তারিখ: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
হেফাজতে নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের সহায়তার জন্য হটলাইন নম্বর চালু করা এবং রায় উল্লেখিত ক্ষতিপূরণ দ্রুত প্রদানের দাবী জানান মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহনকারী বক্তারা
বিদ্যমান নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর সঠিক ব্যাখ্যা জানা এবং আইনের সঠিক প্রয়োগের গুরুত্বা আরোপ করে আজ ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে ঢাকাস্ত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এর মিলনায়তনে হেফাজতে নির্যাতন ও দায়বদ্ধতা: প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকার বিষয়ক মতবিনিময় সভার বক্তারা মতামত প্রদান করেন।
এড. আব্দুল্লাহ আল নোমান, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এর সঞ্চালনায় সভায় নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর অধীনে প্রথম ঐতিহাসিক রায় প্রাপ্ত জনি হত্যা মামলা বিষয়ক সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা করেন এড. নাজমুল করিম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এবং স্টাফ আইনজীবী, ব্লাস্ট ।
আগামীকাল ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ পল্লবী থানা পুলিশ হেফাজতে এসআই জাহিদের নির্যাতনের নিহত জনির পক্ষে দায়েরকৃত নির্যাতন এবং পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনের প্রথম রায় এর ৪ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। সাড়ে ছয় বছর আইনি লড়াই শেষে ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বিচারের একটি ধাপ পার করা হয় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে। এ মামলার ভিকটিম জনির ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকি মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহন করেন এবং বলেন, মামলা চলাকালীন সময়ে অপরাধীদের কাছে বিভিন্ন প্রলোভন ও হুমকির সত্ত্বেও গণমাধ্যম এবং ব্লাস্টের সহযোগিতায় নিম্ন আদালত থেকে একটি যুগান্তকারী রায় পেয়েছি। ২০২০ সালে ক্ষতিপূরণের আদেশ সম্বলিত রায় পাওয়া সত্ত্বেও অদ্যাবধি ক্ষতিপূরণের টাকা হাতে না পাওয়াই তার পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করা দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। তিনি আশা করছেন রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হেফাজতে নির্যাতনে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের বিষয়ে ফামিয়া সাগর তোশমি, শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি দেশের এই নতুন সূচনালগ্নে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করবেন এবং সকল নাগরিক স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারবেন মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্যানেল আলোচক ব্যারিস্টার অনিক আর হক, অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ পুলিশ হেফাজতে নির্যাতিত, আহত, ও নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য যৌক্তিক ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন। একইসাথে তিনি আরও জানান সংশ্লিষ্ট আইনে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের সুরক্ষার বিধান উল্লেখ রয়েছে। এ ধারার অধীনে প্রয়োজনে বিশেষ ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা আদালতের কাছে সুরক্ষার জন্য আবেদন করতে পারেন।
এড. মোঃ আবু তৈয়ব, আইনজীবী, ঢাকা জজ কোর্ট এবং প্যানেল আইনজীবী, ব্লাস্ট, নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর সুষ্ঠু প্রয়োগের জন্য এই আইন বিষয়ে সম্যক ধারণা লাভের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।
ডাঃ মোশতাক আহমেদ, মেডিকেল অফিসার (Casualty & Emergency Surgery), ঢাকা মেডিকেল কলেজ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুলিশি মামলায় রিমান্ড এর শিকার ব্যক্তিদের দায়িত্বরত ডাক্তার মানসিক ও শারীরিক উভয় বিষয়ে চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করেন। তথাপি একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে শুধুমাত্র ২০ শতাংশ মানুষ পরবর্তীতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে, অবশিষ্টরা শারীরিক ভাবে সুস্থ হলেও মানসিক ভাবে ট্রমার শিকার হয়ে বেচে থাকেন।
নূর খান লিটন, মানবাধিকার কর্মী এবং সদস্য, তদন্ত কমিশন (জোরপূর্বক গুম বিষয়ক) বলেন, দেশে গণত্তন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া না গেলে এবং সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব না হলে এবং একইসাথে বিদ্যমান আইন সম্পর্কে সঠিক ধারণা / সঠিক ব্যাখ্যা না জানার কারণে আইন এর সঠিক প্রয়োগ/ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তিনি এই বিষয় গুলো নিয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে আরও বেশি করে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে জনগণের মাঝে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সচেতনতা তৈরির প্রস্তাব রাখেন।
সারা হোসেন, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এবং অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক, ব্লাস্ট, হেফাজতে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের আইনগত সুরক্ষার পাশাপাশি আর্থিক এবং সার্বিক সহায়তার উপর জোর দেন। ইচ্ছাকৃতভাবে আইন এর ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হতে বিরত থাকার আহ্বান জানান। ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের অধীনে (Istanbul Protocol) ডাক্তারদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ দেন। পাশাপাশি জুলাই ২০২৪ থেকে ৫ আগস্টে নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীদের যথাযথ সুরক্ষা প্রদানের প্রতিও গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি আরও বলেন, একটি হটলাইন/হেল্প লাইন চালু করা যেতে পারে, যেখানে ভুক্তভোগীরা প্রতিকারের জন্যে আবেদন জানাতে পারবেন। তিনি তার বক্তব্যে আরও বলেন বাংলাদেশের সংবিধানে সকল ধরনের অমানবিক ও নিষ্ঠুর নির্যাতন ও আচরনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সর্বশেষে তিনি হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু বন্ধে এবং এ বিষয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিতে একযোগে কাজ করার আহবান জানান।
সমাপনি বক্তব্যে এড. জেড আই খান পান্না, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এবং সদস্য, ট্রাস্টি বোর্ড, ব্লাস্ট বাংলাদেশে বিদ্যমান তিনটি আইন যথাক্রমে দণ্ডবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি, বাংলাদেশ পুলিশ প্রবিধান যুগোপযোগী না হওয়ার কারণে তা সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
সভায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন ও সুপ্রীম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবী, গবেষক, একাডেমিক, অধিকার কর্মী সহ বিশিষ্টজনেরা মুক্ত আলোচনায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন পরবর্তী দেশের সংস্কার পর্যায়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিতের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। একই সাথে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের ন্যায় বিচার নিশ্চিতে বিদ্যমান আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের দাবি জানান।
বার্তা প্রেরক:
কমিউনিকেশন বিভাগ, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)
ই-মেইল: communication@blast.org.bd
অনুষ্ঠানটির মিডিয়া কভারেজ:
Bangla
জানালেন ঢামেক চিকিৎসক – গুলিতে নিহতদের মৃত্যুসনদ পরিবর্তনের নির্দেশ ছিল ( Samakal, 9 Sep 2024)
ব্লাস্টের মতবিনিময় সভায় বক্তারা: হেফাজতে নির্যাতন বন্ধে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে ( Prothom Alo, 8 Sep 2024)
ব্লাস্টের মতবিনিময় সভায় বক্তারা: হেফাজতে নির্যাতন বন্ধে পুলিশের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে ( Baniknarta, 9 Sep 2024)
আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতদের মৃত্যুসনদ পরিবর্তনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল: ঢামেক চিকিৎসক ( bangla Outlook, 8 Sep 2024)
‘গুলিতে নিহতদের মৃত্যু সনদ পরিবর্তনের নির্দেশ ছিল ( Ittefaq, 9 Sep 2024)
‘গুলিতে নিহতদের মৃত্যু সনদ পরিবর্তনের নির্দেশ ছিলো’!( Our News, 9 Sep 2024)
চিকিৎসকের অভিযোগ- গুলিতে নিহতদের মৃত্যুসনদ পরিবর্তনের নির্দেশ ( Bhorer Kagoj, 9 Sep 2024)
গুলিতে নিহতদের মৃত্যুর সনদ পরিবর্তনের নির্দেশ ছিল প্রশাসনের ( Daily Campus, 9 Sep 2024)
English
Hotline to support victims of custodial torture demanded ( New Age, 9 Sep 2024)
‘Protest victims may face hurdles to justice’ ( Daily Star, 9 Sep 2024)
Social Media/TV
হেফাজতে নির্যাতন ও দায়বদ্ধতা: প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকার.ব্লাস্ট ( Sangram Protidin, 8 Sep 2024)
‘প্রচলিত নির্যাতন বিরোধী আইন সময়োপযোগী নয়, নাগরিক অধিকার নিশ্চিতে সংশোধন জরুরি সময় ( Somoy TV, 9 Sep 24)