তারিখ: ৯ অক্টোবর ২০২৪
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
শিক্ষার্থী ও জনতা গনঅভুথ্থানে আহত ব্যক্তিদের জরুরী চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা সহ সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার রক্ষায় প্রতিবন্ধী অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এর সংশোধন ও সঠিক বাস্তবায়ন প্রয়োজন– মতবিনিময় সভার বক্তারা।
শিক্ষার্থী ও জনতা গনঅভুথ্থানে আহত ব্যক্তিদের জরুরী চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা সহ সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার রক্ষায় প্রতিবন্ধী অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এর সংশোধন ও সঠিক বাস্তবায়ন প্রয়োজন বলে মতামত প্রদান করেন অংশগহনকারীরা। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), উইমেন উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিস ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (ডাব্লিউডিডিএফ) ও আন্টি-ডিসক্রিমিনেশন লিগ্যাল ফোরাম (এডিএলএফ) এর আয়োজনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন প্রণয়নের ১১ বছর উপলক্ষে আজ ০৯ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২.৩০টা পর্যন্ত তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হল, জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকায় “প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩: বাস্তবায়ন ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে করনীয়” শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ সভায় প্যানেল আলোচক সায়দিয়া গুলরুখ, সহকারী সম্পাদক, নিউ এজ বলেন; শিক্ষার্থী জনতার অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের জরুরী স্বাস্থ্য সেবা বর্তমান সরকার অত্যন্ত ব্যর্থ। যেসকল শিক্ষার্থী বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম এ সাথে যুক্ত আছেন তারা তাদের কথা তুলে ধরতে পারছেন শুধুমাত্র তারাই কিছুটা সেবা পাচ্ছেন। যেসকল শ্রমিক আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসা কিংবা পুনর্বাসনের কোন নজির এখনো দেখা যায় নি। পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসার পাশাপাশি পরিবারের দায়িত্ব নেবার ক্ষেত্রেও এ সরকার নীরব। শ্রমিকদের পরিবারের দীর্ঘস্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। যেসকল ব্যক্তিরা পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন, চিরস্থায়ী প্রতিবন্ধীতার শিকার হয়েছেন তাঁরা কোন আইনের অধীনে বিচার দাবি করবেন, তা অনেকেই জানেন না। কর্মক্ষমতা হারানো ব্যক্তিরা মানসিক, শারীরিক ও সামাজিকভাবে যেসকল ক্ষত ভোগ করছেন তা থেকে উত্তরনের জন্য স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহন করতে হবে।
প্যানেল আলোচক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস); আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের দায় সমগ্র জাতির, তবে বর্তমানে এ দায় স্বীকারের বিষয়টি আমরা দেখতে পাচ্ছি না। রানা প্লাজা ট্রাজেডি থেকে উদাহরণস্বরূপ বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের আয়ের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি আমরা আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও বাস্তবায়ন করতে পারি। আন্দোলনে প্রায় দুই হাজার ব্যক্তি অঙ্গহানি বা দীর্ঘস্থায়ী প্রতিবন্ধীতার শিকার হয়েছেন। তাদের শারীরিক, মানসিক, আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও তাদের পরিবারের ক্ষতিপূরণের উদ্দ্যেশ্যে জাতীয় মানদন্ড অতি শীঘ্রই প্রনয়ন করতে হবে। শ্রমিক পরিবারদের তাৎক্ষণিক পু্নর্বাসনের ব্যাপারে তিনি গুরুত্বারোপ করেন। পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে সম্মানজনক এবং মর্যাদাপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহনের আহ্বান জানান তিনি। এছাড়াও দেশের চিকিতসাব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন যে আহত ব্যক্তিরা দিনদিন স্বাস্থ্য অবনতির দিকে যেতে থাকেন, সুতরাং তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে।
প্যানেল আলোচক খন্দকার শাহরিয়ার শাকির, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বলেন; প্রায় ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও কমিটি গঠন ও এর কার্যকারিতাতে ঘাটতি রয়ে গেছে। ব্লাস্ট এর তথ্য অধিকার আইনে ২০২২-২৩ সালে দায়ের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে দেখা যায় , জেলা কমিটিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বা কোন নারীদের সদস্য রাখা হয় নি, কিছু কিছু জায়গায় এমনকি কমিটিও গঠন করা হয় নি। জুলাই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছেন, যেসকল আহত ব্যক্তিদের চিরস্থায়ী প্রতিবন্ধীতা নিয়ে চলতে হবে তাদের এই আইনের ক্ষেত্রে যথাযথ প্রয়োগ করে তাদের অধিকার পুঙ্খানপুঙ্খ বাস্তবায়ন করতে হবে। আইনের ১৬ ধারায় যে ২১টি অধিকারের কথা বলা আছে সেগুলো প্রতিষ্ঠা করা, আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং প্রতিবন্ধী অধিকার পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে। জুলাই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে প্রতিবন্ধিতা অর্জন কারীদের প্রতি আইনী ও সামাজিক সুরক্ষা, আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং অনুসরণের মাধ্যমে একটি আদর্শ ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।
প্যানেল আলোচক আশরাফুন্নাহার মিষ্টি, নির্বাহী পরিচালক, উইমেন উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিস ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন বলেন, আইনের ১৬ ধারায় ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অধিকার পর্যন্ত বলা হয়েছে এবং অধিকার খর্ব করা হলে সে বিষয়ে শাস্তির কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু এ আইনের বাস্তবায়ন প্রকৃতপক্ষে হয়নি। আইনের অধীনে কমিটি গঠন করা হয়নি বরং রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রয়োজনমাফিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। জাতীয় পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বমোট ৫ টি স্তরে প্রতিবন্ধী অধিকার ও সুরক্ষা সংক্রান্ত কমিটির কথা বলা হলেও বেশ কিছু জেলায় সেসকল কমিটি গঠন করা হয়নি বা করা হলেও তার কার্যকারীতা প্রকৃতপক্ষে নেই । এসকল বৈষম্য দুর করে রাষ্ট্রের অবশ্যই উচিৎ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার নিশ্চিতকরণে কার্যকর ভূমিকা পালন করা।
প্যানেল আলোচক নাফিউল আলম সুপ্ত, এসোসিয়েটস্, দা লিগ্যাল সার্কেল এবং সদস্য, এন্টি-ডিসক্রিমিনেশন লিগ্যাল ফোরাম বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার বিষয়ে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবন্ধী অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০২৩ – এ ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামুলক বরাদ্দের বিধান করতে হবে তাদের নিট মুনাফা অনুসারে। ব্যক্তিমালিকাধীন প্রতিষ্ঠান গুলোকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে যেন তারা প্রতি বছর তাঁরা যে নিট মুনাফা অর্জন করে তা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কল্যাণে বরাদ্দ করার জন্য। কেননা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কল্যাণ ও সার্বিক উন্নয়ন তাদের অধিকার, কারও পক্ষ থেকে কোন করুনা নয়। সুতরাং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কল্যাণে রাষ্ট্রের পাশাপাশি এসকল প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক এর সিএসআর গাইডলাইন কে অনুকরণ করে ব্যক্তিমালিকাধীন বেবসা প্রতিষ্ঠান গুলোকে তাদের মুনাফার একটি অংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কল্যাণে ব্যয় করার বিধান করতে হবে।
প্যানেল আলোচক এডভোকেট মনির হোসেন, সদস্য, এন্টি-ডিসক্রিমিনেশন লিগ্যাল ফোরাম এবং এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বলেন; স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী জুলাই অভ্যুত্থানে প্রায় ২৩ হাজার ব্যক্তি আহত হয়েছেন এবং ধারণা করা যাচ্ছে এর একটি অংশ স্থায়ীভাবে শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন তাদেরকে বিশেষ প্রজ্ঞাপনের অধীনে এনে তাদের চাকুরির ব্যবস্থা করতে হবে। একটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো সে রাষ্ট্রের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তালিকা সরকারিভাবে প্রস্তুত