বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এর
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন
প্রস্তাবনা
মার্চ ২০২৫
ভূমিকাঃ

ব্লাস্ট ৩০ বছরেরও অধিক সময় ধরে আর্থিক বা সামাজিক কারণে আইনের আশ্রয় থেকে বঞ্চিত বিশেষত নারী, শিশু এবং সমাজে প্রান্তিক অবস্থানে থাকা ব্যক্তিদের ন্যায় বিচারে অভিগম্যতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। ব্লাস্ট নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত এবং শ্রম আদালতে বিনামূল্যে মামলা পরিচালনায় আইনী সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি আইনি পরামর্শ, রেফারেল সেবা এবং মীমাংসা/সালিস প্রক্রিয়া পরিচালনার মধ্য দিয়েও ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের সহায়তা করে আসছে। ব্লাস্ট পারিবারিক, দেওয়ানী ও ফৌজদারী এবং রীট মামলা পরিচালনায় আইনী সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি জনস্বার্থ মামলাও পরিচালনা করে থাকে।

একইসাথে, ব্লাস্ট তথ্য অধিকার আইনের যথাযথ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি, ব্লাস্ট জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি অংশিদারজনের সাথে সমন্বয় সাধনের মধ্য দিয়ে ন্যায় বিচার নিশ্চিতের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

নারীর প্রতি সকল ধরণের বৈষম্য দূরীকরণ এবং তাঁদের আইনগত অধিকার সুরক্ষা এবং ন্যায় বিচারে প্রবেশগম্যতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে দীর্ঘ দিনের কাজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ব্লাস্ট, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের নিকট পেশ করার লক্ষ্যে নিম্নলিখিত সুপারিশমালাটি তৈরি করেছে। যার মূল লক্ষ্য হলো রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন, অধিকার এবং অন্তর্ভুক্তিকরণ নিশ্চিত এবং একইসাথে, বিচার প্রার্থী নারীর আইনে প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করা। মূলত রাষ্ট্রের সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কারের লক্ষ্যে গত ১৮ নভেম্বর ২০২৪ তারিখ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনক্রমে ‘নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন’ গঠন করা হয়।

নারী বিষয়ক সংস্কারের জন্য এ সুপারিশমালা প্রস্তুত করতে ব্লাস্ট দীর্ঘ ৩১ বছর ধরে নারী ভুক্তভোগীদের আইনি পরামর্শ ও আইনগত সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এবং একইসাথে, এ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গবেষণা পত্র, প্রেস বিজ্ঞপ্তি, জনস্বার্থ বিষয়ক মামলা সমূহের রায় পর্যালোচনা করে একটি খসড়া সুপারিশ প্রণয়ন করেছে। এছাড়াও ব্লাস্ট এ বিষয় সংশ্লিষ্ট তার অভ্যন্তরীণ আইন বিশেষজ্ঞ, গবেষণা কর্মকর্তা, ও প্যানেল আইনজীবীদের সাথে সরাসরি পরামর্শ সভার আয়োজন করে। পাশাপাশি, প্রান্তিক পর্যায়ের প্রতিবন্ধকতা ও সুপারিশগুলো চিহ্নিত করতে ব্লাস্ট তার ইউনিট অফিসসমূহ থেকেও মতামত সংগ্রহ করেছে।

ব্লাস্ট-এর সুপারিশকৃত নারীর অধিকার সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সংস্কারের তালিকা নিচে তুলে ধরা হলো:

১. ন্যায় বিচারে নারীর প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করা:

বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থায় নারীর প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করতে আইনি কাঠামো ও বিচারিক প্রক্রিয়ায় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সুপারিশমালায় দ্রুত তদন্ত ও বিচারিক কার্যক্রম নিষ্পত্তির বাধ্যবাধকতা, পারিবারিক আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রিতা হ্রাস, এবং ভরণপোষণ ও দেনমোহরের ক্ষেত্রে অর্থপ্রাপ্তি সহজতর করার লক্ষ্যে আইনি সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে । একইসঙ্গে, ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক মূল্য বিবেচনায় রেখে দেনমোহর নির্ধারণ, পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ আদালত গঠন এবং ধর্মীয় ব্যক্তিগত আইনে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও, লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য দূর করতে অভিন্ন পারিবারিক আইন (Uniform Family Code) প্রণয়ন, পারিবারিক সহায়তা সেল প্রতিষ্ঠা এবং গোপনীয়তা রক্ষায় উচ্চ আদালতের নির্দেশিকা জারি করার সুপারিশ করা হয়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল শুনানি চালুর মাধ্যমে নারীদের জন্য আদালতে প্রবেশগম্যতা সহজতর করার পাশাপাশি, প্যারালিগ্যাল কার্যক্রমকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়ে নারী বিচারপ্রার্থীদের আইনি সহায়তা প্রদানকে শক্তিশালী করার উপরেও জোর দেয়া হয়েছে নিম্নের সুপারিশমালায়।

১.১. আইনে উল্লেখিত সময়সীমার মধ্যে তদন্ত ও বিচারিক কার্যক্রম নিষ্পত্তি করা: নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্ত কার্য সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা না থাকার কারণে অনেক সময় তদন্তে অবহেলা ও তদন্ত প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করতে দেখা যায়। যার ফলে আইনে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে বিচার নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয় না, যা বিচার বিলম্বের অন্যতম একটি কারণ। তাই নারী অধিকার সংশ্লিষ্ট আইনসমূহে[1] উল্লেখিত নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে তদন্ত ও বিচারিক কার্যক্রম বাধ্যতামূলক ভাবে নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন। (স্বল্পমেয়াদী)

১.২. পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩ এর ১৬(২) ধারা অনুযায়ী ডিক্রি জারির আদেশ দ্রুত বাস্তবায়ন: পারিবারিক মামলায় ডিক্রি জারির জন্যে পৃথক মামলা দায়েরের প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা পরিলক্ষিত হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে ডিক্রি জারি পৃথক মামলা দায়ের পরিহার করে পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩ এর ১৬(২) ধারা অনুযায়ী ডিক্রি জারির আদেশ দ্রুত বাস্তবায়ন করা আবশ্যক।[2] (স্বল্পমেয়াদী)

১.৩. ডিক্রিকৃত অর্থের ৫০% অর্থ জমা দেয়ার উত্তম চর্চাকে কার্যকর করার জন্য নির্দেশনা জারি: ভরণপোষণের মামলায় আপীল করার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে ভরণপোষণের ডিক্রিকৃত অর্থের ৫০% অর্থ জমা দিয়ে আপীল করার উত্তম চর্চাকে (Best Practice) কার্যকরীভাবে সকল পারিবারিক আদালতে বাস্তবায়নের জন্য অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর ধারা ৪১ এর আলোকে পারিবারিক আদালত আইন, ২০২৩ এর ধারা ১৯ সংশোধন করা প্রয়োজন। (স্বল্পমেয়াদী)

১.৪. ভবিষ্যতের সমসাময়িক অর্থমূল্য/বাজার মূল্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দেনমোহরের পরিমাণ নির্ধারণ করা:

বিবাহ বিচ্ছেদ/তালাকের পর একজন নারীর আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে বিবাহ সম্পাদনের সময়েই ভবিষ্যতের সমসাময়িক অর্থমূল্য/বাজার মূল্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দেনমোহরের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। এক্ষেত্রে স্বর্ণ এবং ভূমির মতো সম্পদের মূল্য একটি মানদন্ড হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।[3] (দীর্ঘমেয়াদী)

১.৫. বিশেষায়িত আদালত গঠন করা: ভরণপোষণ এবং দেনমোহরের পাওনা অর্থ দ্রুত পুনরুদ্ধার, ন্যায়বিচার নিশ্চিত এবং মামলার দীর্ঘসূত্রিতা হ্রাস করার জন্য পারিবারিক বিরোধ সম্পর্কিত মামলা নিষ্পত্তির জন্য উচ্চ এবং নিম্ন আদালতে বিশেষ বেঞ্চ বা আদালত নির্ধারিত করা আবশ্যক। (দীর্ঘমেয়াদী)

১.৬. পারিবারিক জীবনের অধিকার কেন্দ্রিক ব্যক্তিগত আইনের সংস্কার: নারীদের প্রতি বৈষম্য রোধ এবং তাঁদের সমানাধিকার নিশ্চিতে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান ধর্মীয় অনুসারীদের ব্যক্তিগত আইনসমূহ[4] সংস্কার করা প্রয়োজন। (স্বল্পমেয়াদী)

১.৭. পারিবারিক জীবনের সকল ক্ষেত্রে সকল ধর্মের নারীর সমানাধিকার প্রতিষ্ঠায় একটি অভিন্ন পারিবারিক আইন (Uniform Family Code) প্রণয়ন: বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, স্ত্রী ও সন্তানের ভরণপোষণ, দেনমোহর, উত্তরাধিকার ও সন্তানের অভিভাবকত্ব নির্ধারণে বিভিন্ন ধর্মের জন্যে প্রযোজ্য পারিবারিক আইনসমূহে বিদ্যমান লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য (যেমন, হিন্দু পারিবারিক আইন অনুযায়ী নারীদের বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকারের অনুপস্থিতি এবং উত্তরাধিকারে বৈষম্যে) দূর করার লক্ষ্যে একটি অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন। (দীর্ঘমেয়াদী)

১.৮. পারিবারিক সহায়তা সেল (Family Support Cells) প্রতিষ্ঠা করা: পারিবারিক আদালত সমূহের মামলাগুলোতে নারী বিচার প্রার্থীদের প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা, জরুরি আশ্রয় সেবা প্রদান, মনোসামাজিক সহায়তা প্রদান, মধ্যস্থতা/সালিশি সেবা প্রদান এবং সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার মধ্য দিয়ে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে পারিবারিক আদালতের অধীনে বিচারকদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পারিবারিক সহায়তা সেল (Family Support Cells) প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।

এ সেলগুলো আইনগত সহায়তা প্রদানকারী অন্যান্য সংস্থা বিশেষ করে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা, সমাজসেবা অধিদপ্তর, এবং বেসরকারি আইন বা অধিকার সংঘঠন সংস্থাসমূহের সাথে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে কাজ করবে। (স্বল্পমেয়াদী)

১.৯. গোপনীয়তার জন্য অনুশীলন নির্দেশিকা জারি: লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বা পারিবারিক মামলার ক্ষেত্রে গোপনীয়তার সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংবাদ মাধ্যম (যার মধ্যে প্রেস, টেলিভিশন এবং অনলাইন মাধ্যম অন্তর্ভুক্ত) তাদের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ না করার বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত। এই অনুশীলন কার্যকর করার জন্য উচ্চ আদালত থেকে একটি অনুশীলন নির্দেশিকা (Practice Direction) জারি করা উচিত। (স্বল্পমেয়াদী)

১.১০. আদালতে অনলাইন বা ভার্চুয়াল শুনানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা: আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০ এর কার্যকর বাস্তবায়নের মাধ্যমে আদালতগুলোতে অনলাইন বা ভার্চুয়াল শুনানির সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এই প্রক্রিয়াটি প্রান্তিক বিচারপ্রার্থীদের, বিশেষ করে নারী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আদালতে সম্মুখীন হওয়া প্রতিবন্ধকতাগুলি দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তিতে সহায়তা করবে। এক্ষেত্রে আদালতে শুনানীর তারিখসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় নোটিশ ক্ষুদেবার্তার মাধ্যমে মোবাইলে প্রেরণ করা যেতে পারে। (স্বল্পমেয়াদী)

১.১১. প্যারালিগ্যাল কার্যক্রমকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান করা: কমিউনিটি প্যারালিগ্যাল[5] ও কোর্ট প্যারালিগ্যাল[6] দীর্ঘদিন ধরে ভুক্তভোগী ব্যক্তি এবং আইনজীবীদের মাঝে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে আসছেন। প্যারালিগ্যাল কার্যক্রমকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদানের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের আইনগত সহায়তা কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া প্রয়োজন। এর ফলে আদালত, থানা, হাসপাতাল, কারাগার এবং শরণার্থী শিবিরের মতো সংবেদনশীল স্থান সমূহে নারীসহ সকল বিচারপ্রার্থীদের প্রবেশগম্যতা কে সহজীকরণ করবে এবং বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে এবং এরূপ কার্যক্রমের মাধ্যমে মামলার শুনানির জন্য জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ, মামলার পরবর্তী তারিখ সম্পর্কে জানা এবং দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত সহজ হবে। (স্বল্পমেয়াদী)

১.১২. আদালত প্রাঙ্গনে ফ্রন্ট ডেস্ক স্থাপন করা: ট্রাইব্যুনাল ও আদালতে তথ্য কেন্দ্র বা সহায়তা ডেস্ক না থাকার কারণে নারী ও শিশুসহ সকল ভুক্তভোগীরা প্রায়ই সুনির্দিষ্ট আদালত, আদালতের বিভিন্ন শাখা খুঁজে পেতে জটিলতার সম্মুখীন হন। প্রতিটি আদালতে একটি সেবা কেন্দ্র/ফ্রন্ট ডেস্ক (তথ্য ডেস্ক) স্থাপন করতে হবে, যেখানে বিভিন্ন আদালত ও বিভাগের অবস্থান, মামলার অগ্রগতি সংক্রান্ত তথ্য এবং বিচারপ্রার্থীদের জন্য আইনজীবীদের সাথে যোগাযোগের সুবিধা থাকবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন এনজিও বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সহযোগিতায় একজন প্যারালিগ্যাল নিয়োগ করা যেতে পারে, যিনি নারী বিচারপ্রার্থী বিশেষত নারী শ্রমিকদের এসব তথ্য প্রাপ্তিতে সহায়তা করবেন। (স্বল্পমেয়াদী)

২. আইনগত সংস্কার এবং উচ্চ আদালতের রায় ও সংশোধিত আইনের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন

