তারিখ: ২৩ এপ্রিল, ২০২৫
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
রানা প্লাজা ভবন ধসের মামলাসমূহের দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিতে সমন্বিত উদ্যোগ, ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন এবং নিরাপদ কর্মস্থলের দাবী জানিয়েছেন বক্তারা
রানাপ্লাজা সংক্রান্ত মামলা সমূহ দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্দেশ্যে মামলাসমূহের বর্তমান অবস্থা, প্রতিবন্ধকতা এবং তা মোকাবেলায় করণীয় বিষয়ে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ২৩ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখ বিকাল ৩ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকায় ‘‘রানা প্লাজা ভবন ধ্স: বিচারের অপেক্ষায় এক যুগ” শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
মোঃ বরকত আলী, পরিচালক (আইন), ব্লাস্ট- এর সঞ্চালনায় এ মতবিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। তিনি সকল নিহত শ্রমিকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং আহত শ্রমিকদের প্রতি গভীর সমবেদনা ব্যক্ত করেন। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। তিনি বলেন- ২০১৩ সালের ঘটনাটি কী হত্যকান্ড না-কি দুর্ঘটনা তা নিয়ে অনেকের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্ধ থাকলেও ঘটনা পর্যবেক্ষণে একে হত্যাকান্ড বললে ভুল বলা হবে না। এক যুগ পরেও নিহত শ্রমিকের পরিবার এবং আহত শ্রমিক এখনো আইনানুগ ক্ষতিপূরণ পায়নি। এক্ষেত্রে তাদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের দায়িত্বসমূহ নিয়ে সকলের সচেতনতা এবং সক্রিয় ভুমিকা রাখার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
“রানা প্লাজা ভবন ধ্স: বিচারের অপেক্ষায় এক যুগ” শীর্ষক উপস্থাপনায় সিফাত-ই-নূর খানম, অ্যাসোসিয়েট লিগ্যাল স্পেশালিস্ট, ব্লাস্ট এবং আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট , বিভিন্ন আদালতে চলমান রানা প্লাজা সম্পর্কিত মামলা সমূহের অগ্রগতি সম্পর্কে তুলে ধরেন। উপস্থাপনার সুপারিশের মধ্যে- এ সকল মামলার দ্রুত বিচার নিষ্পত্তিতে মামলা সমূহকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আইনের পর্যালোচনাপূর্বক প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার ও তদারকি জোরদার করার আহবান জানান।
সভায় উপস্থিত রানাপ্লাজা ভবন ধসের ভুক্তভোগী নিলুফা ইয়াসমিন তার অভিজ্ঞতা এবং দাবীর কথা বলতে গিয়ে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তির বিধান এবং আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিতে প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবী জানান। তিনি রানা প্লাজা ভবন ধসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ সকল শ্রমিকদের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবী করেন।
মুক্ত আলোচনায় এ মামলার সাথে জড়িত সকল গার্মেটস মালিকের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ করা হয়। এছাড়া আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুসারে ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা, রানা প্লাজা ভবনের স্থানে নিহত ও আহত শ্রমিকের পুনর্বাসন, হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি, প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য জীবন বীমা ও স্বাস্থ্য বীমা বাধ্যতামূলক করা এবং ইআইএস ব্যবস্থায় রানা প্লাজা ও তাজরীণ এর ভুক্তভোগী শ্রমিককে অন্তর্ভুক্তকরণ করার জন্য অনুরোধ করা হয়। একই প্রকৃতির স্বাক্ষীর ভিতর থেকে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীকে নির্বাচন করে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি ও আহত শ্রমিকের বর্তমান ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা এবং আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করতে অনুরোধ জানানো হয়। সর্বশেষ, ২৪ এপ্রিল কে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করার দাবি করা হয়।
সম্মানিত অতিথিদের মধ্যে আবুল কালাম, অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর, জেলা ও দায়রা জজ আদালত , ঢাকা উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, অল্প স্বাক্ষী নিয়ে মামলা পরিচালনা করলে আসামীপক্ষই সুবিধা পাবে। এ মামলায় ৪২৭ জন সাধারণ এবং ১৭৬ জন সরকারি সাক্ষী রয়েছে। জুলাই ২০২৪- এর পর একজন সাক্ষীকে ৪১ জন আসামীর আইনজীবী জেরা করেন। তিনি আরও বলেন, দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার জন্য প্রতি ১৫ (পনর) দিন পর পর এ মামলার শুনানি তারিখ দেওয়া হবে। আগামী ১৯.০৫.২০২৫ তারিখে সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য্য রয়েছে এবং তিনি মিডিয়া কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার জন্য আহবান করেন। তিনি আরও নিশ্চিত করেন, সরকার দ্রুত এই মামলার নিষ্পত্তি চান।
