১৯ মার্চ ২০২৫
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
ধর্ষনের মামলার যথাযথ নিষ্পত্তির জন্য বিচার বিভাগ, পুলিশ প্রশাসন এবং আইনজীবীদের সমন্বয় এবং শাস্তির যথাযথ নির্দেশনার সুপারিশ করেন প্রস্তাবিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধিত) অধ্যাদেশ, ২০২৫ নিয়ে আলোচনায় বক্তারা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং নারী অধিকার-কর্মীর উপস্থিতিতে আজ ১৯ মার্চ ২০২৫ তারিখে ঢাকার প্রেস ক্লাবে ধর্ষণ আইন সংস্কার জোটের পক্ষে জোটের সচিবালয় ব্লাস্ট “ধর্ষণ ও নির্যাতন: আইনগত সুরক্ষায় করণীয়” বিষয়ক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
মত বিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞায় সকল ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং পেনিট্রেশন শব্দের বিস্তৃত ব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে এর পরিবর্তন আনা জরুরী। পাশাপাশি যৌন সম্মতির জন্য একটি নির্দিষ্ট বয়সকে মানদণ্ড নির্ণয় করাও আবশ্যক। উল্লেখ্য বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের বিভিন্ন দিক নির্দেশনায় ধর্ষন সংক্রান্ত মামলা নিয়ে কিছু যুগোপযোগী রায় রয়েছে। সে সকল রায় এবং আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ ধরনের সংবেদনশীল মামলাগুলোর যথাযথ গোপনীয়তা বজায় রেখে এবং দক্ষতার সাথে তদন্ত করার প্রশিক্ষণ প্রদান করাটাও জরুরী।
আলোচনায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ধর্ষনের মামলায় প্রকৃত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে নিরপেক্ষ বিচার পরিচালনার উপরে জোর দেন। বিচারকেরা সঠিকভাবে কাজ করলে এবং বিচারক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারলে আইনের মৌলিক ধারাগুলো ব্যবহারের মাধ্যমেও সুষ্ঠুভাবে বিচার করা যায় বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন এর সদস্য মাহীন সুলতান তার বক্তব্যে বলেন, আইনের সংশোধনের পাশাপাশি আমাদের সাংস্কৃতিক চর্চা, শিক্ষার উন্নয়ন ও জরুরী। এ ব্যাপারে আমাদের দেশে “সম্মতি”-কে সংজ্ঞায়িত করা উচিত। অনেক ক্ষেত্রে জোরপূর্বক যৌন হয়রানিকেও সম্মতি পর্যায়ে ব্যাখ্যা করা হয়। তবে এ ধরনের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আমাদের আবেগকে সংবরণ করা উচিত। আবেগের বশে আইনে এমন অবাস্তব কোন বিধান রাখা উচিত হবে না যা পরবর্তীতে আমাদের বাস্তবায়নে বেগ পেতে হবে। আইনে অধিক শাস্তির বিধান রাখলে মামলার নিষ্পত্তির হার হ্রাস পেতে থাকে। তড়িৎ গতিতে আইন সংস্কার করা হলে আসলে তা কতখানি নারীদের ন্যায়বিচার দিতে পারবে তা নিয়ে আসলে আমরা উদ্বিগ্ন। তাই আমাদের মনে হয় এটা নিয়ে আমাদের সকলের মতামত নেয় উচিত। এবং যারা দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়ে কাজ করে আসছে তাদের অভিজ্ঞতার প্রতিফলন এ আইনে আনা জরুরী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা বলেন দন্ডবিধিতে উল্লেখিত ধর্ষন সংজ্ঞার সংশোধন করা প্রয়োজন। আইনের অধীনে সকল অপরাধ আপোস-অযোগ্য হলেও আদালতের বাইরে যে সালিশগুলো হয় তা থেকে বোঝা যায় আইনের বাস্তবায়ন অনেকক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়। আমাদের দেশে বাল্যকামীতাকে সহজভাবে গ্রহণ করা হয়েছে বলে এ ধরনের ধর্ষণকে খুবই স্বাভাবিক মনে হয়। সেইসাথে ডিএনএ রিপোর্ট এর কথা আইনে উল্লেখ থাকলেও সারা বাংলাদেশে কেবল একটি ডিএনএ পরীক্ষার ল্যাব রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদার সভাপতিত্বে এবং ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিমের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে মত বিনিময় সভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ এবং আলোচক হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির উপদেষ্টা এডভোকেট সালমা আলী ও নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন এবং নারীপক্ষের সদস্য মাহীন সুলতান।
এডভোকেট আয়েশা আক্তার, অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, লিগ্যাল স্পেশালিষ্ট, ব্লাস্ট এবং কো-ফোকাল, ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট (Rape Law Reform Coalition: RLRC) এবং ফাহাদ বিন সিদ্দিক, সিনিয়র গবেষনা কর্মকর্তা, ব্লাস্ট – ধর্ষণ আইন সংস্কার জোটের সচিবালয় ব্লাস্ট এর পক্ষ থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এ ধর্ষনের সংজ্ঞায় সকল ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করন, যৌন সম্মতির জন্য নির্দিষ্ট বয়সের মানদন্ড নির্ধারণ, ধর্ষন অপরাধের মাত্রা অনুসারে অর্থদন্ড নির্ধারন, কোন সংবাদপত্রে বা অন্য কোন সংবাদ মাধ্যমে বা অনলাইনে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যৌন বা লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতায় ভুক্তভোগী নারী ও শিশু এবং এর পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ সাক্ষী বা অভিযুক্তদের পরিচয়, পরিচয় নির্দেশক কোন তথ্য, ছবি ও ভিডিও প্রকাশ থেকে বিরত রাখা এবং ধর্ষণ অপরাধে ভুক্তভোগী ব্যক্তির জন্য রাষ্ট্র পরিচালিত একটি ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠন করাসহ আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া বিষয়ক সুপারিশমালা মতবিনিময় সভায় তুলে ধরেন।।
ধন্যবাদান্তে,
ধর্ষণ আইন সংস্কার জোটের সচিবালয় এর পক্ষে
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)
প্রয়োজনে যোগাযোগ:
ই-মেইল: communication@blast.org.bd
০১৫৫২৩২৪৩৭৬, ০১৯৯০১৮১৭৫১
ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট ১৭টি সংগঠন এর সমন্বয়ে গঠিত এই কোয়ালিশন যার মধ্যে রয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র, আইসিডিডিআরবি, উইক্যান, উইমেন ফর উইমেন, একশন এইড, এসিড সার্ভাইভারস ফাউন্ডেশন, ওয়াইডাব্লিউসিএ, কেয়ার বাংলাদেশ, জাস্টিস ফর অল নাও, ডাব্লিউডিডিএফ, নারীপক্ষ, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, ব্র্যাক, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (সচিবালয়), মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।