নারীর প্রতি সহিংসতা, বৈষম্য এবং সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিকার নিশ্চিত করতে আইনি সংস্কার ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনাগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন অপরিহার্য। এই সুপারিশমালায় বিভিন্ন মেয়াদী পদক্ষেপের মাধ্যমে নারীর সুরক্ষা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার প্রতি সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি, মামলার পিটিশন, শুনানি ও যুক্তিতর্কে নারীর প্রতি অবমাননাকর শব্দের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ, মুসলিম বিবাহ নিবন্ধন ফরম সংশোধন, দুই আঙ্গুলি পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ, বিচার বহির্ভূত শাস্তি প্রতিরোধ, লিঙ্গ অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতিমালা প্রণয়ন, ধর্ষণের আইনি সংজ্ঞার সংস্কার, ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠন এবং ভুক্তভোগী ও সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়নের সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এছাড়া, গ্রেফতার ও রিমান্ডের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা প্রতিপালন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, নাগরিক পরিচয় সংক্রান্ত নথিতে পিতা অথবা মাতার নামের পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে আইনগত অভিভাবকের নাম অন্তর্ভুক্তিকরণ, নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার মামলায় ভুক্তভোগীদের অনলাইন সাক্ষ্য প্রদানের সুযোগ নিশ্চিত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ আইনগত সংস্কারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

২.১. যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার প্রতি সংবেদনশীলতা: যৌন ও লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতায় ভুক্তভোগী অভিযোগকারীর থানায় অভিযোগ দায়েরের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট প্রদত্ত সুস্পষ্ট নির্দেশনাসমূহের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন (সংযুক্তি ১)। (স্বল্পমেয়াদী)

২.২. মামলা দায়েরসহ বিচারিক প্রতিটি ক্ষেত্রে যথা- মোকদ্দমার বিবরণী, মামলা সম্পর্কিত নথিপত্র এবং যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালীন সময়ে নারীদের প্রতি অবমাননাকর/সম্মানহানিকর শব্দ বা বক্তব্য ব্যবহার (যেমন – “চরিত্রহীন”) রোধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রধান বিচারপতির অনুশীলন নির্দেশিকা (Practice Direction) জারি করা আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে চারিত্রিক সাক্ষ্য বিষয়ে সাক্ষ্য (সংশোধিত) আইন, ২০২২ এর ১৫১ (Indecent and scandalous questions) ও ১৪৬(৩) (Questions lawful in cross-examination) ধারা সমূহের সুষ্ঠু প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)

২.৩. সন্তানের সর্বোত্তম স্বার্থকে যথাযথভাবে বিবেচনায় নিয়ে সন্তানের অভিভাবকত্ব নির্ধারণী বিষয়ক উচ্চ আদালতের জারিকৃত নির্দেশনার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা দরকার ।[7] একইসাথে, এ বিষয়ে আইনজীবী এবং বিচারকদের উদ্দেশ্যে অনুশীলন নির্দেশিকা (Practice Direction) জারি করাও প্রয়োজন। (স্বল্পমেয়াদী)

২.৪. মুসলিম বিবাহ নিবন্ধন ফরম বা কাবিননামায় নারীর জন্য অবমাননাকর শব্দ (যেমন- কন্যা কুমারী, বিধবা অথবা তালাকপ্রাপ্ত কিনা) বাতিল করে অবিবাহিতা শব্দ প্রতিস্থাপন করা এবং কাবিননামায় কনের পাশাপাশি পুরুষের বর্তমান বৈবাহিক অবস্থা উল্লেখ করা বিষয়ক হাইকোর্টের সুস্পষ্ট নির্দেশনা মোতাবেক রায়ের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।[8] সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সংশোধিত কাবিননামা ফরম দ্রুত মুদ্রণ, বিতরণ এবং বাধ্যতামুলক ভাবে ব্যবহারের উদ্যোগ জরুরি ভিত্তিতে গ্রহণ করা। (স্বল্পমেয়াদী)

২.৫. দুই আঙ্গুলি পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ বিষয়ে উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়নঃ যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতায় ভুক্তভোগী নারী অভিযোগকারীর উপর দুই আঙ্গুলি পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ বিষয়ক উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা[9] সম্বলিত রায়ের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিতের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে সুষ্ঠু সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে কাজ করা। এবং “Medical report and Examination form for female survivors” ফর্মে ১৬(গ) কলাম বাদ দিয়ে, সংশোধিত ফর্ম সকল মেডিকো-লিগ্যাল অফিসারদের কাছে পৌছানো নিশ্চিত করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)

২.৬. বিচার বহির্ভুত শাস্তি (ফতোয়া): নারীদের প্রতি ফতোয়ার নামে বিচার বহির্ভূত যে কোনো ধরণের শাস্তি আরোপ কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট প্রদত্ত রায়ের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। (মধ্যমেয়াদী)

২.৭. বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে লিঙ্গ অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতিমালা প্রণয়ন: দেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীদের লিঙ্গ, বৈবাহিক অবস্থা ও স্বাস্থ্যগত অবস্থা বিষয়ক প্রচলিত/বিদ্যমান বৈষম্যমূলক সকল বিধি-বিধান দূর করে সকল শিক্ষার্থীদের জন্যে আইনের সমতা এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে সমান সুযোগ ও বৈষম্যহীনতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে একটি লিঙ্গ অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতিমালা প্রণয়ন বিষয়ক হাইকোর্ট প্রদত্ত নির্দেশনার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। (স্বল্পমেয়াদী)

২.৮. মানবাধিকার মানদন্ডের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ধর্ষণ অপরাধ সংশ্লিষ্ট আইনের সংস্কার: ধর্ষণ অপরাধে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের লিঙ্গ, জেন্ডার, যৌনতা, ধর্ম, বর্ণ, জাতি, জাতীয়তা, প্রতিবন্ধিতা ও বয়স নির্বিশেষে নিরপেক্ষ বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁদের আইনগত সুরক্ষা ও ন্যায়বচিারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা। ভুক্তভোগী ব্যক্তির যোনি, মলদ্বার বা যৌনাঙ্গের যে কোন অংশে পুরুষাঙ্গ বা অন্য কোন বস্তুর প্রতিস্থাপনকে (পেনিট্রেশন) ধর্ষণের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করে পুনসংজ্ঞায়িত করা। এ সংস্কার বাংলাদেশের সংবিধানে স্বীকৃত মৌলিক অধিকার ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন (CEDAW, CRC, এবং ICCPR) অনুযায়ী প্রণয়ন করা। (দীর্ঘমেয়াদী)

২.৯. ধর্ষণ, পারিবারিক সহিংসতা এবং মানব পাচারের অপরাধে ভুক্তভোগী ব্যক্তির জন্য রাষ্ট্র পরিচালিত একটি ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠন করা: রাষ্ট্র পরিচালিত একটি ‘ক্ষতিপূরণ তহবিল’ গঠন করা, যেন অপরাধ প্রমাণ হওয়া সাপেক্ষে ভুক্তভোগী ব্যক্তি ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। এক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দেয়ার সময় অপরাধী চিহ্নিত হয়েছে কিনা বা তার বিচার হয়েছে কিনা তা অগ্রহণযোগ্য হবে। (দীর্ঘমেয়াদী)

২.১০. ভুক্তভোগী ব্যক্তি ও সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন: খসড়া ভুক্তভোগী ব্যক্তি ও সাক্ষী সুরক্ষা বিল (২০০৬ সালে আইন কমিশন প্রথম খসড়া তৈরী করেছিল এবং পরবর্তীতে ২০১১ সালে এটি পর্যালোচনা করা হয়েছে) পুনর্বিবেচনা করে তা পাস করা প্রয়োজন; এ আইন প্রণয়নের মধ্য দিয়ে ভুক্তভোগী ব্যক্তি ও সাক্ষীগণ প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষা, জরুরি আশ্রয়, জীবিকা নির্বাহের সহায়তা, মনো-সামাজিক সহায়তা এবং প্রয়োজন অনুসারে তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। ভুক্তভোগী ও সাক্ষীর নিরাপত্তা সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত একটি চলমান সুরক্ষার ব্যবস্থা রাখা। (স্বল্পমেয়াদী)

২.১১. গ্রেফতারী পরোয়ানা ছাড়া আটক এবং রিমান্ড প্রদানের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনাবলী মানা: ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশদের অবশ্যই গ্রেফতারী পরোয়ানা ছাড়া আটক এবং রিমান্ড প্রদানের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনাবলী কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে (সংযুক্তি ২)। এ নির্দেশনাবলী মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ এবং আইনসমূহের[10] আওতায় বর্ণিত অপরাধে গ্রেফতারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। এ নির্দেশনা অবমাননাকারী ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবমাননার আদেশ প্রদানসহ কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। (স্বল্পমেয়াদী)

২.১২. বৈষম্য বিলোপ আইন দ্রুত প্রণয়ন করা: বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ নং ১৯ (সুযোগের সমতা), ২৭ (আইনের দৃষ্টিতে সমতা), ২৮ (ধর্ম, প্রভৃতি কারণে বৈষম্য), ২৯ (সরকারী নিয়োগ-লাভে সুযোগের সমতা) অনুযায়ী রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে সকল প্রকার বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে বহুল প্রতীক্ষিত ‘বৈষম্য বিলোপ আইন’ দ্রুত প্রণয়ন করা এবং এর বাস্তবায়নের প্রতি গুরুত্ব দেয়া। (মধ্যমেয়াদী)

২.১৩. নাগরিকের পরিচয় নির্ধারণী নথি সমূহে (জন্ম নিবন্ধন সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট) পিতা অথবা মাতার নামের পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে আইনগত অভিভাবকের নাম অন্তর্ভুক্তিকরণ বিষয়ে উচ্চ আদালতে অপেক্ষমান জনস্বার্থ বিষয়ক মামলায় জারিকৃত নির্দেশনার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন । একক মা এবং নারী আইনি অভিভাবকরা, যারা সন্তানের অভিভাকত্বের আবেদন করার সময় পিতার নাম প্রদান করতে অনিচ্ছুক/অসমর্থ, তারা যাতে বৈষম্যের শিকার না হন, তাই এটি নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। (স্বল্পমেয়াদী)

২.১৪. নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫১ এর সংশোধন: বাংলাদেশি নারী নাগরিক তার বিদেশির স্বামীকে নাগরিকত্ব প্রদান করতে পারার অধিকার প্রদানের জন্য নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫১ এর ধারা ১০ সংশোধন করে বৈবাহিক সূত্রে নাগরিকত্ব প্রদানের প্রবিধি সংযুক্ত করা প্রয়োজন।[11] (স্বল্পমেয়াদী)

২.১৫. নারী ভুক্তভোগীদের অনলাইন সাক্ষ্য: আদালত কর্তৃক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০ (আদালত কর্তৃক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০)-এর ৩(১) ও ৩(২) ধারাসহ সাক্ষ্য (সংশোধন) আইন, ২০২২-এর ৬৫(ক) ও ৬৫(খ) ধারাগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা উচিত, যাতে যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা এবং মানব পাচার অপরাধে ভুক্তভোগী নারীরা ব্যক্তিগতভাবে আদালতে না গিয়ে অনলাইনে সাক্ষ্য প্রদান করতে পারেন। এটি তাদের পুনরায় মানসিক বিপর্যস্ততার ঝুঁকি কমাবে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে একই স্থানে থাকার ঝুঁকিও হ্রাস করবে। (স্বল্পমেয়াদী)

৩. কর্মক্ষেত্র

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কর্মক্ষেত্র থেকে নারী শ্রমিকের ঝরে যাওয়া বৃদ্ধি পেয়েছে।[12] এর অন্যতম কারণগুলো হলো- অপর্যাপ্ত মাতৃত্বকালীন ছুটি, প্রতিষ্ঠান থেকে অনুকুল সমর্থন না পাওয়া এবং আর্থিক সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়া।[13] স্বাস্থ্যগত কারণে বা নবাগত শিশুর প্রয়োজনে একজন নারী শ্রমিকের অতিরিক্ত মাতৃত্বকালীন ছুটির প্রয়োজন হতে পারে। তাছাড়া নবাগত শিশুকে তার সুস্থভাবে বেড়ে উঠার জন্য অন্ততঃ ৬ মাস শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো আবশ্যক। সরকারি কর্মচারীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস নির্ধারিত থাকলেও শ্রম আইন অনুযায়ী নারী শ্রমিকদের জন্য এরূপ ছুটির পরিমাণ ১৬ সপ্তাহ, যার মাধ্যমে বৈষম্য সুস্পষ্টভাবেই প্রকাশ পায়।

দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও আমাদের দেশের নারীরা কর্মক্ষেত্রে নানাভাবে শোষণ, বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীর ক্ষমতায়ন এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিতের লক্ষ্যে নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ, অভিযোগ কমিটির গঠন, মাতৃত্বকালীন ও প্রসূতিকালীন অধিকার, রাত্রিকালীন নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা, শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের কার্যকর বাস্তবায়ন এবং নিরাপদ আবাসনের জন্য ডরমিটরি সেন্টার স্থাপন করা প্রয়োজন।

৩.১. কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ:

৩.১.১. যৌন হয়রানি প্রতিরোধে উচ্চ আদালত কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনা[14] অনুসারে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও নিরসনে “অভিযোগ কমিটি” গঠন ও অভিযোগ কমিটির কাজ সম্পর্কিত নীতিমালা প্রণয়ন, কমিটি গৃহীত পদক্ষেপের কঠোর তদারকি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যমান শ্রম আইনে এ সংক্রান্ত বিধান অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)

৩.১.২. আইএলও কনভেনশন, ১৯০ (সহিংসতা এবং হয়রানি কনভেনশন, ২০১৯) অনুসমর্থন[15] করা সহ, লিঙ্গ, সমতা এবং কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট নিয়ম ও প্রবিধান সংশ্লিষ্ট আইনে সংযোজন করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)

