১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ওয়ান স্টপ সেবা সক্রিয় করার মাধ্যমে নারীর প্রতি সকল ধরনের সহিংসতা দূর করা যেতে পারে- রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কার্যকর সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে রেফারেল পথসমূহ ও আন্তঃখাত সমন্বয় জোরদারকরণ: প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনা” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ বিষয়টি তুলে ধরেন। ১০ ই সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে কক্সবাজারে সাইমান বীচ রিসোর্ট-এর কনফারেন্স কক্ষে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এ আয়োজন করে।
কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সেবা প্রদানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গুরুত্ব সহকারে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসলেও বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে এখনও তাদের জীবনে বহুমুখী সংকট বিদ্যমান। ব্লাস্টের গবেষণায় দেখা গেছে, বিদ্যমান সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলো থাকা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত সমন্বয়, রেফারেল ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর আস্থার ক্ষেত্রে এখনও বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে যা তাদের নিরপত্তাহীনতা তৈরী করছে। কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিশেষত নারী ও কন্যাশিশুদের সুরক্ষা, জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্বাস্থ্য খাত ও সুরক্ষা খাতে যে সকল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে কার্যকরী সমন্বয় সাধন, রেফারেল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই সভা আয়োজিত হয় ।
উক্ত বৈঠকে ইউএনএইচসিআর সাব-অফিস এর সিনিয়র প্রোটেকশন অফিসার হিরোশী মিয়াওচি বলেন, ২০১৭ সাল থেকে ইউএনএইচসিআর – ব্লাস্ট এবং ব্র্যাক এর সাথে আইনী সহায়তার প্রদানের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ওসিসি এবং আদালতের অবস্থান ক্যাম্প থেকে দূরে থাকার কারণে এ নারীরা ন্যায়বিচার পেতে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এক্ষেত্রে ক্যাম্পের ভিতরে ওসিসি স্থাপন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩, কক্সবাজার -এর বিচারক মোহাম্মদ সাইফুর রহমান সিদ্দিক বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রথাগুলোকে বিবেচনায় রেখে ক্যাম্পে এক বা একাধিক আদালত গঠন করা হলে ফৌজদারী অপরাধগুলো খুব দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব। ক্যাম্প ইন-চার্জ এর অনুমতি ছাড়া ক্যাম্প থেকে বের না হতে পারার কারণে সময়মতো আদালত কিংবা হাসপাতালে উনারা আসতে পারেন না । যা বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে।
কক্সবাজার জেলার সিভিল সার্জন ডঃ মোহাম্মদুল হক বলেন, কক্সবাজার জেলায় ওসিসি ২৪ ঘন্টা খোলা রাখা যায়না নানা্ন প্রতিবন্ধকতার জন্য, তাই ওসিসি সেন্টারকে বিশেষায়িত করা দরকার। সেই সাথে নারী ও শিশু মন্ত্রাণলয়কে এ ব্যাপারে আরো অধিক কার্যকর ভূমিকা রাখার কথাও উল্লেখ করেন যাতে শুধুমাত্র ভুক্তভোগীদের গুরুত্ব দিয়ে তাদের সেবা নিশ্চিত করতে পারে।
কক্সবাজার এপিবিএন এর ডিআইজি প্রলয় চিশিম বলেন, আমাদের লোকবলের সংকট রয়েছে তাই শুধুমাত্র ক্যাম্পের জন্য আলাদা তদন্ত সেন্টার করা জরুরী।
অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (যুগ্মসচিব), শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এর কার্যালয়, কক্সবাজার, জনাব মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর এ ধরনের নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা নিরসনে সরকারি, বেসরকারী এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সেবপ্রদানকারী সংগঠনগুলোর সমন্বয় আরো জোরদার করা দরকার।
ব্লাস্টের ভাইস-চেয়ারম্যান ও ইউএসএইচসিআর এর সাবেক সিনিয়র ডিরেক্টর ডঃ শামসুল বারী বলেন, আজ আমরা শুধু সমস্যাগুলো চিহ্নিত করিনি, বরং মানবিক উপায়ে সেগুলো সমাধানের পথও খুঁজেছি। এ সমস্যাগুলো গভীরে প্রোথিত এবং নানা রূপে প্রকাশ পাচ্ছে, তাই কার্যকর অ্যাডভোকেসি উদ্যোগ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। সেই সাথে তিনি আজকের আলোচনায় উত্থাপিত সব সুপারিশ একত্রিত করে সঠিক কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করা এবং তার পাশাপাশি এই নথিকে প্রচারের একটি কার্যকর উপায় খুঁজে বের করা উপরেও জোর দেন।
অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয় ও তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ ও সিএসও প্রতিনিধিদের নিয়ে নিয়মিত সম্মিলিত সভা আয়োজন, টপ-ডাউন এপ্রোচ থেকে সরে এসে কমিউনিটিকে ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি, স্বেচ্ছাসেবকদের সক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং তাদের দৃশ্যমানতা বাড়ানো, ক্যাম্প পর্যায়ে ওসিসি সেন্টার গঠন ও শক্তিশালী করে দ্রুত রেফারেল ব্যবস্থা সক্রিয় করা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল বৃদ্ধি করার বিষয় সুপারিশ করেন উপস্থিত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের প্রতিনিধি, বিভিন্ন ক্যাম্প-ইন- চার্জ, জেলা পুলিশ প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন এনজিও এবং আইএনজিও প্রতিনিধি।
ব্লাস্টের ক্লাইমেট এবং ডিসপ্লেইসমেন্ট বিষয়ক এডভাইজার আহমেদ ইব্রাহীম ব্লাস্টের গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন যাতে তিনি বিচারিক সুরক্ষা নিয়ে বলেন, যেহেতু সম্প্রতি তহবিল সংকট এবং নতুন করে রোহিঙ্গাদের দেশে আসার ব্যাপারে সংকটগুলো আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে। ক্যাম্পে বসবাসরত নারীদের সহিংসতার ঘটনাগুলোয় নারীরা চেষ্টা করে সালিশের মাধ্যমে ব্যপারগুলো সমাধান করতে। আইন শৃংখলা বাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে বলেন, একটি হেল্পলাইন এর সূচনা করা হলেও এটি কিভাবে কাজ করবে তা এখেনো স্পষ্ট নয় এবং সে সাথে এ বহিনীর প্রতি আস্থার জায়গাটাতেও অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। এক্ষেত্রে জেন্ডার সাব-সেক্টেরের সাথে এ বাহিনীর একটি সমন্বয় বৃদ্ধি করা দরকার। সেবাকে স্থানীয়করণ সম্পর্কে বলেন, তহবিল ও শিক্ষা ব্যবস্থা কমে গলে কন্যা শিশুদের বাল্য বিয়ে, জোরপূবর্ক বিয়ে এবং মানবপাচারের ঝুুকি বেড়ে যাবে। স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা খাতে সমন্বয় নিয়ে বলেন, বিচার ব্যবস্থায় সহিংসতার ক্ষেত্রে ঘটনগুলোকে সম্বোধন করার জন্য সার্বিক রেফারেল সার্ভিস থাকার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ওসিসি সেবাকে স্ট্রীমলাইন করা জরুরী, ভুক্তভোগী ভিত্তিক প্রটোকল জোরদার করা।
বার্তা প্রেরক,
মাহবুবা আক্তার
পরিচালক, এডভোকেসি এন্ড কমিউনিকেশন, ব্লাস্ট
ই-মেইল: communication@blast.org.bd