প্রেস বিজ্ঞপ্তি
সংবিধানের সবকিছু ফেলে দেওয়ার কিছু নেই, ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংশোধন হতে পারে
ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হওয়ার পরে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান সংশোধনে কমিশন গঠন করেছে। অনেকে আবার সংবিধান পুনর্লিখনের দাবি তুলেছেন। কিন্তু এই সরকারের সংবিধান সংশোধনের ম্যান্ডেট আছে কি না, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন। কেউ কেউ বলছেন, সংবিধান পুনর্লিখন করা যাবে না, তা নয়; কিন্তু বিষয়টি কীভাবে করা হবে তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস(ব্লাস্ট) ও বাঙলার পাঠশালা আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
আইনজীবী শরীফ আহমেদ ভুঁইয়া বলেন, সংবিধান সংশোধন বা পুনর্লিখনের চেয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকঠাক কাজ করছে কি না, তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই সরকার নির্বাচিত নয়। সে কারণে তিনি বলেন এই সরকার, সংবিধান সংশোধন বা পুনর্লিখনের ম্যান্ডেট তাদের নেই। বড়জোর এই সরকার সেই প্রক্রিয়া শুরু করে দিতে পারে। তবে কিছু বিষয়ে মানুষের মধ্যে ঐকমত্য আছে, যেমন নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার। পাঁচ বছর পরপর শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার পালাবদল নিশ্চিত করতে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা আছে। সেটা থাকলে গত ১৫ বছরে যত অপকর্ম হয়েছে, তার অন্তত ৬০ ভাগ কমে যেত। তবে মৌলিক পরিবর্তন করতে হলে জনমত গঠন করতে হবে বলে মত দেন শরিফ ভুইয়া। সে জন্য তাঁর পরামর্শ, সে দিকে না গিয়ে এই সরকারের উচিত, ফাংশনাল সংশোধনের মধ্যে সীমিত থাকা।
ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, এই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কি সংবিধান সংশোধনের দাবি ছিল, যদি তা না থাকে, তাহলে এখন এই উদ্যোগ কেন। এর আগে ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর সাহাবউদ্দিন আহমেদের সরকারের সময় এমন দাবি উঠেছিল; কিন্তু তখন তারা সেটা করেনি। তারপরও সংবিধান সংশোধন হতে পারে বলে মত দেন মুস্তাফিজুর রহমান। ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান আরো বলেন, কী প্রক্রিয়ায় সংশোধন হবে, তা গুরুত্বপূণ। সংবিধান সভার মাধ্যমে হতে পারে; আবার আলোচনার মাধ্যমে হতে পারে। কিন্তু আলোচনার মাধ্যমে হলে জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামের মতো দল তাতে অংশগ্রহণ করবে; এর মধ্য দিয়ে তারা মূল ধারায় চলে আসার সুযোগ পাবে। তিনি আরও বলেন, ১৩তম ও ১৫তম সংশোধনীর বিষয়ে মামলা চলছে। দেখা যাক, এর ফল কী হয়।
অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেন, পরিস্থিতি এমন জায়গায় আছে যে শুধু সংশোধন করলে হবে না, পুনর্লিখন করতে হবে। বিশেষ করে নির্বাহী বিভাগের কাঠামো পরিবর্তনের পরামর্শ দেন তিনি। ১০৬ নম্বর ধারার মতো কিছু বিষয়ের স্পষ্টীকরণ দরকার। সেই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নির্বাহী বিভাগ দেবে, বিষয়টি এমন নয়; বরং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অন্তর্নিহিত।
আমাদের সমাজে অন্তত বিভাজিত, ফলে এখানে ঐকমত্য হওয়া খুবই কঠিন বলে মনে করেন সাইমি ওয়াদুদ। সংবিধানে কোনো আদর্শের আধিপত্য থাকা উচিত নয় বলে তাঁর মত। সেটা হলে বিভাজেনর পথ প্রশস্ত হয়। সংবিধানের বিষয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সংবিধান তাঁর কাছে আদর্শ। তাদের সংবিধান আন্তর্জাতিক আইনের চেয়েও বেশি মানবিক।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা ও সভাপতিত্ব করেন সারা হোসেন। তিনি বলেন, জুলাই মাসের আন্দোলনে আহত ও নিহত ব্যক্তিদের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আগের সবকিছু ফেলে দিতে হবে, এমন মনে করার কারণ নেই। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা এই দেশ ও সংবিধান পেয়েছি; তখনকার মানুষের কিছু চিন্তা ছিল, তার প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। এসব কিছুই আমাদের ইতিহাস; গর্ব করার অনেক কিছুই আমাদের আছে। কিছু কিছু অর্জন আমাদেও আছে, তা ভুলুণ্ঠিত হতে দেওয়া যাবে না বলে মত দেন সারা হোসেন। তাঁর অভিযোগ, ইদানীং অনেক জায়গায় নারীদের প্রতিনিধিত্ব দেখা যায় না, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। নারী-পুরুষের সমানাধিকার আমাদের সংবিধানে প্রতিষ্ঠিত; সেখান থেকে আমরা পিছিয়ে আসতে পারি না। সারা হোসেন বলেন, এখন আলোচনার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কিন্তু এখন আমাদের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হবে, এই সময় ঠিক কী কী করতে হবে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ঐকমত্য তৈরি হয়েছিল। ১৮ জুলাই থেকে মোটামুটি আমরা সবাই বুঝেছি, কী হওয়া দরকার বা কী নয়। ৫ আগস্টের পর সেই ঐকমত্য অতটা নেই। কিন্তু জুলাই-আগস্টের সেই চেতনা আমাদের ধরে রাখতে হবে। যে অবিচার অন্যায় হয়েছে, তার বিচার করা এখন আমাদেও অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
আমীন আল রশিদ বলেন, নির্বচনের ফলাফল অনুপাতভিত্তিক হওয়া উচিত। নাফিউল আলম বলেন, জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে সংবিধানের ৭০ নম্বর ধারা তুলে দেওয়া উচিত।
অনুষ্ঠানে বক্তারা সংবিধানের আরও অনেক বিষয়ে আলোচনা করেন। নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইকরামুল হক, নাবিলা ফারহিন, ড, কাজী জাহেদ ইকবাল প্রমুখ প্রমুখ।
বার্তা প্রেরক:
আহমেদ জাভেদ, সহকারী অধ্যাপক, সিটি ইউনিভার্সিটি এবং প্রতিষ্ঠাতা, বাংলার পাঠশালা ফাউন্ডেশন
এবং
কমিউনিকেশন বিভাগ, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)
ই-মেইল: communication@blast.org.bd
মিডিয়া কভারেজ:
Bangla
সংবিধানের সবকিছু ফেলে না দিয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংশোধন হতে পারে ( Kalbela, 26 Sep 2024)
‘সবকিছু ফেলে না দিয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন হতে পারে’(ইনডিপেনডেন্ট, 26 Sep 2024)
যেসব ক্ষেত্রে সংবিধান সংস্কার অত্যন্ত জরুরি মনে করেন বিশেষজ্ঞরা (নিউজ২৪, 26 Sep 2024)
English
Constitutional changes should reflect people’s will (The daily star, 27 September 2024)
Experts urge for inclusive constitution with a balanced power structure (Dhaka Tribune, 26 September 2024)