তারিখ: ৩ জুন ২০২৫

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি; কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এখনো অনুচিন্তিত – ব্লাস্ট ও টিজিআই

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এবং টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট (টিজিআই) সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ বাতিল এবং মতপ্রকাশ-সংক্রান্ত অপরাধসমূহ (speech offences) বাতিল করে সেগুলোর অধীনে চলমান মামলাগুলো প্রত্যাহার করার উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। তবে, ব্লাস্ট এবং টিজিআই উদ্বেগ প্রকাশ করে যে, নতুন অধ্যাদেশে ক্ষতিকর কন্টেন্ট সম্পর্কিত যে অপরাধসমূহ যুক্ত করা হয়েছে, সেগুলোর সংজ্ঞা যথেষ্ট স্পষ্ট নয় — যার ফলে আইনটি ব্যক্তিভেদে ভিন্নভাবে প্রয়োগ হওয়ার আশঙ্কা রয়ে যায়। এছাড়াও, বিচার প্রক্রিয়া সংক্রান্ত এখনো নানান অনিশ্চয়তা এবং নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর হাতে অতিরিক্ত ও অবারিত ক্ষমতা থাকা সংবিধানিক অধিকার যথাযথভাবে নিশ্চিতে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

অধ্যাদেশে যৌন হয়রানির সংজ্ঞায়, “অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক করার চেষ্টা” অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, কিন্তু “অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক” কী—তা কোনোভাবেই সংজ্ঞায়িত হয়নি এবং কে নির্ধারণ করবে কোন সম্পর্ক ‘অবৈধ’—তারও কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। ফলে এর প্রয়োগ হতে পারে অসংগত এবং ভিন্ন ভিন্ন প্রসঙ্গে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যার আশংকাযুক্ত, যা আইনের সমান প্রয়োগকে বাধাগ্রস্ত করবে। একই সঙ্গে উক্ত সংজ্ঞায় “পর্নোগ্রাফিক উপাদান”- এর উল্লেখ রয়েছে, কিন্তু এই অধ্যাদেশে ‘পর্নোগ্রাফি’ শব্দটি সংজ্ঞায়িত নয়। ফলে বিদ্যমান ‘পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২’-এর সংজ্ঞা প্রয়োগযোগ্য হবে। অথচ লক্ষ্যণীয়ভাবে, উক্ত আইনে ‘অশ্লীলতা’ এবং ‘অর্ধনগ্নতা’-র মতো অস্পষ্ট ও বিষয়ভিত্তিক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এসব শব্দের ভিত্তিতে বিষয়বস্তুকে মূল্যায়ন করলে তা বিচারকের বা আইন প্রয়োগকারীর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করতে পারে, যার ফলে নারীদের ক্ষেত্রে নৈতিক পুলিশিং বা বৈষম্যমূলক আচরণের আশঙ্কা থাকে।

এছাড়াও “রিভেঞ্জ পর্ন” সংক্রান্ত অপরাধের সংজ্ঞায় “ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে” বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত না করে, বরং কোনো ব্যক্তির সম্মতি ব্যতীত ব্যক্তিগত অন্তরঙ্গ বিষয়বস্তু প্রকাশ করাই অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হওয়া যথেষ্ট। কিন্তু নতুন অধ্যাদেশে এ বিষয়টি উপেক্ষিত রয়ে গেছে।

অধ্যাদেশের অধীনে গঠিত নতুন প্রতিষ্ঠান, জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি, পূর্ববর্তী আইনের অধীন সংস্থাগুলোর মতোই সরকার-নিয়ন্ত্রিত এবং এর অধীনে “রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ক্ষুণ্ণ” করার মতো অস্পষ্ট অভিযোগে কন্টেন্ট ব্লক করার ক্ষমতা ও দেয়া হয়েছে। এর ফলে সংবিধান ও আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সনদে স্বীকৃত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

