Press Release: High Court Judgment on Health Ministry Guidelines on Unnecessary C-Sections for Pregnant Women

আজ ১২ অক্টোবর ২০২৩ তারিখ বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) কর্তৃক দায়েরকৃত জনস্বার্থ বিষয়ক মামলা (রীট মামলা নং ৭১১৭/২০১৯) এর চূড়ান্ত শুনানি অন্তে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের মাননীয় বিচারপতি নাইমা হায়দার ও মাননীয় বিচারপতি কাজী জিনাত হক এর সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ (এনেক্স ২০) চিকিৎসা ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতে দাখিলকৃত নীতিমালাটিকে রায়ের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে গত ৩০ জুন ২০১৯ তারিখ প্রদত্ত রুলটি নিষ্পত্তি করেন। এ রায়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১১ অনুসারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতে দাখিলকৃত নীতিমালাটি রায়ের মর্যাদা পেল এবং রায়টি এখন সবার জন্যে অবশ্যপালনীয়।

রায়ে একইসাথে, আগামী ০৬ মাসের মধ্যে উক্ত নীতিমালাটি সর্বস্তরে ব্যাপকভাবে প্রচারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক দাখিলকৃত নীতিমালাটিতে বেশ কিছু বিষয়ের উপর সুস্পষ্ট আলোকপাত করা হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

১. অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল  কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ গুলোকে স্বল্প মেয়াদি, মধ্য মেয়াদি ও দীর্ঘ মেয়াদি –এ তিনটি মেয়াদে বিভক্ত করা হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদি কার্যক্রমে বিদ্যমান যে আইনি অবকাঠামো রয়েছে, তা পর্যালোচনা করে সমস্যা গুলো চিহ্নিত করে দ্রুত প্রয়োজনীয় সংশোধনীর আনা;

২.জাতীয় পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রচারণামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা;

৩.স্নাতক পর্যায়ের পাঠ্যক্রমে Normal Vginal Delivery বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করা;

৪. চিকিৎসকদের নৈতিক মানদণ্ড সমুন্নতকরনে/ বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিয়মিত কাউন্সিলিং করা ও প্রশিক্ষণদেয়া;

৫. Medical Defense Unit গঠনের মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীদের প্রয়োজনীয় আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা;

৬. তথ্য সংরক্ষণ ও রেকর্ডিং এর দায়বদ্ধতা ও তদারকিকরণ;

৭.আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সূচক – যে ঠিক কোন শারীরিক পরিস্থিতিতে সিজারিয়ান অপারেশন করা যাবে – তার উল্লেখ রয়েছে;

৮.Elective Caesarean এর ক্ষেত্রে রোগীকে সম্পূর্ণ তথ্য প্রদান করে তার সম্মতি নিতে হবে; অন্যথায় অসম্পূর্ণ বা ভুল তথ্য প্রদানের মাধ্যমে আদায়কৃত সম্মতি আইনের দৃষ্টিতে কোনরূপ গ্রহণ যোগ্যতা পাবে না; তা অপরাধ বলে গণ্য হবে;

নারীর যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় যুগান্তকারী এ রায়ে অনুভূতি ব্যক্ত করে প্যানেল আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম, বলেন, ‘ ২০১৯ এ যখন এ মামলাটি দায়ের করা হয় তখন সিজারের মাধ্যমে বাংলাদেশে সন্তান জন্মদানের হার ছিল ৩১%, এখন তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫%, যা ডব্লিওএইচও (WHO) কর্তৃক নির্ধারিত মাত্রার প্রায় তিনগুণ বেশি।  পূর্বে ব্রাজিল ও চীনেও  সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের এ ভয়াবহ চিত্র ছিল। কিন্তু যথাযথ নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন করে এবং এর পূর্ণ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে তারা সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের এ অসম হার নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করে ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের হার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।’

