সংবাদ বিবৃতি

বালু মাফিয়া কর্তৃক বাড়বকুণ্ড মৎস্যজীবী শ্রমিক হত্যা হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)-এর তীব্র নিন্দা এবং সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি

[২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ঢাকা] গত ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ তারিখে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ডে সন্ন্দ্বীপ চ্যানেলে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকালে মাছধরার জাল কেটে দেওয়ার প্রতিবাদ করায় রাম জলদাস (৩২) নামের এক মৎস্যজীবী শ্রমিককে লোহার রডের আঘাতে হত্যা করে সাগরে ফেলে দেয় বালুউত্তোলনকারীরা। এ সময় তাঁর ছোট ভাই লিটন জলদাসকে (২৭) অপহরণ করে নিয়ে যায় তারা। এ ঘটনার চারদিন পর ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে সীতাকুণ্ডে সমুদ্র সৈকতে ভেসে আসা রাম জলদাসের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি) এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। একইসাথে, সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে জড়িতদের আইনানুগ শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও তাদের নিরাপত্তা ও পূণর্বাসনসহ প্রশাসনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছে।

বিভিন্নসূত্রে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে এমভি ফারহান নামক অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী বাল্ক হেডে কর্মরত ৬ জন লোক, মৎস্যজীবী রাম জলদাসকে লোহার রডের আঘাতে হত্যা করে সাগরে ফেলে দেয় ও তার ভাই লিটন দাসসহ তাদের জেলে নৌকা বাল্ক হেডের সাথে বেঁধে হাতিয়া নিয়ে যায়। লিটন দাসকে অমানবিক নির্যাতন ও মারধর করে উড়ির চরে নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয় এবং জেলে নৌকা নিয়ে যায়। পুলিশ ইতোমধ্যে রাম জলদাস হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ জনকে উক্ত জাহাজ থেকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি রাম জলদাসের মৃত্যুর ফলে এবং জীবিকার একমাত্র উপকরণ জাল ছিঁড়ে ফেলায় ও জেলে নৌকাটি নষ্ট করে দেওয়ায় পুরো পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, জেলে পাড়ার বাসিন্দারা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে তাদের উপর চাপ ও হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে।

সাগরে অবৈধভাবে যেখানে সেখানে বালু উত্তোলনের ফলে ভয়াবহ জলোচ্ছাস থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে নির্মিত সাগরের বেরি বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে। সামুদ্রিক জলোচ্ছাসে সমুদ্র পাড়ের মৎস্য শিকারি জেলেরা জীবিকা সংকটে পড়ছে। এছাড়া, দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী বাল্কহেড চলাচলের জন্য সাগরে বসানো জাল কেটে দেয়া হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে।

এ প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষের কাছে ফোরাম নিম্নোক্ত দাবি পেশ করছে:

১. সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে রাম জলদাসকে হত্যা ও লিটন জলদাসকে নির্যাতন করার ঘটনার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

২. রাম জলদাসের পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।

৩. রাম জলদাসের পরিবার এবং অন্যান্য মৎস্যজীবী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

৪. অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

স্বাক্ষরকারীবৃন্দ

হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ এর সদস্যবৃন্দ:

১. ড. হামিদা হোসেন, এক্সপার্ট, এইচআরএফবি

২. অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, এক্সপার্ট, এইচআরএফবি

৩. রাজা দেবাশীষ রায়, এক্সপার্ট, এইচআরএফবি

৪. অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, চেয়ারপারসন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক, এইচআরএফবি

৫. শাহীন আনাম, সদস্য, স্টিয়ারিং কমিটি, এইচআরএফবি এবং নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন

৬. জাকির হোসেন, সদস্য, স্টিয়ারিং কমিটি, এইচআরএফবি এবং প্রধান নির্বাহী, নাগরিক উদ্যোগ

৭. সারা হোসেন, সদস্য, স্টিয়ারিং কমিটি, এইচআরএফবি এবং অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)

৮. রঞ্জন কর্মকার, সদস্য, স্টিয়ারিং কমিটি, এইচআরএফবি এবং নির্বাহী পরিচালক, স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট (স্টেপস)

৯. সালেহ আহমেদ, সদস্য, স্টিয়ারিং কমিটি, এইচআরএফবি এবং নির্বাহী পরিচালক, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি।

১০. সঞ্জীব দ্রং, সদস্য, স্টিয়ারিং কমিটি, এইচআরএফবি এবং সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম

১১. ড. ইফতেখারুজ্জামান, সদস্য, এইচআরএফবি এবং নির্বাহী পরিচালক, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)

১২. ডা. ফওজিয়া মোসলেম, সদস্য, এইচআরএফবি এবং সভানেত্রী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ (বিএমপি)

১৩. শামসুল হুদা, সদস্য, এইচআরএফবি এবং নির্বাহী পরিচালক, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্মস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি)

১৪. খুশী কবির, সদস্য, এইচআরএফবি এবং সমন্বয়ক, নিজরা করি

১৫. সরদার জাহাঙ্গীর হোসেন, সদস্য, এইচআরএফবি এবং নির্বাহী পরিচালক, এসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশন (এএসএফ)

১৬. শিপন কুমার রবিদাস, সদস্য, এইচআরএফবি এবং সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম)

১৭. সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, সদস্য, এইটআরএফবি এবং নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস)

১৮. দেওয়ান জামান, সদস্য, এইচআরএফবি এবং নির্বাহী পরিচালক, ফেয়ার

১৯. পল্লব চাকমা, সদস্য, এইচআরএফবি এবং নির্বাহী পরিচালক, কাপেং ফাউন্ডেশন

২০. রোকেয়া রফিক বেবী, সদস্য, এইচআরএফবি এবং নির্বাহী পরিচালক, কমজীবনী নারী

২১. গীতা দাস, সদস্য, এইচআরএফবি এবং সভানেত্রী, নারীপক্ষ

২২. আবদুস সাত্তার দুলাল, সদস্য, এইচআরএফবি এবং সভাপতি, ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অব ডিজাবল্ড পিপলস অর্গানাইজেশনস (ন্যাডপো)

২৩. আশরাফুন্নাহার মিষ্টি, সদস্য, এইচআরএফবি এবং নির্বাহী পরিচালক, ওমেন উইথ ডিজাবিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন