২০ নভেম্বর ২০২৫
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
পৃথক সচিবালয়ের অধ্যাদেশ মন্ত্রীসভায় পাস হয়েছে যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতের জন্য অন্যতম পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেন বক্তারা। সেই সাথে বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয় গঠনের পাশাপাশি বলে জোর দেন “বিচার বিভাগের স্বাধীনতা: হাইকোর্টের মাইফলক রায়, সচিবালয় প্রতিষ্ঠা ও পরবর্তী করণীয়” বিষয়ক মতবিনিময় সভার ব্ক্তারা। সেই সাথে আরো একটি গুরুত্বপূর্ন উদ্যোগ- আজ ২০ নভেম্বর ২০২৫ এ ঢাকার সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের অডিটোরিয়ামে ব্লাস্ট উক্ত সভা আয়োজন করে।
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ড. কাজী জাহেদ ইকবাল বলেন, দীর্ঘ যাত্রা শেষে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পথে হাঁটছে বলে আমরা বলতে পারি। সম্প্রতি তিন মাসের মধ্যে সচিবালয় তৈরীর পরিকল্পনার উদ্যেগ গ্রহণ করা হয়েছে যা আমাদেরকে কাঠামোগত স্বাধীনতা নিশ্চিতে সাহায্য করবে। বিচার বিভাগের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা জরুরী যাতে বিচার প্রক্রিয়া বিঘ্নিত না হয়। সেই সাথে বিচার বিভাগের নিজের স্বাধীনভাবে পরিচালিত হওয়ার সদিচ্ছা থাকাটাও জরুরী বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতে সচিবালায় প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতার আলাপে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যরিস্টার মোহাম্মদ শিশির মনির অনুচ্ছেদ ১১৬–কে অসাংবিধানিক ঘোষণার পরও এর সম্পূরক রায় না পাওয়া, ১৮ কোটি মানুষের জন্য মাত্র ২,১৯৭ জন বিচারকের অপ্রতুলতা এবং নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপ নিম্ন আদালতের বিচারকদের স্বাধীনভাবে বিচার করার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করেছে।তাই বিচার বিভাগকে নির্বাহী প্রভাবমুক্ত করা, পর্যাপ্ত সংখ্যক বিচারক নিয়োগ, এবং নিরপেক্ষ শৃঙ্খলা কাঠামো প্রণয়ন-একটি কার্যকর, স্বাধীন ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ বিচার ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য অপরিহার্য।
বাংলাদেশের আইনী অঙ্গনে হাইকোর্টের মাইফলক রায়ের অবদানের আলোচনায় বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া বলেন, পূর্বে বিধান অনুযায়ী আইন মন্ত্রনালয় নিম্ন আদালতের কার্যক্রম পরিচালনায় দায়িত্বরত ছিল এবং সংবিধানে উল্লেখ্য নির্বাহী বিভাগের পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি নিম্ন আদালতের প্রশাসনিক কাজ পরিচালনায় ছিলেন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংক্রান্ত সাদ্দাম হোসেনের মামলার রায় যদি আপিল বিভাগে বহাল থাকে তবে নিম্ন আদালতের কর্তৃত্ব সরাসরি সুপ্রীম কোর্টের অধীনে চলে আসবে যা নিম্ন আদালতকে স্বাধীন করার জন্য একটি সুদুরপ্রসারী উদ্যোগ। প্রস্তাবিত পৃথক সচিবালয় অধ্যাদেশে সমন্বিত তহবিলের মাধ্যমে উচ্চ এবং নিম্ন আদালতের ব্যয় বহনের জন্য বিচার বিভাগকে বাজেট বরাদ্দ দেয়া যৌক্তিক উদ্যেগ বলে তিনি মনে করেন।
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এবং সাবেক এটর্নী জেনারেল ব্যরিস্টার ফিদা এম. কামাল বলেন, বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয় হলে আমরা আশা করছি স্বাধীন বিচার বিভাগ পাব – অবশ্যই এটি রক্ষার্থে বিচারক এবং আইনজীবীদের নিরপেক্ষ মানসিকতার পরিচয় দিতে হবে।