৩.২. মাতৃত্বকালীন ছুটি ও ‘প্রসূতিকালীন অধিকার’ সংক্রান্ত:

৩.২.১. সরকারি কর্মচারীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস নির্ধারিত থাকলেও শ্রম আইন[16] অনুযায়ী নারী শ্রমিকদের জন্য এরূপ ছুটির পরিমাণ ১৬ সপ্তাহ রয়েছে। সুতরাং, কর্মজীবী সকল নারীদের জন্য প্রসূতি কল্যাণ অধিকারের সময়সীমার পরিমাণ সর্বমোট চব্বিশ সপ্তাহ অথবা ছয় মাসের প্রসূতিকালীন অধিকার নির্ধারণ করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)

৩.২.২. দেশের প্রচলিত সকল আইন, বিশেষ করে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬-এ[17] উল্লেখিত “প্রসূতি কল্যাণ” সংজ্ঞায় “প্রসূতি কল্যাণ” শব্দটি পরিবর্তন করে “প্রসূতি অধিকার” করতে হবে এবং এতে অন্যান্য সকল অধিকার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- সন্তান প্রসবের ছয় মাস পূর্বে এবং প্রসবের পর বারো সপ্তাহ পর্যন্ত চাকরিচ্যুতি নিষিদ্ধকরণ, শ্রমের কষ্টকর প্রকৃতি, দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে কাজ করা, বা যে কোনো কাজ যা মাতৃত্বকালীন সময়ে একজন নারী শ্রমিকের স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। (স্বল্পমেয়াদী)

৩.২.৩. অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় কর্মজীবী নারী সন্তানসম্ভবা থাকার কারণে প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। সুতরাং, যথাযথ কারণ ছাড়া সন্তানসম্ভবা কোন কর্মজীবী নারীর সন্তান জন্মের ছয় মাস আগে অথবা বারো সপ্তাহ পরে তার চাকরিচ্যুত, বরখাস্ত, অপসারণ বা চাকরির অবসানের নোটিশ বা আদেশ মালিকপক্ষ কর্তৃক প্রদান করা যাবে না এবং নারী শ্রমিককে তার ন্যায্য প্রসূতিকালীন অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। (স্বল্পমেয়াদী)

৩.৩ নিরাপত্তা ও সুরক্ষা:

৩.৩.১. নারী শ্রমিকের রাত্রিকালীন ডিউটি: নারী শ্রমিককে দিয়ে রাত্রিকালীন ডিউটি করাতে হলে তাদের আসা-যাওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠান থেকে যানবাহন সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং তাদের যাতায়াতে নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে মালিকপক্ষের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে । এ বিষয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের চেকলিস্ট অনুযায়ী তদারকি জোরদার করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)

৩.৩.২. নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে নারী নির্যাতনবিরোধী বহুমুখী কর্মসূচি এবং সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থাগুলোকে স্থানীয় জনগণের জন্য সচেতনতা কর্মসূচি আয়োজনের উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে নারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধ করা যায়। (দীর্ঘমেয়াদী)

৩.৪. শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের ব্যবস্থা কার্যকরিকরণ:

৩.৪.১. টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (SDG) ৫ নং লক্ষ্য (জেন্ডার সমতা অর্জন এবং সকল নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়ন) বাস্তবায়নে, নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করা কেবল কর্মসংস্থানের অধিকার প্রদান করলেই হবে না; বরং নারীরা যাতে তাদের কর্মস্থলে দুশ্চিন্তামুক্তভাবে ও মনোযোগ সহকারে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের দেশের বেশীরভাগ শ্রমজীবী নারীরা তাদের শিশু সন্তানদের নিরাপত্তা এবং তাদের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করতে অধিকাংশ সময়েই বিভিন্ন রকম প্রতিবন্ধকতার শিকার হন, যা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্থ করে। সেহেতুঃ

শ্রমবাজারে নারীর কার্যকর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে অধিক মনোযোগী করতে তাদের শিশু সন্তানদের নিরাপদে স্বাভাবিক জীবন ক্রমবিকাশের জন্য কর্মস্থলের পাশাপাশি কমিউনিটি পর্যায়ে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে মান সম্মত পূর্ণকালীন শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। (মধ্যমেয়াদী)
কমিউনিটি পর্যায়ে স্থাপিত শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রসমূহে প্রাতিষ্ঠানিক/ আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম সংযুক্ত করা প্রয়োজন যাতে করে একজন কর্মজীবী ​​মা তার শিশু সন্তানের শিক্ষা এবং সুরক্ষা সম্পর্কে নিশ্চিন্ত থাকেন। (মধ্যমেয়াদী)
দুগ্ধপোষ্য শিশুদের সাথে নিয়ে যেন কর্মজীবী নারীরা নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারেন; তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কর্মক্ষেত্রে দুগ্ধপান কেন্দ্রসহ শিশুর পোশাক ধৌতকরণ ও পরিবর্তনের সুবিধাসহ শিশু কক্ষ তৈরী নিশ্চিতের জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের প্রয়োজনীয় তদারকি ব্যবস্থা নেয়া উচিত। (মধ্যমেয়াদী)
৩.৪.২. প্রত্যেক কর্মস্থলের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে শিশুকক্ষের তাপমাত্রা শিশুদের জন্য আরামদায়ক কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কক্ষের তাপমাত্রা সকাল ৮টা থেকে ১০টা, এবং দুপুর ১টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে পরীক্ষা করা উচিত। আদর্শগতভাবে, দিনের বেলায় কক্ষের তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে এবং রাতের বেলায় ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখা উচিত। এছাড়া, শিশুদের জন্য উপযুক্ত খেলনা ও উপকরণও নিশ্চিত করা আবশ্যক। (স্বল্পমেয়াদী)

৩.৫. কর্মজীবী নারীদের জন্য ডরমিটরি সেন্টার স্থাপন: বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক নারী শ্রমিক প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে শহরাঞ্চলে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে আসেন এবং শহরে এসে প্রথমেই তাদেরকে আবাসন সংকট মোকাবেলা করতে হয়; কেউ বা ২/১ দিনের জন্য গ্রামের প্রতিবেশীর বাসায় আবার কেউ বা পরিচিত অন্য কারোর বাসায় রাত কাটানোর সুযোগ পান। আবার অনেকেই অনাকাংখিত পরিস্থিতির শিকার হন। পরিশেষে তাদের বেশিরভাগই প্রাইভেট হোস্টেল, মেস বা বস্তিতে বসবাস করতে শুরু করেন। একজন নতুন শ্রমিকের জন্য এরূপ আবাসন ব্যয় বহন করা কষ্টসাধ্য অন্যদিকে কর্মস্থল থেকে দূরে অবস্থিত এ সকল আবাসস্থল নারী শ্রমিকদের জন্য অনিরাপদ যাতায়াত সমস্যার সৃষ্টি করে। এছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এরূপ আবাসস্থল অনিরাপদ থাকে। তাই নতুন যোগদানকৃত নারী শ্রমিকদের জন্য তাদের কর্মস্থলের কাছাকাছি কারখানার মালিকের উদ্যোগে এবং ক্ষেত্র বিশেষে সরকারি উদ্যোগে ডরমিটরি সেন্টার বা আবাসন নির্মাণ করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)

৪. বাল্য বিবাহ:

সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুযায়ী, ২০-২৪ বছরের নারীদের মধ্যে ৫৯ শতাংশ নারীর ১৮ বছরের আগেেই বিয়ে হয়ে যায়, যা বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ বাল্যবিবাহের ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত করে।[18] নিচের প্রস্তাবনাগুলো বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ এবং বিদ্যমান আইনি কাঠামোর কার্যকর বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রণীত। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ ও বাল্যবিবাহ নিরোধ বিধিমালা, ২০১৮ সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে বিশেষ বিধানের সংস্কার, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, আইনি সহায়তা সম্প্রসারণ, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব শক্তিশালীকরণ এবং ১০৯ হেল্পলাইনের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

৪.১. বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ এর বিশেষ বিধান সংস্কার করা:

বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের বিশেষ বিধান সম্পর্কিত ধারা ১৯ এবং বাল্যবিবাহ নিরোধ বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ১৭ এর কার্যকরী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ বিধান সমূহের অধীনে সংঘটিত প্রতিটি বাল্যবিবাহের কঠোর ও নিয়মিত তদারকি নিশ্চিত করা আবশ্যক।[19] এছাড়া আইনে উল্লেখিত “বিশেষ প্রেক্ষাপট”- কোন বয়সের শিশুদের জন্য প্রযোজ্য হবে তা উল্লেখ না থাকায় আইনের অপব্যবহারের ঝুঁকি রয়ে যায়। সেক্ষেত্রে উক্ত “বিশেষ প্রেক্ষাপট”-কে পুনরায় বিবেচনা করে এর অপব্যবহার রোধে যৌক্তিক শর্ত আরোপ করা উচিত। (দীর্ঘমেয়াদী)

৪.২. সচেতনতা বৃদ্ধি: বাল্যবিয়ে ক্ষতিকর প্রভাব এবং বিদ্যমান আইনি সুরক্ষা, যেমন বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ বাল্যবিবাহ নিরোধ বিধিমালা, ২০১৮ সম্পর্কে সাধারণ জনগণ, বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য তরুণদের এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের প্যারালিগাল প্রশিক্ষণ প্রদান করা জরুরি। এ বিষয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় (MOWCA) এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। (স্বল্পমেয়াদী)

৪.৩. শিশুদের জন্য আইনি সহায়তা: বাল্যবিবাহের ভুক্তভোগীদের এবং আইনজীবীদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে, জেলা আইন সহায়তা কমিটি (DLAC) এর মাধ্যমে প্যারালিগ্যাল প্রোগ্রাম প্রতিষ্ঠা করা উচিত, যাতে তারা সহজেই আইনি সমাধান নিশ্চিত করতে পারে এবং অন্যান্য জরুরি সেবায় রেফারেল করতে পারে। ভুক্তভোগীদের দোরগোড়ায় (Door to door) আইনি তথ্য পৌঁছে দেওয়া এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য, নাগরিক সমাজের সংস্থাগুলোর মাধ্যমে কমিউনিটি প্যারালিগ্যাল উদ্যোগ চালু করা প্রয়োজন।

(দীর্ঘমেয়াদী)

৪.৪. সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্ব শক্তিশালীকরণ: বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ এর ধারা ৩ অনুযায়ী গঠিত জাতীয়, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের বাল্যবিবাহ নিরোধ কমিটির সদস্যদের অবিলম্বে বাল্য বিবাহ নিরোধ ও অভিযোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেয়া। বাল্যবিবাহ নিরসনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি অংশীদারদের কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করা। (দীর্ঘমেয়াদী)

৪.৫. বাল্যবিবাহ নিরোধ কমিটির কার্যক্রমের তদারকি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত:

বাল্যবিবাহ নিরোধ কমিটিগুলো (বিশেষ করে যে সকল জেলাগুলোতে বাল্যবিবাহের উচ্চহার পরিলক্ষিত হয়)-কে সক্রিয় করা এবং কমিটির গঠনের ক্ষেত্রে সুশীল সমাজ সংগঠনগুলোর পাশাপাশি কিশোর-কিশোরী এবং তরুন-তরুণীদের অন্তর্ভুক্ত করা। (দীর্ঘমেয়াদী)
বাল্যবিবাহ নিরোধ কমিটিতে দায়ের করা অভিযোগগুলোর নিয়মিত পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণ করা। বিধিমালা অনুযায়ী কমিটি কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপের ওপর কঠোর তদারকি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। (দীর্ঘমেয়াদী)
৪.৬. বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ১০৯ হেল্পলাইনের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত: বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে নারী ও শিশু বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে ব্যবহৃত ন্যাশনাল টোল-ফ্রি হেল্পলাইন নম্বর ১০৯-এর কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা। হেল্পলাইন নাম্বারগুলোর কর্মপরিধির স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে এমন নীতিমালা প্রণয়ন করা, যা শুধুমাত্র অভিযোগের দ্রুত সমাধানের জন্য যোগাযোগের অনুমতি দেয়, এবং হটলাইন পরিচালনাকারী সংস্থাকে অভিযোগের ধরণ ও প্রকৃতি প্রকাশ করতে বাধ্য করে। (স্বল্পমেয়াদী)

৫. নারীর যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার

বাংলাদেশে নারীর যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার (SRHR) নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কাঠামোগত ও নীতিগত সংস্কার প্রয়োজন। প্রথমত, চিকিৎসা ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ করতে সরকারকে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী জাতীয় নীতিমালা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রান্তিক নারীদের বিশেষ চাহিদা মাথায় রেখে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাঠামোর মধ্যে তাদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকারকে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। তৃতীয়ত, দুর্যোগকালীন ও আশ্রয়কেন্দ্রে নারীদের জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বিশেষ করে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৫.১. অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অপারেশন:

প্রসূতি মা ও নবজাতক শিশুর জীবন রক্ষার্থে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলকে অবশ্যই চিকিৎসা ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধে হাইকোর্ট প্রদত্ত ‘Bangladesh National Guidelines and Technical Standards and Operating Procedure for Promotion of Normal Vaginal Delivery (NVD), Prevention of Unnecessary Cesarean Section, Creating Awareness about Necessity and Justification of Cesarean Section’ শীর্ষক সুস্পষ্ট নির্দেশনা[20] সম্বলিত রায়ের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)

৫.২. প্রান্তিক নারীদের, বিশেষ করে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী নারীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার (SRHR) নিশ্চিত করতে হবে, পাশাপাশি তাদের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে সরকারের দুর্যোগ ত্রাণ কাঠামোর মধ্যে দুর্যোগ পরবর্তী নারীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকারের চাহিদা মেটানোর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তার পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতি ও দুর্যোগ সংক্রান্ত স্থায়ী আদেশের আওতায় SRHR সংক্রান্ত পরিষেবাগুলোকে জরুরি মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। (দীর্ঘমেয়াদী)

৫.৩. দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নারীদের জন্য পর্যাপ্ত সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং দুর্যোগকালীন আশ্রয়কেন্দ্রে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা (GBV) প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। (দীর্ঘমেয়াদী)

৬. সাইবার হয়রানি

প্রযুক্তি-উদ্ভুত লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা (Technology-facilitated Gender based Violence- TFGBV) বাড়তে থাকায়, নারী ও শিশুদের ডিজিটাল জগতে সুরক্ষিত রাখতে জরুরি এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।[21] এর মধ্যে সাইবার ট্রাইব্যুনালগুলোর পরিসর বৃদ্ধি, একীভূত সাইবারক্রাইম ইউনিট প্রতিষ্ঠা, এবং বিশেষায়িত পুলিশের প্রশিক্ষণ প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিজিটাল শিশু যৌন নিপীড়ন উপাদান ও অসম্মতিমূলক পর্নোগ্রাফি অপরাধ হিসেবে ঘোষণা, ডিজিটাল ফরেনসিক প্রমাণ আদালতে বাধ্যতামূলক করা এবং একটি কেন্দ্রীভূত প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলাও অপরিহার্য। এই পদক্ষেপগুলো দ্রুত ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা এবং অনলাইনে সহিংসতার বিরুদ্ধে সুরক্ষা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

৬.১. সাইবার ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বৃদ্ধি: অনলাইন অপরাধের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা, বিশেষ করে নারীর প্রতি প্রযুক্তি-উদ্ভুত লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার ঘটনা বিবেচনায় নিয়ে যৌক্তিকভাবে যেসকল জেলায় এ ধরনের মামলার সংখ্যা বেশি সেসকল জেলাসমূহকে অগ্রাধিকার দিয়ে সাইবার ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। (দীর্ঘমেয়াদী)

৬.২. সাইবার ট্রাইব্যুনালগুলোর জন্য একটি অনুশীলন নির্দেশিকা জারি করা: সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত বিচারিক কার্যক্রমে হয়রানি এড়াতে, বাংলাদেশে বিদ্যমান সাইবার ট্রাইব্যুনালের জন্য একটি অনুুশীলন নির্দেশিকা (Practice Direction) তৈরী করা উচিত, যাতে সংবেদনশীল বিষয় ও প্রাপ্তবয়স্ক সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্তের (adult content) ব্যপারে বিচারিক কার্যক্রমে গোপনীয়তা নিশ্চিত করার নির্দেশিকা উল্লেখ থাকবে। উক্ত অপরাধের ভুক্তভোগীদের গোপনীয়তার রক্ষার জন্য রুদ্ধদ্বার কক্ষে ( in-camera trials) বিচার বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। তবে, যেখানে জনস্বার্থের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বা ন্যায়বিচারের স্বচ্ছতার স্বার্থে অপরিহার্য, সেখানে এর ব্যতিক্রম হতে পারে। (দীর্ঘমেয়াদী)

৬.৩. প্রযুক্তি-উদ্ভুত লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা মোকাবিলার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রযুক্তি ও আইন-প্রযু্ক্তি বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় পুলিশ কর্মকর্তাদের, বিশেষ করে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন (PCSW)-এর সাথে যুক্ত কর্মকর্তাদের, প্রযুক্তি-উদ্ভুত লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার ঘটনা মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানে সক্ষম করতে হবে। (দীর্ঘমেয়াদী)

৬.৪. সমন্বিত সাইবার ক্রাইম ইউনিট গঠন এবং ইউনিটের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা: পুলিশ বাহিনীর বিদ্যমান সাইবারক্রাইম ইউনিট ও বিভাগগুলোকে একীভূত করে একটি একক, সমন্বিত সাইবারক্রাইম ইউনিট গঠন করতে হবে, যা অনলাইনে সহিংসতা ও নারীদের লক্ষ্য করে সংঘটিত সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় দ্রুত ও কার্যকর পদেক্ষেপ গ্রহণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই ইউনিট অবশ্যই স্বচ্ছতার নীতি মেনে পরিচালিত হবে এবং দায়বদ্ধতার আওতায় থাকবে।

ভুক্তভোগীদের জন্য এই ইউনিট সহজে প্রবেশযোগ্য রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে তারা সরাসরি মেটা, টিকটক, এক্স এবং ইমোর মতো প্রধান ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে কোন অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করতে পারে। শুধুমাত্র অভিযোগের জরুরি নিষ্পত্তির জন্য এই ইউনিট ও প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে যোগাযোগের অনুমতি দেওয়ার জন্য নিয়ম প্রণয়ন করতে হবে এবং অভিযোগের ধরন ও প্রকৃতি সম্পর্কে বাধ্যতামূলক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

যেকোনো ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর সম্মতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং তদন্তের প্রয়োজনে যখনই ভুক্তভোগীর ডেটা অ্যাক্সেস করা হবে, তখন তাদের অবশ্যই নোটিফিকেশন প্রদান করতে হবে। (দীর্ঘমেয়াদী)

৬.৫. তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে কার্যকর অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে অনলাইনে হয়রানি ও নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা মোকাবিলায় একটি কার্যকর অভিযোগ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এক্ষেত্রে ভারতের নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রণালয় (India’s Ministry of Woman and Child Development) কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থাকে মডেল হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।[22]

প্রাসঙ্গিক অনলাইন প্ল্যাটফর্মে (সরাসরি বা সাইবারক্রাইম ইউনিটের মাধ্যমে) অভিযোগ দায়েরের পর, অথবা এজাহার (FIR) দায়ের করার পর, অভিযোগকারীদের অবশ্যই রেফারেন্স নম্বর বা মামলার নম্বর মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সুযোগ থাকতে হবে। যদি সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্ম বা কর্তৃপক্ষ পূর্বনির্ধারিত সময়সীমার (৭-১০ দিন) মধ্যে উক্ত অভিযোগ কিংবা এজাহার সম্পর্কে গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে জানাতে ব্যর্থ হয়, তবে মন্ত্রণালয় সক্রিয়ভাবে হস্তক্ষেপ করবে এবং সময়মতো আপডেট বা ‘গৃহীত কার্যক্রম প্রতিবেদন’ (Action Taken Report) প্রেরণের জন্য অনুরোধ করবে।

এছাড়াও, মন্ত্রণালয় অভিযোগগুলোর দ্রুত সমাধান নিশ্চিত করতে নিয়মিত ফলো-আপের দায়িত্ব পালন করবেন। (দীর্ঘমেয়াদী)

৬.৬. সমন্বিত ও সহজে প্রবেশযোগ্য প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করা: সাইবার হয়রানির ভুক্তভোগীদের জন্য সরকারের সহায়তা সম্পর্কে তথ্য কার্যকরভাবে প্রচার করতে, একটি কেন্দ্রীভূত এবং সহজে প্রবেশযোগ্য প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করা উচিত যেখানে সমস্ত প্রাসঙ্গিক সংস্থানসমূহের তথ্য সহজে পাওয়া যাবে। এই প্ল্যাটফর্মে হেল্পলাইন নম্বর, বিস্তারিত অভিযোগ দায়েরের প্রক্রিয়া, জরুরি সহায়তা, এবং ডিজিটাল ও সরাসরি উভয় ধরনের সেবা প্রাপ্তির তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এছাড়া, সংক্ষিপ্ত, আকর্ষণীয় এবং তথ্যপূর্ণ প্রামান্য তৈরি করতে হবে, যা মিডিয়া বিজ্ঞাপন হিসেবে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করবে। এই ভিডিওগুলো দর্শকদের উপলব্ধ সংস্থানগুলো ব্যবহার করার সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন করবে। (দীর্ঘমেয়াদী)

৬.৭. পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২ সংশোধন: বাংলাদেশে বিদ্যমান আইন শিশু যৌন নিপীড়ন সংক্রান্ত উপাদান সুনির্দিষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত করে না। পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২ শুধুমাত্র পর্নোগ্রাফি তথ্য-উপাত্ত সম্পর্কে আলোচনা করলেও, সম্মতিমূলক ও অসম্মতিমূলক পর্নোগ্রাফি মধ্যে আইন কোন ধরনের পার্থক্য করে না, যা শিশু ও নারীদের ডিজিটাল মাধ্যমে অনিরাপদ করে তোলে। তাই পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২-কে প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা অধ্যদেশ, ২০২৫ (সিএসও)-এর মাধ্যমে সংশোধন করে ডিজিটাল শিশু যৌন নিপীড়ন সংক্রান্ত উপাদান ((Digital Child Sexual Abuse Material)) এবং ডিজিটাল অ-সম্মতিপূর্ণ পর্নোগ্রাফি (Digital Non-Consensual Pornography) -কে অপরাধ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা অতীব জরুরী।

এছাড়া, পর্ণোগ্রফির সংজ্ঞায় ডিজিটাল পর্নোগ্রাফি, ডিজিটাল শিশু যৌন নিপীড়ন সংক্রান্ত উপাদান, এবং ডিজিটাল অ-সম্মতিপূর্ণ পর্নোগ্রাফি-এর সংজ্ঞা সংযোজন করা উচিত, যাতে আইন প্রয়োগে সুনির্দিষ্টতা, সামঞ্জস্য এবং অনলাইন ক্ষতির যথাযথ প্রতিকার নিশ্চিত করা যায়। (দীর্ঘমেয়াদী)

৬.৮. ডিজিটাল ফরেনসিক সাক্ষ্যের গ্রহণযোগ্যতাকে বাধ্যতামূলক করা: বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনে সাইবার অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য ডিজিটাল ফরেনসিক সাক্ষ্যের গ্রহণযোগ্যতাকে বাধ্যতামূলক করে না। আইনের এই ত্রুটি দূর করতে প্রস্তাবিত সাইবার সুরক্ষা অধ্যদেশ, ২০২৫ (সিএসও)-এর অধীনে আদালতে ডিজিটাল তথ্য-উপাত্ত সংক্রান্ত মামলায় ডিজিটাল ফরেনসিক প্রমাণের বাধ্যতামূলক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। (দীর্ঘমেয়াদী)

৬.৯. উপাত্ত সুরক্ষাঃ একটি সমন্বিত উপাত্ত সুরক্ষা কাঠামো গ্রহণ করা প্রয়োজন, যেখানে “Right to Erasure” বা ব্যক্তিগত তথ্য মুছে ফেলার/ অপসারণের অধিকার, কার্যকর আইনগত প্রতিকার এবং উপাত্ত সুরক্ষা লঙ্ঘন রিপোর্ট করার স্পষ্ট পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করবে। এটি নারীদের অপ্রয়োজনীয় বা অসম্মতিপূর্ণভাবে শেয়ারকৃত ব্যক্তিগত তথ্য দ্রুত মুছে ফেলার ক্ষমতা প্রদান করবে।

এই ধরনের কাঠামো নারীদের অনলাইন সহিংসতা থেকে রক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, কারণ এটি ব্যক্তিগতভাবে শনাক্তযোগ্য তথ্য দ্রুত অপসারণ নিশ্চিত করবে এবং ডেটা সুরক্ষা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সহজ প্রতিকার প্রদানে সচেষ্ট হবে। (দীর্ঘমেয়াদী)

৬.১০. শিক্ষা পাঠ্যক্রমে ডিজিটাল সাক্ষরতা সম্পর্কিত বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা: প্রযুক্তি-উদ্ভুত যৌন সহিংসতা সম্পর্কে ধারণা এবং প্রচলিত নেতিবাচক সামাজিক রীতি-নীতি পরিবর্তন করার জন্য অনলাইনের সতর্ক ব্যবহার, প্রযুক্তি-উদ্ভুত সহিংসতার বিভিন্ন ধরন এবং প্রতিকারের বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কিত তথ্য মাধ্যমিক শিক্ষাস্তর থেকে পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করে পাঠ্যসূচি সংশোধন করা। (স্বল্পমেয়াদী)

৭. প্রান্তিক নারীর জন্য ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা

বাংলাদেশে প্রান্তিক নারীদের জন্য ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকারের নিশ্চয়তা বিধানের ক্ষেত্রে এখনও অনেক বাধা বিদ্যমান। প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য আদালত, হাসপাতাল, থানা এবং ক্লিনিকে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে অবকাঠামোগত সংস্কার যেমন লিফট, র‍্যাম্প এবং সাইন ভাষার সুবিধা থাকা প্রয়োজন। ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি (পুনর্বাসন) আইন, ২০১১ সংশোধন করে গৃহহীন ও প্রতিবন্ধী নারীদের বিরুদ্ধে আইনের অপব্যবহার রোধ করা জরুরি। আদিবাসী নারীদের জন্য পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে পারিবারিক আদালত স্থাপন এবং আদালতে দোভাষীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা দরকার। এছাড়া, জাতীয় শিক্ষানীতির আওতায় প্রাথমিক স্তরে আদিবাসী শিক্ষকদের নিয়োগে নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

রোহিঙ্গা নারীদের জন্য ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে উখিয়া ও টেকনাফে চৌকি আদালত স্থাপন, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান আইনে তাদের অন্তর্ভুক্তি, ক্যাম্প সংলগ্ন ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার গঠন, এবং পুলিশ হটলাইন চালু করা প্রয়োজন। এছাড়া, ক্যাম্পের নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জন্য রোহিঙ্গা ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রশিক্ষণের সুপারিশ করা হয়েছে। তদুপরি, প্রান্তিক নারীদের মধ্যে হটলাইন সেবা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, পরিবার ও সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন, এবং বিচারপ্রার্থী নারীদের যাতায়াত খরচের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করা হয়েছে।