করা, আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রতিবন্ধী সার্টিফেকেট প্রদান করা প্রয়োজন। আইনে বলা হয়েছে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সাথে বৈষম্য করা হলে উক্ত ব্যক্তি জেলা কমিটির নিকট ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবেন। বাস্তবে এর কোন প্রতিফলনই নেই। এছাড়াও কমিটিগুলোতে বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তাদের নানা দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কিন্তু অনেক সময় তাঁরা নিজ দায়িত্বে ব্যস্ত থাকার কারণে এ নিয়ে তাঁরা পদক্ষেপ নিতে পারেন না। প্রতি জেলায় প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে।
প্যানেল আলোচক মোবাস্সারা করিম মিমি, শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ বলেন; আন্দোলন চলাকালীন সময়ে যারা আহত হলেন তাদের এড়িয়ে যাবার কোন সুযোগ আমাদের নেই। ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে শারীরিক, মানসিক এবং যৌন হয়রানির শিকার হয়েছি। আমার মত আরও অসংখ্য আহত ব্যক্তি রয়েছেন, কিন্তু তাদের চিকিৎসার ফি প্রদানের ব্যাপারেও সুস্পষ্ট পদক্ষেপ এখনও নেয়া হয়নি। এসকল আহত ব্যক্তিদের প্রয়োজনসমূহ এড়িয়ে যাবার অর্থ ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মূলমন্ত্র থেকে সরে যাওয়া, যা একেবারেই আমাদের কাম্য নয়। আমাদের সকলের উচিৎ আন্দোলনের মূলমন্ত্র ধরে এগিয়ে যাওয়া।
সভার উদ্দেশ্য ও প্রেক্ষাপট তুলে ধরে আহমেদ ইব্রাহিম, উপদেষ্টা, ব্লাস্ট বলেন; প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন প্রণয়নের ১১ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। জাতিসংঘের ডিস্যাবিলিটি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদ স্ট্যান্ডার্ড র্যাটিফাই করার উদ্দেশ্যে আইনটি প্রণয়ন করা হয়। ২০১৫ সালে যখন বিধিমালা প্রণয়ন করা হয় তার পর থেকে যদি আমরা মাঠ পর্যায়ের চিত্র দেখি তবে বলা যায় বাস্তবায়নের বর্তমান চিত্র খুবই দুর্বল। জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা দেখেছি রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে নাগরিকদের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছিল এবং তা থেকে পরিত্রাণের উপায়ই ছিল এ অভ্যুত্থান। প্রতিবন্ধকতা বান্ধব কমিটি গঠন, মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসন ইত্যাদি প্রেক্ষাপটেই আজকের এ আলোচনা।
মোঃ তাজুল ইসলাম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এর সঞ্চালনায় সভার দিক নির্দেশনা ও সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন এস এম রেজাউল করিম, আইন উপদেষ্টা, ব্লাস্ট। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী, ও সুপ্রীম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবী, গবেষক, শিক্ষার্থী, একাডেমিক, অধিকার কর্মী সহ বিশিষ্টজন মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহন করেন এবং শিক্ষার্থী ও জনতা গনঅভুথ্থানে আহত সহ সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার রক্ষায় পৃথক কমিশন গঠন, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন এর হেল্পলাইন কার্যকরভাবে নিযুক্ত করে আহত ব্যক্তিদের ফলোআপ করার জন্য এবং কর্মক্ষমতা হারানো ব্যক্তিরা মানসিক, শারীরিক ও সামাজিকভাবে যেসকল ক্ষত ভোগ করছেন তা থেকে উত্তরণের জন্য স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহন করতে হবে বলে মত প্রকাশ করেন।
বার্তা প্রেরক:
কমিউনিকেশন বিভাগ, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)
ই-মেইল: communication@blast.org.bd
মিডিয়া কভারেজ:
বাংলা
‘প্রতিবন্ধী অধিকার ও সুরক্ষা আইন সংশোধন প্রয়োজন’ (কালবেলা, ৯ অক্টোবর ২০২৪)
আন্দোলনে আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতের আহ্বান (জাগো নিউজ ২৪, ৯ অক্টোবর ২০২৪)
‘আন্দোলনে আহতদের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে’ (বাংলা ট্রিবিউন, ৯ অক্টোবর ২০২৪)
English
Need commission to protect their rights: speakers (The Daily Star, 10 October 2024)
Online News
রানা প্লাজা ক্লেম এডমিনিস্ট্রেশন এর আদলে শিক্ষার্থী-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ (Sangram Protidin, 9 October 2024)