প্রেস বিজ্ঞপ্তি

২৫ জুলাই, ২০২৩

প্রস্তাবিত উপাত্ত সুরক্ষা আইন কিভাবে নারীর অধিকার ও সুরক্ষাকে নিশ্চিত করতে পারে এবং কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ব্যাবহার কে সীমিত করতে পারে- মতবিনিময় সভায় বক্তারা

মতপ্রকাশ, গোপনীয়তা ও অর্থনৈতিক সাম্যের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষায় প্রস্তাবিত উপাত্ত সুরক্ষা আইন ২০২৩ নারীর অধিকার ও সুরক্ষাকে নিশ্চয়তা দিতে এবং কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ব্যাবহার কে সীমিত করতে সক্ষম কি-না তা নিয়ে আলোচনা করেন সভার বক্তাগণ।

প্রস্তাবিত উপাত্ত সুরক্ষা আইন কীভাবে পারিবারিক সমস্যা, স্থানীয় পর্যায়ের বিরোধ-সহিংসতা এবং যৌন নিপীড়নের ক্ষেত্রে নারীদের প্রতি বৈষম্য করতে পারে সেই সাথে অটোমেশন কীভাবে সাধারণ মানুষের অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারে তা পর্যালোচনা করার উদ্দেশ্যে তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ, সংশ্লিষ্ট অংশীজন, শিক্ষাবিদ ও গবেষকদের সাথে নিয়ে আজ বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ও সেন্টার ফর এ্যাডভান্সন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ (সি.এ.এল.এস), আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে ‘খসড়া উপাত্ত সুরক্ষা আইন বিশ্লেষণ এবং সম্ভাব্য সীমবদ্ধতা বিষয়ক মতবিনিময় সভাটি আয়োজন  করে। আলোচনায় আইনটিতে সংক্ষুব্ধ নারীর ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা  সহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে।

নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক সালওয়া তাবাসসুম হক মূল প্রবন্ধে বলেন, আমরা ব্যক্তিগত উপাত্ত বিষয় নিয়ে কোন মিডিয়ার কাছে যেতে আগ্রহী নয়। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের কারণে ব্যক্তিগত উপাত্তের অপব্যবহার হচ্ছে, বিশেষ করে আমাদের নারী ও শিশুদের এই সমস্যার জন্য বেশি ভুগতে হয়। নিজের উপর নির্যাতন বা হয়রানি প্রমাণের জন্য  যখন কোন নারী নিজ থেকে কোন ভিডিও করে অথবা পোস্ট করে, যেমন শারিরীক নির্যাতন, হামলা অথবা মারধরের ভিডিও, সেখানে ভিডওগুলো সাধারণত বিনা  অনুমতিতে করা হয়। অন্যদিকে, কাবিন নামা ছাড়া বিয়ে করে পুরুষেরা পরে তা রিফিউজ অথবা অস্বীকার করলে, সেখানে নারীদের তৈরী করা ভিডিও এবং মেসেজ এর সাহায্যে উক্ত বিবাহের বিষয় প্রমাণ করা যায়। কিন্তু এইরকম কোন ভিডিও করার পর সেই ভিডিওর জন্য উপাত্ত সংরক্ষন আইনের ৫৪ ধারায় শাস্তি প্রদান করা যায়, যা নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সকলের জীবনের সাথে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত। কিন্তু আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অনেকাংশে নিরেপক্ষভাবে কাজ করতে পারে না। যেহেতু আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর  আগের সকল ডেটা নিয়ে কাজ করতে হয়, সুতরাং যেখানে যেখানে নারীদের বা প্রান্তিক জনগণকে গল্পে বা ফিকশনে ছোট করে দেখানো হয়েছে তাতে কিছু বিষয় আরো ক্ষতিকর হয়ে যায়।  যা নারী ও প্রান্তিক লোকদের আরো সংক্ষুব্ধ করে দিতে পারে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে সীমিত না করলে তা আমাদের সহ সকল দেশের জনগণের জন্য একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।  যেহেতু আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কোন  প্রেক্ষাপট বুঝতে পারে না। ডিজিটাল ডেটাবেইসে কোন ফাক থেকে গেলে  তার আউটপুটে ভুল ফলাফল দিতে পারে। সর্বোপরি এই ধরনের ফলাফল আমাদের ক্ষতির কারণ হতে পারে। জেনারেল ডাটা প্রটেকশন রেগুলেশন (জিডিপিআর) ধারা ২২ এর মতো কিছু আমাদের আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে পারা যেতে পারে।

ব্যারিস্টার এ বি এম হামিদুল মিসবাহ বলেন, আর্টিকেল ৪৩ (বি) সকল নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সুরক্ষা করার অধিকার রয়েছে।এটা একটা সাংবিধানিক অধিকার, যার সাথে আমাদের ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষার অধিকার সরাসরি জড়িত। রাষ্ট্রের দ্বায়িত্ব নাগরিকদের উপাত্তের গোপনীয়তা নিশ্চিত করা। উপাত্তের সুরক্ষা নিশ্চিত করে, রাস্ট্র নাগরিকদের সৃষ্ট উপাত্ত বিশ্লেষন করে, নতুন নতুন সরকারি সেবা প্রদান করতে সক্ষম হবে, এবং সরকারের নীতি প্রণয়নে ও অন্যানো সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়া সহজতর হবে, যা বর্তমান সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য। সুতরাং ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইনের গুরত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনেক। তবে বর্তমান খসড়া উপাত্ত সুরক্ষা আইন এ ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষার আইনী কাঠামো খুব একটা শক্ত বা জোরালো নয়, এবং নাগরিকদের উপাত্তের সুরক্ষার জায়গাটা অনেকাংশে দুর্বল যা আমাদের আর্টিকেল ৩১ ও ৪৩ বি প্রদত্ত সংবিধানিক অধিকার কে খর্ব করে বলে প্রতিয়মান। নতুন প্রযুক্তি, কৃত্তিম বুধিমত্তার যুগে আমাদের একটি বলিষ্ঠ ও আন্তর্জাতিক ভাবে অনুসৃত একটি উপাত্ত সুরক্ষা আইন প্রয়োজন, যা নাগরিকদের উপাত্ত সুরক্ষার, মানবাধিকার, আইনী প্রতীকার ও ন্যয়বিচার পাবার সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারবে, পাশপাশি বর্তমান সরকারের অভীষ্ট স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে ও অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

ড. শাহনাজ হুদার সঞ্চালনা এবং সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ড. সীমা জামান। মতবিনিময় সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে ছিলেন সালওয়া তাবাসসুম হক এবং আলোচক হিসেবে ছিলেন ব্যারিস্টার এ বি এম হামিদুল মিসবাহ। আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন আইন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ মানবাধিকার কর্মী এবং আইনজীবীরা।