৭.১. প্রতিবন্ধী নারীঃ নারী প্রতিবন্ধীদের জন্য সকল আদালত, হাসপাতাল, থানা ও ক্লিনিকে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা উচিত, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে প্রতিবন্ধীবান্ধব অবকাঠামোগত পরিবর্তন (লিফট/র‌্যাম্পিং) এর জন্য বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোডে উল্লেখিত বিধানের কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।[23] এবং আদালত কক্ষে সাইন ভাষা পরিষেবা প্রদান করা প্রয়োজন। যদি নির্ধারিত আদালতকক্ষ প্রবেশযোগ্য না হয়, তাহলে কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, যিনি মামলার পক্ষ বা সাক্ষী, তার অনুরোধের ভিত্তিতে শুনানি একটি প্রবেশযোগ্য কক্ষে স্থানান্তর করা যেতে পারে। (স্বল্পমেয়াদী)

৭.১.১. প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা সংক্রান্ত জেলা কমিটিসহ প্রতিটি কমিটিতে নারী প্রতিনিধি থাকার বিধান থাকলেও[24] ব্লাস্টের করা তথ্য অধিকার সূত্রে জানা যায় যে, বিভিন্ন জেলায় কমিটি থাকলেও নারীর প্রতিনিধিত্বতার অনুপস্থিতি রয়েছে। নারীর সমান অংশগ্রহণ এবং তাদের মতামতের গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিতের জন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা সংক্রান্ত জেলা কমিটিসহ প্রতিটি কমিটিতে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা জরুরী । এছাড়াও কমিটির সদস্য হিসেবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বিশেষ করে নারী প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অংশগ্রহণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনায় নেয়া জরুরী। (স্বল্পমেয়াদী)

৭.১.৩. ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি (পুনর্বাসন) আইন, ২০১১[25] সংবেদনশীলতার সাথে প্রয়োগ করা, যাতে বিশেষ করে নারী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার অধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকিতে না পড়ে। এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয় বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন:

বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে যে, ভবঘুরে বা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে এবং কিছু কিছু সেসকল ব্যক্তিকে দীর্ঘসময় কারাভোগ করতে হয়েছে। উক্ত অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি (পুনর্বাসন) আইন, ২০১১ এর ৯(১) ধারা সংশোধন করে গৃহহীন ব্যক্তিদের আটক করার ক্ষমতা বাতিল করা;
উক্ত আইনের ধারা ১০ এ ভবঘুরে ঘোষণা করার ক্ষমতা ম্যাজিস্ট্রেটকে দেয়া হলেও, বিধানে ভবঘুরে ঘোষণার প্রক্রিয়াটি অস্পষ্ট এবং ব্যপক। সেইসাথে ধারা ৯(১) এ উল্লেখিত “যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে বলে বিশ্বাস” শব্দগুলো আইনের অপব্যবহারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় তাই ধারা ১০ এ ভবঘুরে ঘোষণার প্রক্রিয়াকে স্পষ্ট করা;
ধারা ১৮ অনুসারে ভবঘুরের পুনর্বাসনের সেবা নিশ্চিত করার জন্য আইনে উল্লেখিত “নির্ধারিত পদ্ধতিতে পরিকল্পনা প্রণয়ন” কে বিস্তারিতভাবে সংযোজন করা উচিত;
প্রতিবন্ধী নারী ভবঘুরের আশ্রয় এবং পুনর্বাসন সেবা নিশ্চিতের জন্য আলাদা বিধানও আইনে সংযুক্ত করা দরকার; (দীর্ঘমেয়াদী)
৭.২. আদিবাসী নারীঃ পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে অনতিবিলম্বে পারিবারিক আদালত (Family Courts) প্রতিষ্ঠা করা এবং এসকল বিরোধের কোন পক্ষ যদি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর হয় তবে তাঁদের ক্ষেত্রে প্রথাগত আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরী। একইসাথে, আদালতসমূহে প্রয়োজন সাপেক্ষে দোভাষী আদিবাসীদের প্রথাগত আইন বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতি নিশ্চিত করাও আবশ্যক। (মধ্যমেয়াদী)

৭.২.১. জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০১০-এর অন্যতম উদ্দেশ্য মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতে, প্রাথমিক বিদ্যালয় স্তরে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আদিবাসী নারীদের অগ্রাধিকার দিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯-এর ন্যায় বিদ্যমান আইনসমূহ পর্যালোচনা করে পরিমার্জন করা। (দীর্ঘমেয়াদী)

৭.৩. রোহিঙ্গা নারীঃ

৭.৩.১. উখিয়া ও টেকনাফে চৌকি আদালত প্রতিষ্ঠাঃ ব্লাস্ট এর কাজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গিয়েছে যে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ অঞ্চলের বেশিরভাগ মামলা লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, পারিবারিক বিরোধ, বাল্যবিবাহ, মানবপাচার এবং বৈবাহিক বৈধতা সংক্রান্ত বিষয়ে হয়ে থাকে যেখানে নারীরা প্রধান ভুক্তভোগী। এসকল মামলায় দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এবং নিয়মিত আদালতের ওপর চাপ কমাতে উখিয়া ও টেকনাফ এলাকায় বিশেষ করে নারী ‍ও শিশু আদালত, পর্ণোগ্রাফি এবং যৌন সহিংসতা বিষয়ে চৌকি আদালত স্থাপন করা প্রয়োজন। সেই সাথে রোহিঙ্গা শরণার্থীর পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ নির্দেশনার মাধ্যমে পারিবারিক আদালতের এখতিয়ার সম্প্রসারণ করে ক্যাম্পে পারিবারিক আদালত স্থাপন করা প্রয়োজন। (মধ্যমেয়াদী)

৭.৩.২. বিচারপ্রার্থী রোহিঙ্গা নারীদের বিশেষ করে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, ধর্ষণ, মানবপাচারে ভুক্তভোগীদের আইনে প্রবেশগম্যতা নিশ্চিতের জন্য জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ এ জনগোষ্ঠীকে আওতাভুক্ত করা উচিত। (দীর্ঘমেয়াদী)

৭.৩.৩. রোহিঙ্গা নারীদের প্রতি সংঘটিত যৌন সহিংসতা এবং ধর্ষনের মতো গুরুতর অপরাধে ভুক্তভোগীদের জরুরী সেবা প্রদানের জন্য ক্যাম্প সংলগ্ন ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার তৈরী করা উচিত। (দীর্ঘমেয়াদী)

৭.৩.৪. ক্যম্পে নারীদের প্রতি গুরুতর অপরাধের তাৎক্ষণিক প্রতিকার পাওয়া এবং সঠিক সময়ে অভিযোগ দায়ের করার জন্য “রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে যাওয়ার প্রক্রিয়া”-তে ক্যাম্প-ইনচার্জের অনুমতি প্রাপ্তির পদ্ধতি শিথিল করা দরকার।[26] (দীর্ঘমেয়াদী)

৭.৩.৫. নির্দিষ্ট পুলিশ হটলাইনঃ বর্তমানে পুলিশ জরুরী সেবা নাম্বার টি সমগ্র বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে আমাদের দেশে আসা আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বিভিন্ন ভাষা-ভাষী হওয়ায় বিদ্যমান জরুরী সেবার মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পরে। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য একটি পৃথক পুলিশ হটলাইন চালু করা, যেখানে রোহিঙ্গা ভাষায় কথা বলতে সক্ষম ব্যক্তি থাকবে, যাতে সহিংসতা বা অপরাধের ক্ষেত্রে দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য যোগাযোগ নিশ্চিত করা এবং নিরাপত্তা ও সহায়তা প্রদান করা সম্ভব হয়। (স্বল্প মেয়াদী)

৭.৩.৬. কর্মসংস্থানের সুযোগঃ

রোহিঙ্গা নারীদের ক্ষমতায়নের উদ্যোগ হিসেবে কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে কাজের সুযোগ বাড়ানো যেতে পারে এবং তাদের পারিশ্রমিক ও অন্যান্য সুবিধা বিদ্যমান শ্রম আইনের সাথে সঙ্গতি রেখে প্রদান করা যেতে পারে। (মধ্যমেয়াদী)
বৈদেশিক সাহায্য সীমিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শরণার্থী ক্যাম্পের নিকটবর্তী এলাকায় শিল্প বা উৎপাদন কার্যক্রমের জন্য সুবিধা প্রতিষ্ঠা করার কথা বিবেচনা করতে পারে, যাতে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সদস্যদের মানবিক দিক থেকে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। (মধ্যমেয়াদী)
৭.৩.৭. ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রশিক্ষণঃ শরণার্থী তথা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অধিকার এবং রোহিঙ্গা ভাষা সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ (কক্সবাজার ও ভাসানচরে কর্মরত সকল পুলিশ ও এপিবিএন সদস্যদের জন্য) প্রদান করা। (দীর্ঘমেয়াদী)

৭.৫. হটলাইন সেবা সম্পর্কে সচেতনতাঃ প্রান্তিক নারীদের জন্য পরিবার ও সামাজিক নেতিবাচক ধারণা ন্যায়বিচার প্রাপ্তির প্রধান অন্তরায়। এই বাধা দূর করতে এবং নারীদের ন্যায়বিচারের প্রবেশাধিকারের উন্নয়নে, সরকারকে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে, বিশেষ করে টেলিভিশনে, হটলাইন সেবার ব্যাপক প্রচার করতে হবে। (স্বল্প মেয়াদী)

৭.৬. যাতায়াত খরচঃ আইনগত সহায়তা মামলায় বিচারপ্রার্থী নারী এবং সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়ের সাক্ষীদের আদালতে উপস্থিত হওয়ার জন্য ব্যয় প্রদান করা উচিত। এ ধরনের ব্যয় জেলা আইনগত সহায়তা কমিটি (DLAC) প্রদান করবে। (দীর্ঘমেয়াদী)

৮. প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারঃ

বিচার ও আইন প্রয়োগ ব্যবস্থায় নারীর প্রতি সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি, সহিংসতা প্রতিরোধ ও ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে নিম্নোক্ত সুপারিশসমূহ প্রণয়ণ করা হয়েছে। এতে বিচার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের লিঙ্গ সংবেদনশীলতা প্রশিক্ষণ, নির্যাতিত নারীদের মানসিক ও আইনি সহায়তা, থানায় নারী পুলিশ সদস্যের নিয়োগ, ভিক্টিম সাপোর্ট ও ট্রমা সেন্টার স্থাপনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, পাঠ্যক্রমে সম্মতি ও নারীর সাফল্যের গল্প অন্তর্ভুক্তকরণ, নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা এবং আদালত প্রাঙ্গণে নারীদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

৮.১. বিচার ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের লিঙ্গ সংবেদনশীলতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ: পুলিশ, আইনজীবী (প্রসিকিউশন/ডিফেন্স), বিচারক এবং সমাজকর্মীদের জন্য লিঙ্গ সংবেদনশীলতা বিষয়ক প্রশিক্ষণের আয়োজন করা, যেন ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথে প্রতিটি পর্যায়ে নারী বিচারপ্রার্থীদের সঙ্গে সংবেদনশীল আচরণ করা হয়। (স্বল্পমেয়াদী)

৮.২. ব্লাস্টের নিজস্ব পরিসংখ্যান এবং জেলাসমূহ থেকে সংগৃহীত মামলার তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যায় যে, কুমিল্লা, কক্সবাজার, দিনাজপুর, ফরিদপুর ও ময়মংসিংহ জেলায় নারীর প্রতি সহিংসতার আধিক্য রয়েছে। সে অনুযায়ী এ পাঁচ জেলায় অতিসত্বর কার্যকরী ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টার স্থাপন করা আবশ্যক। (সংযুক্তি ৩) (দীর্ঘমেয়াদী)

৮.৩. লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতায় ভুক্তভোগী নারীর মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে জেলা পর্যায়ে ট্রমা সেন্টার স্থাপন করা উচিত। এছাড়াও ভুক্তভোগীদের সার্বিক সহায়তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ও সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সমন্বয় জোরদার করা দরকার, যাতে ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টার, রেফারেল ও প্রবেশন সংক্রান্ত সেবাসমূহ কার্যকরভাবে প্রদান করা যায়। (দীর্ঘমেয়াদী)

৮.৪. প্রতিটি থানার সেবা ডেস্কে একজন নারী পুলিশ সদস্যকে নারী ও শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা, যাতে বিশেষায়িত সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করা যায়। (দীর্ঘমেয়াদী)

৮.৫. লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা এবং প্রযুক্তি-নির্ভর লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা অভিযোগ সংবেদনশীলতার সঙ্গে পরিচালনার জন্য প্রতিটি থানায় পর্যাপ্ত নারী পুলিশ সদস্যের নিয়োগ প্রদান এবং তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় নারী পুলিশ সদস্য নিযুক্ত করা এবং তাদের নিরাপত্তা ও যথোপযুক্ত আবাসন নিশ্চিত করা। (দীর্ঘমেয়াদী)

৮.৬. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ্যক্রমে সম্মতি সম্পর্কিত বিষয় অন্তর্ভুক্ত করাঃ লিঙ্গ সংবেদনশীলতা এবং নারীর প্রতি সহিংসতা সম্পর্কে ধারণা এবং প্রচলিত নেতিবাচক সামাজিক রীতি-নীতি পরিবর্তন করার জন্য সম্মতি ও পছন্দের ধারণাসহ লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা (বিশেষতঃ ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার বিভিন্ন ধরন) সম্পর্কিত তথ্য প্রাথমিক শিক্ষাস্তর থেকেই পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা। (স্বল্পমেয়াদী)

৮.৭. শিশু এবং তরুণদের মাঝে নেতৃত্বের গুণাবলি তৈরির লক্ষ্যে প্রাইমারী ও মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিশেষত নারীদের সফলতার গল্প অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। (স্বল্পমেয়াদী)

৮.৮. নারী ভুক্তভোগী এবং অভিযুক্তদের জন্য প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। উক্ত কেন্দ্রে মানসম্মত খাবার, পর্যাপ্ত বিশ্রামের ব্যবস্থা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির সুযোগ, স্বাস্থ্যকর পয়োনিস্কাশন ব্যবস্থা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। (স্বল্পমেয়াদী)

