প্রেস বিজ্ঞপ্তি

২৪ এপ্রিল ২০২৫: রানা প্লাজা ধসের এক যুগ
দ্রুত বিচার, সমন্বিত উদ্যোগ এবং নিহতদের স্মরণে স্মৃতিফলক করার দাবি

২৪ এপ্রিল ২০১৩ইং তারিখে “রানা প্লাজা” ভবন ধসের ঘটনায় ১,১৩৮ জন শ্রমিক নিহত হন, পাশাপাশি গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরন করেন আরো ১,৭৬৯ জন শ্রমিক, যাঁদের অধিকাংশই নারী এবং তরুণ-তরুণী। এ বিপর্য়ের এক যুগ অতিক্রান্ত হলেও বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬, ইমারত নির্মাণ আইন, ১৯৫২ এবং দন্ডবিধির অধীনে দায়েরকৃত মামলাগুলো অদ্যঅবধি বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে, আজও নিষ্পত্তি হয়নি, ভূক্তভোগী পরিবার বিচারের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। বর্তমানে এ সকল মামলার শুধুমাত্র একজন অভিযুক্ত সোহেল রানা ব্যতীত অন্য সকল অভিযুক্তরাই জামিনে মুক্ত আছেন। এ বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক কিংবা তাদের পরিবার অদ্যাবধি কোন ক্ষতিপূরণ পাননি। এ বিপর্যয়ের পর রাষ্ট্র ও মালিকপক্ষ শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ কর্ম পরিবেশ নিশ্চিতে উদ্যোগ গ্রহণ করলেও বিচার এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়, আইন মন্ত্রনালয় এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শণ অধিদপ্তর রানা প্লাজাসহ শ্রমিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সকল মামলা স্বল্প সময়ের মধ্যেই নিষ্পত্তি করার জন্য দ্রæত সঠিক ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা।

রানা প্লাজা ভবন ধসের ঘটনায় রাষ্ট্রের পক্ষে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের দায়েরকৃত ১১ টি শ্রম (ফৌজদারী) মামলা ঢাকার প্রথম শ্রম আদালতে বিচারাধীন থাকলেও পর্যায়ক্রমে মামলাগুলো ঢাকার দ্বিতীয় শ্রম আদালতে বদলীমূলে প্রেরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ বর্তমানে মামলাসমূহ ঢাকার দ্বিতীয় শ্রম আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। যার মধ্যে ০৪টি মামলা আগামী ৩০/০৪/২০২৫ ইং তারিখে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী পর্যায়ে রয়েছে, ০৪টি মামলা পত্রিকায় নোটিশ প্রদানের জন্য রয়েছে তবে পরবর্তী তারিখ মামলার কজলিস্টে পাওয়া যায়নি এবং অবশিষ্ট ০৩ টি মামলার ঢাকার দ্বিতীয় শ্রম আদালতে বদলী করা হলেও অদ্যাবধি পরবর্তী তারিখ কিংবা মামলাগুলোর নতুন নম্বর কজলিস্টে হালনাগাদ হয়নি।

দায়রা আদালতে ০৩টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে; যার মধ্যে ইমারত নির্মান আইন, ১৯৫২- এর অধীনে বিচারাধীন মামলাটির পরবর্তী সকল কার্যক্রম হাইকোর্ট বিভাগের প্রদত্ত আদেশে বর্তমানে স্থগিত রয়েছে। দন্ডবিধির অধীনে দায়েরকৃত অপর ০২ টি মামলার বিচার কার্যক্রম ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে একত্রে পরিচালিত হচ্ছে।ইতোমধ্যে মামলাটিতে মোট ৯৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে এবং পরবর্তী তারিখ আগামী ১৯.০৫.২০২৫ইং সাক্ষীর জন্য ধার্য্য করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, বিগত ১৫ জানুয়ারী ২০২৪ তারিখে মহামান্য আপীল বিভাগ এ মামলাটি পরবর্তী ০৬ (ছয়) মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশনা দিলেও এক বছরের অধিক কাল অতিবাহিত হলেও অদ্যাবধি সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়নি। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিক ও পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে পৃথক পৃথক মোট চারটি রিট পিটিশন শুনানীর জন্য অপেক্ষমান রয়েছে।