আবেদনকারীর পক্ষে এ মামলাটি পরিচালনা করেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম, তাঁকে সহায়তা করেন এডভোকেট আয়েশা আক্তার  এবং এডভোকেট মোঃ নাজমুল করিম । রাষ্ট্র পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল এডভোকেট অমিত দাশ গুপ্ত ও সহকারী এটর্নি জেনারেল এডভোকেট মোঃ জাকির হোসেন ।

পটভূমি:

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর ভাষ্য মতে, একটি দেশের সিজারিয়ান অপারেশনের হার কোন ভাবেই ১০-১৫ %  এর বেশি হবার যৌক্তিকতা নেই । শুধুমাত্র বিশেষ ও জরুরী পরিস্থিতিতে  প্রসূতি মা ও তার সন্তানের  জীবন রক্ষার্থে সিজারিয়ান অপারেশন পরিচালনার সিদ্ধান্ত  নেয়া উচিত। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ ডেভলাপম্যান্ট স্টাডিজ এর জরীপ অনুসারে ২০০৪  সালে সিজারায়িন অপারেশনের সংখ্যা ৩.৯৯ শতাংশ, পরবর্তীতে ২০২১ সালের বাংলাদেশ আরবান হেলথ সার্ভে- মতে বর্তমানে বাংলাদেশে সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের হার আশংকাজনক ভাবে বেড়ে ৩১% এ এসে দাঁড়িয়েছে।  যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO কর্তৃক নির্ধারিত মাত্রার প্রায় দ্বিগুণ বেশি।  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আরেকটি রিপোর্টে বলা হয়, বর্তমানে  বাংলাদেশের বেসরকারি হাসপাতাল গুলোতে ৮৩%, সরকারি হাসপাতাল গুলোতে ৩৫% এবং এনজিও কর্তৃক পরিচালিত হাসপাতাল গুলোতে ৩৯% সন্তান সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করছে।

মূলত প্রসূতি মায়েদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী সরকারী ও বেসরকারী  ক্লিনিক, হাসপাতাল ও চিকিৎসক কর্তৃক পরিচালিত অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধে বিবাদীগণ কর্তৃক কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যর্থতায় সংক্ষুব্ধ হয়ে আবেদনকারী জনস্বার্থে মামলাটি দায়ের করেন।

গত ৩০ জুন ২০১৯ তারিখ জনস্বার্থ বিষয়ক মামলার প্রাথমিক শুনানী অন্তে  মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের মাননীয় বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও মাননীয় বিচারপতি মোঃ আশরাফুল কামাল এর সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ চিকিৎসা ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধে বিবাদীগণ ( (১) সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় (২) মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং (৩) প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল) কেন সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডাক্তারদের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন জানতে চেয়ে  রুল জারি করেন।

এছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ হিসেবে হাইকোর্ট রুল জারির পরবর্তী ১ মাসের মধ্যে এ বিষয়ে একটি কার্যকরী নীতিমালা তৈরির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন ও আগামী ০৬ মাসের মধ্যে উক্ত নীতিমালা আদালতে জমা দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন ।

পরবর্তীতে গত ৯ অক্টোবর, ২০২৩ তারিখ মামলাটির চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ ১২ অক্টোবর, ২০২৩ তারিখ মামলাটির  রায়ের  দিন ধার্য করা হয়। এ দিন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে একাধিক অংশিজনদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি কর্তৃক প্রস্তুতকৃত একটি নীতিমালা আদালতে দাখিল করা হয়।

ব্লাস্ট দীর্ঘদিন ধরেই নারীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ব্লাস্ট আশা করছে, আজকের এই যুগান্তকারী রায়টি এই অধিকার প্রাপ্তির পথকে আরো সুগম করবে।

আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন:

ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও প্যানেল আইনজীবী, ব্লাস্ট

মোবাইল নংঃ ০১৭১৪১৩৬০৭১

ই-মেইলঃ rashna.imam@akhtarimam.com

 

এডভোকেট আয়েশা আক্তার, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও সিনিয়র এডভোকেসি অফিসার, ব্লাস্ট

মোবাইল নংঃ ০১৭২৮৯৭৮৪৬৫

ই-মেইলঃ ayesha@blast.org.bd