৮.৯. আদালত কক্ষ এবং প্রাঙ্গণে নারীদের জন্য পর্যাপ্ত বসার ব্যবস্থা, আদালতের প্রতিটি ভবনে পৃথক স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ শৌচাগার এবং নিরাপদ মাতৃদুগ্ধ পানকেন্দ্র থাকা আবশ্যক। যৌন হয়রানির অভিযোগ দাখিলের জন্য সকল শিক্ষা ও কর্ম প্রতিষ্ঠানের দৃশ্যমান স্থানে একটি “অভিযোগ বাক্স” স্থাপন করতে হবে, এবং এসব অভিযোগ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত সাপেক্ষে করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, এবং অভিযোগকারীকে প্রতিটি পর্যায়ে অভিযোগের ব্যপারে তথ্য প্রদান করতে হবে। (দীর্ঘমেয়াদী)

৮.১০. জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতিমালায় পৌরসভা এবং ইউনিয়ন কমিটিতে নারীদের অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ থাকলেও, সামাজিক বাধা, সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি, এবং নীতিগত সীমাবদ্ধতার কারণে কমিটিতে নারীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়না।[27] তাই নারীদের ক্ষমতায়ন ও সুরক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে উক্ত কমিটিতে নারীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। (স্বল্পমেয়াদী)

৯. গণমাধ্যমে নারী:

এই প্রস্তাবনাগুলো গণমাধ্যমে ন্যায়সংগত রিপোর্টিং এবং নারী ও ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের সুরক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রণীত। এতে বিচার বিভাগ কর্তৃক সাংবাদিকদের জন্য একটি প্র্যাকটিস নির্দেশনা জারির সুপারিশ করা হয়েছে, যা শিশু, যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ভুক্তভোগী এবং ঝুঁকিপূর্ণ সাক্ষীদের পরিচয় প্রকাশের সীমাবদ্ধতা নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি, গণমাধ্যম সংস্থাগুলোতে সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতিমালা প্রণয়ন এবং নারীদের, বিশেষ করে প্রান্তিক নারীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

৯.১. প্রতিবেদনে নিষেধাজ্ঞাঃ শিশু, যৌন বা লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ভুক্তভোগী এবং ঝুঁকিপূর্ণ সাক্ষী বা অভিযুক্তদের পরিচয় প্রকাশের উপর প্রতিবেদন তৈরীকে সীমিত করতে, বিচার বিভাগকে সাংবাদিকদের জন্য একটি অনুশীলন নির্দেশিকা (Practice Direction) জারি করা উচিত। এই নির্দেশনাগুলি[28] নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর সুরক্ষা কাঠামোর বাইরেও প্রসারিত হওয়া উচিত এবং এতে পারিবারিক বিবাদের বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত করা আবশ্যক। শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের স্পষ্ট সম্মতি সাপেক্ষে এ বিষয় সম্পর্কিত প্রতিবেদনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা উচিত। যদি সম্মতি পাওয়ার সুযোগ না থাকে, তবে প্রতিবেদনের উপর বিধিনিষেধ বজায় রাখা উচিত। বিশেষ করে, শিশু এবং ধর্ষণ অপরাধে ভুক্তভোগীদের ক্ষেত্রে, তাদের সম্পূর্ণ গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোনোভাবেই তাদের পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না। (স্বল্পমেয়াদী)

৯.২. সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি প্রতিষ্ঠাঃ লাইসেন্সপ্রাপ্ত গণমাধ্যম সংস্থাগুলোতে সমতা, বৈষম্যহীনতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতিমালা প্রণয়ন করা, যাতে কর্মকক্ষেত্রে নারী বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নারীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা যায় এবং সংশ্লিষ্ট তথ্য বার্ষিক প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করা। (স্বল্পমেয়াদী)

সংযুক্তি ১:

নারীপক্ষ ও অন্যান্য বনাম বাংলাদেশ ও অন্যান্য (রিট মামলা নং ৫৫৪১/২০১৫) মামলায় উচ্চ আদালত প্রদত্ত নির্দেশনাবলী:

ক) ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন বা অনুরূপ ধরনের অপরাধের সাথে সম্পর্কিত প্রতিটি তথ্য অবিলম্বে ঘটনাস্থল যেখানেই হোক না কেন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে লিখিত আকারে লিপিবদ্ধ করবেন এবং এতে কোনো ধরনের বৈষম্য বা বিলম্ব ঘটানো যাবে না।

খ) তথ্য প্রদানকারীর জন্য একটি নির্ধারিত ওয়েবসাইট চালু করা উচিত, যেখানে তিনি অনলাইনে অভিযোগ নিবন্ধন করতে পারবেন।

গ) আইনে একটি নির্দিষ্ট ধারা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যেখানে যথাযথ কারণ ব্যতীত সংশ্লিষ্ট থানার কর্মকর্তার দ্বারা এ ধরনের মামলা নিবন্ধন করতে অস্বীকার করা বা ব্যর্থতার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান থাকবে।

ঘ) প্রত্যেক থানায় ২৪ ঘণ্টা ডিউটিরত একজন নারী পুলিশ অফিসার থাকতে হবে, যিনি কনস্টেবলের পদমর্যাদার চেয়ে কম হবেন না। ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের অপরাধের তথ্য পাওয়ার পর, তথ্য রেকর্ড করা ডিউটি অফিসার থানায় উপস্থিত মহিলা পুলিশ অফিসারকে ফোন করবেন এবং ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের সদস্যদের স্বস্তি প্রদান নিশ্চিত করবেন।

ঙ) সব পর্যায়ে ভুক্তভোগীর পরিচয় গোপন রাখতে হবে।

চ) প্রত্যেক থানায় সহায়তার জন্য উপযুক্ত নারী সমাজকর্মীদের একটি তালিকা সংরক্ষণ করতে হবে।

ছ) ভুক্তভোগীর বক্তব্য তার মনোনীত আইনজীবী বা বন্ধু বা সমাজকর্মী বা সুরক্ষা অফিসারের উপস্থিতিতে রেকর্ড করতে হবে।

জ) ভুক্তভোগীকে রাষ্ট্র থেকে সুরক্ষা পাওয়ার তার অধিকার এবং বিষয়টির সাথে সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য প্রদান করার অধিকার সম্পর্কে অবহিত করা উচিত।

ঝ) ডিউটি অফিসার, অবিলম্বে তথ্য পাওয়ার পরে, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে প্রবেশ করবেন।

ঞ) যেখানে প্রয়োজন সেখানে ব্যাখ্যা পরিষেবা প্রদান করা উচিত, বিশেষ করে নারী বা নারী প্রতিবন্ধীদের জন্য যারা ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের শিকার।

ট) তথ্য লিখিত আকারে লিপিবদ্ধ করার পর, তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং উপলব্ধ নারী পুলিশ কর্মকর্তার সাথে নিয়ে ভুক্তভোগীকে বিলম্ব ছাড়াই চিকিৎসা পরীক্ষা জন্য প্রেরণ করবেন।

ঠ) ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের বিচক্ষণ হওয়া উচিত এবং সর্বদা ভুক্তভোগীর পুনরুদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত সুযোগ-সুবিধা থাকা উচিত।

ড) সমস্ত ধর্ষণের ক্ষেত্রে বা যৌন নিপীড়নের ক্ষেত্রে রাসায়নিক/ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলকভাবে করা প্রয়োজন।

ঢ) ডিএনএ এবং অন্যান্য নমুনাগুলি অভিযোগকৃত ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাব বা ডিএনএ প্রোফাইলিং কেন্দ্রে পাঠানো উচিত।

ণ) তদন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতিবেদন সংগ্রহের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা অথবা নির্যাতিত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে।

ত) তদন্তকারী কর্মকর্তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তদন্ত সম্পন্ন করার চেষ্টা করবেন।

থ) মহিলা, মেয়ে বা শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সম্পর্কিত জাতীয় সহায়তা নম্বর ১০৯২১-এর ব্যাপক প্রচার করা উচিত, যা দৃশ্যমান, শ্রাবণমূলক এবং মুদ্রণ মাধ্যমসহ নির্ধারিত ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে।

দ) উপরের বিষয়গুলি ছাড়াও, প্রত্যেক মেট্রোপলিটন সিটিতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা, চিকিৎসা, রাসায়নিক এবং কাউন্সেলিং সহায়তা এবং ভুক্তভোগীর জন্য সুরক্ষিত সুরক্ষা প্রদানের উদ্দেশ্যে একটি অফিস প্রতিষ্ঠা করা উচিত।

সংযুক্তি ২:

Bangladesh and others v. BLAST and others [2017] 69 DLR (AD) 63 অনুযায়ী

ম্যাজিস্ট্রেট, বিচারক, ও সংশ্লিষ্ট ট্রাইবুনালের জন্য নির্দেশনাঃ

(১) গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭(২) ধারার বিধানানুযায়ী কেইস ডায়রি ছাড়া আদালতে উপস্থাপন করে তাকে পুলিশি হেফাজতে (রিমান্ড) নেয়ার বা বিচারিক হেফাজত বা কারাগারে প্রেরণের আবেদন করা হলে সংশ্লিস্ট ম্যাজিস্ট্রেট বা বিচারক/ট্রাইবুনাল উক্ত আবেদন নাকচ করে কার্যবিধির ধারা ১৬৯ অনুযায়ী গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির কাছ থেকে একটি বন্ড নিয়ে তাকে মুক্তি দেবেন।

(২) কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার হয়ে পুলিশ-হেফাজতে আটক রয়েছেন এমন কোনো ব্যক্তিকে কোন সুনির্দিষ্ট মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর অনুমতি চাওয়া হলে, সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট বা আদালত/ট্রাইবুনাল উক্ত আবেদন মঞ্জুর করবেন না যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা সংশ্লিস্ট মামলাসংক্রান্ত কেইস ডায়রির তথ্য বা বিবরণীর একটি অনুলিপি আদালতে উপস্থাপন না করেন।

(৩) উপরি-উক্ত শর্তাবলী পূরণ সাপেক্ষে, কার্যবিধির ১৬৭(২) ধারার বিধান অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে আটকের ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করা না গেলে এবং সংশ্লিষ্ট মামলাটি নিরঙ্কুশভাবে দায়রা আদালত বা কোনো ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক বিচার্য হলে, ম্যাজিস্ট্রেট অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কার্যবিধির ৩৪৪ ধারা অনুযায়ী একাধারে আনধিক ১৫ দিনের জন্য পুলিশের কাছে রিমান্ডে পাঠাতে পারবেন।

(৪) পুলিশ প্রতিবেদনে (ফরওয়ার্ডিং) বর্ণিত কারণ বিবেচনায় নিয়ে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ বা তথ্যের সুদৃঢ় ভিত্তি রয়েছে এই মর্মে ম্যাজিস্ট্রেট সন্তুষ্ট হলে এবং কেইস ডায়রিতে ঐ ব্যক্তিকে আটক রাখার পক্ষে যথেষ্ট কারণ থাকলে, তিনি ঐ ব্যক্তিকে তাঁর স্ব-বিবেচনায় উপযুক্ত কোন হেফাজতে অধিকতর আটক রাখার আদেশ দিতে পারবেন।

(৫) পুলিশের ফরওয়ার্ডিং প্রতিবেদন হতে কোন ব্যক্তিকে মূলতঃ নিবর্তনমূলক আটকের উদ্দেশ্যেই ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হলে ম্যাজিস্ট্রেট গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে বিচারিক হেফাজত তথা কারাগারে আটক রাখার আদেশ দিবেন না।

(৬) আদালতে হাজির করা কোনো আসামি বা অভিযুক্ত ব্যক্তির বিষয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারার অধীন রিমান্ডের আদেশদানের পূর্বে, উপরি-উক্ত শর্তগুলো পূরণ করা হয়েছে কি না তা দেখা সংশ্লিস্ট ম্যাজিস্ট্রেট বা বিচারক/ট্রাইবুনালের দায়িত্ব।

(৭) কাউকে গ্রেপ্তার বা আটকের ক্ষেত্রে থাকলে, ম্যাজিস্ট্রেট ঐ কর্মকর্তা/সদস্যের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২২০ ধারা অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নিবেন।

(৮) মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদনে নির্যাতনের কারণে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতীয়মান হলে, ম্যাজিস্ট্রেট উক্ত ব্যক্তিকে হেফাজতে নেওয়া কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অথবা যে কর্মকর্তার হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে তাঁর নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের ১৫ ধারার অপরাধ আমলে নেবেন।

(৯) নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ এর ধারা ২ এ বর্ণিত সংজ্ঞানুযায়ী কোনো ব্যক্তি পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন বা মৃত্যুর শিকার হয়েছেন মর্মে তথ্য কিংবা এই সংক্রান্ত কাগজপত্র পাওয়া গেলে, আঘাত বা মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিকে নিকটস্থ চিকিৎসকের কাছে পাঠাবেন। আর মৃত্যুর ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তির মরদেহ পরীক্ষার জন্য মেডিকেল বোর্ডে পাঠাবেন।

আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য নির্দেশনাঃ

(১) কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে/সদস্যকে তাৎক্ষণিকভাবে একটি স্মারক বা মেমো তৈরি করতে হবে, যাতে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির স্বাক্ষরসহ গ্রেপ্তারের সময় ও তারিখের উল্লেখ থাকবে।

(২) কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অবশ্যই ঐ ব্যক্তির নিকটাত্মীয়কে এবং নিকটাত্মীয়ের অবর্তমানে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর কোন বন্ধুকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি যত দ্রুত সম্ভব কিন্তু অনধিক ১২ ঘণ্টার মধ্যে জানাতে হবে। তাছাড়া, গ্রেপ্তারের স্থান, সময়, এবং গ্রেপ্তারকৃতকে কোথায় আটক বা কার হেফাজতে রাখা হয়েছে তা-ও জানাতে হবে।

