বাংলাদেশ পরিবেশ সুরক্ষা আইন ১৯৯৫ এর অধীনে বাংলাদেশ কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০২১ এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মাধ্যমে গোবিন্দগঞ্জ, সয়দারগাঁও ইউনিয়ন, ছাতক, সুনামগঞ্জ, গোবিন্দগঞ্জ পয়েন্টের রেলগেট, সুহিতপুর ও নুতন বাজার এলাকা থেকে বিপজ্জনক বর্জ্য অপসারণের নির্দেশনা দিয়ে উচ্চ আদালতের রুল জারি

(The High Court issued rule directing the removal of hazardous waste from Gobindganj, Soidergaon Union, Chatak, Sunamganj, Gobindganj Point Railway Gate, Suhitpur and Nutan Bazar areas through proper implementation of Bangladesh Solid Waste Management Rules 2021 under the Bangladesh Environment Conservation Act 1995)

আজ ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ মাননীয় বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ  ও মাননীয় বিচারপতি এ.কে.এম রবিউল হাসান এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ জনস্বার্থ বিষয়ক মামলা (রিট মামলা নং ১০২২২/২০২৩) এর প্রাথমিক শুনানিঅন্তে গোবিন্দগঞ্জ, সৈদেরগাঁও ইউনিয়ন, ছাতক, সুনামগঞ্জ,  গোবিন্দগঞ্জ পয়েন্টের রেলগেট, সুহিতপুর ও নুতন বাজার এলাকা থেকে বাংলাদেশ পরিবেশ সুরক্ষা আইন ১৯৯৫ এর অধীনে বাংলাদেশ কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০২১ এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিপজ্জনক বর্জ্য অপসারণের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না- এ মর্মে ১-৮ নং প্রতিপক্ষের প্রতি কারণ দর্শানোর নোটিশ ইস্যু করেন এবং একইসাথে ৪-৮ নং প্রতিপক্ষের প্রতি নোটিশ জারির ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে র্বজ্য অপসারণে গৃহীত পদক্ষেপ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।

প্রেক্ষাপটঃ

উল্লেখ্য, গত ১৫ জুলাই ২০২৩ তারিখ ‘দৈনিক ভোরের কাগজ’ পত্রিকায় “ছাতক: ময়লার দুর্গন্ধে পথচারীরা অতিষ্ঠ’’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন হতে জানা যায় যে, গোবিন্দগঞ্জ, সৈদেরগাঁও ইউনিয়ন, ছাতক, সুনামগঞ্জ,  গোবিন্দগঞ্জ পয়েন্টের রেলগেট, সুহিতপুর ও নুতন বাজার এবং ছাতক পৌরসোভা ও জাউয়া বাজারের প্রবেশ পথে বর্জ্য পদার্থের স্তুপ রয়েছে, যা মানুষের জন্য বিশেষত স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও জীবনের জন্য ক্ষতিকর এবং এ পরিস্থিতির কারণে প্রতিনিয়ত চরম সমস্যা ও নৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে।

বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও জনকল্যাণের সুরক্ষা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে  বাংলাদেশ পরিবেশ সুরক্ষা আইন ১৯৯৫ এর অধীনে বাংলাদেশ কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০২১ বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু বিধিমালাটির যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে পরিবেশের চরম বিপর্যয় ঘটছে এবং একইসাথে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, শ্বাসকষ্ট  এবং বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগের মত মারাত্মক ব্যাধির প্রাদুর্ভাব ঘটছে । এছাড়াও জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও জনকল্যাণের জন্য  হানিকর যে কোনো কাজ জেলা পরিষদ আইন ২০০০ এর তফসিল নং ৩ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য একটি  অপরাধ ।

সুনামগঞ্জের উপরোল্লিখিত স্থানে বাংলাদেশ পরিবেশ সুরক্ষা আইন ১৯৯৫ এর অধীনে বাংলাদেশ কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০২১ এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নে প্রতিপক্ষের বিধিবদ্ধ দায়িত্ব পালনে ক্রমাগত ব্যর্থতায় সংক্ষুব্ধ হয়ে (১)সচিব, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়; (২) সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; (৩) সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়; (৪) জেলা প্রশাসক, সুনামগঞ্জ; (৫) চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদ, সুনামগঞ্জ; (৬) থানা নির্বাহী অফিসার, ছাতক, সুনামগঞ্জ; (৭) চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ, ছাতক,  সুনামগঞ্জ; (৮)চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ, গোবিন্দগঞ্জ, সৈদেরগাঁও, ছাতক, সুনামগঞ্জ – কে প্রতিপক্ষ করে আইয়ুব করম আলী, সুনামগঞ্জ ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) আবেদনকারী হয়ে জনস্বার্থ বিষয়ক এ মামলাটি দায়ের করে।

এ মামলার আবেদনকারী জনাব আয়ূব করম আলী তার অনুভূতি  ব্যক্ত  করতে যেয়ে বলেন, ‘নগরায়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। অতীতে নগরায়ন ধারণাটি শুধুমাত্র শহরেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু বর্তমানে এটি শহরতলি কিংবা গ্রামীণ এলাকায়ও বিস্তৃতি লাভ করছে। আর এ নগরায়ন বাস্তবায়নে নির্দিষ্ট কিছু প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয়, বর্জ্য এবং যানজট সমস্যা তন্মধ্যে অন্যতম। অথচ স্থানীয় প্রশাসন  এই জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যথাযথ দৃষ্টিপাত করছে না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং অন্যান্য পরিবেশগত সমস্যাগুলি মোকাবেলা করা সময়ের দাবি এবং তা করতে হবে এখনই। এসব বিষয়ে অবহেলা ভবিষ্যতে আমাদের স্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিবে।’

এ মামলার আইনজীবী অ্যাড.আইনুন্নাহার সিদ্দিকা বলেন, ‘বাংলাদেশের বেশীরভাগ আইনের প্রয়োগ না হওয়ার কারণে, সেই আইনের কার্যকারিতা থাকে না এবং জনগন আইনের সুফল হতে বঞ্চিত হয় । একইভাবে বাংলাদেশ পরিবেশ সুরক্ষা আইন ১৯৯৫ এর অধিনে বাংলাদেশ কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা- ২০২১, খুবই যুগোপোযোগী আইন হওয়া সত্ত্বেও, সেটির সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়ায়, ময়লা ও আবর্জনা সঠিকভাবে পরিষ্কার না করার কারণে পরিবেশের বিপর্যয় ও স্বাস্থ্যহানি হচ্ছে। সুতরাং এ আইনটির যথাযথ প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরী এবং আদালতের মাধ্যমে আমরা আইনটির যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে চাই।’

আবেদনকারীগণের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাড.আইনুন্নাহার সিদ্দিকা, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও প্যানেল আইনজীবী, ব্লাস্ট এবং তাঁকে সহায়তা করেন অ্যাড. মোঃ নাজমুল করিম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও স্টাফ ল’ইয়ার, ব্লাস্ট । রাষ্ট্র পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল অ্যাড. অমিত তালুকদার।

আরও তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন:

অ্যাড. মো: নাজমুল করিম, মোবাইল নং:- ০১৭১০৫০২৫০১

communication@blast.org.bd