস্ট
[i] মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন, (গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৪)
[ii] জ্যৈষ্ঠ প্রতিবেদক, ‘দেশে শ্রমশক্তি ৭ কোটি ৩৪ লাখ’ দৈনিক প্রথম আলো (২৯ মার্চ ২০২৩) জ্যৈষ্ঠ প্রতিবেদক, জাগো নিউজ ২৪ <https://www.jagonews24.com/national/news/843686>অ্যাক্সেস করা হয়েছে ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫.
[iii] ফখরুল ইসলাম, ‘শ্রম আদালতে শ্রমিকেরা বঞ্চিত, নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ২০ হাজার মামলা’ দৈনিক প্রথম আলো (২৮ ডিসেম্বর ,২০২৪) <https://www.prothomalo.com/business/ok32avthnb> অ্যাক্সেস করা হয়েছে ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫.
[iv] ibid
[v] তাকবীর হুদা, Tire Them Out: Challenges of Litigating Compensation Claims under the Bangladesh Labour Act 2006 (ব্লাস্ট, ২০২০)
[vi] ফখরুল ইসলাম, ‘শ্রম আদালতে শ্রমিকেরা বঞ্চিত, নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ২০ হাজার মামলা’ দৈনিক প্রথম আলো (ঢাকা, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪) <https://www.prothomalo.com/business/ok32avthnb> অ্যাক্সেস করা হয়েছে ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
[vii] বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বিএসএস), ‘হাইকোর্টের এক বেঞ্চে শুরু হচ্ছে কাগজমুক্ত বিচার কার্যক্রম’ দৈনিক প্রথম আলো (ঢাকা, ৩ জানুয়ারী ২০২৫) <https://www.prothomalo.com/bangladesh/3g49b7fjd8> অ্যাক্সেস করা হয়েছে ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
[viii] মাহবুবা চৌধুরী, ই-জুডিশিয়ারি: বিচারব্যবস্থায়-নতুন-মাত্রা মানবজমিন (২৭ জুলাই,২০২০) অ্যাক্সেস করা হয়েছে ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫.`
[ix] ব্লাস্ট লাউডাস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় “শ্রমিক জিজ্ঞাসা” নামে একটি মোবাইল আ্যাপ ডেভেলপ করেছে। এটি করা হয়েছে শ্রমিকদের হাতের নাগালে আইনি তথ্য ও সহায়তা সহজ করতে, যাতে তারা সচেতন হতে পারে এবং আইনি প্রক্রিয়া অনুসরন করে আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের কর্মস্থলের সমস্যা সমাধান করতে পারে, এবং এভাবে তাদের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।
[x] রেজিষ্ট্রার জেনারেল, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট Circular No 490 (২০ আগস্ট ২০২৩)
[xi] E-Judiciary Causelist App (Google Play Store); আইন ও বিচার বিভাগ, Cause List (বাংলাদেশ জুডিশিয়ারী) <https://causelist.judiciary.gov.bd/> অ্যাক্সেস করা হয়েছে ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫.
[xii] রীট পিটিশন-৪৩৯০, আসক ও ব্লাস্ট বনাম বাংলাদেশ ও অন্যান্য
[xiii] রীট পিটিশন- ২০১৯/১০০৬, আসক ও অন্যান্য বনাম বাংলাদেশ ও অন্যান্য
[xiv] রীট পিটিশন-৩৫৬৬/২০০৫, মোt কামাল হোসেন ও অন্যান্য বনাম বাংলাদেশ ও অন্যান্য
[xv] রীট পিটিশন-১৫৬৯৩/২০১২, আসক ও অন্যান্য বনাম বাংলাদেশ ও অন্যান্য
[xvi] রীট পিটিশন-৯৬৮২/২০২১, ব্লাস্ট ও অন্যান্য বনাম বাংলাদেশ ও অন্যান্য
[xvii] প্যারালিগ্যাল প্রশিক্ষণ, জ্ঞান ও দক্ষতার ভিত্তিতে নিজ উদ্যোগে বা কোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অন্য কোন ব্যক্তিকে বা বিচার প্রার্থীকে আইনগত সেবা বা প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদানে সহায়তা করেন।
