প্রেস বিজ্ঞপ্তি: রাজধানীর বেইলী রোডে রেস্তোরায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে হতাহতের ঘটনায় ব্লাস্টের শোকপ্রকাশ এবং মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুয়ায়ী এনফোরসমেন্ট কর্তৃপক্ষের তদারকি নিশ্চিতকরণ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবী জানাচ্ছে ব্লাস্ট।

High Court issue Rule Nisi on enforcement of Fire Prevention and Extinguishing Act, 2003 and the Bangladesh National Building Code, 2020 and adequate compensation for victims of Bailey Road fire 

অগ্নি নির্বাপণ সংক্রান্ত মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশনা ও বিদ্যমান আইন বাস্তবায়ন এবং জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি জাতীয় নিরাপত্তা প্রচারাভিযান ঘোষণা করাসহ সকলের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ব্লাস্ট সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছে। গতকাল আনুমানিক রাত ৯ টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর বেইলী রোডের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে এ পর্যন্ত নারী ও শিশুসহ ৪৬ জন নিহত হয়েছেন এবং বহু আহত হয়েছেন, যার মধ্যে ২২ জন আশংকাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। সংবাদ মাধ্যম হতে আরো জানা যায় যে , ভবনে কোনো অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না এবং মানুষের আসা-যাওয়ার জন্য কেবল একটি ছোট সিঁড়ি ছিল। ভবন কর্তৃপক্ষকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ হতে্ একাধিকবার অগ্নিনিরাপত্তা সংক্রান্ত নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ব্লাস্ট নিহতদের শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে। পাশাপাশি উক্ত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ ও দায়ী ব্যক্তিদের যথাযথ বিচার এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবী জানাচ্ছে।

রাষ্ট্রের দায়িত্ব সকল নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বাংলাদেশ সংবিধান প্রত্যেক নাগরিকের জীবনের অধিকার নিশ্চিত করলেও অবহেলাজনিত কারণে তা বিপন্ন হচ্ছে। উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে কেটিএস গার্মেন্টসের অগ্নিকান্ডে মৃত্যুর ঘটনায় ব্লাস্ট এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্র এর দায়েরকৃত রিটের প্রেক্ষিতে (রিট পিটিশন নং ২০১৯/২০০৬) রুল জারির মাধ্যমে মহামান্য হাইকোর্ট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অগ্নিকান্ড সৃষ্টির কারণ এবং গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কিত একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেন। এছাড়াও ২০১০ সালে ব্লাস্ট, সেইফটি এন্ড রাইটস সোসাইটি এবং ওশি ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত দায়ের করা রিটের প্রেক্ষিতে (রিট পিটিশন নং ৭১৮/২০০৮) মহামান্য হাইকোর্ট রায়ে উল্লেখ করেন যে, আগুনসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনা থেকে জনসাধারণকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড তৈরি করা হয়েছে। মহামান্য হাইকোর্ট সারা দেশে ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ২০০৬ এর পূর্ণ বাস্তবায়নে ভবন নির্মাণে যথাযথ নিয়ম নীতি অনুসরণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ১ বছরের মধ্যে কোড এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি (অথরিটি) গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। আমরা এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন সহ সুষ্ঠু তদারকি জোরদারের দাবী জানাচ্ছি। বারংবার দেশে ভবন ধস সহ ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেই চলেছে। কেটিএস গার্মেন্টস, তাজরিন গার্মেন্টস, টেম্পাকো ফয়েলস, নিমতলী, চকবাজারসহ বিভিন্ন অগ্নিকান্ডের ঘটনায় পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য মহামান্য আদালত বারবার আদেশ দিয়েছেন কিন্তু অনেক আদেশ এখনও বাস্তবায়ন করা হয় নাই, যার ফলে আমরা উদ্বিগ্ন।

এ বিষয়ে ব্লাস্ট এর সদস্য, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ও সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট জেড আই খান বলেন, “সকল সরকারী আধা সরকারি বেসরকারি ঝুঁকি পূর্ণ ভবন সমুহ চিহ্নিত করে তার তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে রাজউক , ফায়ার সার্ভিস কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কেন গ্ৰহন করা হলো না তার জবাবদিহিতার প্রয়োজন”।

ব্লাস্ট এর পরিচালক, আইন মোঃ বরকত আলী বলেন, ” ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সকলের ইমারত নির্মাণ বিধিমালা মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রতিটি বহুতল ভবনের প্রত্যেক তলায় অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থার পাশাপাশি ভবনে অবস্থানরতদের সুরক্ষার জন্য অগ্নিনির্বাপন এর পৃথক কক্ষ থাকা প্রয়োজন। পাশাপাশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জন্য পৃথকভাবে ব্যবস্থা করা জরুরী। সরকারি কতৃপক্ষের ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার পরও যদি সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয় তবে সে ক্ষয়ক্ষতির দায়িত্ব সংশ্লিষ্টদেরকে নিতে হবে।”

বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নি নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইন না মানার কারণে সাধারণ মানুষের প্রাণহানির আরও একটি মর্মান্তিক ঘটনায় ব্লাস্ট গভীর উদ্বেগ ও শোক প্রকাশ করছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে, ব্লাস্ট সরকারকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিতকরণ, পরিদর্শন এবং সংশ্লিষ্ট আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জনহিতকরণ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে।

আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন:
কমিউনিকেশন বিভাগ
ইমেইল: communication@blast.org.bd