এছাড়া, প্রস্তাবিত জাতীয় সাইবার সুরক্ষা কাউন্সিল, যা প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে পরিচালিত হবে এবং অধ্যাদেশ প্রয়োগ ও সাইবার নিরাপত্তা হুমকি মোকাবেলায় এজেন্সিকে দিকনির্দেশনা দেবে, সেটির সদস্য হিসেবে মূলত সরকারি ও নিরাপত্তা সংস্থার কর্মকর্তা, যেমন এনটিএমসি এবং এনএসআই-এর সদস্যরা থাকবেন। এতে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং নজরদারির ঝুঁকি তৈরি হবে, কারণ তাদের কার্যক্রম তদারকির জন্য কোনো স্বাধীন ব্যবস্থার উল্লেখ নেই — যা পূর্ববর্তী সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ (সিএসএ) ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ (ডিএসএ) এর অধীনে গঠিত কাউন্সিলগুলোর ক্ষেত্রেও উদ্বেগের বিষয় ছিল। অপরদিকে, অধ্যাদেশ অনুযায়ী, জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের অধীনে থাকবে যা তথ্য-উপাত্ত অপসারণ বা ব্লক করার বিধান বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করতে পারে।

অধ্যাদেশে পুলিশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো (ক্রিটিক্যাল ইনফরমেশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার -CII)-এ হ্যাকিং বা সাইবার হামলার প্রেক্ষিতে ওয়ারেন্ট ছাড়াই তল্লাশি, জব্দ এবং গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা অনুমোদন করায় ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও স্বাধীনতার উপর মারাত্মক হস্তক্ষেপের আশঙ্কা রয়ে যায়। সেই সাথে “হ্যাকিং” বা “সাইবার হামলা” শব্দগুলোর কোনো স্পষ্ট সংজ্ঞা না থাকায় এবং কোন অবকাঠামো CII হিসেবে ঘোষিত হবে তা নির্ধারণে সরকারের পূর্ণ বিবেচনাধিকার থাকায় এই উদ্বেগ আরও বেড়েছে। যদিও এ ধরনের তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে ট্রাইব্যুনালে রিপোর্ট দাখিলের বিধানকে একটি অগ্রগতি হিসেবে দেখা যায়, তবে সেই রিপোর্টে কী কী তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকবে সে বিষয়ে পর্যাপ্ত নির্দেশনার অভাবের কারণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার প্রক্রিয়াটি অপর্যাপ্ত হতে পারে।

সবশেষে, আমরা সিএসএ-র অধীন মতপ্রকাশ-সংক্রান্ত অপরাধের আওতায় চলমান সব পর্যায়ের মামলার অবসান একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হলেও, ডিএসএ-এর অনুরূপ ধারায় সব পর্যায়ে চলমান বিপুল সংখ্যক মামলা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এর ৫৭ ধারার অধীন বিচারাধীন মামলাগুলো আমাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে। সিএসএ-এর অধীন মামলায় অভিযুক্তদের মতো ডিএসএ বা আইসিটিএর অধীন অভিযুক্তদের জন্য অধ্যাদেশ একই ধরনের আইনি সহায়তা নিশ্চিত করে না। তাই আমরা মনে করি, সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫, অনলাইনে ক্ষতিকর কন্টেন্ট প্রতিরোধে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হলেও, এতে বিদ্যমান অস্পষ্টতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের ঝুঁকি রয়ে গেছে। তাই, এই অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা জরুরী, যাতে নাগরিকের মতপ্রকাশ সংক্রান্ত অধিকার সুরক্ষিত থাকে।

প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন:

কমিউনিকেশন বিভাগ,

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)

মোবাইল: +৮৮০১৫৫২-৩২৪৩৭৬; ই-মেইল: communication@blast.org.bd

কমিউনিকেশন বিভাগ,

টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট (টিজিআই)

ই-মেইল: info@techglobalinstitute.com