বাংলাদেশ শ্রম আইনে নিহত শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম ২ লক্ষ টাকা এবং আহত শ্রমিকদের জন্য ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিধান রয়েছে, যা কোনোভাবেই যৌক্তিক ও পর্যাপ্ত নয়। ব্লাস্টের পক্ষ থেকে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় আহত বা নিহত শ্রমিকদের এবং তাদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনের আহ্বান জানাচ্ছে। এছাড়াও এই ধরণের দুর্ঘটনার শিকার আহত বা নিহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণের সময়ে অবশ্যই তার ভবিষ্যৎ প্রাপ্য মজুরী বা আয়, চাকুরী শেষে প্রাপ্য গ্রাচ্যুইটি, অনুমিত চিকিৎসা খরচ, পরিবারের পোষ্যদের অনুমিত খরচ, দুর্ঘটনার পরবর্তী শ্রমিকের মানসিক চাপ এবং সর্বোপরি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও উচ্চ আদালতে নজির বিবেচনায় নেওয়ার জন্য ব্লাস্ট জোর দাবী জানাচ্ছে।

এ বিপর্যয়ের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিচারাধীন মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতা এবং ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিক ও তাদের পরিবারের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও পূর্নবাসনের ব্যবস্থা গ্রহণে ব্লাস্ট নিম্নরূপ ১০ দফা সুপারিশ করছে-

১) রানা প্লাজাসহ শ্রমিক অধিকার সংশ্লিষ্ট সকল মামলার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে সকলকে অবগত করানো এবং কালক্ষেপন না করে দ্রুত মামলাগুলো নিষ্পত্তি করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দায়রা আদালত ও শ্রম আদালতে বিচারাধীন মামলাগুলোর ক্ষেত্রে, দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গুরুত্ব বিবেচনায় প্রতিদিন বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং মহামান্য হাইকোর্টে শুনানীর জন্য অপেক্ষমান রীট পিটিশনগুলোর জন্য পৃথক একটি বেঞ্চ নির্ধারণ করা।

২) বেসরকারী পর্যায়ে মামলাগুলোর নিয়মিত মনিটর করার জন্য আইনজীবী, সাংবাদিক, ট্রেড ইউনিয়নসহ সংশ্লিষ্টদের সসমন্বয়ে একটি মনিটরিং টিম গঠন।

৩) শ্রম আদালতে দায়েরকৃত চলমান ফৌজদারি মামলার তারিখসমূহে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের প্রতিনিধির উপস্থিতি নিশ্চিতকরণে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের তদারকি বৃদ্ধি এবং গ্রেফতারী পরোয়ানা তামিলের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ও পুলিশের যথাযথ উদ্যোগ ও তদারকি নিশ্চিতকরণ।

৪) দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও মামলাগুলি নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণ চিহ্নিত করা এবং দীর্ঘসূত্রিতার জন্য দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা।

৫) এ সকল মামলার নিয়মিত অগ্রগতি বা দীর্ঘসূত্রিতা সংক্রান্ত প্রতিবেদনসমূহ সংবাদ মাধ্যমগুলোতে ধারাবাহিক প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ ও প্রচার করা।

৬) রানা প্লাজা ও তাজরীণসহ সারাদেশের বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আইএলও কনভেনশন ১২১, টর্ট আইন এবং মারাত্মক দুর্ঘটনা আইন ১৮৫৫-এর ভিত্তিতে শ্রমিকদের সারা জীবনের আয়ের ক্ষতির ভিত্তিতে ও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আদালতের আদেশে প্রদত্ত ক্ষতিপূরণের বিবেচনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করা।

৭) রানা প্লাজা ভবন ধসে আহত শ্রমিকদের মনোসামাজিক চিকিৎসাসহ দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা নিশ্চিতকরণসহ সকল আহত শ্রমিকের ও সকল নিহত শ্রমিকদের পরিবারের পূনর্বাসন নিশ্চিতকরণে ও উক্ত ব্যবস্থা পর্যবেক্ষনের ব্যবস্থা গ্রহণ।

৮) সাভার ও জুরাইনে বিপর্যয়ে প্রাণ হারানো সকলের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ এবং রানা প্লাজা ভবন ধসে নিহত শ্রমিকদের স্মরণে জুরাইন কবরস্থানে তাদের নামফলক স্থাপন।

৯) শ্রম আইন অনুযায়ী নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে বার্ষিক পরিদর্শন প্রতিবেদন (অগ্রগতি এবং দুর্ঘটনার তথ্যসহ) প্রকাশ করা।

১০) কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর কর্তৃক জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা নীতিমালার বাস্তবায়ন ও তদারকি জোরদার করা।

বার্তা প্রেরক:

কমিউনিকেশন বিভাগ,

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)

প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন: +৮৮০১৫৫২-৩২৪৩৭৬

ই-মেইল: communication@blast.org.bd

মিডিয়া কভারেজ:

১) Rana Plaza victims still await justice after 12 yrs, says BLAST (The Business Standard, April 23 2025)

২) Ensure justice, compensation for the victims (The Daily Star, April 23 2025)