(৩) গ্রেপ্তারের কারণ, যিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ বা তাকে গ্রেপ্তারে সহায়ক তথ্য দিয়েছেন তাঁর নাম ও ঠিকানা, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির যে আত্মীয় বা বন্ধুকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে তাঁর নাম ও পরিচয়, এবং গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার যে কর্মকর্তার হেফাজতে রয়েছেন তাঁর পরিচয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কেইস ডায়রিতে অন্তর্ভুক্ত করবেন।

(৪) ধারা ১৬৭(২) অনুযায়ী আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তার হেফাজত অথবা বিচারিক হেফাজতে আটক ব্যক্তির আটকাদেশ চাওয়ার জন্য আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা নিবন্ধন করা একটি অপরিহার্য শর্ত।

(৫) ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩ ধারার অধীন আটকাদেশ দেয়ার উদ্দেশ্যে কাউকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা যাবেনা।

(৬) কাউকে গ্রেপ্তার করার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে তার নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে হবে। যাঁকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তিনি অথবা গ্রেপ্তারের স্থানে যাঁরা উপস্থিত রয়েছেন তাঁরা দেখতে চাইলে, গ্রেপ্তারকারী কর্মকর্তাকে অবশ্যই তাঁর পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে হবে।

(৭) গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির শরীরে কোনো রকম আঘাতের চিহ্ন দেখা গেলে, গ্রেপ্তারকারী কর্মকর্তা এ ধরনের আঘাতের কারণ ও বিবরণ লিপিবদ্ধ করতঃ তাঁকে নিকটতম হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করবেন এবং দায়িত্বরত চিকিৎসকের সনদ সংগ্রহ করবেন।

(৮) কোনো ব্যক্তিকে তাঁর বাসা বা ব্যবসায়িক স্থান ভিন্ন অন্যকোনো স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হলে, তাঁকে থানায় নিয়ে আসার ১২ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর স্বজনদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো গ্রেপ্তারকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব।

(৯) গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি ইচ্ছা পোষণ করলে তাঁকে তাঁর পছন্দের আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করার কিংবা স্বজন বা নিকটজনের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ দিতে হবে।

(১০) ফৌজদারি কার্যবিধির ৬১ ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে নিকটতম ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা কার্যবিধির ধারা ১৬৭(১) এর অধীন প্রদত্ত তাঁর প্রতিবেদনে কেন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট অভিযোগের তদন্ত শেষ করা সম্ভব হয়নি তা ব্যাখ্যা করবেন। উক্ত প্রতিবেদনে ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগ বা তথ্যকে তিনি কেন সুনির্দিষ্ট বা নির্ভরযোগ্য বলে মনে করেন তা-ও উল্লেখ করতে হবে। অধিকন্তু, ফৌজদারি কার্যবিধির ৬১ ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা কেইস ডায়রির সংশ্লিষ্ট তথ্য বা বিবরণীর একটি অনুলিপি (বি.পি. ফরম ৩৮ দ্রষ্টব্য) ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রদান করবেন।

সংযুক্তি ৩:

ভিক্টিম সার্পোট সেন্টার নাই এমন ১৩ টি জেলায় ২০২৪ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দায়েরকৃত মামলার পরিসংখ্যান

ক্র. নং জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা ২০২৪ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দায়েরকৃত মামলার সংখ্যা
০১ বগুড়া ০২ ৬১৮
০২ কক্সবাজার ০৩ ৮৫২
০৩ কুমিল্লা ০৩ ৩,১৮২
০৪ দিনাজপুর ০১ ৯০১
০৫ যশোর ০২ ৫৯১
০৬ ফরিদপুর ০১ ১,১৭২
০৭ কুষ্টিয়া ০১ ১৭৫
০৮ ময়মনসিংহ ০১ ১,০০৮
০৯ নরসিংদী ০১ ৬০৬
১০ নোয়াখালী ০২ ৬৮১
১১ পাবনা ০১ ৫৪৩
১২ পটুয়াখালী ০১ ৭৫১
১৩ টাঙ্গাইল ০১ ৭৩০

ব্লাস্ট-এর ইউনিট অফিসের মাধ্যমে সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে নারী ও শিশু বিষয়ক মামলার ক্ষেত্রে কুমিল্লা জেলা শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। এই জেলায় মোট ৩,১৮২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা অন্যান্য জেলার তুলনায় সর্বাধিক। এবং ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর ও কক্সবাজার এ জেলাগুলো তুলনামূলকভাবে অন্যান্য জেলা থেকে নারী ও শিশু বিষয়ক মামলার সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষস্থানীয়। এই জেলাগুলির কোনওটিতেই কোনও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার চালু নেই।

***

তথ্যসূত্রঃ

বিচারিক সিদ্ধান্তসমূহঃ

নারীপক্ষ ও অন্যান্য বনাম বাংলাদেশ ও অন্যান্য (২০১৫) ২৫ বিএলসি ৬৫৯
ব্লাস্ট বনাম স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য,( রিট পিটিশন নং ৭১১৭/২০১৯)
বাংলাদেশ ও অন্যান্য বনাম ব্লাস্ট ও অন্যান্য (২০১৭) ৬৯ ডিএলআর (এডি) ৫৩
রিট পিটিশন নং ৪১৭১/২০২২, ১৭ এপ্রিল ২০২২ তারিখে প্রদত্ত রায়

আন্তর্জাতিক দলিলসমূহঃ

কনভেনশন অন দ্যা এলিমিনেশন অফ অল ফর্মস অফ ডিস্ক্রিমিনেশন অ্যাগেইনস্ট উইমেন (Convention on the Elimination of All Forms of Discrimination Against Women – CEDAW)
কনভেনশন অন দ্যা রাইটস অফ দ্যা চিলড্রেন (Convention on the Rights of the Child – CRC)
ইন্টারন্যাশনাল কোভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস (International Covenant on Civil and Political Rights – ICCPR)
সহিংসতা এবং হয়রানি কনভেনশন (Violence and Harassment Convention)

আইনসমূহঃ

বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬
বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭
নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫১
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান, ১৯৭২
সাক্ষ্য (সংশোধন) আইন, ২০২২ (Evidence (Amendment) Act, 2022)
পারিবারিক আদালত আইন, ২০২৩
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০
পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২
আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০
ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি (পুনর্বাসন) আইন, ২০১১
প্রতিবন্ধী ব্যাক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩
মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২
মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিষ্ট্রীকরণ) আইন, ১ঌ৭৪
যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮
বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড, ২০২০
বিশেষ বিবাহ আইন, ১৮৭২
অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন, ১৮৯০
হিন্দু বিবাহিতা নারীর পৃথক বাসস্থান এবং ভরণপোষন আইন, ১৯৪৬
উত্তরাধিকার আইন, ১৯২৫
হিন্দু উত্তরাধিকার (অক্ষমতা অপসারণ) আইন, ১৯২৮
হিন্দু উত্তরাধিকারী (সংশোধিত) আইন, ১৯২৯,
খ্রীস্টান বিবাহ আইন, ১৮৭২.
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ, ১৯৭৬
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ, ১৯৭৬
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ, ১৯৯২
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ আইন, ২০০৯
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ আইন, ২০০৯
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ, ১৯৮৫

রুলসমূহঃ

বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫
বাল্যবিবাহ নিরোধ বিধিমালা, ২০১৭
দুর্যোগ স্থায়ী আদেশ, ২০১৯
জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০১০
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯

পলিসি ব্রিফসমূহ:

ব্লাস্ট, ক্রিস্টিয়ান এইড, নারীপক্ষ, Gender Audit Policy Brief. Promoting Gender Equality in Bangladesh’s Ready-Made Garment Sector: Gender Assessments of Factory Policies & Practices (২০২৪)
ব্লাস্ট, ক্রিস্টিয়ান এইড, নারীপক্ষ, ‘Preventing Dropout of Women RMG Workers: Proposed Solutions to Improve Worker Retention‘ (Preventing Women Dropouts Policy Brief) (২০২৪)
ব্লাস্ট, ক্রিস্টিয়ান এইড, নারীপক্ষ, Women’s Safety Audit Policy Brief (২০২৪)
সারাবান তাহুরা জামান এবং অন্যান্য, ‘Legal Action on Cyber Violence Against Women‘ (ব্লাস্ট এবং ব্র্যাক জেপিজিএসপিএইচ) (২০১৭)

প্রতিবেদনসমুহ:

আমরিত আমিরাপু, নিয়াজ আসাদুল্লাহ এবং জাকী ওয়াহাজ, ‘Can the Law Affect Attitudes and Behaviour in the Absence of Strict Enforcement? Experimental Evidence from a Child Marriage Reform in Bangladesh’ (আইজেডএ ডিসকাসন পেপার নং. ১৭৪১০, অক্টোবর ২০২৪)
ব্লাস্ট , ‘Legislative Initiatives and Reforms in the Family Laws‘
ব্লাস্ট, ‘Regional Seminar on Human Rights and Gender: Core Concepts, Major Debates and Emerging Issues‘
ব্লাস্ট, ‘সতীরই কেবন ধর্ষণ হয়ঃ বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে নারীর প্রতি ধর্ষণের মামলায় চারিত্রিক সাক্ষ্যের ব্যবহার বিষয়ক গবেষণা’
ব্লাস্ট এবং রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস বাংলাদেশ (RIB), Increasing Access to Justice for the Marginalized and Socially Excluded: Equality & Community Justice Fellowship (২০১৬)
আইসিডিডিআর,বি, ব্লাস্ট, মেরি স্টোপস,নারী মৈত্রী, উই ক্যান এবং পপুলেশন কাউন্সিল, Baseline Report on Sexual and Reproductive Health and Rights and Violence Against Women and Girls in Dhaka Slums: Knowledge, Attitude and Practices Associated with Sexual and Reproductive Health and Rights (২০১২)
আইসিডিডিআর,বি, ব্লাস্ট, মেরি স্টোপস,নারী মৈত্রী, উই ক্যান এবং পপুলেশন কাউন্সিল, ‘Growing Up Safe and Healthy (SAFE): Baseline Report on Sexual and Reproductive Health and Rights and Violence Against Women and Girls in Dhaka Slum: MARRIAGE AND DOWRY (২০১২)
আইসিডিডিআর,বি, ব্লাস্ট, মেরি স্টোপস,নারী মৈত্রী, উই ক্যান এবং পপুলেশন কাউন্সিল, Baseline Report on Sexual and Reproductive Health and Rights and Violence Against Women and Girls in Dhaka Slums: Spousal Violence Against Women and Help-Seeking Behaviour‘ (২০১২)
আইসিডিডিআর,বি, ব্লাস্ট, মেরি স্টোপস,নারী মৈত্রী, উই ক্যান এবং পপুলেশন কাউন্সিল, ‘Baseline Report on Sexual and Reproductive Health and Rights and Violence Against Women and Girls in Dhaka Slums: Violence Against Unmarried Adolescent Girls‘ (২০১২)
আইসিডিডিআর,বি, ব্লাস্ট, মেরি স্টোপস,নারী মৈত্রী, উই ক্যান এবং পপুলেশন কাউন্সিল, ‘Impact of SAFE Intervention on Sexual and Reproductive Health and Rights and Violence Against Women and Girls in Dhaka Slums: Introduction’ (২০১৪)
মাইমুনা আহমাদ এবং মুক্তশ্রী চাকমা সাথী, Family Courts in the CHT: At the Intersection of Gender and Ethnic Identity (ব্লাস্ট)
মেঘনা গুহঠাকুরতা, সারা হোসেন এবং বিনা ডি’কোস্টা (সম্পাদকগণ), Towards Equality and Inclusion: A Review of Laws and Policies in Bangladesh (ক্রিস্টিয়ান এইড এবং ব্লাস্ট, ২০২৩)
মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রণালয়, ভারত সরকার, ‘185 complaints received so far through social media platforms of WCD Ministry’ (প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো, ২৩ জানুয়ারি ২০১৮)
নাজরানা ইমান, ‘CEDAW General Recommendations: Securing Justice for Violence against Women‘ (ব্লাস্ট এবং ইউএন উইমেন ২০১৬)
সাইরা রহমান খান, কান্ট্রি রিপোর্ট: বাংলাদেশ (ইউডিও সিটিজেনশিপ অবজারভেটরি ২০১৬)
তাকবীর হুদা, Between ‘Virtue’ and ‘Immorality’: Why Character Evidence Must Be Prohibited in Rape Cases (২০১৯)
তাকবীর হুদা, ‘No Justice Without Reparation: Why Rape Survivors Must Have a Right to Compensation Talking About Rape: 10 Telling Quotes from Reported Judgments’ (২০১৯)
তাকবীর হুদা এবং আবদুল্লাহ তিতির, ‘Why Rape Survivors Stay Out of Court: Lessons from Paralegal Interventions (২০১৮)
জাহিদুল ইসলাম, ‘Strengthening Family Courts: An Analysis of the Confusions & Uncertainties Thwarting the Family Courts in Bangladesh‘ (ব্লাস্ট, ২০০৬)

পত্রিকা:

নিজস্ব প্রতিবেদক, ‘পোশাক খাতে নারী শ্রমিকের হার ৫৫ শতাংশের নিচে নেমে গেছে’ বনিক বার্তা (ঢাকা, ২৯ অক্টোবর ২০২৪) <https://bonikbarta.com/economy/eOhxSTcRqHVEIdnD> এক্সেস করা হয়েছে ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
‘বাংলাদেশে ৭৮ শতাংশের বেশি নারী প্রযুক্তি-ভিত্তিক সহিংসতার শিকার’ ডেইলি স্টার (ঢাকা, ২৫ জানুয়ারি ২০২৪) <https://www.thedailystar.net/news/bangladesh/news/over-78pc-women-face-tech-based-violence-bangladesh-3774116> এক্সেস করা হয়েছে ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

অন্যান্য:

ব্লাস্ট, ‘Stakeholders’ Dialogue on Ground Realities and the Way Forward in Ensuring Legal Assistance to the Rohingya Community‘ (প্রেস বিজ্ঞপ্তি, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪)
ব্লাস্ট, সন্তানের অভিভাবকত্ব নির্ধারণের নির্দেশিকা এবং নীতিমালা প্রণয়নে একটি কমিটি গঠনের জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে হাইকোর্টের রুল জারি’ (প্রেস বিজ্ঞপ্তি, ২২ এপ্রিল, ২০২৪)
ব্লাস্ট, এনজিডিও, এনসিডিডাব্লিউ ‘Grassroots Recommendations: Rights of Persons with Disabilities‘ (বুকলেট)
ক্যাথরিন মাসুদ (পরিচালক), ‘Waiting for Justice ( English)’ (ডকুমেন্টারি)
ব্লাস্ট এবং সিএইচআরআই ‘সরকারী আইনগত সহায়তা (হ্যান্ডআউট)
ব্লাস্ট এবং সিএইচআরআই, ‘ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার’ (হ্যান্ডআউট)
ব্লাস্ট, ‘ধর্ষণ প্রতিকার সচেতনতা’ (বুকলেট)
ব্লাস্ট এবং সিএইচআরআই, ‘পারিবারিক সহিংসতার প্রতিকার’ (লিফলেট)
ব্লাস্ট, ‘বাংলাদেশের হিজড়া সম্প্রদায়ের সেবা নির্দেশিকা‘ (গাইডবুক)
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), National Conference: Securing Women’s Economic Rights in Marital Relationship through Law, Conference Statement (১৫ সেপ্টেম্বর ২০১২, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, সাভার, ঢাকা, বাংলাদেশ)
”রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে বাহির যাওয়া প্রক্রিয়া”, (শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবসন কমিশনারের কার্যালয়, ২৫ এপ্রিল ২০২৪)
কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন:

এই সুপারিশসমূহ ব্লাস্ট-এর পক্ষ থেকে প্রস্তুত করেছেন মাহবুবা আক্তার, পরিচালক, অ্যাডভোকেসি ও কমিউনিকেশন, ব্লাস্ট; আয়েশা আক্তার, লিগ্যাল স্পেশালিস্ট, জেন্ডার জাস্টিস ও উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট, ব্লাস্ট; মনীষা বিশ্বাস, জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা, ব্লাস্ট; ফাহাদ বিন সিদ্দিকী, জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা, ব্লাস্ট; আফরিদা সামিহা নাবিলাহ্‌, সহযোগী গবেষক, ব্লাস্ট; আহমেদ ইব্রাহিম, অ্যাডভাইজর, জেন্ডার ও ডাইভারসিটি, ব্লাস্ট; সিফাত-ই-নূর খানম, অ্যাসোসিয়েট লিগ্যাল স্পেশালিস্ট, ব্লাস্ট; ড. ইয়াসমিন হোসেন, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, ব্লাস্ট এবং প্রিয়া আহসান চৌধুরী, অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও কনসালট্যান্ট, ব্লাস্ট।

এই সুপারিশসমূহ প্রস্তুতের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্বীকার করা হলো (বর্ণানুক্রম অনুসারে):

আব্দুল কাদের জিলানী, লিগ্যাল অফিসার, ব্লাস্ট
আবিদ হোসেন আনসারী, লিগ্যাল অফিসার, ব্লাস্ট
মাহপারা আলম, প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট, জেন্ডার জাস্টিস এবং উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট, ব্লাস্ট
মাকসুদুর রহমান ভূঁইয়া, কমিউনিকেশন এবং পাবলিকেশন অফিসার, ব্লাস্ট
মৌমিতা ইসলাম তৃণা, ডকুমেন্টেশন অফিসার, ব্লাস্ট
নওশিন রহমান শিমু, রেফারেল অফিসার, ব্লাস্ট
সাদিয়া ইসলাম অনন্যা, ডকুমেন্টেশন অফিসার, ব্লাস্ট
সাইমা ইসলাম তিথি, রেফারাল অফিসার, ব্লাস্ট
সারা হোসেন, অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক, ব্লাস্ট এবং সিনিয়র অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
সারাফ ওয়ামিয়া আহমেদ, ইন্টার্ন, রিসার্চ, ব্লাস্ট
সুস্মিতা চক্রবর্তী, স্টাফ লইয়ার, ব্লাস্ট
সৈয়দা সেঁজুতি মাহবুব, ইন্টার্ন, রিসার্চ, ব্লাস্ট
তাপসী রাবেয়া, সহকারী পরিচালক, মধ্যস্থতা ও ভিকটিম সাপোর্ট, ব্লাস্ট
জাকিয়া সুলতানা সাদিয়া, ডকুমেন্টেশন অফিসার, ব্লাস্ট[1] নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩), মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০, পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিষ্ট্রীকরণ) আইন, ১ঌ৭৪, যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২, শ্রম আইন ২০০৬

[2] পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, ধারা ১৬(২) – আপিলযোগ্য সকল রায় বা আদেশে নিষ্পত্তির বিষয়, তৎসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত এবং উক্ত সিদ্ধান্তের কারণসমূহের উল্লেখ থাকিবে।

[3] বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), National Conference: Securing Women’s Economic Rights in Marital Relationship through Law, কনফারেন্স স্টেটমেন্ট (১৫ সেপ্টেম্বর ২০১২, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, সাভার, ঢাকা, বাংলাদেশ)

[4] বিশেষ বিবাহ আইন, ১৮৭২, অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন, ১৮৯০, হিন্দু বিবাহিতা নারীর পৃথক বাসস্থান এবং ভরণপোষন আইন, ১৯৪৬, উত্তরাধিকার আইন, ১৯২৫, হিন্দু উত্তরাধিকার (অক্ষমতা অপসারণ) আইন, ১৯২৮, হিন্দু উত্তরাধিকারী (সংশোধিত) আইন, ১৯২৯, খ্রীস্টান বিবাহ আইন, ১৮৭২.

[5] একজন কমিউনিটি প্যারালিগাল স্থানীয় জনসাধারনের সাথে কাজ করেন এবং ঘরে ঘরে গিয়ে আইনি তথ্য প্রদান করেন। তিনি আইনি অধিকার বিষয়ে তথ্য প্রদান এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে তাদের অধিকার এবং দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিকের নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখেন।

[6] একজন কোর্ট প্যারালিগ্যাল মূলত আদালতে কাজ করেন। তিনি বিচারপ্রার্থীদের আইনি তথ্য প্রদান ও সংশ্লিষ্ট সেবাপ্রতিষ্ঠানসমূতে প্রয়োজনে রেফার করেন; যেমন- সালিস এবং মামলা সংক্রান্ত তথ্য, বিচারপ্রার্থীদের মামলার হালনাগাদ তথ্য প্রদান, আইন সহায়তা কেন্দ্রে সহায়তা প্রদান এবং আইনজীবী এবং ভুক্তভোগীদের মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয় নিশ্চিত করেন।

[7] বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), সন্তানের অভিভাবকত্ব নির্ধারণের নির্দেশিকা এবং নীতিমালা প্রণয়নে একটি কমিটি গঠনের জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে হাইকোর্টের রুল জারি (২২ এপ্রিল ২০২৪) <https://blast.org.bd/2024/04/22/6500/> এক্সেস করা হয়েছে ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

[8] বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) বনাম বাংলাদেশ (২০১৪) রিট পিটিশন নং ৭৮৭৮ (হাইকোর্ট বিভাগ)

[9] ব্লাস্ট বনাম বাংলাদেশ (২০২৪) ২৯ বিসিএলসি ২৫৬

[10] মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ/আইন: ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ, ১৯৭৬, ধারা ৭৭, ৭৮, ৭৯; চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ, ১৯৭৬, ধারা ৭৯, ৮০, ৮১; রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ, ১৯৯২, ধারা ৮০, ৮১, ৮২; সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ আইন, ২০০৯, ধারা ৮০, ৮১, ৮২; বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ আইন, ২০০৯, ধারা ৮০, ৮১, ৮২; খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ, ১৯৮৫, ধারা ৮০, ৮১, ৮২।

[11] সাইরা রহমান খান, কান্ট্রি রিপোর্ট: বাংলাদেশ (ইউডিও সিটিজেনশিপ অবজারভেটরি ২০১৬) <https://cadmus.eui.eu/bitstream/handle/1814/44545/EudoCit_2016_14Bangladesh.pdf> এক্সেস করা হয়েছে ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

[12] নিজস্ব প্রতিবেদক, ‘পোশাক খাতে নারী শ্রমিকের হার ৫৫ শতাংশের নিচে নেমে গেছে’ বনিক বার্তা (ঢাকা, ২৯ অক্টোবর ২০২৪) <https://bonikbarta.com/economy/eOhxSTcRqHVEIdnD> এক্সেস করা হয়েছে ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

[13] সজাগ কোয়ালিশন, Promoting Gender Equality in Bangladesh’s Ready-Made Garment Sector: Gender Assessments of Factory Policies & Practices (ব্লাস্ট, ক্রিশ্চিয়ান এইড এবং নারীপক্ষ, অক্টোবর ২০২৪)

[14] বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি বনাম বাংলাদেশ ও অন্যান্য (২০০৯) ১৪ বিএলসি (হাইকোর্ট) ৬৯৪.

[15] আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, সহিংসতা এবং হয়রানি কনভেনশন, ২০১৯ (নং ১৯০) (গৃহীত ২১ জুন ২০১৯, কার্যকর ২৫ জুন ২০২১)

[16] বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬, ৪৬ ধারা (প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা প্রাপ্তির অধিকার এবং প্রদানের দায়িত্ব)

[17] বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬, ২(৩৪) ধারা

[18] আমরিত আমিরাপু, নিয়াজ আসাদুল্লাহ এবং জাকী ওয়াহাজ, ‘Can the Law Affect Attitudes and Behaviour in the Absence of Strict Enforcement? Experimental Evidence from a Child Marriage Reform in Bangladesh ’ (আইজেডএ ডিসকাসন পেপার নং. ১৭৪১০, অক্টোবর ২০২৪) <https://www.econstor.eu/bitstream/10419/307234/1/dp17410.pdf> এক্সেস করা হয়েছে ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

[19] বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ (২০১৭ সনের ৬ নং আইন), ধারা ১৯- এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বিধি দ্বারা নির্ধারিত কোন বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্ত বয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে, আদালতের নির্দেশ এবং পিতা-মাতা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতিক্রমে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে, বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না

বাল্যবিবাহ নিরোধ বিধিমালা, ২০১৮ ধারা, ১৭(গ) আইনের ১৯ ধারায় বর্ণিত বিশেষ বিধানের আলোকে আবেদন প্রাপ্তির পর ১৭(২)(ক) উপ বিধিতে গঠিত যাচাই কমিটি অনুসন্ধান করিয়া বিবাহটি অপ্রাপ্ত বয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে এবং সর্বশেষ বিকল্প হিসেবে হইতেছে মর্মে নিশ্চিত হইলে, নির্ধারিত বয়সসীমার পূর্বে আবেদিত বিবাহের বিষয়ে সুস্পষ্ট মতামতসহ উপযুক্ত আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করিবে।

তবে শর্ত থাকে যে, (i) আবেদিত বিবাহটি জোরপূর্বক সংঘটিত হইলে; (ii) আবেদিত বিবাহটি ধর্ষণ, অপহরণ, জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন ইত্যাদি কারণে সংঘটিত হইলে; (iii) আবেদিত বিষয়ে ধর্ষণ, অপহরণ, জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষদ্বয়ের মধ্যে কোনো মামলা বিচারাধীন থাকিলে; যাচাই কমিটি নির্ধারিত বয়সসীমার পূর্বে বিবাহ সম্পাদন না করার বিষয়ে মতামত প্রদান পূর্বক আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করিবে।

[20] ব্লাস্ট বনাম স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য, রিট পিটিশন নং ৭১১৭/২০১৯

[21] বাংলাদেশে ৭৮ শতাংশের বেশি নারী প্রযুক্তি-ভিত্তিক সহিংসতার শিকার’ ডেইলি স্টার (ঢাকা, ২৫ জানুয়ারি ২০২৪) <https://www.thedailystar.net/news/bangladesh/news/over-78pc-women-face-tech-based-violence-bangladesh-3774116> এক্সেস করা হয়েছে ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

[22] মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রণালয়, ‘ডব্লিউসিডি মন্ত্রণালয়ের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ১৮৫টি অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে’ (প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮) <https://pib.gov.in/Pressreleaseshare.aspx?PRID=1519963#:~:text=The%20Ministry%20of%20Women%20and,Facebook%20etc%20w.e.f.%20July%202016> এক্সেস করা হয়েছে ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

[23] বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড, ২০২০, বৃহস্পতিবার ফেব্রুয়ারী ১১, ২০২১, https://hbri.portal.gov.bd/sites/default/files/files/hbri.portal.gov.bd/page/ad124ea6_eb26_41b7_88b9_8f7302f3c406/2022-03-21-05-31-7a81770aab61b4341e57d61a28cf98a7.pdf

[24] প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩, ২০১৩ সনের ৩৯ নং আইন, http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-1126/section-43004.html

[25] ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি (পুনর্বাসন) আইন, ২০১১ ( ২০১১ সনের ১৫ নং আইন ), http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-1078.html

[26] ”রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে বাহির যাওয়া প্রক্রিয়া”, (শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবসন কমিশনারের কার্যালয়, ২৫ এপ্রিল ২০২৪) <https://rrrc.gov.bd/site/download/66b9d4d7-4101-479c-8991-7913eaeb6737/-> এক্সেস করা হয়েছে ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

[27] দুর্যোগ স্থায়ী আদেশ, ২০১৯, গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, https://modmr.portal.gov.bd/sites/default/files/files/modmr.portal.gov.bd/policies/7a9f5844_76c0_46f6_9d8a_5e176d2510b9/SOD%202019%20_English_FINAL.pdf

[28] রিট পিটিশন নং ৪১৭১/২০২২ এর ফলশ্রুতিতে ১৭/০৪/২০২২ ইং তারিখে প্রদত্ত রায়