২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

রানা প্লাজা ভবন ধসের ভূক্তভোগীদের পূনর্বাসন, চিকিৎসা, আইনী ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতকরণ এবং মামলা সমূহের দ্রুত নিষ্পত্তির দাবী জানিয়েছে মতবিনিময় সভার বক্তারা || The speakers in the discussion meeting demanded rehabilitation, medical treatment, ensuring legal compensation and speedy settlement of the cases of the victims of the Rana Plaza building collapse

রানা প্লাজা ভবন ধসের ১১ বছর পরেও ভুক্তভোগীদের অধিকার আদায় ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের লক্ষ্যে দায়ের করা মামলাসমূহের বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা এবং চলমান মামলা সমূহ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণ চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্টদের করণীয় বিষয়ে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ২৩ এপ্রিল, ২০২৪ তারিখে বিকাল ৩ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকায় ‘‘রানা প্লাজা ভবন ধ্স: ন্যায় বিচারের অপেক্ষায় ১১ বছর” শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। উক্ত সভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- এম এ আউয়াল (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ), চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত), শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনাল, ঢাকা, ব্যারিস্টার অনীক আর হক, আইনজীবী, সুপ্রীম কোর্ট অব বাংলাদেশ এবং বিমল সমাদ্দার, অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর, জেলা ও দায়রা জজ কোর্ট, ঢাকা।

রানা প্লাজা ভবন ধ্স: ন্যায় বিচারের অপেক্ষায় ১১ বছর” বিষয়ক উপস্থাপনা তুলে ধরেন, সিফাত-ই-নূর খানম, সিনিয়র স্টাফ আইনজীবী, ব্লাস্ট এবং এডভোকেট, সুপ্রীম কোর্ট বাংলাদেশ। তিনি তার উপস্থাপনায় বিভিন্ন আদালতে চলমান রানা প্লাজা সম্পর্কিত সকল মামলার অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন এবং সুপারিশে এ সকল মামলার দ্রুত বিচার নিষ্পত্তিতে মামলা সমূহকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিশেষ উদ্যোগের মাধ্যমে সমন্বিত প্রচেষ্টার উপর তাগিদ দেন এবং আইনের পর্যালোচনাপূর্বক প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার ও শ্রমিকদের স্বার্থে স্বাস্থ্যসুরক্ষা নীতিমালার বাস্তবায়ন ও তদারকি জোরদার করার আহবান জানান।

সভায় উপস্থিত রানাপ্লাজা ভবন ধসের ভুক্তভোগী নিলুফা বেগম, ‍শিলা বেগম, মিনু বেগম এবং দয়াল সূত্রধর তাদের অভিজ্ঞতা এবং দাবীর কথা বলতে গিয়ে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তির বিধান এবং আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবী জানান।

উক্ত সভার অতিথিদের বক্তব্যে ব্যারিস্টার অনীক আর হক জানান, হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন ৪ টি রিট মামলা রয়েছে, যার কোনোটিরই শুনানি গতবছরের আগে শুরু হয়নি। তার মধ্যেও আমরা আশা করছি খুব শীঘ্রই এই রীটগুলোর বিপরীতে উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশনা পাওয়া যাবে। সেই সাথে তিনি শ্রমিকদের সুরক্ষা থেকে শুরু করে সামগ্রিক বিষয়সমূহ নিশ্চিতকরণের সুপারিশ জানান।

বিমল সমাদ্দার বলেন, ফৌজদারী মামলাসমূহের ৫৯৪ জন সাক্ষী, যারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাস করছেন। তাদেরকে আদালতে হাজির করাটা অনেক বড় প্রতিবন্ধকতা। তাদের আদালতে যাতায়াতের ভাতা সরবরাহ করা রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ‍হিসেবে ব্যবস্থা করা কষ্টসাধ্য। তিনি তার বক্তব্যে সকল সুশীল সমাজ সংগঠনকে, সাক্ষীদেরকে আদালতে উপস্থিতি নিশ্চিতের জন্য আদালতকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে আহ্বান জানান এবং শ্রমিকনেতাদেরও ভূক্তভোগীদের পূনর্বাসনের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে তিনি জানান।

মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা বলেন, রানা প্লাজা সংক্রান্ত মামলাসমূহ ১১ বছর পরেও নিষ্পত্তি না হওয়া বহির্বিশ্বে  আমাদের দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে। আলোচকগণ তাঁদের বক্তব্যে মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, ঘটনস্থল রক্ষণাবেক্ষণ এবং উক্ত জায়গায় স্মৃতিসৌধ নির্মাণ এবং আহত থেকে প্রতিবন্ধী হওয়া শ্রমিকদের যথাযথ চিকিৎসা খরচ ও আইনীভাবে নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতকরণের প্রয়োজন ব্যক্ত করেন। আলোচকের মধ্যে আইনজীবী- লেবার কোর্ট বারের সাধারণ সম্পাদক মহসিন মজুমদার, মামলাসমূহের দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য মন্ত্রণালয়ে তদবির করার পদক্ষেপ নিবেন বলে জানান।

মোঃ শাহরিয়ার রনি, ট্রাস্ট কো-অর্ডিনেটর, ট্রাস্ট ফর ইনজিউরড ওয়ার্কারস মেডিকেল কেয়ার ইনক্লুডিং রানা প্লাজা ওয়ার্কারস (টিআইডব্লুউএমসি) জানান, তাঁরা ভূক্তভোগীদের চিকিৎসার বিষয়ে কাজ হরে যাচ্ছেন। যারা এই পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন, তারা চেষ্টা করেছেন যে তাদের সীমিত সুযোগের ভেতর যতটুকু সর্বোচ্চ পরিমাণে সম্ভব হয়েছে তারা তা করেছেন। যেমন- ডায়াগনোসিস ও যাতায়াত খরচ, সরকারী হাসপাতালে যেকোনো চিকিৎসার খরচ তারা বহণ করে চলেছেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে এম এ আউয়াল (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ), চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত), শ্রম আপীল ট্রাইবুনাল বলেন- ঢাকা জজ কোর্টের মামলার ৫৯৪ জন সাক্ষ্য গ্রহণের প্রতিবন্ধকতাকে নিরসন করার জন্য শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেও মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব। সর্বোপরি আদালতের সদিচ্ছা থাকলে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা যাবে। তিনি তার বক্তব্যে শ্রম আদালতে চলমান ১১ ‍টি মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য আশ্বস্ত করেন।

এই মতবিনিময় সভার সমাপনী বক্তব্যে ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিম বলেন- সকল শ্রমিক সংগঠন, সুশীল সমাজ সংগঠনের সহযোগিতায় রানা প্লাজার মামলাসমূহ এক যুগ পূর্তির আগেই নিষ্পত্তি হবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ- এর সঞ্চালনায় এ মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য এবং সভার উদ্দেশ্য ও প্রেক্ষাপট উপস্থাপন করতে গিয়ে মোঃ বরকত আলী, পরিচালক (আইন), ব্লাস্ট সকল নিহত শ্রমিকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং আহত শ্রমিকদের প্রতি গভীর সমবেদনা ব্যক্ত করেন। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। তিনি বলেন- ২০১৩ সালের ঘটনাটি কী হত্যকান্ড না-কি দুর্ঘটনা তা নিয়ে অনেকের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্ধ থাকলেও ঘটনা পর্যবেক্ষণে একে হত্যাকান্ড বললে ভুল বলা হয় না। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে আজকে আমরা জানতে পারব। আইনের সঠিক প্রয়োগের অভাব এবং প্রয়োজনীয় আইন না থাকার কারণে এই ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়তই হয়ে আসছে। ১১ বছরের পরেও নিহত শ্রমিকের পরিবার এবং আহত শ্রমিক এখনো আইনানুগ ক্ষতিপূরণ পায়নি। এক্ষেত্রে তাদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত এবং ন্যয়বিচার পাওয়ার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের দায়িত্বসমূহ নিয়ে সকলের সচেতন এবং সক্রিয় ভুমিকা রাখার আহ্বান জানান।