[xviii] একজন কমিউনিটি প্যারালিগাল স্থানীয় জনসাধারনের সাথে কাজ করেন এবং ঘরে ঘরে গিয়ে আইনি তথ্য প্রদান করেন। তিনি আইনি অধিকার বিষয়ে তথ্য প্রদান এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে তাদের অধিকার এবং দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিকের নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখেন।
[xix] কোর্ট প্যারালিগ্যাল শ্রম আদালত এবং শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে কাজ করেন। তিনি বিচারপ্রার্থীদের আইনি তথ্য প্রদান ও সংশ্লিষ্ট সেবাপ্রতিষ্ঠানসমূহে প্রয়োজনে রেফার করেন; যেমন- সালিস এবং মামলা সংক্রান্ত তথ্য, বিচারপ্রার্থীদের মামলার হালনাগাদ তথ্য প্রদান, শ্রমিক আইন সহায়তা সেল-এ সহায়তা প্রদান এবং আইনজীবী এবং শ্রমিকদের মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয় নিশ্চিত করেন।
[xx] শ্রম আইন ২০০৬, ধারা ৩১৪ঃ এই আইন বা কোন বিধি, প্রবিধান বা স্কীমে ভিন্নরূপ কিছু না থাকিলে, ইহাদের অধীন কোন অপরাধ কোন শ্রম আদালত বিচারার্থ গ্রহণ করিবে না যদি না তত্সম্পর্কে অভিযোগ অপরাধ সংগঠিত হইবার ছয় মাসের মধ্যে পেশ করা হয়৷
[xxi] তাকবীর হুদা, ‘Tire Them Out’: Challenges of Litigating Compensation Claims under the Bangladesh Labour Act 2006 (ব্লাস্ট ২০২০)
[xxii] বাংলাদেশ বেভারেজ ইন্ডাষ্ট্রিয়াল লিমিটেড বনাম রওশন আক্তার ও অন্যান্য, ৬২ ডিএলআর (হাইকোর্ট) (২০১০) ৪৮৩; ৬৯ ডিএলআর(এডি)) (২০১৭) ১৯৬
[xxiii] EIS Pilot Bangladesh, অ্যাক্সেস করা হয়েছে ১১ ফেব্রয়ারী ২০২৫
[xxiv] Injured Worker Compensation Policy Brief, (2024),সজাগ কোয়ালিশন(ব্লাস্ট,ক্রিশ্চিয়ান এইড, নারীপক্ষ), প্রকাশনায়- ক্রিশ্চিয়ান এইড (অক্টোবর ২০২৪)
[xxv] কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, পেশাগত স্বাস্থ্য এবং সেইফটি নীতিমালা (Occupational Health and Safety Policy) (গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, ২০১৩)
[xxvi] European Union, Directive 2024/1760/EU of the European Parliament and of the Council of 1 October 2024 amending Directive 2014/24/EU on public procurement <https://eur-lex.europa.eu/eli/dir/2024/1760/oj> accessed 16 February 2025.
[xxviii] ফাহাদ বিন সিদ্দিক, Safety of construction workers at a crossroads ডেইলি স্টার (ঢাকা, ১ মার্চ ২০২৪) <https://www.thedailystar.net/opinion/views/news/safety-construction-workers-crossroads-3555536> এক্সেস করা হয়েছে ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
[xxix] রিট পিটিশন নং ৭১৮/২০০৮ এর রায় (হাইকোর্ট বিভাগ)
[xxx] জ্যসন জুড, ব্রায়ান ওয়াকামো, কলিন পি. ইভান্স এবং সারস কুরুভিয়া, ‘Hot Air: How will fashion adapt to accelerating climate change?‘ (গ্লোবাল লেবার ইনস্টিটিউট, ডিসেম্বর ২০২৪)
[xxxi] নিজস্ব প্রতিবেদক, ‘পোশাক খাতে নারী শ্রমিকের হার ৫৫ শতাংশের নিচে নেমে গেছে’ বনিক বার্তা (ঢাকা, ২৯ অক্টোবর ২০২৪) <https://bonikbarta.com/economy/eOhxSTcRqHVEIdnD> এক্সেস করা হয়েছে ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
[xxxii] সজাগ কোয়ালিশন, Promoting Gender Equality in Bangladesh’s Ready-Made Garment Sector: Gender Assessments of Factory Policies & Practices (ক্রিশ্চিয়ান এইড, অক্টোবর ২০২৪)
[xxxiii]বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি বনাম বাংলাদেশ ও অন্যান্য (২০০৯) ১৪ বিএলসি (হাইকোর্ট) ৬৯৪.