আবুল হোসাইন, সভাপতি, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়াকারস বলেন, ভুক্তভোগীরা পূর্বাসন প্রয়োজন। রানা প্লাজার জমিতে পুনর্বাসন এবং প্রাণ হারানো সকলের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করার দাবি জানান। এছাড়াও, তিনি মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য রানা প্লাজা মামলা মনিটরিং কমিটি গঠন করার দাবি জানান।
শারমিন সুলতানা, প্যানেল আইনজীবী, ব্লাস্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট, লেবার কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন জানান, শ্রমিক আইন সহায়তা সেল ২০১৩ সালে গঠন হলেও ঢাকাতে কোন আইন কর্মকর্তা নেই এবং চট্টগ্রামের শ্রমিক আইন সহায়তা সেলের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি এই সেলের বাস্তব এবং পূর্নাঙ্গ কার্যক্রমের দাবি জানান।
মোঃ মাসুম বিল্লাহ, আইন কর্মকর্তা, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শণ অধিদপ্তর বলেন, বর্তমানে লেবার কোর্টে সরকারি আইনজীবী নেই। এ কোর্টে সরকারি আইনজীবী নিয়োগের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, তিনি আরও বলেন, ট্রেড ইউনিয়নের প্রকৃত চর্চা রানা প্লাজার মত ঘটনা পুনরাবৃত্তি হতে দিবে না।
এএকেএম নাসিম, সদস্য, শ্রম সংস্কার কমিশন বলেন, শ্রম আইন সংস্কারের সাথে শ্রম আদালতের সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ উদ্যোগ এবং জবাবদিহিতা প্রয়োজন।
রাজেকুজ্জামান রতন, সদস্য, শ্রম সংস্কার কমিশন এবং প্রেসিডেন্ট, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট বলেন, ভুক্তভোগী শ্রমিকের জন্য ক্ষতিপূরণ যথেষ্ট নয়। নিহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ তাদের এক বছরের মাথাপিছু আয়ের থেকে কম। তিনি মামলাসমূহের দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইনজীবী, সাংবাদিক, ট্রেড ইউনিয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলের যৌথ উদ্যোগের আহ্বান জানান।
তাসলিমা আখ্তার, সদস্য, শ্রম সংস্কার কমিশন এবং সভাপ্রধান, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি বলেন, রানা প্লাজার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়াতে হাশেম ফুডের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা দিয়েছে। তিনি প্রাণ হারানো সকল শ্রমিকের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ এবং রানা প্লাজা ভবন ধসে নিহত শ্রমিকদের স্মরণে জুরাইন কবরস্থানে তাদের নামফলক স্থাপনের জন্য দাবি জানান।
দিক নির্দেশনা ও পরবর্তী করনীয় সম্পর্কে সারা হোসেন, অনারারি নির্বাহী পরিচালক, ব্লাস্ট এবং সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বলেন, ন্যায় বিচার এবং সংশিষ্ট ব্যক্তিদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। রানা প্লাজা নিয়ে সত্য উদ্ঘাটন করা জরুরি। এছাড়া শ্রম আইনে পুনর্বাসনকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তিনি শ্রম সংস্কার কমিশনকে রানা প্লাজার মামলার দ্রুত বিচার নিশ্চিত ও জবাবদিহিতার জন্য কাজ করার জন্য অনুরোধ করেন। তিরি আরো জানান, রানা প্লাজার মামলার জন্য নির্দিষ্ট আদালতের মাধ্যমে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা যেতে পারে।
সমাপনী বক্তব্যে সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, প্রধান, শ্রম সংস্কার কমিশন বলেন, রানা প্লাজা নিয়ে প্রথম ব্যর্থতা হলো এই ঘটনাকে জাতীয় ইস্যুতে পরিণত করতে না পারা। একে জাতীয় ইস্যুতে পরিণত করা দরকার সুষ্ঠু বিচারের জন্য। আহত শ্রমিকের বর্তমান অবস্থা নিয়ে একটি ডেটাবেজ তৈরি করে, তাদের চিকিৎসা এবং আর্থিক চাহিদা পূরণ করতে হবে। তাহলে ২০২৬ সালের আগেই সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
বার্তা প্রেরক:
কমিউনিকেশন বিভাগ,
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)
প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন: +৮৮০১৫৫২-৩২৪৩৭৬
ই-মেইল: communication@blast.org.bd
মিডিয়া কভারেজ:
১) রানা প্লাজা মামলা মনিটরিং কমিটি গঠনের দাবি (আমার দেশ, ২৩ এপ্রিল ২০২৫)
২) রানা-প্লাজা দুর্ঘটনাকে জাতীয় ইস্যুতে পরিণত করার দাবি শ্রম সংস্কার কমিশন প্রধানের (বি এস এস নিউজ, ২৩ এপ্রিল ২০২৫)