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, ব্যরিস্টার এ. এম. মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, হাইকোর্টের মাইফলক এ রায় আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে আশা জাগানিয়া কিন্তু অবশ্যই বিচারক এবং আইনজীবীদের স্বাধীনভাবে চিন্তা করারও প্রবণতা থাকতে হবে। উচ্চ আদালতে সচিবালয় হলেও নিম্ন আদালতের দুর্নীতি রোধ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে, সেই সাথে তরুন আইনজীবীদের এ আলোচনা তৈরীর জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে তিনি আহ্বান জানান। বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিলের প্রশ্নে উনি জবাব দেন যে, এ আইন অবশ্যই বাতিল হওয়া উচিত।
মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাদেশকে আইন আকারে গ্রহণ করার জন্য কী কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে, বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপন করা, বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিলের দাবী নিয়ে আলোচনা করা হয়।
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এবং ব্লাস্টের অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক, সারা হোসেনের সমাপণী বক্তব্যে তিনি বলেন, জুলাই গনঅভুত্থানের পরে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ, এবং প্রধান বিচারপতির বিচার সংস্কারের রোডম্যাপ-এ বিভিন্নভাবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। সচিবালয়ের পাশাপাশি অন্যান্য ব্যবস্থা, যেমন: মনিটরিং ব্যবস্থা রাখা উচিত, যাতে বিচার-প্রত্যাশীদের এবং আইনজীবীদের সুপারিশও সচিবালয় আমলে নিতে পারেন। অনেকেই কথাই কথাই বলেন যে বিচারকদের ”বান্দরবান বা সুন্দরবন” পাঠানো হয় শাস্তি হিসেবে, কিন্ত এমন সংস্কার হওয়া উচিত যাতে দেশের প্রত্যেক জেলাই সকল বিচারপ্রার্থীরা সমান সুযোগ-সুবিধা পান এবং বিচারকেরাও সমান সুযোগ-সুবিধা পেয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন। পরিশেষে তিনি বলেন যে, আমরা এখন বিভিন্ন আদালতের আদেশ এবং রায় নিয়ে খোলামেলাভাবে আলোচনা-সমালোচনা করতে পারছি। যেটা আগে অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয়নি। কিন্তু বিচারকেরা যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা দেয়ার লক্ষ্যে নির্ভয়ে কাজ করতে পারেন সে ব্যপারে সকলের সতর্ক থাকতে হবে।
উল্লেখ্য সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ ঘোষিত সাদ্দাম হোসেন এবং অন্যান্য বনাম বাংলাদেশ মামলার ঐতিহাসিক রায় বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য আজকের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত রায়ে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৬–এর প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতে তিন মাসের মধ্যে একটি পৃথক বিচারিক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার নির্দেশ প্রদান করেছিলেন। মূলতঃ এই নির্দেশনার বাস্তবায়ন কতটুকু অগ্রসর হয়েছে, কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে—এসব বিষয় নিয়েই বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
বার্তা প্রেরক:
কমিউনিকেশন বিভাগ,
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)
ইমেইল: communication@blast.org.bd
Some images of the programme
Published news
- বিচার বিভাগের সচিবালয় আইন অনুমোদনকে স্বাগত: আর্থিক স্বায়ত্তশাসন ও নির্ভয়ে কাজের পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান। (ডিবিসি নিউজ)
- ব্লাস্টের মতবিনিময় সভা: বিচারব্যবস্থার কার্যকারিতা নিশ্চিতে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি। (প্রথম আলো)
- নিম্ন আদালতে নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপ বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত করছে: শিশির মনির। (ডিবিসি নিউজ, ভিডিও)

