[xxxiv] আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, সহিংসতা এবং হয়রানি কনভেনশন, ২০১৯ (নং ১৯০) (গৃহীত ২১ জুন ২০১৯, কার্যকর ২৫ জুন ২০২১)
[xxxv] নিজস্ব প্রতিবেদক, ‘নারী শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশের জন্য আচরণবিধি দরকার’ প্রথম আলো (ঢাকা, ১১ জুন ২০১৭) <https://www.prothomalo.com/bangladesh/%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80-%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A6%A6-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%86%E0%A6%9A%E0%A6%B0%E0%A6%A3%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A7%E0%A6%BF> এক্সেস করা হয়েছে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
[xxxvi] সজাগ কোয়ালিশন, Making Public Spaces Safe for Female Garment Workers (ক্রিশ্চিয়ান এইড, অক্টোবর ২০২৪)
[xxxvii] সম্পাদক, ‘Govt Must Set Up Minimum Wage Commission to Honour Labour’ নিউ এইজ (ঢাকা, ৩ মে ২০২৪) <https://www.newagebd.net/post/editorial/234164/govt-must-set-up-minimum-wage-commission-to-honour-labour> এক্সেস করা হয়েছে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
[xxxviii] বিজিএমইএ, BGMEA Wins Digital Bangladesh Award 2021 (বিজিএমইএ) >এক্সেস করা হয়েছে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
[xxxix] আরিফুল ইসলাম সাব্বির, ‘বিজিএমইএ’র ‘তথ্যভাণ্ডার’ শ্রমিকদের গলার কাঁটা’ রাইজিংবিডি (ঢাকা, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) < এক্সেস করা হয়েছে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; স্টার অনলাইন রিপোর্ট, ‘EWM Group hits back at BGMEA’s blacklist threat, terms it ‘unproductive’ ডেইলি স্টার (ঢাকা, ২৫ মে ২০২০) <https://www.thedailystar.net/ewm-group-hits-back-bgmea-blacklist-threat-terms-it-unproductive-1905598> এক্সেস করা হয়েছে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আরিফুল ইসলাম সাব্বির, ‘Bangladesh: Garment workers allegedly face blacklisting and denial of jobs for participating in recent protests’ (বিজনেস এন্ড হিউম্যান রাইটস রিসোর্স সেন্টার, ২৮ আগস্ট ২০২৪) <https://www.business-humanrights.org/en/latest-news/bangladesh-garment-workers-allegedly-face-blacklisting-and-denial-of-jobs-for-participating-in-recent-protests/> এক্সেস করা হয়েছে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
[xl] সমকাল প্রতিবেদক, অটোমেশনে ৩১% পোশাক শ্রমিক কাজ হারিয়েছে, সমকাল (ঢাকা, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪) < > এক্সেস করা হয়েছে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
[xli] ইউরোপীয় পুনর্গঠন ও উন্নয়ন ব্যাংক, ‘What is a just transition?‘ (ইবিআরডি, ২০২৫)
[xlii] UNFCC stands for United Nations Framework Convention on Climate Change
[xliii]আত্মনির্ভর দলের সদস্যরা হলেন তারা যাদের যোগাযোগ ও নেতৃত্বের দক্ষতা রয়েছে এবং স্বেচ্ছাসেবার কাজে যাদের সহযোগীতার মনোভাব রয়েছে । তারা কর্মপরিবেশের উন্নয়নে কাজ করতে সচেষ্ট ও স্ব-প্রণোদিতভাবে শ্রমিক অধিকারে কাজ করে থাকেন।
[xliv] ফিলিপ গাইন, ‘Stop the exploitation of tea workers in Bangladesh and fix the industry’ ডেইলি স্টার (ঢাকা,৭ অক্টোবর ২০২৪) <https://www.thedailystar.net/opinion/views/news/stop-the-exploitation-tea-workers-bangladesh-and-fix-the-industry-37214766> এক্সেস করা হয়েছে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
[xlv] ফয়সাল আহমেদ এবং মো. ইসমাইল হোসেন, A Study Report on Working Conditions of Tea Plantation Workers in Bangladesh (আইএলও, বাংলাদেশ ২০১৬)।