১৩ আগস্ট ২০২৩

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

তারেক মাসুদ এবং মিশুক মুনীরের ১২ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে সড়কে অবহেলাজনিত দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত সকল ব্যক্তির ন্যায়বিচার প্রাপ্তি এবং পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য রাষ্ট্রীয় তহবিল গঠনের দাবী জানাচ্ছে ব্লাস্ট

১২ বছর আগে ১৩ আগস্ট ২০১১ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ এবং এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশফাক মিশুক মুনীর এবং তাদের ৩ জন সহকর্মী মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। এ দিনটিকে স্মরণ করে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের জন্য ন্যায়বিচার প্রাপ্তি এবং দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি একটি কার্যকর বীমা ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের যথাযথ  প্রতিকারের আহবান জানাচ্ছে ব্লাস্ট।

তারেক মাসুদ এবং মিশুক মুনীরের মৃত্যুর পর অভিযুক্ত গাড়ীর চালকের বিচার এবং শাস্তি হয়। তারেক ও মিশুকের পরিবার ক্ষতিপূরণের মামলা করে গাড়ীর চালক, মালিক ও বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে। এছাড়া এডভোকেট জেড আই খান পান্না সহ কয়েক জন আইনজীবী সড়ক নিরাপত্তার বিষয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। পরবর্তী এক দশকে সড়ক নিরাপত্তার ব্যাপারে বেশ কিছু অগ্রগতি হয়েছে – এ বিষয়ে ব্লাস্ট সরকারকে স্বাগত জানায়। সড়ক নিরাপত্তার জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছে সরকার, পাশাপাশি ২০১৮ সালে ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ ও প্রণয়ন করা হয়।  কিন্তু আমরা উদ্বিগ্ন যে, সড়কে জনগণের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১৮ তে সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়ন করা হলেও তার সুষ্ঠু প্রয়োগ নেই।

বিদ্যমান সড়ক পরিবহন আইনে অবহেলাজনিত দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির জন্য একটি ক্ষতিপূরণ তহবিলের কথা উল্লেখ থাকলেও তার কার্যকর বাস্তবায়ন নেই। যাত্রী নিরাপত্তার বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে যুগোপযোগী আর্থিক ক্ষতিপূরণের বিধান যুক্ত এবং ক্ষতিপূরণের জন্য রাষ্ট্রীয় তহবিল গঠন করার প্রয়োজনীয় আইনগত সংস্কার করা প্রয়োজন। সড়কপথে অবহেলাজনিত দুর্ঘটনাকে মানবিক বিপর্যয় হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে নিহত ও আহত ব্যক্তির কর্মক্ষম সময়সীমা, মৃত্যুজনিত কারণে পরিবারের অপরাপর নির্ভরশীল সদস্যদের মানসিক-শারীরিক ক্ষয়ক্ষতি এবং তাদের বিকাশ ও উন্নয়নের স্বার্থে দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির বিষয় বিবেচনা করে বাধ্যতামূলক ও সমন্বিত (নৌ, সড়ক ও আকাশপথের জন্য একইরকম) যাত্রী বীমার ব্যবস্থা রাখার দাবী জানাচ্ছে ব্লাস্ট। পাশাপাশি বীমার অর্থ কোনভাবেই ক্ষতিপূরণের অর্থের অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সরাসরি বীমার অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে প্রদান করবেন- এরূপ বিধান যুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানাচ্ছে।

প্রেক্ষাপট:

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মারা যান তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর। তাঁদের বহনকারী মাইক্রোবাসটির সঙ্গে চুয়াডাঙ্গাগামী একটি বাসের (চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স) সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলেই পাঁচজন নিহত হন। গুরুতর আহত হন আরও তিনজন।

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে তারেক মাসুদের পরিবারের করা ক্ষতিপূরণ মামলায় হাইকোর্টের দেয়া যুগান্তকারী রায়ের বিরুদ্ধে বাসের মালিকপক্ষ এবং বাদীপক্ষের দায়ের করা পৃথক আপিল মামলা শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় অপেক্ষমান রয়েছে। অন্যদিকে মিশুক মুনীরের পরিবারের দায়ের করা ক্ষতিপূরণ মামলাটিতে বিবাদীপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য হাইকোর্টে ১৬ আগস্ট দিন ধার্য রয়েছে। একই দুর্ঘটনায় আহত শিল্পী ঢালী আল মামুন রাষ্ট্রের সহযোগিতায় বিশেষ চিকিৎসা পেয়েছেন।

উল্লেখ্য, এ দুর্ঘটনার পরপর ১৪ আগস্ট ২০১১ তারিখে আইনজীবী জেড আই খান পান্না, বেলা এবং দুইজন আইনজীবী সড়ক এবং হাইওয়েতে নিরাপদ চলাচলে নিয়মিত তদারকি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতের লক্ষ্যে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা (৭৪০১/২০১১) দায়ের করে। আবেদনকারীগণের পক্ষে বর্তমানে ব্লাস্ট এ মামলাটি পরিচালনা করছে, যা বর্তমানে শুনানীর জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে।

আরও তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন:

communication@blast.org.bd